Click the image to explore all Offers

গল্প।। মায়ের স্মৃতি।। অঞ্জনা দেব রায়



মায়ের স্মৃতি


 

অঞ্জনা দেব রায়



  মধ্যবিত্ত পরিবারে যা হয় কিছু না কিছু অভাব লেগেই  থাকে   রানীর সংসারেও অভাব ছিল কিন্তু রানী কাউকে বুঝতে দিত না রানী তার স্বামী যতীশ একটা নিয়ম নিষ্ঠার মধ্যে চলত যতীশের রোজগারের অল্প  টাকায় রানী এমনভাবে সংসার চালাত যে তাঁর চার ছেলেমেয়ে শ্বশুড়  শাশুড়ি কাউকেই কোন অভাব বুঝতে দিত না   তবে রানীর মা কিরণ শশী বিশ্বাস চাকরি করত বলে আর রানী তাঁর একমাত্র সন্তান হওয়ায় রানীর সংসারে কিছু সাহায্য করত রানীর মা বিয়ের সময় রানীকে অনেক প্রয়োজ নীয় জিনিসের সাথে একটা হাতে ঘোরানো সেলাই মেশিন দিয়েছিল   রানী বিয়ের আগে থেকেই নানারকমের হাতের কাজ মেশিনে  নানারকমের সেলাই  শিখে ছিল ফলে রানী বিয়ের পর ঘরে বসে ছেলেমেয়েদের  জামা, ঘরের পর্দা এছাড়া ঘরের দরকারের অনেক কিছুই সেলাই করত

ছেলেমেয়েরা  বড় হওয়ার পর রানী  যেন বেশি করে  সংসারের বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে  পড়লো আস্তে আস্তে রানীর  দুই মেয়েও বড় হয়ে হাত সেলাই মেশিনটি চালাতে শিখে গিয়েছিল মেয়েরাও অনেক কিছু সেলাই করত মেশিনটা চললে  খট খট করে শব্দ হত তখন বাড়ির সবাই বুঝত কিছু সেলাই করা করা হচ্ছে এইভাবে সময়ের নিয়মে চলতে চলতে ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেল এবং এক এক করে ছেলে ও মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেল মেয়েরা বিয়ের পর তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল  ছেলেরাও তাদের কাজ ও সংসার জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল

রানী ও যতীশের বয়স হয়েছে রানী আগের মত আর মেসিন চালিয়ে সেলাই করতে পারে না   যতীশ মাঝে  মাঝে মেশিনটাকে পরিষ্কার করে তেল দিয়ে ঠিক করে রেখে দেয় রানীর বড় মেয়ে দূরে থাকে তাই  বছরে একবার বাড়িতে আসে ছোট  মেয়ে কাছাকাছি থাকে বলে মাঝে মাঝে রানীর কাছে এসে দরকারি কিছু সেলাই করে দিয়ে যায় ছেলের  বউরা কেউ সেলাই করতে পারে না ফলে  মেশিনটা বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে

কিছুদিন বাদে  রানীর ছোট জামাইয়ের অফিসে  যাতায়াতের সুবিধার জন্য কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনে চলে যায়  তাই  ছোট মেয়েটা মাঝে মধ্যে আসতে পারে না  ফলে মেশিনটাতে আর সেলাই করা হয় না সুন্দর ঢাকনা দিয়ে ঢাকা থাকে    মেশিনটাতে আর সেলাই করা হয় না বলে রানী ছোট মেয়েকে বলল " মেশিনটা তোর ফ্ল্যাটে নিয়ে যা, তোর যখন ইচ্ছে হবে সেলাই করতে পারবি " ছোট মেয়ে বলল " আমাদের ছোট ফ্ল্যাটে জায়গা কম  নিয়ে যেতে পারব না তুমি পাশের বাড়ির রমাকে দিয়ে দাও রমা গরীব মানুষ , সেলাই করে রোজগার করে নিজের সংসারে সাহায্য করতে পারবে রানী শুনে চুপ করে রইল কোন কথা বলল না

