সমীর কুমার দত্ত
রোজি ও হেনরী দুজন ক্লাসমেট। হেনরী কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ। কারণে -অকারণে ওর মুখে সর্বদাই একটা মৃদু হাসি লেগেই থাকতো ,তা সে অর্থবহ হোক আর না হোক। সে হাসিতে ভালো-মন্দ, সুখ - দুঃখের কোন পার্থক্যই অনুভূত হতো না। আসলে 'দুঃখে যাদের জীবন গড়া /তাদের আবার দুঃখ কিসের।' লোকে কানে শুনতে আর চোখে দেখতে না পেলে স্পর্শেন্দ্রিয় আর ঘ্রাণেন্দ্রিয় ছাড়া বাইরের জগতের তেমন কোন কিছুরই অনুভূতি নেই। হেনরী তো দেখতে ও শুনতে পায় তাই তার ভালো -মন্দের অনুভূতির প্রকাশ ওই মুখের একমাত্র হাসি।কিন্তু হাসি তো দুঃখের অনুভূতি হতে পারে না। আর যদি হয় তাহলে তা বিদ্রুপ কিংবা উপহাস ছাড়া কিছু নয়।সমস্যা এইখানেই। ওই একমাত্র হাসিই তার অনেক দুঃখের কারণ।
হেনরীর মা পামেলা মারা যান হেনরী তখন ৭- ৮ বছরের । বাবা উইলস্টন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ঘরে স্ত্রী থাকতেও তার ব্যবসার অংশীদার ক্যাফেইন নাম্নী এক ডিভোর্সী মহিলার পাণিগ্রহণ করে আলাদা আর একটা সংসার গড়ে তোলেন।স্বভাবতই তার দুটি সংসারে ভাগাভাগি করে থাকতে হতো। এটা পামেলাকে খুব দুঃখ দেয়। তার এবং তার সন্তানের কপাল পুড়লো ভেবে পামেলা খাওয়া -দাওয়া ত্যাগ করে বসে। আসলে জীবনে শান্তি না থাকলে খাবারের রুচিও থাকে না।তাই না খেয়ে খেয়ে অপুষ্টি তার শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে।আস্তে আস্তে ক্ষয় রোগের শিকার হয়।
স্পষ্টতই হেনরীকে দেখার ভার এসে পড়ে ঠাকুমা এলিনার ঘাড়ে।এলিনাই হেনরীর সব দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। আবার হেনরীকে দেখার ফাঁকে ফাঁকে পামেলাকেও দেখতে হয়। শাশুড়ি এলিনা পামেলা কে রোজই বোঝান এই বলে, "বৌমা, তুমি খাওয়া -দাওয়া করছো না।এতে তো শরীর ভেঙে যাচ্ছে।কঠিন রোগ বাঁধিয়ে বসেছো। তোমার একটা ছেলে আছে। সে তোমার কাছে আসতে পারে না।ও মা হারা হয়ে গেছে। ওর আমি ছাড়া আর কে আছে।ওর কেউ নেই।বাবা -মা থেকেও নেই। না আছে কোন বন্ধু -বান্ধব, যাদের সঙ্গে একটু খেলাধূলো করবে।এক স্কুল যাওয়া আর বাড়ি ফেরা। স্কুলের কাজের চাপে ছেলেটা একটু খেলতেও পায় না। এসব দেখে শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেছে। এমনিতেই অপ্রকৃতিস্থ।তারপর শৈশব অবস্থা থেকেই চরম আঘাতে জর্জরিত। কাঁদতেও জানে না। কাঁদলেও একটু হাল্কা হতে পারতো। তুমি ছাড়া আর ওর কে আছে বলতো। ছেলেটা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে বাঁচতে হবে অন্তত ওর জন্যে।"
উত্তরে পামেলা বলে, " আমার আর বাঁচা! আপনি তো আছেন।
আপনি তো ওর মা বাবা। আমার বেঁচে কি লাভ মা?"
—লাভ ,লোকসান বুঝিনে বাপু। তোমার একটা সন্তান আছে।তার কথা তোমায় ভাবতে হবে।বাবা যা করেছে ওর প্রতি, তুমিও যদি তাই করো,তা হলে তোমাদের দুজনের তফাৎটা কি রইলো? আমার বয়স হচ্ছে, আমি যদি নাই থাকি, তাহলে ওর কি হবে, ভেবে দেখেছো ? তোমরা দুজনে মিলে ছেলেটাকে মেরে ফেলতে চাও?" কথাগুলো বলে এলিনা ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে থাকেন।
তারপর ধরা গলায় বলেন,"আমি বেঁচে থাকবো এইসব দেখতে?" পামেলা প্রত্যুত্তরে বলে, "আমার বেঁচে কি লাভ মা বলুন।এই তো আমি না খেয়ে বিছানায় পড়ে আছি, একবারও কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে? পাছে আমার কাছে আসতে হয়।সেই ভয়ে টাকা পাঠিয়ে দেয়।ব্যাস,কর্তব্য শেষ? আমার কথা ছাড়ূন। একটা ছেলে তো রয়েছে।তার খোঁজ পর্যন্ত নেয়? আমি নয় অসুস্থ কিন্তু ও তো ছেলে।ওর প্রতি কোন কর্তব্য নেই?খেতে পরতে দিলেই হলো?আপনি তো ওর মা। আপনারও খোঁজ নেয়।"
এলিনা সব শুনে বলেন, "আমার খোঁজ নাই নিক্। তোমার এবং ছেলেটার খোঁজ নেওয়া তো দরকার। কি বলবো বলো?এমন ছেলে পেটে ধরেছি যে লজ্জায় মাথা কাটা যায়। আমি না থাকলে ছেলেটা মারা পড়ে যাবে। ঠিক আছে দুটো বিয়ে করছিস্, দুজনকে সমান ভাবে দেখ।তা নয়। আসলে ওই বৌটাই হলো যত নষ্টের গোড়া। আমি আর কদ্দিন? তারপর ছেলেটার কি হবে কে জানে!"
কিছুদিন পর পামেলা ইহলোকের মায়া কাটিয়ে চলে গেল। ছেলেটা তখন স্কুলে।মাকে শেষ দেখা দেখানোর ও শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য ঠাকুমা তার স্কুল থেকে ছুটি করিয়ে নিয়ে এলেন ।মায়ের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি মুখে নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে দেখতে লাগলো। ঠাকুমা এলিনা তাকে চেষ্টা করলেন একটু কাঁদাতে। কিন্তু ছেলের চোখে জল এলো না। সে মুখে সেই করুণ হাসি নিয়ে একটা কথা বললো,"মায়ের ছুটি হয়ে গেল! মা বেঁচে গেলো। কিন্তু,আমার ছুটি তো এখনও হয়নি। আমাকে তো আবার স্কুলে যেতে হবে। ওখানে বন্ধুরা আছে আমার জন্য অপেক্ষা করে।" ঠাকুমা বললেন, "না, তোমাকে আজ আর যেতে হবে না।ছুটি নিয়ে এসেছি।" আসলে গর্ভে জন্ম নিলে কি হবে, মায়ের স্নেহ ও সে ভাবে পায়নি।তাই দুটি আত্মার মধ্যে ব্যবধান ঘটে গেছে বিস্তর। মায়ের থাকা আর না থাকা দুই সমান ওর কাছে। ঠাকুমা ওর পালিতা মা।ঠাকুমাকেই ও মা বলে জানে। তাই মায়ের এই চির প্রস্থান ওর মনে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে তা বলা কঠিন।
হেনরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ ।তাই ওকে সেকেন্ডারী বিভাগে ভর্তি করতে হলো। ঠাকুমাই ভর্তি করে দিয়ে এলেন। ঠাকুমা তার ছেলে উইলস্টনকে বলে ছিলেন ওকে ভর্তি করাতে নিয়ে যেতে।ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারেনি। এলিনা ভর্তির সময় প্রিন্সিপ্যাল সাহেবকে হেনরীর সম্পর্কে সব কিছু খুলে বললেন। প্রিন্সিপ্যাল এলিনাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে হেনরীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হবে।
নতুন স্কুলে হেনরীর মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠলো।ছেলেরা হেনরীর মতো অপ্রকৃতিস্থ ছেলেকে পেয়ে জ্বালাতন করতে লাগলো। বেশিরভাগ দিনই ও বলতো, "ঠাকুমা আজ স্কুলে যাবো না।"
—না দাদু ,স্কুল কামাই করতে নেই। স্কুলে গেলে একটু খেলতে পাবে। ঘরে তো সেটা হবে না। খেললে মনটা অনেক ভালো থাকবে।"
উত্তরে হেনরী বলে ওঠে, "একমাত্র রোজি ছাড়া কেউ ভালো না। ওরা আমায় নিয়ে মজা করে,মারে। আমি কারোর সঙ্গে বেশি কথা বলি না। আমি রোজির পাশে বসি। রোজি মেয়েটা ভালো।"
ঠাকুমা মাঝে মাঝে স্কুলে যান। হেনরী রোজিকে ঠাকুমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এলিনা রোজিকে বলেন, "হেনরীকে একটু দেখো যাতে ওকে কেউ কিছু না বলে।"
—হ্যাঁ, আমি দেখবো ।
প্রিন্সিপ্যাল সাহেব কথা দিয়ে ছিলেন রোজির ঠাকুমা এলিনাকে। কিন্তু তাতে কি? হেনরীর প্রতি অত্যাচার কি হয়নি ? ছেলেরা তো বটেই, এমনকি এক টিচার পিটারসন,যিনি ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে আত্ম কথনে সময় অতিবাহিত করেন। ঘন্টা বাজার পনেরো মিনিট আগে টেক্সটা খুলে একটু পড়িয়ে ছেড়ে দেন , তিনিও হেনরীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে ছাড়েন না। তাঁর মনের মতো কথা না বললে, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে মারতে শুরু করেন।কিন্তু ভয়ে কেউ প্রিন্সিপ্যাল সাহেবের কাছে মুখ খোলে না। সুতরাং পিটারসন তাঁর রাজত্ব চালিয়ে যান।
নতুন ভর্তি হওয়ার পর রোজি হেনরীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করে, "হাই, আমি রোজি। আর তোমার নাম?" মুখে সেই হাসি মিশ্রিত হেনরী উত্তর দেয়, "আমি হেনরী। এই স্কুলে আমি নতুন।
আস্তে আস্তে হাসি মুখে সব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পরিচিত হয় হেনরী। কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করে, "এই তুই সব কথায় এতো হাসিস কেন রে? কেউ মারলেও দেখি তুই হাসছিস। কাঁদতে কিংবা রাগতে জানিস না?" হেনরী তবুও হাসে।কেউ কেউ বলে,"ছাড় ছাড়, এটা একটা বদ্ধ পাগল মনে হচ্ছে।"
রোজি ওর ঠাকুমার কাছে সব শুনেছে। ভাবে বড়ই দুঃখী ছেলেটা। ওর হাসি দেখে কেউ কিছু বললে, রোজি বলে, "ওর হাসির কোন কারণ অকারণ নেই।ওটা ওর নেচার। আসলে ওর জীবনে খুব দুঃখ রে।সব দুঃখকে ও জয় করে নিয়েছে। তাই ওর নেচারের প্রকাশ হলো হাসি। ওর দোষ ধরিস না, প্লিজ।"সেই থেকে ক্লাসের ছেলে মেয়েরা সব মেনে নিয়েছে।প্রথম প্রথম কারোর দুঃখের কথা শুনে ও হেসেছে আর মারও খেয়েছে। প্রত্যুত্তরে ওর হাসিই দিয়েছে। তাই ক্লাসের সব যখন বুঝতে পেরেছে আস্তে আস্তে সবাই এহেন আচরণ মেনে নিয়েছে। ছোট থেকেই ও দুঃখের সাগরে ডুবেছে।সেই ডুবন্ত অবস্থা থেকে কেউই ওকে উদ্ধার করেনি, যে অত্যন্ত প্রিয়জন,সেই বাবাও না।বাবার স্মৃতিও ওর কাছে ঝাপসা হয়ে আসছে।এক মাত্র ঠাকুমাই ওর সকল দুঃখের সান্ত্বনা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে, হোম ওয়ার্ক করে যেটুকু সময় পেতো খেলার ছলে একা একাই নিজের সঙ্গে কথা বলে চলতো। ঠাকুমা হয়তো কোন কাজে ব্যস্ত থাকতেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে লক্ষ্য করতেন ওর একাকীত্বের খেলা। মনে মনে ভাবতেন একদিন ওর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটবে। কিন্তু কিছুই করার নেই।মনকে সান্ত্বনা দেবার ও একাকীত্ব দূর করার জন্য বলতেন,"খেলছো? স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে খেলছো?খেলো। আমি যাচ্ছি। হাতের কাজটা সেরেই যাচ্ছি।কেমন?" চোখের সামনে একটা সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের অকালে শুকিয়ে যাওয়া দেখতে হচ্ছে তাকে। ভারসাম্যহীন পুত্র আর শয্যাশায়ী স্ত্রীর কথা ভেবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর মন ভেঙে যায়।অর্থ আছে অথচ উপভোগ নেই। তা তো চলতে পারে না। নতুন কোন সংসারের কথা ভাবতে থাকে এবং যা ভাবা তাই কাজ। সংসারের মাথাটা বেশ খানিকটা সরে গেল তফাতে।
পিটারসন স্যার একদিন রোল কল করে আত্মজীবনী বলতে শুরু করলেন। নিজের দুঃখের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন। সকলেই সমব্যথী হয়ে চোখ পুঁছতে লাগলো। ব্যতিক্রম শুধু হেনরী।তার মুখে খেলে গেলো সেই চিরন্তন হাসি। তা পিটারসেনের দৃষ্টি এড়ালো না।তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। রোজি আগেই লক্ষ্য করেছিলো হেনরীকে। আর লক্ষ্য করছিলো পিটারসেনকে। ক্রুদ্ধ পিটারসন প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন হেনরীর দিকে।রোজির কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেলো। রোজি প্রস্তুত হয়ে গেলো। পিটারসন হেনরীর কাছে এসে চড় মারবেন বলে হাত তুললে, রোজিও অমনি সঙ্গে সঙ্গে নিজের মাথাটা হেনরীর মাথার পাশে নিয়ে এলো। চড়টা গিয়ে পড়লো রোজির গালে। চকিতে ব্যাপারটা ঘটে গেলো। পিটারসনও ঘাবড়ে গেলেন।চড় থেকে বেঁচে গিয়ে হেনরী রোজির গালে হাত বুলোতে লাগলো। রোজি জ্ঞান হারালো। ক্লাসের ছেলে মেয়েদের অন্তরে সঞ্চিত রয়েছে যে বিদ্বেষ। দৌড়ে গিয়ে প্রিন্সিপ্যালকে জানালো যে পিটারসন স্যার বিনা দোষে রোজির গালে থাপ্পড় মেরে রোজিকে অজ্ঞান করে দিয়েছেন। পিটারসনের নামে ইতিমধ্যে অনেক নালিশ জমা হয়ে ছিলো প্রধানত দুটি কারণে। এক, না পড়িয়ে গল্প করা। দুই, বিনা দোষে ছেলে মেয়েদের মারা। প্রিন্সিপ্যাল এসে চোখে মুখে জল দিয়ে রোজির জ্ঞান ফেরালেন।