ধারাবাহিক উপন্যাস ।। পরজীবী (পর্ব - ১১) ।। অভিষেক ঘোষ
পরজীবী
অভিষেক ঘোষ
একাদশ পরিচ্ছেদ
২০১৫
সকাল থেকে দু'বার ফোনটা বেজেছে । পার্থ রিসিভ করে নি, নবমীর সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে বলে লজ্জায় আজ আটটায় উঠে পড়েছে - লোকের বাড়ি বেলা অব্দি বিছানা জুড়ে রাখা অভদ্রতা । তৃষা ফোন করেছিলো । গতকালই দু'বার কথা হয়েছে । তৃষা পার্থর জীবনে পিসার হেলানো গম্বুজের মতোই কিছুটা হেলে আছে । আজ বাদে কাল মেয়েটার নির্ঘাত বিয়ে হয়ে যাবে । ওকে নিয়ে বেশি চাপ নিয়ে লাভ নেই । যতদিন পায়ের নিচে জমিটা শক্ত না হচ্ছে, মেয়েদের নিয়ে বেশি ভেবে হড়কাতে বা, হোঁচট খেতে চায় না পার্থ । স্কুলে, কলেজ জীবনে চোট খেয়েছে যথেষ্ট, মনটা তুবড়ি হয়ে জ্বলে উঠলেও, তুবড়ে যেতে দেরি হয় নি । শিক্ষা নিয়েছে পার্থ, তাকে হাঁটুজলেই থাকতে হবে । জল গভীর বুঝলেই পালাতে হবে । তাই তো, গত দু'দিন টুকটাক হোয়াটস্ অ্যাপ ছাড়া তৃষাকে সেভাবে পাত্তা দেয় নি সে । গতকাল ফোন ধরলেও বেশি হ্যাজায় নি । কিন্তু পালাতে আর পারছে কই ? জল বাড়ছে, স্রোতও... সেই বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে । সে আজও পালাতে শিখলো না ! উপরন্তু সকাল সকাল ঢাক বাজার শব্দে ঘুম থেকে উঠে, ফোনটা অন করতেই দেখে শ্রীকান্ত তাকে আরেক কেস্ খাইয়ে বসে আছে !
একে তো এখানে টাওয়ারের ঠিক নেই - এই নেট চলছে তো এই বন্ধ ! তার উপরে এই আরেক গেরো ! সেই যুবশক্তি ক্লাবের গল্প । 'যুবশক্তি ভ্রাতৃবৃন্দ' নামে ঢপের একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে তাকে কখন অ্যাড করে দিয়েছে । সেখানে আবার কায়দা করে লিখেছে, 'শ্রদ্ধেয় শ্রী পার্থ ভট্টাচার্য মহাশয়কে অনেক ধন্যবাদ আমাদের প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপনের জন্য । আমরা অত্যন্ত আনন্দিত । সামনের মাসেই আমরা ছোটো ছবি অর্থাৎ শর্ট ফিল্ম তৈরির যে ওয়ার্কশপ করার কথা ভেবেছি, তাতে পার্থবাবু আমাদের সাধ্যমতো সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন । তাঁকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই ।' পুরো ঢপ ! সে কখন সম্মতি জানালো ? বলেছে, 'দেখছি !' ওটা তো কাটিয়ে দেওয়ার জন্য বলা । কিন্তু সেই ছলাকলা যে কাজে দেয়নি, বলাই বাহুল্য । নাছোড় ছোকরা । একবার সুন্দরপুর থেকে বেরিয়ে ট্রেনে উঠলেই হয়, তারপর জাস্ট টুক করে ওই গ্রুপটা থেকে লীভ করে যাবে আর শ্রীকান্তকে ব্লক করে দেবে । ব্যাস্ ! নয়তো পিছনপাকা ছেলেটা জ্বালিয়ে মারবে । ওর রাজনীতিতেই যাওয়া উচিত, নাম করবে ।
পার্থ ওর হ্যান্ডিক্যামে কিছু ভিডিও চালিয়ে দেখছিলো । নবমীতে টুকটাক কিছু ফটোও তুলেছে মোবাইলে । মোবাইলে দূরের দৃশ্যগুলো ভালোই ওঠে । পুকুরে হাঁসের দল প্যাঁকপ্যাঁক করতে করতে নেমে যাচ্ছে, বিষণ্ন মুখে যতীন বাবুদের বাড়ির পিছনের কুয়োতলায় ছেঁড়া জামা পরা ভাইকে ততোধিক ছেঁড়া জামা পরা বছর দশেকের একটা মেয়ে খাইয়ে দিচ্ছে, জানালার সামনে নোটবই খুলে বসে, পড়া মুখস্ত করতে করতে ক্যামেরা-সহ পার্থকে দেখে জিভ ভ্যাঙাচ্ছে তনুশ্রী, ছাদে একা একা ব্যায়াম করছেন চন্দ্রকান্ত মিত্র, প্রদীপের সলতে পাকাচ্ছেন অনুশ্রী দেবী, গোডাউনে