নারকেলের আঘাতে স্মৃতির জাগরণ
সমীর কুমার দত্ত
সেদিন প্রশান্ত রাস্তা দিয়ে কিছুটা অন্যমনস্কভাবে হেঁটে যাচ্ছিল বাজারের উদ্দেশ্যে। স্ত্রী কৃষ্ণা যাবার সময় পই পই করে ওকে বলে দিয়েছিলো নারকেল আনতে। বাজারে এক এক করে সব বাজার করে ওর মনে হলো কৃষ্ণা ওকে আর কি একটা জিনিষ বাজার থেকে নিয়ে যেতে বলেছিলো। কিছুতেই ওর মনে পড়ছিলো না। ইদানিং ও সবকিছু ভুলে মেরে দেয়। ভুল করে অফিসের ক্যাশ গড়মিল করে ফেলে। পকেট থেকে তার খেশারত দিতে হয়। এ নিয়ে কৃষ্ণা ওকে বহুবার বলেছে। এমন কি এও বলেছে," কাজের সময় মন কোন দিকে থাকে যে কাজে ভুল হয় ? আমি তো জানি অন্যমনস্ক হলে কাজে ভুল হয়। নাকি স্মৃতিভ্রম ঘটেছে। ইদানিং দেখছি তোমাকে কিছু আনতে বললে তুমি ভুলে মেরে দাও। কার দিকে মন পড়ে থাকে শুনি। প্রতিবাদ করে প্রশান্ত বলে,
" তোমার এক কথা। কার দিকে আবার? তোমার কথা ভাবতে ভাবতেই তো দিন কেটে যায়। অন্যের কথা ভাবার সময় আছে?
— বলো কী,ভাবার মতো তেমন কেউ আছে বোধ হয়?
মাথায় তর্জনী ঠুকতে ঠুকতে চিন্তা করতে থাকে। একবার বাজার থেকে বেরিয়ে আসে আবার গিয়ে ঢোকে। তবুও মনে পড়ে না। এদিকে অফিসেরও বেলা হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং ওর মনে হচ্ছে ও ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হতে চলেছে। কিছুক্ষণ এভাবে বাজারে ঢোকা বেরোনা করতে করতে হঠাৎ ও কাউকে দেখতে পেয়ে বিড় বিড় করে বললো, " মণিকা না ?" কপালে হাত ঠেকিয়ে স্যালুটের ভঙ্গিতে ঠাহর করার ভঙ্গিতে বললো, " হ্যাঁ, মণিকাই তো।দ্রুতপদে তার পিছু ধাওয়া করতে লাগলো। কাছাকাছি এসে বললো,
" মণিকা, এই মণিকা" বলে চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আসলে ও কি আদৌ মণিকা? কে জানে।
এক সময় প্রশান্ত মেয়েটির একদম পিছনে এসে পড়ে। পিছন ফিরছে না দেখে গায়ে হাত দিয়ে বলতে থাকে, এই মণিকা, কখন থেকে ডাকছি, শুনতে পারছো না?" গায়ে হাত দিতে মেয়েটি হতচকিত হয়ে পিছন ফেরে। পিছন ফিরতেই প্রশান্ত অপ্রস্তুতে পড়ে যায় , না এ তো মণিকা নয় ।মেয়েটি যখন দেখে যে এক পুরুষ ওর গায়ে হাত দিয়েছে, বিশেষ করে রাস্তায় সর্বসমক্ষে, অপ্রস্তুতে পড়ে গিয়ে গালে সপাটে এক চড় মারে। চড় খাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে প্রশান্ত বলে, " সরি, আমি আমার একজন পরিচিত মহিলা ভেবে হাত দিয়ে ফেলেছি। ছিঃ ছিঃ, আপনি কিছু মনে করবেন না প্লীজ।" তারপর বাজারের ব্যাগ নামিয়ে হাত জোড় বললো,
" আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।"
চড়টা মেরে মেয়েটি বললো,
" জানোয়ার! জুতো মেরে গরু দান? অভদ্র কোথাকার। সুযোগ পেলেই মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া!"
তামাসা দেখতে দেখতে বাস্তায় লোক জড়ো হতে লাগলো। জনতার মধ্য থেকে এলাকারই একজন দুহাতে দুটো নারকেল নিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, " মল্লিকা, কি হয়েছে?"
— দেখো না এই অভদ্র লোকটা আমাকে চেনেনা শোনেনা, আমার গায়ে হাত দিয়ে আমাকে ডাকছে।
" না না, এ রকম ব্যাপার নয়। আমার এক বান্ধবী মণিকা ভেবে পিছন থেকে ডেকেছি অনেক বার। উনি উত্তর দিচ্ছেন না দেখে -------"
"উত্তর দিচ্ছেন না দেখেই গায়ে হাত দিলেন, বাঃ বাঃ! মণিকা ওর নাম নয় উত্তর দেবে কেন? আপনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওর গায়ে হাত দিয়েছেন।"
নারকেল হাতে যুবকটি বললো এবং তান হাতের নারকেলটা দিয়ে প্রশান্তর মাথায় আঘাত করলো।
"উঃ" শব্দ করে প্রশান্ত মাথায় হাত বুলতে বুলতে যুবকটির হাতের নারকেলের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। তারপর সম্বিত ফিরে এলে দৌড়ালো বাজারের দিকে।ওর মনে পড়ে গেলো কৃষ্ণা ওকে বাজার থেকে নারকেল আনতে বলেছে পৌষ পার্বণের পিঠে করবে বলে। নারকেলের বাড়ি মাথায় পড়তে স্মৃতি সক্রিয় হয়ে উঠলো। মাথাটা টনটন করছে। আঘাতের জায়গাটায় বারবার হাত বোলাতে লাগলো। কয়েকজন দোকানদার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। প্রশান্ত ওদের মুখের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছিলো না। এদিকে বাড়িতে কৃষ্ণাও দেরি হচ্ছে দেখে কি ভাবছে কে জানে। আজকে কার মুখ দেখে যে উঠেছিলো কে জানে। মাথাটা যন্ত্রণা করছে। বাড়ি গিয়ে বরফ লাগাতে হবে।
বাজারে আর ঢুকলো না প্রশান্ত। রাস্তায় একজন নারকেল নিয়ে বসেছিলো। বেশি দরাদরি না করে দুটো নারকেল কিনে নিয়ে বাড়ি মুখো হলো। যেতে যেতে ভাবলো —তালে পেয়ে মহিলা গালে থাপ্পড়টা মেয়ে নিলো। মাগি তো নয় যেন মর্দ । তার ওপর ওই দালালটা এসে নারকেলটা দিয়ে মাথায় মেরে দিলো। কে জানে ওই মাগিটার সঙ্গে বোধহয় লটকে আছে। না হলে অত দরদ কিসে। আমিও বলিহারি যাই কোন আক্কেলে একটা সমর্থ মেয়ের গায়ে হাত দিলুম। মন নয় মতিভ্রম আর কি! ছিঃ ছিঃ কতো অপদস্তই না হতে হলো। কৃষ্ণাকে তো কিছুই বলা যাবে না। শুনলেই আমায় খেয়ে ফেলবে। আশপাশের যদি কেউ দেখে থাকে, তাহলে কথাটা পাঁচ কান হবে। আবার কাজের মেয়েটা যদি দেখে থাকে তো কথাই নেই। ওই কৃষ্ণাকে বলে দেবে হয়তো। না দেখলেই ভালো।
পাপ মন নিয়ে প্রশান্ত বাড়ি ঢুকলো। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণা ঝাউ ঝাউ করে বলে উঠলো, " বাব্বা, যেন বাজারটাই তুলে আনতে গিয়েছিলো। কোথায় ছিলে? এতো দেরি হলো যে? নাকি অফিস কাছারি ভুলে কারোর সঙ্গে গল্পে মেতে গিয়েছিলে।
— না না, আজ পৌষ সংক্রান্তি না। বাজারে খুব ভীড়। মাথা গলানো দায়। দোকান দোকানে যা ভিড়। লাইন দিয়ে মাল কেনার মতো।
মিথ্যে মিথ্যে করে বানিয়ে বলে দিয়ে জামাপ্যান্ট ছেড়ে স্নান করতে চলে যেতে উদ্যত হলো। দুপা গিয়ে ফিরে এসে বললো,
" ও হ্যাঁ, ফ্রিজ থেকে এক টুকরো বরফ দাও তো।"
—কেন আবার বরফ কী হবে?
— দাও না। ওই একজন মাথায় করে মাল নিয়ে যাচ্ছিলো, মাথা টায় লাগলো এমন জোরে কী বলবো।
—তাই তুমি কিছু বললে না?
— আরে ওই বলতে গিয়েও তো দেরি হলো।
এমন সময় কাজের মেয়ে কাজল এসে বেল টিপলো।
" দরজাটা একটু খুলে দাও। কাজল এলো বোধহয়।" কৃষ্ণা বলে রান্নাঘরে ঢুকে গেলো
ভয়ে ভয়ে প্রশান্ত দরজা খুলে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো।
কাজল ঘর মুছতে মুছতে বলে উঠলো, " তোমার সঙ্গে বৌটা ঝগড়া করছিলো কেন ? " দাদা উত্তর দেবার আগেই বৌদি বলে উঠলো," কোন বৌয়ের সঙ্গে?"
—তা বলতে পারবুনি। ঝগড়া হচ্ছিলো দেখুম। আমার তখন তাড়া ছিলো মামনদের বাড়ি যাচ্ছিলুম। একেই দেরি হয়ে গেলো।
— তুমি আবার কোন মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া করছিলে।
প্রশান্ত স্বগোক্তি করে বললো,
" যা ভেবেছি তাই। কি ডাগ্যি বুঝতে পারেনি! ভাগ্যিস সময় ছিলো না যে ওর হাতে। নাহলে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিতো। ঝিয়েদের নিয়ে এই একটা জ্বালা। সব কথা জানা চাই। আর সেটাকে রাষ্ট্র করে বেড়ানই হলো কাজ। এদের না রাখলেও উপায় নেই। " কৃষ্ণাকে বললো,
"ওই জো গো তোমায় বললাম না।
— মেয়েটা মাল নিয়ে যাচ্ছিলো তোমার মাথায় লেগে গেলো?
কাজল ঘর মুছতে মুছতে হাঁ করে কথাটা গেলবার জন্যে বসে রইলো।
প্রশান্ত ঝাঁজিয়ে বলে উঠলো,
" তোমার কি সব কথা শোনা চাই? এবার দেরি হয়ে যাবে না?"
কাজল ভয়ে কাজে মন দিলো।
প্রশান্ত বললো, "ওই জন্যেই তো দেরি হয়ে গেলো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। খেতে দাও।"
কৃষ্ণা কথা না বাড়িয়ে টেবিলে খাবার বেড়ে দিলো প্রশান্ত ঝটপট করে খেয়ে নিয়ে জামাপ্যান্ট পরতে পরতে কটমট করে কাজলের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কৃষ্ণা হঠাৎ লক্ষ্য করলো। মনে মনে ভাবলো — কোন গুরুতরো ব্যাপার হয়েছে মনে হয়। কাজল সবই জানে। কিন্তু কাজলকে কিছু বলা যাবে না। এরা হচ্ছে ঝিয়ের জাত। কোন কিছু জেনে থাকলে পাঁচ কান করবে। আমাকে ব্যাপারটা অন্য কারোর কাছ থেকে জানতে হবে। তখনকার মতো ব্যাপারটা গড়ালো না বেশি দূর।
প্রশান্ত ব্যাপারটা ফেলতেও পারছে না আর গিলতেও পারছে না। কৃষ্ণাকে বলতে না পারার দুটি কারণ। এক, মহিলার গায়ে হাত দেওয়া আর দুই, প্রাক্তন প্রেমিকা মণিকা ভেবে তার গায়ে হাত দেওয়া ব্যাপারটা কৃষ্ণা মোটেই মেনে নেবে না। উপরন্তু তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ডেকে আনবে। আবার ওই মহিলার হাতের চড় ও ওর প্রেমিকের নারকেল দিয়ে ওর মাথায় মারা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। সেদিন থেকে প্রশান্ত একদম চূপ মেরে গেছে। কাজে কর্মে ঠিক মন দিতে পারছে না। পুরোদস্তুর গম্ভীর হয়ে গেছে। কৃষ্ণা সবই লক্ষ্য করছে। বুঝতে পারছে সিরিয়াস কিছু ঘটেছে। কিন্তু জোর করে জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাচ্ছে না। মনে মনে ভাবছে যাক্ কটা দিন। মেজাজটা একটু ঠাণ্ডা হলে জিজ্ঞাসা করা যাবে।
