মন্দোদরী আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।এখানে আসার প রে প্রথমবার অশোক বন ছেড়ে পা বাড়ালাম। লংকা র সমুদ্র তীরে গিয়ে দাঁড়ালাম। বিভীষণ আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন।দেখলাম অসীম ক্ষমতাশালী ,ভীষণ সুপুরুষ অসুর সম্রাট রাবন তার প্রিয়তমা প্রথমা পত্নীর কোলে মাথা রেখে শেষ শয্যা য় শুয়ে।
যাঁকে আমি প্রতিদিন ঘৃণা করে এসেছি ,আজ তার এই করুন বীভৎস পরিণতি দেখে আমার সমস্ত ঘৃণাগুলি করুনা হয়ে গলে যেতে লাগলো!রাম এর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত এ কোন রাবন ?
অপরূপা মন্দোদরী র হতোদ্যম শরীরে কোনো সা ড় নেই !আজ প্রিয়তম পুত্র ইন্দ্রজিৎ বেঁচে নেই ,প্রেমিক স্বামী শেষ নিঃশাস ফেলার অপেক্ষায়। সেই সময় তারই আহ্বানে আমি গিয়ে দাঁড়াতে তিনি স্বামী র কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে যেতে লাগলেন আমার জন্ম রহস্যের কথা।
রাবনের ক্ষত বিক্ষত মুখে কেবলই বিস্ময় আরো বিস্ময় ফুটে উঠতে লাগলো !মা মন্দোদরী আজ নিজের সমস্ত গোপন কথা উজাড় করে দিলেন প্রিয় স্বামী র কাছে ! রাবনের রোষাগ্নির ভয়ে কোনোদিন যা বলতে পারেননি।তাঁদের প্রথমা কন্যা সন্তান এর জন্মলগ্নে জ্যোতিষী ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যে " এই কন্যা ই হবে পিতার মৃত্যুর কারণ ".রাবন আদেশ দিয়েছিলেন শিশু কন্যা টি কে যেন হত্যা করা হয় !কিন্তু মাতৃ হৃদয় সে আদেশ লঙ্ঘন করে নিজের বিশ্বস্ত দূত কে দিয়ে শিশু কন্যা টি কে দূর দেশে রেখে আসতে বলেছিলেন। শিশু টি কে দামি কাপড় ও গয়নায় জড়িয়ে ফেলে রেখে এসেছিলো সেই দূত , উত্তরের অনেক দূরের দেশে। যেখানে রাবন কোনোদিন তার সন্ধান পাবেনা।
আজ এই শেষ বেলায় মা মন্দোদরী নিজের দোষ স্খালন করে ,আঙ্গুল তুলে আমাকে দেখিয়ে বললেন , "এই হলো তোমার সেই কন্যা।"আমি বজ্রাহতের মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম।মহামহিম দোর্দন্ড প্রতাপ শালী রাবন হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার পায়ের দিকে !মুখে কিছু বলতে পারছেন না, সে ক্ষমতা আর নেই !
চিরদাম্ভিক রাবনের দু চোখ দিয়ে জলধারা নেমে আসতে লাগলো। আমি পা সরিয়ে নিলাম।বিদায় জানালাম করজোড়ে প্রণামের ভঙ্গি তে। আমি হয়তো অতীতের অসুর রাজ কন্যা , আগামীতে আর্যাবর্তের শ্রেষ্ঠ রাজা রাম এর স্ত্রী সীতা , চলে আসতে গিয়েও একবার পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম ক্ষমাপ্রার্থী একজোড়া করুন চোখের দৃষ্টি ! এক সর্বহারা রমণী র বুকফাটা আর্তনাদে স্বর্ণলংকার সমুদ্র তীর ভেসে যেতে লাগলো।
==================
কাকলী দেব
( Chitra Banerjee Divakaruni র লেখা The Forest Of Enchantment থেকে নেওয়া। কিছুটা ভাবানুবাদ ও বলা যায়। )