পুরোনো জিনিসপত্রের মধ্যে থেকে টিভির সেই সেকেলে অ্যান্টেনা বের করে দ্যাখাচ্ছেন মন্টুবাবু আর মুখে এসে পড়ছে অমল আলো, ধানক্ষেতে গরুর পতনশীল গোবর কচুপাতায় সংগ্রহ করছেন এক বধূ, কুমোরপাড়ায় মাটির কলসি তৈরি করছে এক যুবক, মাটির দোকানঘর থেকে হাত বাড়িয়ে খদ্দেরকে আলু-পেঁয়াজের প্যাকেট তুলে দিচ্ছে বৃদ্ধ দোকানি আর সেই অবসরে দোকানের খুঁটিতে গা ঘষে নিচ্ছে একটা রামছাগল - এরকম অনেক ছবি তুলেছে পার্থ । এর মধ্যে অনেকগুলোই তার সংগ্রহে থেকে যাবে । বাড়ি ফিরে, হালকা এডিট করে ব্লগে আর ফেসবুকে দেবে ।
ভিডিও যা তুলেছে, তাও নেহাৎ মন্দ নয় । সে ঠিক করেই এসেছিলো, পুজোর ছবিই বেশি তুলবে । হয়তো গ্রামীণ পুজোয় কলকাতার সেই জমজমাট ভাব থাকবে না, পরিবেশ পরিস্থিতি না বোঝায় আঁচটাও অমিল হতে পারে, তবে বলার ধরণে ফিকশন্ আর নন-ফিকশন্ থাকবে গলাগলি ক'রে । তার প্রথমে ইচ্ছে ছিলো, ঠাকুর গড়া থেকে শ্যুট করবে । কিন্তু সে তো সম্ভবই নয় ! অত ছুটি নেওয়া বা, অতদিন ধরে লোকের বাড়ি থাকা অসম্ভব । তাই সে আসা-ইস্তক ইন্ট্যারাকশনে জোর দিয়েছে । বুঝেছে, অনেক ক্ষেত্রে অনেকের প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করে ফেলছে । যেমন সেই ভিডিওটা... রান্নাঘরে অনুশ্রী দেবী রান্না করছেন অন্যমনস্কভাবে । রজতও এলোমেলো ছবি তুলতে গিয়ে ভুল সময়ে ভুল দৃশ্য তুলে ফেলেছিলো... কারণ সেই মুহূর্তে রান্নাঘরে ঢোকে চন্দ্রকান্তর বন্ধু সরিফুল । ধবধবে ফরসা, যেন সাহেবদের মতো গায়ের রঙ্ ! সে অন্যমনস্ক অনুশ্রীর শাড়ির আঁচলটা তুলে মুখ মুছে নিলো ! কোনো বিবাহিতা প্লাস হিন্দু মহিলার সাথে পরপুরুষ প্লাস মুসলিম কোনো যুবক এরকম ব্যবহার করতে পারেন কি ? মন্টুবাবুর সন্দেহ সুতরাং সঠিক ! তারপরই অনুশ্রী দেবী শাড়িতে টান পড়ছে টের পেয়ে চমকে তাকালেন । চোখে মৃদু ধমক্, কিন্তু পার্থর মনে হয়েছিলো, প্রশ্রয় । কে জানে বাবা, দু'জনের ঠিক কী রিলেশন ! মন্টুবাবুর কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার পরই সে ওই ভিডিওটা ডিলিট করে দিয়েছে । এরকম আর একটা দৃশ্যও সে অসচেতনভাবে তুলে ফেলেছিলো, সেটাও ডিলিট মেরেছে । ওটায় আবার সূর্যকান্তর আড়ি পেতে অন্যের কথা শোনার ভিডিও রেকর্ড হয়ে গেসলো ! ধরা পড়লে কেলিয়ে কলকাতা পাঠিয়ে দিতো । তাই এরপর থেকে পার্থ টোটালি পুজোয় মনোনিবেশ করেছে । তবে অনুশ্রী দেবীর সাথে অন ক্যামেরা দু-চার কথা বলতে গিয়ে দেখা গেলো, ভদ্রমহিলা বেশ ট্যালেন্টেড ! প্রথমতঃ তিনি চৌদ্দ শাকের সবক'টার নাম বলে গেলেন... "এতো খুব সোজা । আমার মেয়েও জানে । ওল শাক, কেঁউ শাক, বেতো শাক, সর্ষে শাক, কালকাসুন্দে শাক, জয়ন্তী শাক, নিম শাক, হেলঞ্চা বা হিঞ্চে শাক, শাঞ্চে বা শালিঞ্চা শাক, গুলঞ্চ শাক, পলতা বা পটুক পত্র শাক, ভাঁটপাতা শাক, শুলফা শাক ও শুষনী শাক । হয়েছে কিনা, গুনে বলুন ?" - অনুশ্রী দেবী সফল হতেই তনু এসে পিছন থেকে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো । মিষ্টি দৃশ্য । তারপর কথায় কথায় জানা গেলো, উনি আবৃত্তি শিখেছিলেন । পার্থর জোরাজুরিতে উনি অন ক্যামেরা সামান্য কয়েকটা লাইন রবি ঠাকুরের 'দেবতার গ্রাস' থেকে আবৃত্তি করলেন পার্থ ঘোষের ভঙ্গিতে...