প্রশান্ত একটা নতুন ডাইনিং টেবিলের অর্ডার দিয়েছিলো। সেদিন ডেলিভারি দিতে এলো। গেটের সামনে ট্রলি ভ্যান থেকে মালটা নামাতে হবে। ভ্যানওলা একা পারবে না তাই প্রশান্ত ও ভ্যানওলা দুজনে মিলে ধরাধরি করে ভিতরে নিয়ে যাবে তাই প্রশান্ত ও কৃষ্ণা গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলো। মাল খালাস করার ঠিক পূ্বমুহূর্তে ডানদিক থেকে সেই ছেলেটি পিছনে সেই মেয়েটিকে নিয়ে বাইক চালিয়ে গেটের সামনে এসে পড় তো পড় প্রশান্ত ও কৃষ্ণার মুখের সামনে এসে থেমে গেলো। ভ্যানটা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে রাস্তাটা ব্লক হয়ে ছিলো। বাইক পাশ হবার মতো জায়গা ছিলো না। মুখোমুখি পড়ে যাওয়ার কারণে প্রশান্ত মুখ লুকোতে পিছন ঘুরে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো। কৃষ্ণা বলে উঠলো,
" আঃ, তুমি আবার চলে গেলে কেন? দেখছো রাস্তা জাম হয়ে যাচ্ছে।" বাইকের ছেলেটা ও মেয়েটা তা শুনে হেসে হেসে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো, " পালাবেনা। যা করেছে মুখ দেখাতে পারছে না। লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছে।"
কথাটা কৃষ্ণার কানে গেলো। কথাটা কৃষ্ণার কানে গেলো। কৃষ্ণা জিজ্ঞাসা ওদের জিজ্ঞাসা করলো, " কি যেন বললেন যা করেছে , লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছে। কি করেছে আমার স্বামী যাতে মুখ লুকোতে হচ্ছে?"
ভিতর থেকে প্রশান্ত কৃষ্ণাকে শোনা থেকে বিরত থাকার জন্য বললো," আরে চলে এসো না। মাল তুলতে অসুবিধে হবে।"
কৃষ্ণার প্রশ্নের উত্তরে, ছেলেটি বললো, " আপনি জানেন না আপনার স্বামীর কীর্তি? গিয়ে আপনার স্বামীকেই জিজ্ঞাসা করুন উত্তর পেয়ে যাবেন।" আর ভ্যান চালককে বললো,
" আরে কতকক্ষণ দাঁড়াবো? একটু চেপে দিলে গাড়িটা বেরিয়ে যাবে।" ভ্যানচালক ভ্যানটা একটু চেপে দিলে বাইকটা পিছনে ধোঁয়া ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। পাশের বাড়ির জানলায় কৃষ্ণাদের সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ এক প্রতিবেশী দাঁড়িয়ে ছিলো ঘাপটি মেরে কথা গুলো গিলবে বলে। চোখে চোখ পড়তেই সরে গেলো। কৃষ্ণা তাই বেশি বাক্যব্যয়ে না করে তখনকার মতো চূপ করে ঘরে ঢুকে গেলো। ভ্যানওয়ালা টেবিল ফিট করে দিয়ে চলে গেলো। প্রশান্ত ঘরের ভেতরে থেকে সব কথা শুনছিলো। মনে মনে ভাবলো —যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যে হয়। পড় তো পড় একেবারে সামনা সামনি। এবার তো কৃষ্ণা ছাড়বে না।
ঠিক তাই কৃষ্ণা কদিন প্রশান্তকে এড়িয়ে চলতে লাগলো যোগ্য জবাব দিতে।ঠিক প্রশান্ত যেরূপ ভাবে কৃষ্ণাকে এড়িয়ে চলছিলো। কৃষ্ণা চেয়েছিলো প্রশান্ত নিজে থেকে ধরা দিক। দু জনের মান অভিমানের পালা চলতে লাগলো। ঘটনাটা ঘটার পর থেকে প্রশান্ত তার সহজাত অবস্থা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। প্রয়োজন ছাড়া কথা প্রায় বন্ধই করে দিয়ে ছিলো । অবশেষে প্রশান্তই একদিন কৃষ্ণাকে জিজ্ঞাসা করলো, " কি গো তুমি দেখছি আমাকে এড়িয়ে এড়িয়ে চলছো। কি ব্যাপার?
— ব্যাপার তো তোমার। একই প্রশ্ন তো তোমাকে করতে পারি।
প্রশান্ত চূপ করে থাকে। তার এখন শাঁখের করাত। না বলেও থাকতে পারছে না। আবার বললেও বিপদ। কৃষ্ণা বুঝতে পারে তার স্বামী একটা যন্ত্রণা বহে নিয়ে বেড়াচ্ছে। উগরে দিতে পারছে না। এমন কিছু ঘটেছে যা ও বলতে পারছে না আমার ভয়ে। মেয়ে ঘটিত কোন কিছু হতে পারে। তাতে ওর কপাল পুড়তে পারে। কৃষ্ণা নিজেও মনে মনে ভয় পেয়ে যায়। বেশ কিছুদিন হলো দুজনে বিছানার দুদিকে মুখ করে শুচ্ছে। কেউ কারোর সঙ্গে কোন কিছু শেয়ার করছে না। কৃষ্ণা ভাবলো অভিমান করে থাকলে তাদের দাম্পত্য জীবন বিঘ্নিত হবে। শেষে বড়ো কিছু না ঘটে যায়। অবশেষে কৃষ্ণা একদিন প্রশান্তকে চেপে ধরলো,
" বলো না কী হয়েছে তোমার? একা একা কষ্ট বহে নিয়ে বেড়াচ্ছো।"
" বলে কী করবো? তুমি কি ভালো ভাবে নেবে?" প্রশান্ত বললো।
—কেন এমন কী হয়েছে যা আমাকে বলা যায় না?
—যায় না বলেই বলিনি। আমার কি বলতে ইচ্ছা করে না, করে কিন্তু পারি না।
—যা হয়েছে তুমি বলো। আমি কিছু মনে করবো না, কথা দিচ্ছি।
প্রশান্ত বলতে শুরু করলো সমস্ত ঘটনাটা ,যা যা ঘটেছিলো। সব শুনে কৃষ্ণা বললো, " সে তোমার প্রেমিকা থাকতেই পারে। বিয়ের আগে অনেকের অনেক কিছু থাকে। বিয়ের পর সে সব থাকা উচিত নয়। তবে বাপু আমি মণিকার কথা ভাবছি না। তুমি কি করে ওই ভাবে রাস্তায় একজন অপরিচিত মহিলার গায়ে অভদ্রের মতো হাত দিলে , আমার তো মাথায় ঢুকছে না।
—সে তো ঠিকই। আমি নিশ্চিত ছিলাম ও মণিকাই হবে। তাই আমি চিন্তা না করে ওই মহিলার গায়ে হাত দিয়ে ডাকি যাতে পিছন ফিরে দেখে। পরে কথাটা ভেবে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়ে ছিলাম।
—যদি মণিকাই হতো, তাহলে কি রাস্তায় ওর গায়ে হাত দিতে পারো? মেয়েদের একটা সম্মান নেই?
— না, তা পারি না। কিন্তু ব্যাপারটা এতো চকিতে ঘটে গেলো! আসলে কি জানো তুমি যে আমাকে নারকেল আনতে বলেছিলে এটা আমি কিছুতেই মনে করে উঠতে পারছিলুম না। যদি মনে থাকতো,এসব কিছু ঘটতো না। তাহলে আমি কখন বাড়ি চলে আসতাম। আসলে কপালে আছে তো হবেই। আমার মনে হয় ডিমেনশিয়ায় আমি আক্রান্ত।
— হ্যাঁ, ঠিক যদি তাই মনে করো তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কনসাল্ট করো। রোগ ফেলে রেখে দিলে তো বেড়ে যাবে।
—আমি আজ তোমাকে শেয়ার করতে পেরে খুব হালকা বোধ করছি।
— আমি তো তোমার শত্রু। তাই আমাকে বাদ দিয়ে এসব করে যাচ্ছো। আমাকে তো তোমার আর ভালো লাগে না।
— একটা ঘটনা দিয়ে আমাকে বিচার কোরো না। তাই হলে ভুল করবে। এতো দিন ঘর করছো, এখনও চিনতে পারলে না।
ঘরের আলো নিভিয়ে প্রশান্ত কৃষ্ণাকে বুকে টেনে নেয়। পরস্পর পরস্পরের আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখচ্ছবি দেখতে লাগলো।
==================
Samir Kumar Dutta
Pune, Maharashtra