গল্প ।। মহাদেবের কুকুর ।। প্রতীক মিত্র
1
মে ০১, ২০২৫
মহাদেবের কুকুর
প্রতীক মিত্র
মেঠো পথ আর নেই। রাস্তা পাকা।চওড়াও বটে। শেয়াল-টেয়াল আর ডাকে না তেমন। আশেপাশে গজিয়ে ওঠা দোকানের কারণে রাত অবদি খালের ধার জমজমাট। তবে ওই খালের ধারটাই যত নষ্টের গোড়া। যখন হৈহৈ করে জল সেখানে বয়ে যেত, খালের দুই পাড়ে চাষ হত সূর্য্যমুখী ফুলের আর খালে সাঁতরে বেড়াত হাঁস তখন খালটা এমন বদ ছিল না। এখন খালে পানা জন্মে জলের মুখ প্রায় দেখাই যায় না।আর খালের এক পাড়ে বহালতবিয়তে চলছে মদের ঠেক। ঠেকের মালিক নাকি ডাকাত। পুলিশ দু-একবার চড়াও হয়েছিল তার ঠেকে। সে ব্যাটা নাকি আগে ডাকাতি করতো। এই ব্যবসা যদি তার বন্ধ করে দেওয়া হয়, জনৈক লোকেদের ভয় ব্যাটা আবার ডাকাতি শুরু করবে। পয়সা দিয়ে পঞ্চায়েতের নেতাদেরও হাত করেছে। ফলে বেশ চলছে। অল্প বয়সী থেকে বয়স্ক সবার ভীড়।সবার আকর্ষণের মূলে এই ঠেক। এখানে গরীব-বড়লোক-হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই। দিনের বেলা এই দশটা-এগারোটার সময় যখন শরীর আর মন কর্ম ব্যস্ততায় টগবগ করে ফুটতে থাকার কথা তখন টলতে থাকে পা'দুটো। বাকিদের মতন মহাদেবেরও। মহাদেব আইসক্রিম বেচতো। দু-চার পয়সা রোজগার হত। বাড়ি বলতে একটা ঘর। রাতটুকুতেই মাথা গুঁজতো। শরিকি বাড়ি। ভাগে হয়তো আর একটু বেশি পাওয়ার ছিল। দাদা-ভাইরা বিয়ে শাদির অজুহাত দেখিয়ে তাকে একটু কম অংশই দিয়েছিল। আর মহাদেবও তার দিলদরিয়া নামেরই মতন অত গুরুত্ব দেয়নি। মেনে নিয়েছিল। সমস্যা হয়েছে আজকাল। মাস দুএক আগে একটা কুকুরকে ওর না খাওয়া বাসি রুটির একটা টুকরো দিয়েছিল। সেই কুকুরটাই ওর পেছনে লেজ নাড়তে নাড়তে এমন মায়ায় জড়িয়েছে যে নেশার জন্য নিজে না খেয়ে মদে পেট ভরালেও কুকুরটার জন্য কিছু না কিছু আনা চাই। গত ক'সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে নতুন জ্বালাতন।কুকুরটা কিভাবে যেন জানতে পেরেছে ওর এই ঠেকের কথা। হতচ্ছাড়া ওইখানে ওই উঁচু রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে।অপেক্ষা করে মহাদেবের জন্য। কখন মহাদেব খালের ধার থেকে ওই ঠেক থেকে টলতে টলতে উঠে আসবে।মহাদেবের তখন কি আর হুঁশ থাকে? কুকুরটাই ভৌভৌ করে ওর নেশাটা চৌপাট করে দেয়। আজ মহাদেব ভেবেছিলো অন্য রাস্তা দিয়ে পালাবে। কিন্তু তার জো নেই। উলটো দিকের রাস্তাতেও কুকুরটা হাজির। মাদি কুকুর। ব্যাটা কি ওর বউ নাকি? লেজ নাড়ছে আর এক দৃষ্টিতে চেয়ে। ভাবখানা এমন যে ' চলো, অনেক হয়েছে এবার ঘরে চলো! আজ তোমারই একদিন কি আমারই একদিন!' দৃশ্যটা অনেকেরই আজকাল চেনা। একটা বেয়াদব মাতাল টলতে টলতে রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি ফিরছে। সামনে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একটা কুকুর। কালও এই নাটক হবে।ওই খালের ধারের ঠেকে। দিনের বেলাতেই। হুঁশ ফিরলে আবার মহাদেবের রাগ পড়বে। সে খাবার আনতে দৌড়োবে কুকুরের জন্য। আর ভাববে কি নাম দেওয়া যায় কুকুরটার।দেখবে পকেটে পয়সা নেই। তখন ধার করে হলেও… কিছু আনা চাই চাই। আপাতত গালি আর পা চলতে থাকে। কুকুরের ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ঠিক সামনে হেঁটে চলেছে। যতক্ষণ…যতদিন না তার নামকরণের হিল্লে একটা করা যাচ্ছে মহাদেবের কুকুর বলেই বেশ তো চলছে।তেমনটাই চলুক না।
========================
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর, হুগলী
চমৎকার বর্ণনশৈলী 👍❤️
উত্তরমুছুনএক নিঃশ্বাসে গল্প টি পড়ে শেষ করলাম।
লেখকের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইলো।