গোয়েন্দা বোসের রহস্য ভেদ
মিঠুন মুখার্জী
আজ যার কথা লিখতে বসেছি তার পুরো নাম অমরকৃষ্ণ বোস, সংক্ষেপে বোস দা। ছয় ফুট চার ইঞ্চি লম্বা, চাপ দাড়ি ও গোঁফ আছে। গায়ের রং নাতিফর্সাকালো । কপালের মাঝখানে একটা কালো তিল আছে। বাঁ হাতে একবার একটি গুলি লেগেছিল। তবে খুব একটা সমস্যা এখন হয় না। বয়স চল্লিশ বছরের কাছাকাছি। বাড়ি দমদম নাগেরবাজার-এর কাছে। বন্দুক চালাতে পারেন পেশাদারী শুটারদের মত। ক্যারাটে শিখেছেন হায়দ্রাবাদের 'বুদোকান ক্যারাটে একাডেমী' থেকে। চোখ বন্ধ করে অপরাধীকে গুলি চালাতে পারেন, খালি পায়ের আওয়াজ শুনে। সুভাষচন্দ্র বোস-এর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত তিনি। তার ডান হাত কৃষ্ণ চরণ মিত্র, সংক্ষেপে কেষ্ট দা ও বাম হাত ঋজু চট্টোপাধ্যায়, সংক্ষেপে ঋজু, মানে আমি। কৃষ্ণ চরণ মিত্রের বয়স পঞ্চাশ বছর। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতা । মাথার সামনে টাক, পাশ দিয়ে ও পেছনে চুল আছে। বেশিরভাগ সময় জিন্সের সঙ্গে পাঞ্জাবি পরতে ভালোবাসেন। বাড়ি হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়। ঋজু চট্টোপাধ্যায়-এর অর্থাৎ আমার বয়স পঁচিশ বছর। দাড়ি ও গোঁফ মুখে কিছুই নেই। গায়ের রং ফর্সা। কোঁকড়ানো চুল। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা। জিন্সের প্যান্ট ও নানা রঙের গেঞ্জি পড়তে ভালোবাসি । খুব ভালো লাঠি খেলতে পারি । বাড়ি চন্দননগরে। অমর কৃষ্ণ বোস কৃষ্টদা ও আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ছোট-বড় কেস সমাধান করেছেন বিভিন্ন সময়ে। এখনো পর্যন্ত ত্রিশটির উপর রহস্যের উন্মোচন ঘটিয়ে অপরাধীদের যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন গোয়েন্দা অমর কৃষ্ণ বোস। সকলে অমর কৃষ্ণকে "গয়েন্দা বোস" নামেই চেনেন।'রাজস্থানের পাথর চুরির মামলা', 'হুগলির জোড়া খুনের মামলা', 'আগ্রার সোনা মসজিদের থেকে সোনা চুরি হওয়ার মামলা', 'বিহারের জগৎ শেঠ হত্যার মামলা' আরো অনেক রহস্যের সমাধান করেছেন তিনি।
দীর্ঘ দুই বছর পর হরিদ্বারের একটি কেস এসেছিল বোস দার হাতে -- " নারী ভ্যানিশ মামলা" অর্থাৎ মেয়ে কিডন্যাপ। দুই মাস যাবত হরিদ্বারের 'হর কি পৌরী'র ঘাটের সন্ধ্যা আরতির সময় প্রায় দিন একজন, দুজন করে নারী ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে। সেখানকার প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেও অপরাধীদের ধরতে পারেন নি। তাই দু-মাস পরে এই কেসটার দায়িত্ব পড়ে গোয়েন্দা অমরকৃষ্ণ বোসের হাতে। হাওড়া থেকে হরিদ্বার যাওয়ার 'কুম্ভ এক্সপ্রেস' ট্রেন দুই সপ্তাহ পরে। ৩১শে মার্চ দুপুর একটায়। এই কেসের জন্য হরিদ্বার যাওয়ার আগে বোসদা এই কেসটা নিয়ে একটা প্রাথমিক স্টাডি করেন। সঙ্গে ছিলাম কেষ্ট দা ও আমি। কেষ্ট দা বলেন-- "বোস, আমরা এই দশ বছরে এত রকম কেস সামলেছি, কিন্তু এই কেসটা সেগুলির থেকে একদম আলাদা। খুন, চুরি, ডাকাতি প্রায় সবকিছুই সামলেছি কিন্তু মেয়ে ছিনতাই কেসে এই প্রথম যাব, কি বলো?" কেষ্ট দার প্রশ্নের জবাবে বোসদা বলেন-- "ঠিকই বলেছেন, তবে আমাদের খুব সজাগ না থাকলে এই কেসটা সমাধান করা যাবে না। এখনো একটাও এমন কেস নেই যা আমরা সমাধান করতে পারিনি। মেয়ে পাচার যেহেতু, সেহেতু আমার মন বলছে, এ কাজ কোন ছোটমোটো গ্যাংয়ের নয়। কোন পেশাদারী বড় মেয়ে পাচারকারী দলের কাজ। এদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র অবশ্যই থাকবে। খুব সাবধান হয়েই আমাদের এই রহস্যের উদ্ঘাটন করতে হবে।"
৩০শে মার্চ সকালবেলা যথারীতি ব্যাগ গুছিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্যাকিং করে রাখলেন বোসদা ও আমরা দুই সহকারি। পরদিন দুপুর বারোটার সময় প্রত্যেকে হাওড়া স্টেশনে এসে মিলিত হলাম। ট্রেনের তখনও এক ঘন্টা দেরি। বোসদার বন্দুকটা পায়ের মোজার ভিতরে গোঁজা ছিল। বোসদাকে কেষ্টদা চা খাওয়ার কথা বললে বোসদা তা ফিরিয়ে দেন। বাইরের খাবার ও পানীয় খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে খুব বুঝে তবেই বোসদা খান। কেষ্টদা ও আমি লাগেজগুলো বোসদার কাছে রেখে চা খেতে যাই। মিনিট দশেক পরে আমরা ফিরে আসি। ১২:৩০ মিনিট নাগাদ 'কুম্ভ এক্সপ্রেস' ১১ নম্বর প্লাটফর্মে আসে। আমরা চারিদিক ভালো করে দেখে, লাগেজ নিয়ে ট্রেনে উঠি। লাগেজ সিটের নীচে রেখে যে যার সিটে গিয়ে বসি।
দুপুর একটার সময় ট্রেন ছেড়ে দেয়। 'জয় দুর্গা' বলে কেষ্ট দা নিজের সিটে হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে একটু শোবার চেষ্টা করেন। বিকেল ৩:৩০ নাগাদ ট্রেন আসানসোল এসে দাঁড়ায়। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। কেষ্টদা বাথরুমে যান।সেখান থেকে এসে নিজের সিটে বসে আমার সঙ্গে গল্প করেন। এরপর সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আবার শুয়ে পড়েন। এই দেখে বোসদা বলেন--" কেষ্টদা এখনই ঘুমলে হবে, সবেতো সন্ধ্যা সাতটা। নিচে নেমে আসুন, একটু দাবা খেলা যাক।" বোসদার কথা শুনে কেষ্টদা উপরের সিট থেকে নিচের সিটে নেমে আসেন ও বোসদার সঙ্গে দাবা খেলতে বসে যান। ঘন্টা দেড়েক এই খেলা চলে। বোসদা খেলায় বাজিমাত করেন। পাটনা স্টেশন আসে রাত ৮ টা ৩০ মিনিট নাগাদ। রাত্রের খাবার বোসদা ও আমি পাটনা স্টেশন থেকে তুলে নিই। আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকিট ছিল। বাংলা পার হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্থানীয় অনেক যাত্রী দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠে যাতায়াত করেন, যদিও তাদের কাছে সংরক্ষিত টিকিট থাকেনা-- এই বিষয়টা বোসদা জানতেন। রাত যখন ন'টা, তখন আমরা তিনজন রাত্রের খাবার খেয়ে নিজের নিজের সিটে শুয়ে আছি। বোসদা লক্ষ করেন তাদের সিটের পাশে, যেখানে লাগেজ রেখেছেন সেখানে, একজন পঁচিশ- ছাব্বিশ বছরের বিহারী যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাবভাব বোসদার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। ছেলেটিকে শুয়ে-শুয়ে নজরে রাখেন তিনি। রাত যখন দশটা, তখন আমি ও কেষ্টদা ঘুমিয়ে পড়েছি। ট্রেন ছুটছে প্রচন্ড জোরে। আমাদের বগিতে কয়েকটা লাইট ছাড়া বাকি সব নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। বোসদা শুয়ে "আমি সুভাষ বলছি" বইটি পড়ছিলেন। তখনও সেই ছেলেটিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। রাত বারোটা বাজার পর বোসদা বই রেখে বাথরুমে যান। সত্বর বাথরুম থেকে ফিরে এসে দেখেন, সেই ছেলেটি তখনও দাঁড়িয়ে। এরই মধ্যে তাদের লাগেজের দিকে ছেলেটিকে অনেকবার তাকাতে দেখেছিলেন বোসদা। রাত একটার সময় একটি স্টেশনে এসে থামে ট্রেনটি। ঠিক তখনই ছেলেটি বোসদার