ভ্রান্তি ভঙ্গ
সমর আচার্য্য
সেদিন ঘুম থেকে উঠেই পরেশ শুনতে পেল,তার বন্ধু অশোকের মাকে সাপে কামড়েছে। শুনেই পড়ি- মরি করে ছুটে গেল বন্ধুর বাড়ি। গিয়ে দেখল অশোকের মা প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় হাত পা এলিয়ে দিয়ে বসে আছেন । বাড়ি এবং পাড়ার অন্য মহিলারা তাকে পিছন থেকে ধরে রেখেছে, যাতে বসে থাকতে পারেন । তার ডান হাতে গামছা দিয়ে শক্ত করে বাঁধন রয়েছে। কতগুলো লোক নিমের পাতা তার গায়ে বুলিয়ে কী সব মন্ত্র আউরে যাচ্ছে ।
পরেশকে দেখেই অশোক ছুটে এসে বলে, কি হবে ভাই,আমার মায়ের ! মা যে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। পরেশ ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, কিচ্ছু হবে না, তুই অত ঘাবড়াস না। কিন্তু এই ঝাড়ফুঁক কেন চলছে! মাসিমাকে তো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দরকার। অশোক বলে, আমি বাবাকে বলেছিলাম, কিন্তু শুনতেই চাইছেন না। ওদিকে দাসপাড়ার নগেন ওঝা বাবাকে বলেছে,---- আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, তোমার বৌকে সুস্থ করে দেব। বাবা তো তার কথার উপর নির্ভর করেই বসে আছেন ।
পরেশ বলে, তুই ও পাগল হলি, সেদিন শুনলি না, মাস্টারমশাই কি বললেন। এখন সাপের বিষের ওষুধ বেরিয়েছে, ঠিক টাইমে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কোন ভয়ের কারণ নেই। ওঝার ঝাড়ফুঁক টুক সব বুজরুকি ,যেমন করেই হোক মাসিমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে।
ওরা দুইজনে মিলে অশোকের বাবাকে বুঝিয়ে ঝাড়ফুঁক বন্ধ করে দিল । ওঝা এবং গ্রামের অনেকেই এতে ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে অনেক কথা বলতে লাগল। কিন্তু ওরা তাতে কর্ণপাত না করে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কতক্ষণ আগে কামড়িয়েছে এবং কি করা হয়েছে শুনে নিলেন ডাক্তারবাবু।
চিকিৎসা শুরু হলো। উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ নিয়ে ওরা সবাই বাইরে অপেক্ষা করছিল। কতক্ষণ পর ডাক্তারবাবু বেরিয়ে এসে বললেন---- আনন্দের খবর,ওষুধে সাড়া দিয়েছে, এখন রোগী বিপদমুক্ত। তারপর অশোকের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনার ছেলে এবং ওর বন্ধু যদি ঠিক সময়ে হাসপাতাল নিয়ে না আসত , তাহলে ওঝা তো প্রায় শেষ- ই করে ফেলেছিল। তারপর পরেশ আর অশোকের কাছে এগিয়ে এসে ওদের পিঠ চাপড়ে বললেন, --শাবাশ, শাবাশ। এই তো চায় ! এমন করেই মানুষের মনের ভ্রান্তি ভঙ্গ করে এগিয়ে চলো ------!
==========================
সমর আচার্য্য
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর