Click the image to explore all Offers

ছোটগল্পঃ ধোঁকা ।। শংকর ব্রহ্ম

 

                                                                                                                                                                ছবিঋণ  - ইন্টারনেট 

 

ধোঁকা 

 

শংকর ব্রহ্ম



                   চমৎকারভাবে সকালটা শুরু হয়েছে।মাঘ মাসের সকাল। অপরাজিতা ফুলের মতো গাঢ় নীল আকাশ। কুয়াশার ছিটে-ফোঁটাও কোথায়ও নেই। ঝকমকে সোনালি রোদ উঠেছে।

 শীতের সকালে মিঠে রোদের দিকে আরামে পিঠ দিয়ে, গা এলিয়ে বসে আছেন নিবারণ সামন্ত। পরনে তার চেককাটা নীল লুঙ্গী,গায়ে সাদা রঙের খাটো ফতুয়া। তার উপর একটা দামী কাশ্মিরী শাল। মাথায় উলের টুপি, তার উপরে ইংরেজী ক্যপিটেল লেটারে লেখা DARJEELING. গতবার দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন সপরিবারে। তখন টুপিটা সেখান থেকে কিনে এনেছিলেন। তিনি সোনালি রোদে পিঠ দিয়ে এখন গতকালের খবরের কাগজ পড়ছেন। আজকের কাগজ আসতে দুপুর গড়িয়ে যায় এই রাইপুর গ্রামে।

                    নিবারণের বয়স প্রায় চল্লিশ - বিয়াল্লিশ হবে। দেখলে অবশ্য অতোটা মনে হয় না।  টুপিটা খুললে বোঝা যায়, মাথা জুড়ে খেলার মাঠের মতো বিশাল টাক। টাকের সাথে নাকি টাকার সম্পর্ক থাকে। তাই সে বেশ আরামে ও সাচ্ছন্দে আছে। তাকে দেখে মনেহয়, তার মতো সুখি মানুষ খুব কমই আছেন। ইতিমধ্যেই শরীরে তার মেদ জমতে শুরু করেছে। 

                     বর্তমানে রাইপুর গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান তিনি। রাইপুর গ্রাম হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত একটি গ্রামীণ এলাকা। বাঁকুড়া জেলায় দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। 

                     বর্তমান অবস্থায় উঠে আসতে নিবারণের কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি। অনেক কসরত করতে হয়েছে। আগে বাজারের কাছে একটা চায়ের দোকান ছিল তার। কিন্তু সেখানে রোজগারপাতি তেমন হতো না। তাই সে মনে মনে, এমন একটি ব্যবসার কথা ভাবছিল, যাতে কোন রকম মূলধন লাগে না।  মূলধন না খাটিয়েই লাভ করা যায় । 

                  এমন সময় একদিন,  চোখে রিমলেস চশমা পরা মাষ্টারমশাই ধরণের একজন দার্শনিক প্রকৃতির মানুষ তার দোকানে চা খেতে এসে তার মনের গোপন ইচ্ছের কথাটা জানতে পারে তার সঙ্গে কথায় কথায়। তাকে তিনি পরামর্শ দেন, একবার পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়ে যান।

- কিভাবে?

- এখন থেকে রুলিং পার্টি অফিসে প্রতিদিন  যাতায়াত শুরু করুন। নিয়মিত যাতায়াত করতে থাকুন। তারপর ভোটের সময় কাছে এগিয়ে এলে, পাঁচ কান না করে, মনের একান্ত ইচ্ছের কথাটা গোপনে তুলে দিন নেতার কানে যে, আপনি এবার পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াতে চান। তার একটা ব্যবস্থা তিনি যদি করে দেন। তাহলে তিনি তার গোলাম হয়ে থাকবেন। তার কাছে অপরিসীম কৃতজ্ঞতায় ঋণী থাকবেন সারা জীবন।

               লোকটি হয়তো রসিকতা করেই এমন সব কথা নিবারণকে বলেছিল। কিন্তু নিবারণ সেই কথা বেদবাক্য মনে করে, তা মেনে চলতে শুরু করেন, এবং শেষপর্যন্ত তিনি সাফল্য লাভ করেন। রুলিং পার্টির নেতাকে সফলভাবে ম্যানেজ করে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াবার সুযোগ পান এবং আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যায় যে, ভোটে জিতেও যান তিনি। তারপর সে দলের প্রতি গভীর আনুগত্য দেখিয়ে, নেতারই সুকৌশলী চালে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে যান। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপর তিনি তার চায়ের দোকানটা তুলে দেন। রোজ পঞ্চায়েত অফিসে এসে বসা শুরু করেন। গ্রামের লোকজনের সমস্যার কথা মন দিয়ে শোনেন, আর শুনে, তা তার নোটবুকে নোট করে রাখেন।  তা যথসাধ্য সমাধানের চেষ্টাও করেন। আর কারও কোনও সমস্যা সমাধান করতে না পারলে তিনি তাকে  তার কারণও জানিয়ে দিতেন।     

                এইরকম নিঃস্বার্থভাবে কিছুদিন পঞ্চায়েতের কাজ করার ফলে তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়তে থাকে গ্রামের মানুষের মধ্যে। তার কাজকর্মের ধারা ও জনগণের মধ্যে তার প্রসার দেখে, দলের নেতারাও খুশি হন


                 গ্রামের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, বিদ্যুতিকরণের কাজের জন্য সরকার থেকে ফান্ড মঞ্জুর করা হলে, সেই কাজের জন্য টেন্ডার ডাকতে হয়। জমা দেওয়া সব টেন্ডারগুলি বিবেচনা করে কাজের জন্য যোগ্য কাউকে বরাত দিতে হয়। এইসব কাজ তাকে একাই সামলাতে হয়। সহযোগী একজন থাকে। তবে কাজটা খুব সহজ নয়। বেশ ঘোরালো। সে সব তাকে একাই সমলাতে হয় গ্রামের পঞ্চয়েত প্রধান হিসাবে। কখনও কখনও দলের উপর মহল থেকে চাপ আসত অযোগ্য কাউকে বরাত পায়িয়ে দেওযার জন্য। তখন সমস্যা হতো বেশ। নিবারণ সামন্তকে তাদের বোঝাত হত, এদের দিয়ে কাজ করালে, কাজের মান ভাল হবে না। গ্রামবাসীরা সেটা মেনে নেবে না। তার কথা শুনে  তারপর উপর মহল থেকে প্রস্তাব এলো, যে প্রোমোটার যা কাজ পাবে, তার কিছু অংশ তাদের দলের ফান্ডে দান করতে হবে।

- মানে?

- মানে দু'লাখ টাকার কাজ পেলে, দলের ফান্ডে তাদের অন্ততঃ কুড়ি হাজার টাকা দান করতে হবে।

- ওহ্, আচ্ছা। এই ব্যাপার!  বেশ বোঝা গেল ব্যাপারটা তাহলে।


                  এইভাবেই রাইপুর গ্রামের উন্নয়নের কাজ ধারাবাহিক চলতে লাগল। যারা কাজ পাচ্ছেন, তারা মনে কিছুটা অখুশি হলেও, টেন পারসেন্ট দিয়েই কাজ করতে রাজি হচ্ছেন। এই দেখে নিবারণ পরের বার থেকে যারা টেন্ডার থেকে কাজ পাবে, তাদের জন্য দেওয়ার পারসেন্টটা টেন পারসেন্ট থেকে বাড়িয়ে ফিফটিন পারসেন্ট করে দিলেন। দশ পারসেন্ট দলের ফান্ডে জমা পড়ত। আর পাঁচ পারসেন্ট তার নিজের ফান্ডে জমা হতো। এইভাবে নিবারণের জীবনের মানের উন্নতি ঘটতে লাগল।