সুটকেসটি সজোরে টেনে নিয়ে স্টেশনে নেমে যেতে যাবে, ঠিক তৎক্ষণাৎ অমর কৃষ্ণ বোস লাফ দিয়ে উঠে ছেলেটির পিছন দিক থেকে জামার কলার টেনে ধরে পিঠে এক ঘুসি মারেন। ছেলেটি সুটকেস নিয়ে ট্রেনের মধ্যেই পড়ে যায়। বোসদার চিৎকারে সবার ঘুম ভেঙে যায়। ছেলেটি স্টেশনে নামতে ব্যর্থ হয়। ট্রেনের যাত্রীরা ও আমরা তিনজন মিলে গণধোলাই দিয়ে স্টেশনের জিআরপি-র হাতে ছেলেটিকে তুলে দিই। সুটকেসটা যথাস্থানে রেখে বোসদা ছেলেটির চুরির বর্ণনা দেন। এরপর সবাই তাকে বাহবা দেন। আমি বলি-- " আপনি দেখেছিলেন ভাগ্যিস, না হলে আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।" তারপর ট্রেনের ঐ বগির দরজাগুলি ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে আমরা এসে ঘুমিয়ে পড়ি।
ভোর সাতটার সময় ট্রেন লক্ষনৌ স্টেশনে এসে পৌঁছায়। কুড়ি মিনিট ট্রেন দাঁড়ায় সেখানে। বোসদা ও আমরা দুজন লক্ষনৌ স্টেশনে নেমে দাঁত ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে নি। আমরা দুজন স্টেশন থেকে চা কিনে খাই। বোসদা প্রত্যেক দিনের মতোই এক গ্লাস ছাতু লবণ দিয়ে গুলে খেয়ে নেন। ৭:২০ মিনিটে লক্ষনৌ থেকে ট্রেন ছাড়ে। ট্রেনের মধ্যে বোসদার সঙ্গে পরিচয় হয় এক পুলিশ অফিসারের, যার বাড়ি কলকাতার বেহালায়। তিনি তার পরিবারকে নিয়ে হরিদ্বারে ঘুরতে যাচ্ছিলেন। পরিবারের সকলে পাশের কম্পার্টমেন্টে আছেন, আর ভাগ্যচক্রে তার সিট পড়েছে আমাদের কম্পার্টমেন্টে। বোসদার সঙ্গে এই ব্যক্তির খুব জমে গেল। তিনি জানান তার নাম রজত কুমার মিত্র। বোসদা যতটা প্রয়োজন নিজের পরিচয় গোপন রেখে এবং কী উদ্দেশ্যে হরিদ্বারে যাচ্ছেন সেটাও না বলে, পরিচয় দেন। কেষ্টদা ও আমাকে দুই শালার পরিচয় দেন। বলেন-- " আমরা হরিদ্বারে যাচ্ছি আত্মীয়ের বাড়ি ঘুরতে। শালারা কোনদিন হরিদ্বারে আসেনি, তাই নিয়ে এলাম। আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়ে ভালই হল, বাকি পথটা গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।" এরপর আমরা চারজন মিলে তাস খেলেছিলাম বেশ কিছুক্ষণ ধরে। রজত বাবু তার চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন আমাদের সঙ্গে।
বিকেল পাঁচটার সময় ট্রেন হরিদ্বারে পৌঁছায়। ট্রেন থেকে লাগেজপত্র নামিয়ে নিয়ে আমরা অপেক্ষা করি হরিদ্বার ষ্টেশনে। হরিদ্বারে ট্রেন পৌঁছানোর পর রজত বাবুকে আর দেখা যায় না। বোসদার কিছুটা সন্দেহ হয় এই লোকটিকে নিয়ে। তার কথাগুলো আদৌ কতটা সত্য সেটা নিয়েও প্রশ্ন জাগে তাঁর মনে। এরপর হরিদ্বারের থানা থেকে সাব ইন্সপেক্টর মিস্টার বিকাশ দুবে আমাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানান 'হর কি পৌরী'র ঘাটের কাছেই 'হর হর মহাদেব' নামক একটা হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও ওখানেই। এরপর মিস্টার দুবের সঙ্গে জিপ গাড়ি করে 'হর কি পৌরী'র ঘাটে যাই আমরা। হোটেলে ঢুকিয়ে দিয়ে, হোটেল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলিয়ে মিস্টার বিকাশ দুবে মহাশয় চলে যান। তবে যাওয়ার আগে তাঁর ফোন নাম্বার বোসদাকে দিয়ে বলেন-- "কোন প্রয়োজন হলে এই নাম্বারে ফোন করে আমাকে ডেকে নেবেন।" তিনি চলে যাওয়ার পর দীর্ঘ ট্রেনযাত্রার কষ্ট লাঘব করার জন্য একে একে আমরা স্নান সেরে নিই। এরপর ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে রাত ন'টা নাগাদ খাবার দেবার জন্য হোটেল ম্যানেজারকে ফোন করি। খাবার খেয়ে রাত দশটার সময় যে যার মত ঘুমাতে যাই। শুয়ে শুয়ে বোসদা হাওড়া থেকে আসার সমগ্র চিত্রটা একবার মনে করতে লাগলেন। ট্রেনে দেখা হওয়া পুলিশ অফিসারের হাবভাব ও কথাগুলি মনে করার চেষ্টা করেন তিনি। ঘুম আসতে রাত বারোটা বেজে যায়। অচেনা জায়গা, তাই একটু সজাগ থাকার চেষ্টা করি সকলে।
পরদিন ভোর ছ-টায় আমাদের ঘুম ভেঙেছিল। ফোন করে বোসদা মিস্টার দুবেকে ডেকে নেন। ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিই আমরা। অভ্যাস মতো বোসদা এক গ্লাস ছাতু ও আমরা দুজন চা খেয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যেখানে সন্ধ্যারতি হয় সেই ঘাটটি ও আশেপাশের এলাকা একটু ভালো করে ঘুরে দেখি। বোসদার শ্যেন দৃষ্টি চারিদিকে ঘুরতে থাকে। সন্ধ্যা আরতির ঘাটে ওঠার সময় আমি লক্ষ করি একজন সন্ন্যাসী বারবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছেন। প্রথমে আমার সন্দেহ হয় নি, কিন্তু বারবার তাকানো ও 'জয় নিরঙ্কর' ধ্বনি দেওয়ায় আমার কেমন সন্দেহ হয়। আমি বিষয়টি বোসদাকে জানালে তিনি আমাদের দুজনকে সন্ন্যাসীর প্রতি নজর রাখতে বলেন। এরপর কবে থেকে এই কিডন্যাপের ঘটনাটা ঘটছে, কখন ঘটছে পুরো বিষয়টি মিস্টার দুবে আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানান। বোসদার দৃষ্টিতে অনেক অনিয়ম চোখে পড়ে। সকাল আটটায় আমরা সকলে পুনরায় হোটেলে ফিরে আসি। সন্ধ্যেবেলা আরতীর ত্রিশ মিনিট আগে বিকাশ দুবেকে আসতে বলেন বোসদা । এরপর মিস্টার দুবে চলে যান। তিনি চলে যাওয়ার পর বোসদা আমাদের বলেন -- "এই কেসটা সমাধান করা খুব একটা সহজ হবে না। স্থানীয় কয়েকজন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমার মনে হচ্ছে। তবে তাদের সম্পর্কে যতক্ষণ না পুরোপুরি খোঁজ নেওয়া না হচ্ছে, ততক্ষণে সমস্যা সমাধান করা কঠিন। আর কিডন্যাপের ঘটনা যে প্রতিদিন ঘটছে, এমন কিন্তু নয়। ভালো করে লক্ষ না রাখলে এদের ধরা যাবেনা। আমাদেরকেও স্থানীয় অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন। ঘাটে ওঠার সামনে একটা ফুলের দোকানের লোক আমাদের বার বার লক্ষ করছিলেন, আমার চোখে চোখ পড়লে মাথা নীচু করে নেন। মন্দিরে যে সমস্ত পুরোহিতরা আরতী করেন তারাও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে আমার মন বলছে। আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।" এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোসদা আরো বলেন-- "মিস্টার দুবের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী এই দু-মাসে মোট ত্রিশটির মতো মেয়ে কিডন্যাপ হয়েছে। কোনদিন তিনজন, কোনদিন দুজন, আবার কোন দিন একজন। আর যারা কিডন্যাপ হয়েছেন তাদের মধ্যে দুজন বাদে প্রত্যেকেই তীর্থযাত্রী। দুবের পাঠানো লিস্ট অনুযায়ী দশ জন মেয়ে কলকাতার সম্ভ্রান্ত পরিবারের, দশ জন আসামের, পাঁচ জন বিহারের, তিনজন উত্তরপ্রদেশের ও দুজন হরিদ্বারের স্থানীয়। বেশিরভাগ মেয়ে সুন্দরী এবং উচ্চবংশীয় ধনী।"এরপর কেষ্টদা বলেন, এই চেন যে অনেক দূর পর্যন্ত ব্যাপ্ত তা বোঝাই যাচ্ছে। বোসদা আমাদের বলেন, সন্ধ্যেবেলা মিস্টার দুবে এলে আমরা আজকের পরিকল্পনাটা আলোচনা করে নেব।