"... এক দিকে যায় দেখা
অতিদূর তীরপ্রান্তে নীল বনরেখা,
অন্য দিকে লুব্ধ ক্ষুব্ধ হিংস্র বারিরাশি
প্রশান্ত সূর্যাস্ত-পানে উঠিছে উচ্ছ্বাসি
উদ্ধতবিদ্রোহভরে । নাহি মানে হাল,
ঘুরে টলমল তরী অশান্ত মাতাল
মূঢ়সম । তীব্রশীতপবনের সনে
মিশিয়া ত্রাসের হিম নরনারীগণে
কাঁপাইছে থরহরি । কেহ হতবাক্,
কেহ বা ক্রন্দন করে ছাড়ে ঊর্ধ্বডাক
ডাকি আত্মজনে । মৈত্র শুষ্ক পাংশুমুখে
চক্ষু মুদি করে জপ । জননীর বুকে
রাখাল লুকায়ে মুখ কাঁপিছে নীরবে ।"
শুনে মুগ্ধ পার্থ, কিন্তু এরপর অনুশ্রী দেবীর মন্তব্যটি ছিলো চরম : "গ্রাম ও এরকমই... এক দিকে নীল বনরেখা, স্বপ্নের মতো, মনে হয় সুখে ঘর করবো ! আরেকদিকে 'লুব্ধ ক্ষুব্ধ হিংস্র বারিরাশি', মুক্তি নেই ।"
"আপনার গ্রাম ভালো লাগে না ?"
"ভালো লাগে, তবে সবটা না ।"
"কীরকম ?"
"প্রয়োজনে অসুস্থ মানুষকে ডাক্তার দেখাতে পারবেন না । ছেলে-মেয়েরা ভালো স্কুল-কলেজ, ভালো পরিষেবা পাবে না, শহরের অনেক সুবিধাই এখানে নেই । কিন্তু এখানে পুকুর ভর্তি জল, জল ভর্তি মাছ, গাছ ভর্তি ছায়া, ছায়া ভর্তি শান্তি... তাই না ?"
"চমৎকার বললেন !"
"থাক্... হয়েছে.." বলে অদ্ভুত হেসে ভদ্রমহিলা উঠে চলে গেলেন । পার্থ নিশ্চিত, এক সময়ে ইনি অনেক পুরুষের মাথাব্যথা, বুকে-ব্যথার কারণ হয়েছেন । তবে স্বভাবটা ভারি মিষ্টি, সূর্যবাবুর স্ত্রী চন্দনা দেবীর ঠিক বিপরীত । সূর্যকান্ত যদিও বৌ-কে অন্য কী একটা নামে প্রায় ফিসফিস করে ডাকেন, একেবারে হাঁড়ির মুখে যোগ্য সরা ।
চন্দনা দেবী তাঁর সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন, তার মধ্যে তাঁর বাপের বাড়ির প্রশস্তি ও এ বাড়ির নিন্দা একটা বড়ো জায়গা জুড়ে ছিলো । স্বভাবতই সেগুলো পরে ডিলিট করে দেবে পার্থ । কোনো কাজের নয় । ''আমার বাপের বাড়িতে বিরাট ছাদ । এখানকার মতো নয়, এই মাঝখানে বিচ্ছিরি একটা উঠোন.. এরকম নয় । কী কাজে লাগে এটা বলো তো ? বরং অসুবিধা । কোনো প্রাইভেসি নেই ।'' তিনি পার্থকে 'তুমি করেই বলেছেন, - "আমাদের ওখানে সব বাড়িতে বাচ্চারা নাচ-গান-আবৃত্তি কিছু না কিছু শেখে । আর এখানে দেখো... গরমকালে ওই কলার ভেলায় চেপে পুকুরে ঝাঁপান জুড়বে, বর্ষা এলেই কাদা মেখে ফুটবল, নাহলে বাকি সময় এই গাছে, ওই গাছে । আমাদের পুকুরের পাশের কুলগাছটা একেবারে নষ্ট করে দিলে ! তাল পড়বার উপায় নেই, উধাও । কাঁচামিঠে আমগাছটায় ঢিল মেরে মেরে শেষ করে দিলে । কাজের লোকগুলো মহা ফাঁকিবাজ । এই নিতাইকেই দেখো না... বিজয়া দশমীতে আমার বাপের বাড়িতে কেউ এলে নাড়ু তো পাবেই, তাছাড়া নারকেলের ছাপা, ছোলার ডালের বরফি এসবও থাকবেই । আর এখানে ? কে বানাবে ? কে দেবে ?... আমার বাপের বাড়িতে ওই এক ট্যালট্যালে ঝোল-তরকারি কেউ দু-বেলা খাবে না । এরা তো জানেই না... জিভের খিদে - বলেও একটা কথা আছে ।... আমাদের বাড়িতে একটা শিক্ষাদীক্ষার পরিবেশ ছিলো.. এখানে হয় ছিপ ফেলছে অন্যের পুকুরে, নয়তো