Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প।। ক্লিনিকাল ট্রায়াল।। শংকর লাল সরকার।।

ক্লিনিকাল ট্রায়াল

 শংকর লাল সরকার

ঘুম ভাঙতেই একরাশ বিষাদ ডাঃ সৌম্যশংকর মুখার্জির সমস্ত চেতনাকে যেন অবশ করে দিলদেহমন জুড়ে একটা অবসাদচোখের পাতা ভারী হয়ে আছে, কিন্তু আর ঘুম হবে নাএকটা ম্যাদামারা আলো জানলার ঘষা কাচ ভেদ করে ভিতরে আসছেঅনিচ্ছুক শরীরটা নিয়ে বিছানার উপরে উঠে বসলেনহঠাৎ এরকম সর্বগ্রাসী বিষন্নতার কারন কী? কাল হাসপাতালের করিডরের বেঞ্চিতে বসা মেয়েটিকে মনে পড়ল

বিড়বিড় করে নিজেকে বললেন সৌম্যশংকর কী অন্তর্ভেদী অস্বস্তিকর চোখদুটিহিজাব আর নাকাবের ফ্রেমে আটকানো ক্লান্ত বিষন্ন চোখদুটিতে ভীড় করে থাকা কত নিরুচ্চারিত প্রশ্নএকবার চোখাচুখি হবার পরই চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেনসত্যি বলতে কী চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেনঅস্বস্তিটা জোর করেই মন থেকে সরিয়ে রেখে ক্লান্ত পদক্ষেপে সৌম্যশংকর বিছানা থেকে নামলেনবেডরুম লাগোয় বারান্দায় একটা চেয়ারে বসলেনআকাশের এককোণে কালো মেঘ জমেছেকেন জানি সৌম্যশংকরের মনেও আজ মেঘের ঘনঘটা

রিটায়ারমেন্টের পর অখণ্ড অবসরপ্রাইভেট প্র্যাসটিস করা অনেক কমিয়ে দিয়েছেনবিকালের দিকে একটা ক্লিনিকে ঘন্টা দুয়েক বসেনকনীনিকা চলে যাবার পর থেকে একা  কাজের উৎসাহটা আজকাল হারিয়ে ফেলেছেনঅথচ এই সেদিনও ছিল কী প্রচণ্ড ব্যস্ততা 

কাল হাসপাতালে গিয়েছিলেন বাল্যবন্ধু সুমিতকে দেখতে করিডর পার হবার সময়ে আচমকা চোখাচুখি হয়ে গিয়েছিল মেয়েটির সঙ্গে বোরখায় শরীর ঢেকে বেঞ্চে বসে ছিল, কখন ডাক আসবে তার প্রতীক্ষায় হিজাব আর নাকাবের ফ্রেমে বাধানো চোখ দুটোকে চেনা চেনা মনে হয়েছিলচলেই যেতেন, এরকম কত রোগীই তো প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে

'ডাক্তারবাবু ভালো আছেন?'

ঘাড় ঘুরিয়ে সৌম্যশংকর দেখলেন মেয়েটির পাশে দাড়ানো একজন মধ্যবয়স্ক লোক বিষন্ন মুখে ম্লান হাসি ঝুলিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছেন জরাজীর্ণ বিবর্ণ পোশাক, কালো শীর্ণ পাংশুটে কঙ্কালসর্বস্ব চেহারাঅনটন, দুর্ভাবনা আর দারিদ্রের চাপে বুড়িয়ে যাওয়া, কোনক্রমে ধুকপুক করে বেঁচে থাকা একজন মানুষমুখে একটা ভদ্রতার মেকি হাসি ঝুলিয়ে তাও চলে যেতেনকিন্তু থমকে দাড়িয়ে পড়লেনমেয়েটির নীরব চোখদুটোই তাকে যেতে দিল না

ফিরে তাকাতে লোকটা দুপা এগিয়ে এসে ইতস্তত করে বললেন ডাক্তারবাবু চিনতে পারছেন

সৌম্যশংকর চুপ করে থাকেন, গত কুড়িবছর ধরে এই হাসপাতালে প্রতিদিন কত রোগীর সংস্পর্ষে এসেছেন আলাদা করে চিনবেন কিভাবে?

একটু সাহস সঞ্চয় করে লোকটি বললেন প্রায় দশবছর আগে আমার স্ত্রী ফারজানাকে নিয়ে এসেছিলাম আপনার কাছেছেলে টুটুল জন্মানোর পর আপনি ওকে একটা জন্মনিয়ন্ত্রনের ঔষধ দিতেনপ্রথম প্রথম প্রতিসপ্তাহে, তারপর মাসে একদিন করে প্রায় বছরখানেক হাসপাতালে ফারজানাকে নিয়ে আসতামআপনি চেকআপ করতেন

অসহায় তোম্বাপানা মুখ করে আশপাশে ঘুরঘুর করছিল একটি বছর দশেকের ছেলেজীর্ণ শীর্ণ সেই ভদ্রলোক, মকবুল ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন টুটুল ডাক্তারবাবুকে সালাম কর