                     আগে তিনি সাইকেল চালিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে যাতায়াত করতেন। এখন বাইক কিনেছেন। সেটা চড়েই পঞ্চায়েত অফিসে যাতায়াত করেন। আগে তারা টালির চাল আর বাঁশের বেড়ার ঘরে বাস করতেন। এখন সেটা দু'কামড়ার পাকা ঘর হয়েছে। আগে তার বউয়ের হাতে শুধু কয়েক গাছা কাঁচের চুড়ি ছিল। এখন হাতে অনেকগুলি সোনার  চুড়ি হয়েছে। আগে তার ছেলে অনামী একটা বাংলা স্কুলে পড়ত। এখন সে পড়ে নামী-দামী একটা কনভেন্ট স্কুলে। আগে ছেলেটা মাটিতে মাদুর পেতে বই নিয়ে পড়তে বসত। এখন টেবিল চেয়ারে বসে পড়াশুনা করে। আগে তার ছেলে হেঁটে স্কুলে যেত। এখন নিবারণ তাকে বাইকে করে নিয়ে গিয়ে স্কুলে দিয়ে আসে। 

                      নিবারণের জীবনের মান উন্নয়নের সাথে সাথে তার দায়িত্বও বেড়েছে অনেক। এই উন্নত জীবনের মান বজায় রাখবার জন্য তাকে মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করতে হয়, যা করতে তার বিবেক আপত্তি করে। কিন্তু এখানে তিনি অসহায়, বিবেকের কথা তিনি মেনে চলতে পারেন না।


                         গ্রামের লোকেরা অবশ্য তার উপর আস্থা রাখে। কারণ, তারা যে কোন দরকারে তার কাছে গেলে, তিনি তাদের সবার অভাব অভিযোগের কথা মন দিয়ে শুনতেন।  নিজের নোট বুকে টুকে রাখতেন। তারপর যতটা পারেতেন সমাধানের চেষ্টা করতেন। 

                             কন্টাকটারের কাজকর্ম নিয়মিত দাঁড়িয়ে থেকে তিনি দেখভাল করেন, যাতে তারা কাজে নিম্ন মানের সরঞ্জাম দিয়ে কাজ করে ফাঁকি দিতে না পারে। ফলে, তার গ্রামের রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট, বিদ্যুৎ পোষ্ট,  স্কুল বিল্ডিংয়ের কাজ অন্য গ্রামের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছ। একথা গ্রামবাসীরাও স্বীকার করে। সেই কারণে গ্রামবাসীদের আস্থা তার উপরে অটুট আছে। তবে মানুষের স্বভাব তো, সুগোগ সুবিধা পেতে পেতে, দিন দিন তাদের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তাদের সব চাহিদা পূরণ করা নিবারণের সীমিত ক্ষমতার পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে কারণে কারও কারও মনে ক্ষোভ জমা হওয়াও স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক নয়। সেই ক্ষোভকে ভোটের আগে, বিরোধী দলের নেতারা খুঁচিয়ে ঘা করে তুলতে চায়। সে সব সামলাতে হয় নিবারণ সামন্তকে। তাই সে'কারণে, নিবারণকে ভোটের সময় কাজে লাগাবার জন্য, কিছু দুর্বৃত্তদের হাতে রাখতে হয়। 

                     নিবারণের নিজের কাছে যুক্তি, আমি তো গ্রামবাসীদের কোন ক্ষতি করছি না। 

ঠিক মতো যাতে কাজ হয়, কন্টাকটাররা যাতে ফাঁকি দিতে না পারে, তার দেখাশুনা আমি ঠিক মতো করি। তার বদলে সরকারি টেন্ডার থেকে মাত্র ফাইভ পারসেন্ট কাটমানি খাই। তাতে কি? দল খায় তারও দ্বিগুণ বেশি। দলের এতে কোনও 

 অপরাধ না হলে, তবে তার আর আমার অপরাধ কোথায়?


