গল্প।। হ্যাপি ভেলেন্টাইনস ডে ।। তনিমা সাহা
জেসমিনের সঙ্গে ডেট করছে সপ্তক। জেসমিন বোল্ড স্বভাবের কিন্তু মনটা বড্ড কোমল। সপ্তক যদিও বোল্ড জেসমিনকে দেখেই প্রেমে পরেছিল। কিন্তু জেসমিন সপ্তকের সামনে যে পোশাকে আসে, সেই একই পোশাকে সপ্তকের বন্ধুদের সামনেও চলে আসে। সপ্তক প্রথম-প্রথম রাগ করতো, জেসমিনকে বোঝানোরও চেষ্টাও করেছে বহুবার। একরোখা জেসমিনের বক্তব্য, "যে পোশাকে তুমি আমাকে দেখে ভালোবাসলে এখন সে পোশাককে তোমার অপছন্দ কেন? আমি গতকাল যা ছিলাম, আগামীকালও তা-ই থাকবো। তুমি আমার জন্য তোমার বন্ধুমহলকে কি ছাড়বে? নিশ্চয়ই না। তবে আমি কেন নিজের রুচির পরিবর্তন করবো"। সপ্তক বললো, "দেখো সোনা। আমি তো আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই বলছি। আগামীতে যখন আমরা বিয়ে করবো তখন তো তোমাকে একটু রুচিসম্মত-পোশাক পরতে হবে। তখন তো তুমি এই খোলামেলা-পোশাকে আমার মা-বাবার সামনে ঘুরতে পারবেনা। তাই এখন থেকেই যদি নিজেকে একটু……"। সপ্তককে আর কথা শেষ করতে না দিয়েই জেসমিন বললো, "ওয়েট...ওয়েট...এখানে বিয়ের কথা কোথা থেকে আসছে? তুমি কি কোনো সেনাবাহিনীতে কাজ করো নাকি যুদ্ধে যাচ্ছো...যে অতি সত্বর তোমাকে বিয়ে করতে হবে"। থতমত খেয়ে সপ্তক বললো, "মা..মা..মানে। ঠিক বুঝলাম না। সেনাবাহিনী..যুদ্ধ কেন"? "তুমি সেন্ট ভেলেন্টাইন সম্পর্কেই জানো না.. আর ড্যাং ড্যাং করে প্রেম করতে চলে এসেছো", বলে সপ্তকের হাঁ-করা মুখটাকে পেছনে ফেলে গটগটিয়ে বেড়িয়ে গেল জেসমিন। জেসমিন সপ্তককে ডাম্প করেছে শুনে সপ্তকের বন্ধুরা তার খুউব লেগপুল করলো। মৃদুল তো বলেই দিল, "অত্তো হট আর সেক্সী গার্লফ্রেন্ডকে হাতে রাখার মতো যোগ্যতা এই বোকারামের নয়। তার জন্য কুশালের মতো মর্দ হতে হয়...বুঝলি"। সপ্তকের মনে পরলো যেদিন জেসমিন বডিকন ড্রেসে ওর সাথে দেখা করতে কফিশপে এসেছিল, সেদিন মৃদুল আর কুশালও সামনে ছিল। কুশাল আর জেসমিনের চোখাচোখিটা কিন্তু সপ্তকেরও নজর এড়ায়নি। কিন্তু সে অতোটা পাত্তা দেয়নি। তিনদিন পর একটা কাজে মল্লিকবাজারে সপ্তক গিয়েছিল। তখন সেখানে একটা রেডএলার্ট হোটেল থেকে কুশাল আর জেসমিনকে একসাথে বেরোতে দেখে তার রাগে সমস্ত শরীর রি-রি করে উঠলো।
একটি বন্ধ-কারখানা...জেসমিন ঠিক এখানেই ডেকেছে সপ্তককে। সেদিন কুশাল-জেসমিনকে একসাথে দেখার পর সপ্তক জেসমিনকে ফোন করে সমস্ত ক্ষুণ্ণতা উগরে দিয়েছিল। ঠিক একদিন পরেই জেসমিন সপ্তককে ফোনে বিস্তর কান্নাকাটি করে ক্ষমা চায় এবং বন্ধ-কারখানাটায় ডেকে পাঠায়। কারখানাটা সপ্তকের বাড়ির একদম কাছেই। কারখানায় পৌঁছে সপ্তক দেখে যে কারখানার একটা কোনায় বেলুন দিয়ে সাজানো আর একটা দুজন বসার মতো চকমকে সাদা-মলমল কাপড় দিয়ে ঢাকা টেবিলের ওপর একটা হার্টশেপ কেক রাখা, যার ওপর ক্রিম দিয়ে লেখা, 'হ্যাপি ভেলেন্টাইনস ডে মাই লাভ'। সপ্তক এতোকিছু দেখে আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেললো। এমনসময় এক মোহময়ী সাজে জেসমিন সপ্তকের সামনে এসে দাঁড়াল। সপ্তক কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিল কিন্তু জেসমিন তার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে বললো, "উঁহু! আজ কোনো কথা নয়। আজ শুধু আবেগে ভাসবো"। তারপর দুজনে মিলে কেক কেটে জেসমিন সপ্তককে একটুকরো কেক খাইয়ে দিল। তারপর আবেদনময়ী কায়দায় নাচতে লাগলো। সপ্তকের খুব ইচ্ছে করছিল জেসমিনের নিখুঁত কটিদেশে হাত রেখে তাকে আদর করতে। কিন্তু তার পা-টা চলছে না। দুম করেই সপ্তক জ্ঞান হারিয়ে গড়িয়ে পরলো। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন সে বুঝতে পারলো যে তার হাত-পা খুব শক্ত করে বাঁধা রয়েছে। গলার কাছটায় একটা শক্তচাপ অনুভব করলো। চোখ মেলে অতিকষ্টে বললো, "জে...স...মিন"। সামনে বসা জেসমিন মুখে ক্রূরহাসি দিয়ে হাতে ধরা বাঞ্জিরোপটায় জোরে হ্যাঁচকা-টান দিল। স্পন্দনহীন সপ্তকের কানের কাছে এসে জেসমিন ফিসফিসিয়ে বললো, "হ্যাপি ভেলেন্টাইন ডে..মাই লাভ"।
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
:- সমাপ্ত :-
লেখনীতে: তনিমা সাহা