রোজির গাল ফুলে লাল হয়ে গিয়েছিল। অভিভাবকদের কাছ থেকে চাপ আসবে ভেবে প্রিন্সিপ্যাল সাহেব পিটারসনকে সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড করলেন। হতচকিত পিটারসন জোড়হাত করে ক্ষমা চাইলেন এবং সাসপেন্সন উইথড্র করার জন্য অনুনয় বিনয় করতে লাগলেন।কিন্তু তাতে প্রিন্সিপ্যালের মন গললো না। চাকরি খোয়াতে হবে ভেবে পিটারসন কান্নায় ভেঙে পড়লো।
এই প্রথম দুটি ঘটনা যা হেনরীকে অনুভূতি প্রবন করে তুললো। এক, তার হিতাকাঙ্খী রোজির বিনা দোষে প্রাপ্ত শাস্তি আর সেই শাস্তির প্রত্যুত্তরে পিটারসনের সাসপেন্সন । পিটারসনের চোখে দ্বিতীয়বার জল দেখতে পেলো হেনরী আর বিনাদোষে রোজির গালে পাঁচ আঙুলের দাগ। রোজি তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে বলে তাকে কোন যন্ত্রনা পেতে দিতে চায়নি। যন্ত্রনাটা সে নিজের করে নিয়েছে। না জানি রোজির কতো কষ্ট হচ্ছে।আর পিটারসন কর্ম হারিয়ে খুব বিপদের মধ্যে পড়বে।এই মুহূর্তে রোজি আর পিটারসনকে তার স্বজন বলে মনে হলো। কেউ একজন এই প্রথম তাকে শাসন করতে এগিয়ে এসেছিল। তাই এদের কষ্ট হেনরীর মুখের চিরন্তন হাসিকে হারিয়ে দিয়ে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে।
মানুষ দুঃখ পেতে পেতে হঠাৎ ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে অর্থাৎ আনন্দ পেলে কেঁদে ফেলে। আসলে অনেক জমে থাকা দুঃখের ফলশ্রুতি হলো এই কান্না।হেনরীর ক্ষেত্রে এটা বিপরীত। সে নিজে দুঃখ পেতে পেতে নিজের দুঃখের কথা ভুলে গেছে। তাই নিজের দুঃখের জন্য কোনদিন চোখের জল ফেলেনি অনুভূতির ভেদাভেদ ভুলে গিয়েছিল।আজ রোজি ও পিটারসন তার কাছে আপনজন হয়ে উঠেছে।পিটারসন দেখলো, তার পূর্বের দুঃখের কথা শুনে হেনরী হেসে ছিল যা কেটে গেছে।সত্যিই তো 'গতস্য শোচনা নাস্তি।' কিন্তু যা ঘটতে যাচ্ছে তা অতীব দুঃখের। তাই হেনরীর চোখে জল এসেছে। যে ছেলেটিকে একটু আগে মারতে উদ্যত হয়েছিল সেই হেনরীই যথার্থ সমব্যথী। প্রিন্সিপ্যালের কাছে গিয়ে অশ্রুপূর্ণলোচনে হেনরী ও রোজি পিটারসনের সাসপেন্সন অর্ডার উইথড্র করার আর্জি জানালো। যে কাঁদতে ভুলে গিয়েছিল সেই হেনরীর চোখে জল দেখে এবং যে পিটারসন হেনরীকে মারতে গিয়েছিল হেনরী তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেবার আর্জি জানাচ্ছে দেখে প্রিন্সিপ্যাল সাহেব যারপরনাই খুশি হয়ে তৎক্ষণাৎ তা মঞ্জুর করলেন। পিটারসন হেনরীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
=================
Samir Kumar Dutta
Bally, Howrah