                    একটু পরেই দেখা গেল, দূর থেকে কেউ একজন তার দিকেই ধেয়ে আসছে। নিবারণ বাবু চোখ তুলে একবার তার দিকে তাকালেন। তারপরে খবরের কাগজের পাতায় চোখ রাখলেন। লোকটি কাছে এলে দেখা গেল, নকুল বিশ্বাস। তাদের দলেই একজন কর্মী। 

                     সে কাছে এসে নিবারণ বাবুকে বললেন, স্যার ওদিকে তো গোলমাল হয়ে গেছে। বাচ্চুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভোর বেলা ওর মা এসে আমার কাছে কান্নকাটি করে জানাল, কাল দুপুরে বেরিয়ে রাতে আর বাড়ি ফিরে আসেনি বাচ্চু।

                       কথাটা শুনে নিবারণবাবু কাগজ থেকে চোখ তুলে তাকালেন তার দিকে।

বললেন, থানায় খবর দিয়েছিস?

- না স্যার, খবরটা শুনে আপনার কাছেই প্রথম ছুটে এসেছি। আপনি বললে, থানায় খবর দেব।

একমুহূর্ত ঠোঁট কামড়ে, নিবারণবাবু কিছু একটা ভাবলেন। তারপর বললেন ওর সঙ্গে আর কেউ ছিল?

- তা তো জানি না স্যার।

- চায়ের দোকানে, বাজারে, সেলুনে গিয়ে আগে সেই খবরটা নে, ওর সঙ্গে আর কেউ ছিল কিনা? কেউ তাকে দেখেছে কিনা?

- আচ্ছা স্যার।

- খবরটা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারিস আমাকে জানাস।

- আচ্ছা স্যার।

- তুই বাপ্পার বাড়িটা চিনিস তো?

লোকটা মাথা কাত করে জানাল, হ্যাঁ স্যার।

- একবার গিয়ে তুই, ওকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বল।

- আচ্ছা স্যার। 

- ঠিক আছে, আমি দেখছি কি করা যায়। তুই এবার যা।

- আচ্ছা স্যার। 

বলে নকুল চলে গেল।

বাপ্পা তার পোলিং এজেন্ট।


             নকুল পার্টির ইনফর্মার। একসময় নিবারণের চায়ের দোকানের কর্মচারী ছিল। এখন সে বাজারের একটা পাইস হোটেলে কাজ করে। মা বাবা কেউ নেই তার। বিয়েও করেনি।  হোটেলেই একা পড়ে থাকে। নিবারণের খুব বিশ্বস্ত ও অনুগত লোক। বয়স তার ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হবে।


               বাচ্চু ছেলেটা ডাকসাইটে মাস্তান। দুর্বৃত্ত  প্রকৃতির গুন্ডা। আগে চুরি ছিনতাই করত। ছুরি চাকু চালাতে পারে অনায়াসে। পেটো বোমা বাঁধতে পারে। রিভালবার চালাতে পটু। ভোটের সময় এরা খুব কাজে লাগে। কয়েক বোতল মদ আর কিছু টাকা হাতে তুলে দিলেই, ভোটটা উতরে দেয়, বিরোধী ভোটারদের ভয় দেখিয়ে।   

              তাই এইসব ছেলেদের হাতে রাখতে হয় নিবারণের। খবর রাখতে হয়, কোথায় যায়? কি করে? কাদের সঙ্গেে মেশে? বিরোধী দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ  রাখে কিনা? দল বিবোধী কোন ভাবনা আছে কিনা মনে? এইসব আরকি।

এতে তার বিবেক দংশন হলেও এখন আর কিছু করার নেই  তার। সে এখন দলের অনুগত সৈনিকের মতো দাসত্বে বন্দি অসহায় এক দলীয় পুতুল। নিজের কাছেও অসহায় সে। তার নিজস্ব কোনও ভাবনা-চিন্তার কোনও মূল্য নেই এখন আর তার কাছে। দল যা বলবে, এখন তাকে তাই করতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বাদ অনেকটা চুলকানির মতো বিষাক্ত। একবার চুলকাতে শুরু করলে আরাম পাওয়া যায়। যতো চুলকাও ততো আরাম। একবার চুলকাতে শুরু করল, আর থামতে পারা যায় না। তখন বিবেকের ছাল বাকলা উঠে গেলেও কিছু করার নেই। 


