Click the image to explore all Offers

কিশোর গল্প।। সেদিন ছিল নবমী ।। অঞ্জনা গোড়িয়া


        সেদিন ছিল নবমী

                   অঞ্জনা গোড়িয়া   



সেদিন ছিল নবমীর সন্ধ্যা।  এখনো  সেই ছোট্ট  মেয়েটার মুখটা ভেসে ওঠে।  কেমন আছে  সেই সরল মেয়েটা? 
আমিও  তখন ওর ই মতো। 
বয়স  কত আর হবে। নয় কিংবা দশ। নতুন জামা জুতো  পরে  বাবার হাত ধরে ড্যাংড্যাং করে চলেছি পুজো দেখতে।   
নবমীর সন্ধ্যায় ঠাকুর  দেখতে  যেতেই  হবে। কিন্তু  মুশকিল  হলো  সকাল থেকে  বৃষ্টি। কিছুতেই থামছে না। বাবা বলল, আজ    না হয় টিভিতে ই প্যান্ডেল  দেখ মা। যা বৃষ্টি পড়ছে ।  ছাতাতেও জল আটকাবে না।  ছাতা মাথায় ঠাকুর  দেখা বড্ড কষ্ট হবে। 
 সেদিন আমি বাবার কথা শুনিনি।  জেদ ধরে  বসে ছিলাম।  কান্নাকাটি শুরু করলাম। বাধ্য হয়ে ই বাবা নিয়ে  গেল পূজায়।
যদিও  বৃষ্টিটা কমে গেল। কিন্তু  জল জমে ছিল  রাস্তায়।  তখন এতো ঢালাই রাস্তাও ছিল না। ইটের অথবা মাটির কাদা রাস্তা দিয়ে  পা টিপে টিপে চলেছি। হাঁ করে  চেয়ে আছি  বিরাট  প্যান্ডেলের দিকে। চারিদিকে কত লোক। বৃষ্টি থামতেই মানুষের ঢল নামলো রাস্তা।       আমি তো খুব খুশ।  রংবেরঙের   আলোর কেরামতি  দেখতে  দেখতে চলেছি প্যান্ডেলের দিক। 
 হঠাৎ   পা টা গেল পুঁতে।   নিচের  দিকে  তাকিয়ে  দেখি,  ডান পা টা  পুঁতে  গেছে  রাস্তার  পাশে খোলা  গাড্ডায়।কিছুতেই টেনে তুলতে  পারলাম না। অতিকষ্টে যদিও কাদা মাটির নোংরা  গাড্ডা থেকে পা টা  টেনে তুললাম।  কিন্তু  সর্বনাশ। শুধু পা টা ই উঠলো।  নতুন জুতোটা কোথায়? কাজলে টানা চোখ দুটো  জলে ভরে গেল। কিছুতেই যাবো  না জুতো ছাড়া। ঠাকুর দেখত।    
একপায়ে জুতো আর এক পা কাদা মাখা।
 উফফফ  সে কি কান্না।  সব সাজ একেবারে কালিতে মাখামাখি।
যতই  বাবা বলে, নতুন জুতো  কিনে দেব। এখন চলো,পা ধুয়ে প্যান্ডেলে । কিছুতেই যাবো না। শেষ  পর্যন্ত  বাবা বলল, চলো ওই জুতো টা  এখানেই  রেখে, নতুন জুতো  কিনতে। যদি কেউ তুলতে  পারে,তবু জুতো জোড়া তো কাজে লাগবে। 
 প্যান্ডেল ফেলে ঠাকুর না দেখে।  বিষন্ন মুখে ।  জুতো ফেলে চললাম। নতুন জুতো দোকান খুঁজতে । খালি পায়ে তো আর ঠাকুর দেখা  যায় না।
 তারপর  যখন একজোড়া  জুতো  কিনে  ফিরছি,দেখি একটা  পুঁচকে মেয়ে জুতো জোড়া হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে  আছে  আমাদের পথের  দিকে। 
আমি তো দারুন খুশি। মেয়েটির   মাথার চুলগুলো  লাল লাল। অগোছালো জটধরা।পরনে ছেঁড়া ফ্রক।  তবু এক মুখ হাসি হেসে জুতো  নিয়ে দাঁড়িয়ে। 
আমাদের দেখেই  বলল, এই দেখো দিদিমণি  তোমার  জুতো।  ভালো করে  ধুয়ে পরিস্কার করে  এনেছি। দেখো দেখো কেমন  চকচক করছে। ঠিক তোমার  মতো।  
 তুমি তখন কাঁদছিলে দেখে খুব কষ্ট  হচ্ছিল। তাই তো  হাত ঢুকিয়ে  তুলে এনেছি।  
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ।  বাবা পকেট থেকে  একশো টি টাকা মেয়েটির হাতে গুঁজে  দিয়ে বলল, এই টি তোমার  সততার পুরস্কার।  যা খুশি  কেনো।
আমি বললাম, এই জুতো জোড়া  তোমাকে  খুব মানাবে।  এদুটো  পরে ঠাকুর দেখো। কেমন। মেয়েটি সততার মানে কি বুঝলো কে জানে।  তবে জুতোজোড়া পেয়ে খুব খুশি। তবু বলল,বারে এটা যে তোমার জুতো।  
দেখো একটু ও কাদা লেগে নেই।
আমি বললা, এই দেখো,আমার নতুন জুতো।  এটা তুমি ই নাও বুঝলে৷    
     জুতো জোড়া  পরে খিলখিল করে  হাসতে হাসতে  চলে গেল।  বাবা বুক চাপড়ে বললে, এই তো  আমার মেয়ের মতো ই মেয়ে। আমার  লক্ষ্মী  মেয়ে। 
আজও  ভুলতে  পারিনি  সেই দিন টা। আজ ও ভুলতে পারিনি   সেই সরল পুচকে মেয়েটাকে। 
এমন কত মেয়ে ই পুজো দেখে খালি পায়ে। ছেঁড়া ফ্রকে। কে তার খবর রাখে?    



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.