সকাল এগারোটার সময় কনকনে ঠাণ্ডা গঙ্গার জলে কোনমতে স্নান সেরে আমরা হোটেলে আসি। বারোটার সময় খাওয়া-দাওয়া সেরে বোসদা খাটে হেলান দিয়ে "আমি সুভাষ বলছি" বইটি পড়তে থাকেন। আমি ও কেষ্টদা দাবা নিয়ে বসি। তিনজনে মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা কী অসাধারণ গোয়েন্দা ছিলেন এই বিষয় নিয়ে বোসদা আমাদের সঙ্গে একটি গল্প করেন, যেটি সম্ভবত "চন্দননগরের জোড়া খুন" মামলা থেকে । তিনি ফেলুদার বীরত্বের কথা বলার পর বলেন -- "সমগ্র জীবনে একমাত্র ফেলুদা এই কেসটিতেই অসফল হয়েছিলেন ; আমরাও দশ বছরের গোয়েন্দাগিরির জীবনে এবার ফেলুদার মতো অসফল হবো না তো!" আমি জোর গলায় বলি অবশ্যই এই কেসে আমরা জিতব।
সন্ধ্যে পাঁচটা তিরিশ মিনিট নাগাদ মিস্টার দুবে সিভিল ড্রেসে তিনজন কনস্টেবল নিয়ে হোটেলে আসেন। বোসদা মিস্টার দুবেকে বলেন-- "আমাদের আজকের পরিকল্পনাটা ভালো করে শুনুন-- আপনারা এখানে পরিচিত, তাই আপনাদের সঙ্গে আমাদের থাকা যাবে না। অনেককেই সন্দেহের চোখে আমাদের দিকে তাকাতে দেখেছি। যা যোগাযোগ ফোনে হবে। আপনারা এক এক জন করে এক এক জায়গায় আরতির ঘাটে থাকবেন। আমরা অপরিচিত বলে লোকজনের ভিড়ে মিশে থাকবো। কেউ কোন কিছু দেখলেই আমাকে ফোনে জানাবেন। প্রত্যেকের ফোন ভাইব্রেট করা থাকবে। আজকেই কিছুটা রহস্য উন্মোচন করতে পারবো বলে আমার ধারণা। সকলে আজকের পরিকল্পনা বুঝে নিয়েছেন নিশ্চয়ই, সেইমতো প্রস্তুতি নিয়ে যে যার মতো বেরিয়ে যান।" আমি কোমরে একটি পুলিশের রুল গুঁজে বেরিয়ে পড়ি।বোসদা, কেষ্টদা ও দুবেজীরা যে যার মত তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে যান।
সন্ধ্যা ছ-টার সময় সন্ধারতি শুরু হয়। গঙ্গার ঘাটে লোকে-লোকারণ্য। তিল ধারনের জায়গার বড়ই অভাব। আমরা প্রত্যেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নজর রাখি চারিদিকে। আধাঘন্টা আরতী চলাকালীন খুব নজর রেখেও রহস্য উন্মোচন করা যায়নি। সেদিন কিডন্যাপের কোনো ঘটনা ঘটেনি সেখানে।বোসদা বুঝতে পারেন সকালবেলা তাদের অনেকেই ফলো করেছিল। তারা কিছুটা বুঝতে পেরে আজ তাদের অপারেশন চালানো থেকে বিরত হয়েছেন। পরদিনও সারা ঘাটে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তৃতীয়দিন অমরকৃষ্ণ বোস এক ভিখিরির ছদ্মবেশে, আমি এক পাগলের আর কেষ্টদা সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে গঙ্গার ঘাটে আরতির সময় যাই এবং ঘাটের চারদিকে নজর রাখি। আর মিস্টার দুবেকে তার সহচরদের নিয়ে দূরে ব্রিজের উপরে অপেক্ষা করতে বলেন বোসদা। বোসদার ফোন পেলেই যেন তারা দ্রুত সেখানে পৌঁছে যান। আরতি চলাকালীন সকলে যখন সেদিকে মত্ত ছিলেন, তখন হঠাৎ একটি চিৎকার বোসদা শুনতে পান। বোসদা তৎক্ষণাৎ সেই চিৎকারকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যান। কিন্তু কিছুই আবিষ্কার করতে পারেন না। তিনি ফোন করে মিস্টার দুবে ও কনস্টেবলদের ডেকে নেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কিছুই দেখতে পাননি। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দেখেন একটা পিলারের কাছে একজন ভদ্রলোক ও একজন ভদ্রমহিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে কাঁদছেন। বোসদা সত্বর সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন-- "কলকাতার বেহালা থেকে একমাত্র মেয়ে অন্তরা চ্যাটার্জীকে নিয়ে হরিদ্বারে তারা গত তিনদিন আগে ঘুরতে এসেছিলেন। তারা আজ তিনদিন ধরে সন্ধ্যারতি দেখতে ঘাটে আসছিলেন। গত দু'দিন সবই ভালো ছিল, কিন্তু আজ একটু আগে থেকে তাঁরা তাঁদের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটি একটু আগেও সন্ধ্যা আরতি দেখছিল ।" এরপর ঘাট ফাঁকা হয়ে গেলে বোসদা, মিস্টার দুবে ও আমরা রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সম্ভব হয়নি।