                    পঞ্চায়েত ভোটের আর এক মাসের মতো বাকি। তাই এই সময়, বাচ্চু ছেলেটাকে নিয়ে ভাবনায় পড়লেন নিবারণ সামন্ত। নিজের মনে  ভাবছিলেন তিনি, এখন কি করা য়ায় বাচ্চুকে নিয়ে? কখন বাপ্পা এসে দাঁড়িয়ছে তার পাশে, তিনি তা টের পাননি।

বাপ্পা বলল, স্যার কাল রাতে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে?

- কি হয়েছে?

- কাল শালবনে বসে পেটো বাঁধতে গিয়ে বাচ্চুর ডান হাতটা উড়ে গেছে, ওকে গোপন শেল্টারে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

- ওকে হাসপাতালে না দিয়ে,  গোপন শেল্টারে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে কি হাতটা সারবে?

- তা তো জানি না

- তবে ওকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দে।

- হাসপাতাল নিয়ে গেলে, বোমা বাষ্ট কেস দেখে, ডাক্তার যদি পুলিশ কেস করতে বলে? যদি  থানায় খবর দেয়?

- দিলে, দেবে। থানা মনে করলে, বাচ্চুকে অ্যারেষ্ট করবে।

- থানায় নিয়ে গেলে তো সব খবর চাউর হয়ে যাবে। মিডিয়া ঢুকে পড়বে খবরের কাঁটা বাছতে।

- যাদের যা কাজ, তারা সেটা করবে। তাতে আমাদের কী? তুই শুধু একটা কাজ কর। বাচ্চুকে দশ হাজার টাকা দিয়ে বল, থানায় ধরে নিয়ে গেলে, ও যেন শুধু একটা কথাই পুলিশের কাছে বলে, বিরোধী পক্ষের দলের পক্ষ থেকে তাকে দশ হাজার টাকা দেবে বলেছিল, যদি সে তাদের জন্য কিছু বোমা বেঁধে দেয়, গোপনে শালবনে বসে। সেই কাজ করতে গিয়ে ওর ডান হাতটা উড়ে গেছে। ওকে আরও বলবি কোর্টে ওর জেল হয়ে গেলেও, ইলেকশনের পরে আমরা ওকে ছাড়িয়ে আনব।

- বেশ। বলে, বাপ্পা চলে গেল। 

                     তারপর নিবারণ সামন্তর কথা মতো সে বাচ্চুকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। বোমা বাষ্ট কেস দেখে, ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করার আগেই লোকাল ধানায় খবর দিল। থানা থেকে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে পুলিশ হাসপাতালে চলে গেল। সেখানে তার চিকিৎসা শুরু হল।


                      পরদিন সকালে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা 'রাইপুর গ্রাম বার্তা'-র প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা হল - 'শালবনে অমিত সাহা, ডাক নাম বাচ্চু,  বোমা বাঁধতে গিয়ে, তা বাষ্ট করে, তার ডান হাতটা উড়ে গেছে। পুলিসি জেরায় সে স্বীকার করেছে যে বিরোধী দলের জন্য সে, শালবনে লুকিয়ে বোমা বাঁধতে গিয়ে, অন্যস্কতার ফলে, বোমা দড়ি দিয়ে টাইট করে বাঁধার সময় তার হাত থেকে বোমাটা ছিটকে মাটিতে নীচে পড়ে গিয়ে ফেটে যায়, তাতে তার ডান হাতটা উড়ে যায়। 


                      খবরটা পড়ে জনগণ আসল ধাপ্পা ধরতে পারল না। সে কথা নির্দিধায় বিশ্বাস করে ধোঁকা খেল। সামনে ভোট আসছে।

========================


SANKAR BRAHMA.
8/1, ASHUTOSH PALLY,
P.O. - GARIA,
Kolkata 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.