এ ওর পিছনে লাগছে । আর আমার কর্ত্তা-ও তেমন... কাকে বলবো ? আমাদের ছেলেটাও বাবার মতোই গোঁয়ার আর একলসেঁড়ে হয়েছে । খালি বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছে... আরে এই বয়সে লেখাপড়াটা কর্ মন দিয়ে, ওসব করার সময় পরে অনেক পাবি ।" বোঝাই যায়, অনেক অভিযোগ তাঁর, তাই হয়তো মুখটা সারাক্ষণ কুঞ্চিত করে রাখেন । তবে স্বামী ও পুত্রের ব্যাপারেও যে তাঁর কিছু অভিযোগ আছে, এটা পার্থ ভাবতেও পারে নি ।
যতীন বাবুর বাড়িতে নবমীর পাঁঠা বলি দেখতে গিয়েছিলো সে । বেশিক্ষণ থাকে নি, তারপরই রজত আর তনুর সাথে চলে গেলো । একটা বাচ্চা ছেলে কেমনভাবে চোখে হাত চাপা দিয়ে বলির দৃশ্যটা দেখছিলো, ক্যামেরায় তুলে রেখেছে সে । পাঁঠার গলায় মালা আর কপালে তিলক পরিয়ে প্রতিমার সামনে নিয়ে যেতেই সেটা এমন পরিত্রাহি চেঁচাতে লাগলো, যেন সে টের পেয়েছে যে, তার জীবন সংশয় ! তারপর একজন মোটাসোটা লোক বিশাল খাঁড়াটা উপরে তুললো, তারপর মুন্ডু আর ধড় আলাদা । তারপরও কিছুক্ষণ মুন্ডুহীন দেহটার ছটফট । 'নবমীর পাঁঠা' বলে একটা বাগধারা আছে না ? তার ছেলেবেলার ক্লাস ফ্রেন্ড বাপ্পা কথাটা খুব বলতো । ক্লাস এইটে পড়ার সময় বাপ্পার বাবা বদলি হয়ে গেলেন, তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেই ! পাঁঠাবলি-র প্রসঙ্গ এলেই তার শরৎচন্দ্রের লালুর কথা মনে পড়ে যায় । ছেলেবেলায় গল্পটা পড়ে খুব মজা পেতো । যতীন বাবুদের বাড়ির পুজো ষাট বছরে পা দিলো, এরকমটাই শুনেছে সে । সেদিক থেকে মিত্তির বাড়ির পুজো অনেক পুরোনো, একশ' তিন-চার বছরের হবে ! রজত সঠিক বলতে পারে নি । শিল্পী বলাইচন্দ্র পালের সাথে রজত আলাপ করিয়ে দিয়েছিলো । বুড়ো মানুষ, চোখের চশমার একদিকে দড়ি বাঁধা । রোজগারপাতি বিশেষ হয় বলে তো মনে হয় না । ওনার ছেলেও মূর্তি গড়ে । তবে তার নাকি পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকানও আছে একটা বাজারে । পোটোদার বৃদ্ধ কথা খুব কম বলেন । চন্দ্রকান্ত মিত্তিরের ছেলে বুবুন আবার স্পেশ্যাল অর্ডার দিয়েছে তাঁকে । বুবুনকে একটা স্পাইডারম্যান বানিয়ে দিতে হবে, সেইজন্য একটা পোস্টকার্ড মাপের ছবিও দিয়ে গেছে । বলাইবাবু হেসে বললেন, "দেখি পারি কিনা... ছোটো ছেলেটা কতো আশা করে বললো.. তবে এসব সাহেব-সুবোর দেশের জিনিস.. বানাতে রুচি হয় না ।" তাঁর কাছেই জানা গেলো, মাটির তৈরি মূর্তি বানাতে গঙ্গা মাটি, গোরোচনা, গো-মূত্র এই তিন মূল উপাদানের প্রয়োজন হয় এবং এই উপাদানগুলি ছাড়া দুর্গার মূর্তি তৈরী হয় না । গণিকালয়ের পুণ্য মাটিও লাগে । গঙ্গা মাটি এবং গণিকালয়ের মাটি ছাড়াও দেবীর মূর্তি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় রাজদরবারের মাটি, চৌমাথার মাটি, গজদন্ত মৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি । নারীশক্তিকে সম্মান জানিয়ে দুর্গা পুজোয় ব্যবহৃত হয় নবকন্যার ঘরের মাটি অর্থাৎ নর্তকী বা, অভিনেত্রী, কাপালিক, ধোপানী, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা । তবে এ সবই নাকি আজকাল রেডিমেড প্যাকেটেই পাওয়া যায় । বিশেষ খোঁজাখুঁজি করতে হয় না । কেবল দশকর্মা ভান্ডারে গেলেই হলো । তবে পুজো করতে বসার আগেই ফর্দ ধরে পুজোর উপকরণ মেলাতে বসেন ঠাকুরমশাই, না মিললেই মুশকিল । রজত তাকে নবমীর একখানা ফর্দ দেখিয়ে অবাক করে দিলো, কাগজে পরপর পেন দিয়ে লেখা - মহাস্নানের দ্রব্য, দন্তকাষ্ঠ, সিন্দুর, চুবড়ি (একটি), লোহা (এক টুকরো), শাঁখা (দু‘টি), নথ (একটি), মূলপূজার শাড়ি (একটি), চণ্ডীর শাড়ি (একটি), আসনাঙ্গুরীয়ক, মধুপর্কের বাটি, দধি, মধু, ঘৃত, চিনি, প্রধান নৈবেদ্য (৪০/২২), কুচা নৈবেদ্য (চারটি), থালা (একটি), ঘটি (একটি), চন্দ্রমাল্য, পুষ্পমাল্য, গোরোচনা, পান, পানের মশলা, পুষ্পাদি, হোমের বিল্বপত্র, হোমের দ্রব্যাদি, দক্ষিণা ও আরতির উপকরণ । পাঁজি মিলিয়ে ফর্দ লেখা । সাধে কি আর বলে, দশকর্মা ভাণ্ডার থেকে বাজার করা চাট্টিখানি কথা নয় ! তবে রজত তাকে আরো একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে । পার্থকে সে নিয়ে গিয়েছিলো মিত্তির বাড়ির অন্দরমহলে, মাধুরী দেবীর ঘরে । দশমীর সকালেই রজত তাকে নিয়ে গিয়েছিলো ওর শাড়ির দোকানে, বিশেষ বেচাকেনা নেই মনে হয় । ঝাঁটপাট দিয়ে, ধূপ নিয়ে একটু পুজো সেরে আধ ঘন্টা মতো ছিলো সে, সঙ্গে পার্থও বসে ছিলো । সিনেমা নিয়েই গল্প হলো মূলতঃ । তারপর ঘড়ি দেখে, উঠে পড়তে বললো । শাটার নামিয়ে বললো, "চলুন, একটা সারপ্রাইজ আছে ।"
বেলা দশটা নাগাদ তারা ফের মিত্তির বাড়িতে ঢোকে । উঠোন পেরিয়ে ওদিকটায় সিঁড়ির পাশের ঘর ছাড়িয়ে, মাধুরী দেবীর ঘরের ঠিক সামনে আসতেই দেখা গেলো, এক মার্জার মাতা তাঁর সন্তানকে নিয়ে শান্তিতে ঘুম দিচ্ছেন । দরজার সোজা ঘরের ভিতরের একটা জানালায় একটা ছোট্ট পাখি বসেছিলো । বোঝাই যায় গৃহকর্ত্রী কোনো প্রাণিকেই কিছুমাত্র বিব্রত হতে দেন না । তাই তারাও ঘরটিকে তপোবন-টাইপ কিছু ভেবে নিয়েছে । রজতের দেখাদেখি বিড়ালদুটোর পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল দ্বিতীয় জানালার কাছে বিছানায় মাধুরী দেবী বসে । এই ঘরেও যথারীতি লাল মেঝে, দেওয়ালের রঙ্ হালকা নীল । লক্ষণীয় গোটা ঘরে কোথাও কোনো কাগজ, কলম, বই-খাতা, বুককেস ইত্যাদির বালাই নেই । গৃহকর্ত্রীর রোজকার জীবনে যে সেগুলি প্রবেশাধিকার হারিয়েছে, এর থেকে সেই বিষয়ে নিঃসংশয় হওয়া যায় ।