মার্চের ১৭ তারিখ রানী তার  ছোট মেয়ের মেয়ে বাবাইর জন্মদিনে ষষ্টিকে নিয়ে কলকাতায় ছোট  মেয়ের ফ্ল্যাটে  যাবে ঠিক করল ষষ্টি,  রানী ও যতীশ কে দেখভাল করত   দিদা , দাদু ও ষষ্টি পিসি আসবে বলে বাবাই খুব খুশি বাবাইর জন্মদিনের আগের দিন  ট্যাক্সি করে ছোট মেয়ের ফ্ল্যাটে যাওয়ার সময় রানী ষষ্টিকে দিয়ে সেলাই মেশিনটা ট্যাক্সিতে উঠিয়ে নিল সেলাইমেশিন  চলে আসলো কলকাতার ফ্ল্যাট বাড়িতে মেশিনটাকে  দেখে রাগ হলেও তুলি মাকে কিছু না বলে তাড়াতাড়ি করে মেশিনটাকে খাটের নীচে ঢুকিয়ে দিল রানীর ছোট জামাই তন্ময় তখন কিছু বলল না কিন্তু রানী,  যতীশ ও ষষ্টি বাড়ি চলে গেলে তন্ময় তুলিকে বেশ কঠিন ভাবে বলল " এই ছোট ফ্ল্যাটে জায়গা কম তারপর আবার মেশিনটা এখানেই নিয়ে আসতে হল " তুলি কোন কথা না বলে চুপ করে রইল কিন্তু  মাঝে মাঝেই মেশিনটা নিয়ে তন্ময় তুলিকে কথা শোনাত তবে তুলি কাজ কম থাকলে কখনো মেশিনটা নিয়ে সেলাই করতে বসত কিন্তু  মেশিনটায় সেলাই করতে করতে সুতো কেটে যেতো বলে তুলি মেশিনটাতে তেল দিয়ে আবার ঢেকে  রেখে দেয়  বেশ কয়েক বছর বাদে যতীশ ও রানী মারা যাওয়ার পর  মেশিনটা আর বের করা হয় না , ফলে খাটের নীচে থাকতে থাকতে ধুলো জমে গিয়েছে মেশিনটার উপর একদিন তন্ময় খাটের নীচটা পরিষ্কার  করতে গিয়ে মেশিনটাকে বাইরের ঘরে বের করে দিয়ে   তুলিকে উল্টো পাল্টা কথা শোনাতে লাগলো   তুলির তখন মাথা গরম হয়ে যায় আর  তন্ময়কে বলল " মেশিনটা আমার মায়ের স্মৃতি মেশিনটা নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলবে না " কিন্তু তন্ময় কোন কথাই শোনে না ,শুধু বলতে থাকে  মেশিনটার জন্য ঘরের অনেকটা  জায়গা নষ্ট হচ্ছে এরকম  কিছুদিন বাদে বাদে মেশিনটা নিয়ে অশান্তি  তুলির আর ভাল লাগে না তাই   তুলি তখন রাগ করে বলল "মেশিনটাকে  যত্ন করে ও  ঠিক করে রাখতে পারবে এমন একজন মানুষের  কাছে  দিয়ে দেবে"   কিছুদিন বাদে  অনেক দিনের পরিচিত ও বিশ্বাসী গরীব ছেলে সুভাষকে ডেকে মেশিনটা দিয়ে বলল " এই মেশিনটা আমার মায়ের স্মৃতি , ঠিক করে নিয়ে সেলাই করবি আর যত্ন করে রাখবি , কোনোদিন কাউকে দিবি না , নিজের কাছেই রাখবি সুভাষ দুটাকা দিয়ে মেশিনটা নিয়ে যাওয়ার সময় যতদুর দেখা যায় মেশিনটার দিকে তাকিয়ে রইলো তুলি আর তুলির  চোখ দিয়ে জল  গড়াতে লাগল

ছবি ঋণ- ইন্টারনেট 

 --------------------------------------

                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 

ঠিকানা৫৫৩ পি মজুমদার রোড , কলকাতা৭৮

তারিখ১৩/ / ২১ 

                       

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.