পরদিন সকাল দশটায় বোসদা, আমি ও কেষ্টদা আবার আরতির ঘাটে যাই। সবকিছু ভালোভাবে বারবার পরখ করার পর বোসদা দেখেন, গঙ্গার ঘাটের বিরাট চাতালের একটা বৃহৎ পিলারের পিছনে একটা কাঠের পাটাতন। তার উপর প্লাইয়ের একটি প্লেট এমনভাবে সেট করা, যা ভালোভাবে না দেখলে বোঝা যায় না। বোসদা পা দিয়ে সেখানে আঘাত করতে একটা ফাঁপা আওয়াজ হয়। সেটিকে আমাকে তুলতে বললে, আমি তুলে দেখি, ওর ভিতর দিয়ে একটা অন্ধকার সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে। বোসদার অনুমান, গঙ্গার নীচ থেকে এই সুরঙ্গ অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে। এরপর বোসদা বন্দুক বের করেন। আমিও পুলিশের রুল নিয়ে মোবাইলের আলো জ্বেলে সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করি। উপর থেকে নীচে যাওয়ার জন্য যে সিঁড়িটি, সেটি অনেক নীচে পর্যন্ত চলে গেছে। তারপর সুড়ঙ্গের শুরু। সুরঙ্গের ভিতর কিছুটা যেতে আমরা মানুষের গলার আওয়াজ পেলাম। সঙ্গে পেলাম একটি মেয়ের ক্রন্দনধ্বনি। বোসদা প্রথমে ধীরে ধীরে বন্দুক হাতে এগিয়ে যান। তারপর আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন। আরো খানিকটা গিয়ে দেখলাম পাঁচ জন পুরুষ একটি টেবিলের উপর বসে তাস খেলছেন। প্রত্যেকের কাছেই কোন না কোন অস্ত্র ও বন্দুক আছে। তাদের পাশের একটি ঘরে মেয়েটিকে আটকে রাখা হয়েছে। সেই মেয়েটিই কাঁদছে। বোসদা ও আমরা বলাবলি করলাম কালকের মেয়েটি মনে হয়। এরপর হঠাৎই আমার পায়ে লেগে একটা টিনের ড্রাম পড়ে গেলে ওরা সজাগ হয়ে যান। কিছুক্ষণ ওদের সাথে গুলির লড়াই চলে বোসদার । তাঁর ছোড়া গুলিতে তিনজন আহত হন। হাতের অস্ত্র ও বন্দুকগুলি দূরে ছিটকে গিয়ে পরে। আমার হাতের রুলটি একজনের মাথা লক্ষ্য করে দূর থেকে ছুড়ে মারি। তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বের হয় ও রক্ত দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। কেষ্টদা সুড়ঙ্গের মধ্যে থেকে একটি পাথর নিয়ে একজনের উদ্দেশ্যে ছুড়ে মারলে সেও আহত হন। এরপর ছুটে গিয়ে তাদের ধরে ফেলি। সেই সন্ন্যাসী ও ফুল বিক্রেতাকে এই গ্যাংয়ের মধ্যে দেখতে পেয়ে আমরা বুঝতে পারি, আমাদের সন্দেহ ভুল ছিল না। এরপর বোসদা মিস্টার দুবেকে ফৌজ নিয়ে আসার জন্য ফোন করেন। পাঁচজনকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সেই সম্পূর্ণ সুড়ঙ্গকে সিল করে দেওয়া হয়। অন্তরা চ্যাটার্জী নামক মেয়েটাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তার বাবা-মার কাছে ফোন করে তুলে দেন বোসদা ও মিস্টার দুবে ।
পাঁচজনকে থানায় নিয়ে গিয়ে প্রচন্ড মারার পর জানা যায় -- "এই কাজে তারা চুনোপুঁটি মাত্র, আরো রাঘোব বোয়ালরা এর সাথে জড়িয়ে আছেন।" ছদ্মবেশী সন্ন্যাসী জানান-- "এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কলকাতার এক কুখ্যাত মাফিয়া ও কিডন্যাপার, যার নাম সুনীল পান্ডে। এই ব্যক্তির নামে বিভিন্ন রাজ্যে মার্ডার কেস পর্যন্ত রয়েছে। এখনো পর্যন্ত দু'শোর বেশি মেয়ে কিডন্যাপ করে বিক্রি করে দিয়েছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন লালপল্লীতে ও ভারতবর্ষের বাইরে। সুন্দরী মেয়েদের দাম বেশি বলেই তাদের লক্ষ্য থাকে সুন্দরী মেয়েদের উপর।" গত দু'মাসে ত্রিশটির বেশী সুন্দরী মেয়েকে তারা কিডন্যাপ করে বিক্রি করেছে বলে জানান। এরপর ফুল বিক্রেতা লোকটি জানান-- "এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছেন দিল্লির এক মিনিস্টার। তার নাম তারা জানেন না। জানেন কেবল সুনীল বাবু।" এরপর বোসদা জিজ্ঞাসা করেন সুনীল পান্ডেকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে? তখন ফুল বিক্রেতা আবার জানান-- "পাঁচ দিন আগে হরিদ্বারে এসেছেন তিনি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। ফোনে ফোনে সব কাজ হয়ে যায়। শুধু মেয়েদের খরিদ্দার কিনতে আসার দিন আসেন।যে মেয়েটিকে গতকাল কিডন্যাপ করা হয়েছিল তার বিক্রির জন্য পরশু দিন আসার কথা আছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সময় এই কিডন্যাপের বিষয়টা চলে। ভারতের অন্যত্র ও বিদেশে বাঙালি মেয়েদের চাহিদা বেশি বলে আমরা কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে আশা সুন্দরী বাঙালি মেয়েদের উপর বেশি নজর রাখতাম। সুযোগ বুঝে আরতির সময় কিডন্যাপ করা হতো, মুখ বেঁধে, বন্দুক দেখিয়ে।"
এরপর বোসদা আমাদের জানান--"আরো কিছুদিন আমাদের এখানে থাকতে হবে। শিকড় গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে না পারলে আমরা চলে যাওয়ার পর এ ঘটনা আবারো অন্যভাবে সর্বত্র ঘটতে পারে।" অপরাধীদের পরের দিন কোর্টে চালান করে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার দুই দিন পর হঠাৎই 'মেঘ না চাইতে জল'-এর মতোই আমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ট্রেনে দেখা হওয়া সেই পুলিশ অফিসার রজত কুমার মিত্রের সঙ্গে। বোসদার সন্দেহ তখনও মনে মনেই ছিলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন-- "কেমন ঘুরছেন হরিদ্বারে? আপনার পরিবারের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না !" রজত মিত্র বলেন -- "হোটেলে আছেন। আমার ভালো লাগছিল না, তাই একটু ঘাটে এলাম হাওয়া খেতে।" এবারও তার কথা বিশ্বাস হলো না বোসদার। কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল তার উপর। বলাবাহুল্য আমাদের আত্মীয়ের বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেছিলেন সেই পুলিশ অফিসার কিন্তু বুদ্ধি করে বোসদা ভুল ঠিকানা দিয়ে দেন।
এরপর হঠাৎ করে বোসদার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি মনে করেন আর একবার মিস্টার সুনীল পান্ডেকে ফোন লাগিয়ে দেখবেন। ফোন লাগাতেই ফিরে যাওয়া পুলিশ অফিসারের ফোনের রিংটোন বাজতে থাকে।