অবশ্য প্রায় শূন্য অথচ প্রমাণ সাইজের ঘরটায় পুরোনো আমলের একটু উঁচু পালঙ্কের পাশের টেবিলে একটা ধুলো পড়া আয়না আর গত বছরের টেবিল ক্যালেন্ডার চুপিসারে রয়ে গিয়েছে, একটা স্ট্যান্ড-লাগানো বড়ো টেবিল ক্লক আর মোবাইল ফোন রাখার স্ট্যান্ডের আড়ালে, স্ট্যান্ডে রাখা ফোনটা যদিও সেই নোকিয়ার আগেকার সেট । আজকাল আর এই ফোন কারো হাতে বিশেষ দেখা যায় না, মাঝে ওই সেটটার ব্যাটারি নিয়ে কোনো বিরাট বিতর্কও হয়েছিলো, মনে পড়ে যায় পার্থর । কিন্তু এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা চোখ টানলো, সেটা হল একটা যাঁতি, পিতলের অপূর্ব সুন্দর অভিজাত যাঁতি, গ্র্যান্ড যাকে বলে ! শীর্ণ, সাদাটে হাতদুটো দু'পাশে প্রায় আলগোছে ঝুলিয়ে রেখে মাধুরীদেবী জানালার সামনে বসে । মুখটা মলিন, রুগ্ন, ওষুধ নিতে অনিচ্ছুক জেদি রোগীদের মতো । যদিও মুখটা সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে না, পার্শ্বিকভাবে দৃশ্যমান । একটা হালকা গোলাপী রঙের শাড়ি পরে আছেন । তাঁর কাঁধের কিছুটা নিচে অবধি নেমে আসা পাতলা চুলগুলো আঁচড়ে দিচ্ছেন একজন বোরখা-পরা মহিলা । দৃশ্যটা অনেকগুলো দিক থেকেই অস্বাভাবিক । প্রথমতঃ একজন মুসলিম রমণী এখানে কী করছেন ? তাও কিনা যে বাড়িতে দুর্গা পুজো হয় এবং যে বাড়িতে সূর্যবাবুর মতো দুর্মুখ, বদমেজাজি লোক আছে ! আর এরকম নির্জন একটা ঘরে তিনি মুখটাও ঢেকে রাখবেন ? বোরখাটায় শুধু চোখের উপর একটা দু-ইঞ্চি মাপের আয়তাকার খোলা অংশ । তাছাড়া ঘরে দু'জন পুরুষ মানুষ প্রবেশ করছে দেখেও, মহিলার মধ্যে কোনো ভাব-বিকার দেখা গেলো না ! সমস্ত ব্যাপারটাই যেন একটা মূর্তিমান প্রশ্নচিহ্ন । সেই সঙ্গে মাধুরী দেবীর, চোখে মোটা ফ্রেমের, বেমানান কালো চশমা পরে জানালার বাইরের ঝাঁকড়া জবাগাছটার দিকে শূন্যদৃষ্টিতে মুখ করে বসে থাকাটাও যেন কেমন অদ্ভুত লাগে । পরিস্থিতি দেখে আড়ষ্ট বোধ করে পার্থ । ঘরের জানালার সামনেটায় বিছানার উপর যতটা আলো, উলটোদিকে ততটাই অন্ধকার । তবে অন্ধকারেও মালুম হয়, ওপাশে একটা আলনা আর আলমারি রয়েছে । মাঝে দেওয়ালে একটা সেকেলে কাঠের ফ্রেমে এক গম্ভীর বৃদ্ধের পোর্ট্রেট । আলনার একধার থেকে পকেট-করা একটা কাপড়ের ব্যাগ ঝুলছে । আলমারির মাথায় গোটা দুই হাতপাখা আর রঙিন পুতুল উঁকি মারছে । আলনার পাশে, দরজার কোলে একটা জল রাখার মাটির কুঁজো, তাতে আবার চট না কি যেন জড়ানো, কুঁজোটার মাথায় একটা ঘটি রাখা । জানালার বাইরে নানারকম ফুলের যেমন, জবা, গন্ধরাজ, করবী, টগর, জুঁই ফুলের গাছ । পার্থর ইতস্তত ভাব দেখে রজতই কথা বলে, "কর্তামা ! ডাক্তারবাবুর এক বন্ধু এসেছেন কলকাতা থেকে । আপনার সাথে দেখা করাতে নিয়ে এলাম ।"
"সে আমি টের পেয়েছি ! হ্যাঁ রে সূর্য দেখে নি তো ?" - প্রায় ফিসফিস ক'রে কথাগুলো উচ্চারণ করে মাধুরী দেবী আবার প্রশ্ন করলেন । এবার পার্থকে প্রশ্ন করলেন, "তুমি কী করো বাবা ?" গলাটা যেন খুব ক্লান্ত আর অসংসক্ত শোনায় পার্থর কানে । রজত অবশ্য তার হয়ে কোনো জবাব দেয় না ।
"আমি একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করি, এখানে পুজোর ছবি তুলতে এসেছিলাম আর কি... আমার নাম পার্থ ।" - ইতস্তত ভাবটা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না পেরে, কোনোরকমে উত্তরপর্বটা শেষ করে পার্থ । তারপর প্রশ্ন করে, "আপনার শরীর ভালো ?"
"কেন ? আমার কী হয়েছে ?" - বৃদ্ধা যেন কিছুটা ক্ষুণ্ন স্বরে প্রতিপ্রশ্ন ছুঁড়ে দেন । পার্থ নিরুত্তর, রজতও । তারপর অপেক্ষাকৃত শান্ত গলায় বলেন, "আমার আবার থাকা ! ওই একভাবেই চলে যাচ্ছে প্রতিটা দিন । তোমরাই বলো, বাইরে কোথায় কী হচ্ছে, আমি কেবল শুনি । আজ তো দশমী ! যারা কোনোদিন ভুলেও এই ঘরে পা রাখে না, তারাই সব আসবে আজ ঘটা করে বিজয়া সারতে । এই বিজয়ার মানে কী ?"
রজত অনুযোগের সুরে বলে, "ওসব কথা থাক্ না কর্তামা । ওষুধ খেয়েছেন ?"
"হ্যাঁ ওই লক্ষ্মীছাড়ি খাইয়েছে ।" মাধুরী দেবীর এই কটুবাক্য কার উদ্দেশ্যে, বলে দিতে হয় না । কিন্তু তাতেও সেই বোরখান্তরালবর্তিনীর কোনো ভাবান্তর দেখা যায় না । ঘরের মধ্যে যেন কেমন দমবন্ধ-করা আবহাওয়া ! পার্থ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে বাঁচে ।
রজতও যেন সেটা অনুভব করেই বলে, "আচ্ছা কর্তামা, তাহলে এখন আসি । আবার ভাসানের পর আসবো, আপনাকে প্রণাম করতে ।"
"আসিস । কিন্তু এই মেয়েকে যেন কাল আর না দেখি ! বোবা সেজে আছে ! ঢঙ্ দেখে আর বাঁচি না ।"
রজত আর পার্থ ততক্ষণে ঘর থেকে প্রস্থানে উদ্যত হয়েছে । কিন্তু শেষ কথাটায় বোরখান্তরালবর্তিনী খিলখিল করে হেসে ওঠে, সেই হাসিতে প্রায় বোবা ঘরটায় যেন উইন্ড-চাইমস্ বেজে ওঠে বলে মনে হয় পার্থর । অপ্রস্তুত রজত ফের ঘরের মূল্যবান খাটটার কাছে এগিয়ে যায়, সেই মহিলাকে লক্ষ্য করে চাপা স্বরে বলে, "বাড়িসুদ্ধু লোক জানিয়ে কেলেঙ্কারি একটা না বাঁধালেই নয় ?" কিংকর্তব্যবিমূঢ় পার্থ নিজে থেকেই বেরিয়ে আসে মাধুরী দেবীর অস্বস্তিকর ঘরটা থেকে ।
"কে উনি ?" – বেরিয়েই প্রশ্নটা না করে পারে না পার্থ ।
"আন্দাজ করতে পারেন ?" - মুখে রহস্যময় একটা হাসি এনে উত্তর দেয় রজত ।
"আমি কীভাবে আন্দাজ করবো ?" - আশ্চর্য হয়ে বলে পার্থ ।
"খুব কঠিন না কিন্তু ।" - হাসিমুখেই বলে রজত, বোরখা পরে আছে বলে ভুল বুঝবেন না । বোরখা না পরলে মেজদা ঠিক চিনে ফেলবে । অন্যদের চেনার কথা নয় । ছোড়দা ওই মুখ ভুলে গেছে নির্ঘাৎ । কর্তাবাবু মানে কৃষ্ণকান্ত মিত্তির একেবারে অন্যদিকটায় থাকেন, উনি ওনার ঘর আর বারান্দা ছেড়ে খুব একটা যান-ও না কোথাও, তাই চাপ নেই । আর তাছাড়া... বাকিটা কর্তামা ম্যানেজ করে নেবেন । বুঝলেন ?"
"বুঝেছি.."
"কী ?"
"তোমার মা ?"
"ইয়েস্ । এই তো পেরেছেন... জানতাম.. আপনি চালাক-চতুর মানুষ । ঠিক পারবেন । তাছাড়া এই বাড়ির অতীত আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলোকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারবে না । তাই আপনার মতো কাউকে আমাদের দরকার ছিলো । আপনি এসে পড়েছেন ভালোই হয়েছে । আপনি নিরপেক্ষভাবে সব দেখে যান ।"
"তাতে লাভ ? আর দেখবোটা কী ?"
"এটাই দেখবেন যে, মিত্তির বাড়ির অতীত বা, বর্তমান - কোনোটাই খুব একটা সুবিধের নয় । তাই এই বাড়ি আর এই মানুষগুলো আপনার সামনে যা, তার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কিছু । সেটা অমঙ্গলের, নিষ্ঠুরতার ।" - রজতের গলায় যেন একটু একটু করে আবেগ ভর করে । যেন সে একটা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রতীক্ষা অবসানের শিথিল মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে । তাই সে আর নিজের আবেগ সামলে রাখতে পারছে না । অদ্ভুত সুরে সে বললো, "স্মৃতি... বুঝলেন, পার্থবাবু ? স্মৃতি । ওই জিনিসটাই আমাদের পথ দেখায় । ওটা ছাড়া আমরা জন্তু, বুঝলেন, স্রেফ্ জন্তু । আর আমাদেরও সবকিছু মনে রাখতে হয়, হয়তো কষ্ট বাড়ে তাতে, কিন্তু মনে রাখা উচিত । অন্তত আমাদের মতো যারা চিরকাল পরজীবী, ওই দুর্ভাগ্য নিয়েই জন্মেছি, ওটা নিয়েই বাঁচবো, তাদের জন্য ওই স্মৃতিটুকুই সম্বল । ওটাই লড়াইয়ের রসদ যোগায় । যন্ত্রণাগুলোই আমার, আমাদের খাবার... বুঝলেন ? আর এই লড়াইতে অনেকেই দেখবেন আপনার পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, কারণ কী বলুন তো ?"
"কী ?" - ঘড়ঘড়ে গলায় বাধ্যতামূলক প্রশ্নটা রাখে পার্থ ।
"পাশে দাঁড়াবে, তার কারণ অনেকেই নিজের নিজের জীবনে ধুঁকছে । আপনি কিছুতেই বাইরে থেকে বুঝতে পারবেন না । কিন্তু ভিতরে প্রত্যেকের দগদগে ঘা হয়ে রয়েছে । বুঝতে পারলে, জানতে পারলে, আপনি চমকে যাবেন । থরথর করে কাঁপছে মানুষগুলো, এই কৃষ্ণকান্ত মিত্তির, ওই মাধুরীদেবী, এমনকি মেজদাও । এবার ওনারা কিন্তু কেউ সজ্ঞানে আপনার পাশে দাঁড়াবেন না... কারণ ঘাগুলো গোপন । কিন্তু ঘাগুলো যেহেতু আছেই, পাপগুলো আছে, ভুলগুলো আছে, নিজেরাও টের পাবেন না, কে, কখন, কার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ।"
পার্থ সুন্দরপুরে আসার আগে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো, কোনো ব্যাপারেই সে নিজেকে ইনভলভ্ করবে না । কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলো, উল্টোটাই হচ্ছে । চিন্তিত মুখে পার্থ রজতের দিকে তাকায় । এই ছেলেটাকে দেখে তার মনে হয়েছিলো, বেশ আত্মস্থ ! কিন্তু রজত যে সকলের অগোচরে অতীতের কবর খুঁড়ে চলেছে, কে জানতো ? পার্থ অসহায় বোধ করে । এই ছেলেটা তাকে কোনো বিপদে ফেলবে না তো ? এই সুন্দরপুরে সে দুদিনের অতিথি, এখানকার কোনো অমঙ্গলের অতীত, কোনো বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের পাঁকে সে মোটেও জড়িয়ে পড়তে চায় না । সে কোনো ঝামেলায় পড়বে নাতো ? ওই সূর্যকান্ত অর্থাৎ রজতের মেজদা লোক ভালো নয়, যতটুকু সে বুঝেছে । চন্দ্রকান্ত বরং অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক ভদ্রলোক, একটু মদ খান, এই যা । তাকে সাবধানে থাকতে হবে আজকের দিনটা, বিসর্জনটা হয়ে গেলেই তার মুক্তি ।
ক্রমশঃ...
Darun 🐱
উত্তরমুছুন