বোসদার সন্দেহ হয়। তিনি বার তিনেক ফোন করেন এবং কেটে দেন। তিনি যে কবার ফোন করছিলেন সেই কবারই ওই রজত মিত্রকে ফোন তুলতে দেখছিলেন, আর কেটে দিলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। অমর কৃষ্ণ বোসের বুঝতে আর দেরি হয়নি যে, এই রজত মিত্র আসলে কোন পুলিশ অফিসার নন, আর কোন পরিবারকে নিয়ে হরিদ্বারে ঘুরতে আসেন নি। ট্রেনে বলা গল্প গুলি সবই বানানো ও মিথ্যা। তৎক্ষণাৎ অমরকৃষ্ণ মিত্র বুঝে যান এই ছদ্মবেশী রজত মিত্র আসলে কুখ্যাত মাফিয়া ও কিডন্যাপার সুনীল পান্ডে। সেই সময় বন্দুক বার করে ঘাট থেকে ফিরে যাওয়া সেই লোকটিকে সুনীল পান্ডে বলে চিৎকার করে ডাক দেন বোসদা। ছদ্মবেশী অফিসার রজত মিত্র বোসদার হাতে বন্দুক দেখে বুঝতে পারেন এরা পুলিশের লোক। মুহুর্তের মধ্যে কোমর থেকে বন্ধুক বের করে এক দোকানের পাশে ঢুকে যান তিনি। বোসদাও একটি পিলারের পিছনে আশ্রয় নেন। আমি ও কেষ্টদা মন্দিরের পেছনে গিয়ে দাঁড়াই। বোস দার সঙ্গে অপরাধী সুনীল পান্ডের গুলির লড়াই চলে। আমি সঙ্গে থাকা রুলটি সুনীলের বন্দুক টিপ করে ছুড়ে মারি। বন্দুক কিছুটা দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ে। এই ঘটনার ভয়ে, আতঙ্কে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সুনীল পান্ডে ছুটে গিয়ে যখন বন্দুকটি তুলতে যাবে, তখন বোসদা প্রথমে সুনীল পান্ডের হাতে ও পরে পালাতে গেলে পায়ে গুলি করেন। কেষ্টদা তৎক্ষণাৎ তীরের বেগে ছুটে গিয়ে বন্দুকটা তুলে নেন। আমি দৌড়ে গিয়ে সুনীল পান্ডেকে ধরে ফেলি। গুলি লাগার যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে ও অসভ্য গালিগালাজ করেন কিডন্যাপার সুনীল পান্ডে। এরপর বোসদা মিস্টার দুবেকে ফোন করলে মিস্টার দুবে চারজন কনস্টেবল নিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে সেখানে আসেন এবং তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান।
বিশেষ উল্লেখ্য কয়েকদিন ফোনে যোগাযোগ করতেন না পারায় মিস্টার সুনীল পান্ডে তার ডেরাতে যাবার জন্য গঙ্গার ঘাটে এসেছিলেন। তাছাড়া একজন খরিদ্দার আসার কথাও ছিল। আর তখনই আমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। কথা বলার জন্য ফোন খুলেছিলেন কিন্তু বন্ধ করতে সময় পাননি। ঠিক সেই সময় বোসদার ফোন কলে ধরা পড়ে যান মার্ডার ও কিডন্যাপ কেসের আসামী সুনীল পান্ডে। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর থারডিগ্ৰি মার চলে সুনীলের উপর। একসময় ফরফর করে মেয়ে পাচারের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রীর নাম, কোথায় কোথায় পাচার করেছেন, তার বাড়ি কোথায়-- সবকিছু বলে দেন।
এরপর সুনীলের নামে চার্জশিট দাখিল করিয়ে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অমরকৃষ্ণ বোস । পুরো বিষয়টি ইমেইল মারফত পৌঁছে দেন তাদের কাছে। এই মন্ত্রীর নাম মিস্টার নরোত্তম যাদব। দিল্লি সরকারের 'নারী কল্যাণ দপ্তর'এর মন্ত্রী। দিল্লি পুলিশ সমস্ত সাক্ষ্য হাতে নিয়ে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তিন দিনের মধ্যে মন্ত্রী নরোত্তম যাদবকে গ্রেপ্তার করেন।
১০ই এপ্রিল আমাদের অপারেশন সফল করে কলকাতায় ফেরার দিন। তবে এবার ট্রেন নয়, দেরাদুন থেকে কলকাতায় ফেরার প্লেন। দুপুর দুটোর সময় ছাড়বে। লাগেজ চেকিং করিয়ে আমরা প্লেনে উঠেছি, হঠাৎ একটি ফোন আসে বোসদার কাছে বিশাখাপত্তনমে জোড়া খুনের রহস্য সমাধান করার জন্য। নারী পাচারের অপারেশনের মামলায় সফলতার তৃপ্তি নিয়ে কলকাতায় ফিরে দুদিন পর আবার রহস্য উন্মোচনে 'অন্তবিহীন পথে চলাই জীবন বলে' বিশাখাপত্তনামের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিই আমরা তিন মূর্তি।
=====================
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
পিন-- 743252