সৌম্যশংকর ফারজানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছেনক্লান্ত বিষন্ন স্বরে মেয়েটি বললেন ডাক্তারবাবু শরীরের মধ্যে একটা অদ্ভুত কোলাহল আর জ্বয়ধ্বনি টের পাচ্ছিভিতর থেকে কে যেন বলছে আর বেশী দিন নয় হে, বেশী দিন নয়

মকবুল বললেন ওর কথায় কিছু মনে করবেন না ডাক্তারবাবু, আজকাল সব সময়েই ওই রকম উল্টোপাল্টা কথা বলেফারজানার জরায়ুতে একটা টিউমার হয়েছিলমাসখানেক আগে টিউমার অপারেশনের পর বায়প্সির রিপোর্ট পজিটিভকেমোথেরাপি করাতে হবেআজ প্রথম কেমোথেরাপির ডেট

মুখে কিছু না বললেও সৌম্যশংকর বুঝলেন যে ফারজানা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের একজন পেসেন্ট ছিলেনবললেন আপনারা এর মধ্যে আর মেডিকেল চেকআপ করাননি?

চেক আপ? সেসব তো বড়োলোকেরা করে শুনেছিআমরা নাভিশ্বাস না উঠলে কখনও হাসপাতাল মুখো হই নাকি? মকবুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন

একটা ঠাণ্ডা শিরশিরে অনুভুতি সৌম্যশংকরের সারা শরীরের ভিতর ছড়িয়ে গেল ফারজানার দিকে আর তাকালেন নানিজের খর্বাকার ছায়াকে সঙ্গী করে পালিয়েই এলেন ওই দুটো চোখের সামনে থেকেওরা সৌম্যশংকরকে তো বলতেই পারতেন হ্যা আপনি, একমাত্র আপনিই আমাদের এই অবস্থার জন্য দায়ীমানুষের সমাজে আজও ভদ্রতা, শিষ্টাচারের মত কিছু ভাঁড়ামি এসে সত্যের মুখ চাপা দেয়

চেয়ারে বসে ভাবছিলেন সৌম্যশংকর, মানুষ সারা জীবন কেবল নিজের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেচেষ্টা করে নিজেকে ভালো রাখতেকিন্তু সেই প্রচেষ্টার সত্যই কী কোন মূল্য আছে? জীবনের প্রান্তে উপনীত হয়ে সবকিছুকেই মূল্যহীন মনে হচ্ছেসারাটা জীবন একটা বিরাট উপন্যাসের মত ধরা দেয় ওনার কাছেদীর্ঘ কর্মজীবনের সুখদুঃখ হাসি কান্নার কত গল্পকত ছোট বড়ো ঘটনা একসময়ে কী ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল, আজকে সেগুলোকে কত মূল্যহীন বলে মনে হয়

হিজাব আর নাকাবের ফ্রেমে আটকানো চোখদুটোকে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না সৌম্যশংকরপুরানো সহকারী সরকারবাবুকে একবার ফোন করলেন

হ্যালো! সরকারবাবু ভালো আছেন?

অনেকদিন পর, আপনি ভালো? বৌদির ঘটনাটা শুনেছি খুবই দুঃখজনক

সবই ভবিতব্যজন্ম মৃত্যু ঈশ্বর নির্ধারিত, তাকে পাল্টানো যায়না

মেয়ে কেমন আছে?

কৃত্তিকা এখন স্টেটসে সেটেলডস্বামী পুত্র নিয়ে ভীষন ব্যস্তসরকারবাবু, আপনার ছেলের খবর কী?

অবসরপ্রাপ্ত দুই বৃদ্ধের কথপকথন চলতে থাকেকা! কা! তীব্র চিৎকারে চারদিক সচকিত করে একটা কাক সামনের নারকেল গাছটা থেকে উড়ে গেলফোনের ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা নিরন্তর বাক্যস্রোতের অনেকটাই সৌম্যশংকরের শ্রুতিগোচর হয়না

সরকারবাবু, আমাদের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফাইলগুলি সব কোথায় আছে?

অফিসরুমের আলমারিতে সমস্ত ফাইল আছেঅরিজত এখন ওগুলো দেখে

আজ একবার হাসপাতালে যাব, ডাঃ করকে ফোন করে দিচ্ছিআপনি পারলে একবার আসুনপুরানো একটা মেডিক্যাল রিপোর্ট খুজতে হবে

কেন?

তেমন কিছু নয়, একটু দরকার আছে

আলমারি ভর্তি ফাইলকী খুজছেন সেই ব্যাপারে সৌম্যশংকরের কোন স্পষ্ট ধারণা ছিলনাহিউম্যান রিপ্রোডাকশনের বিভিন্ন গবেষনামুলক ফাইলগুলি দেখতে লাগলেনদশবছর আগেকার রেকর্ডএকএকটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে হাসপাতালের আশি থেকে একশজন পেসেন্টের উপর ড্রাগ প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের ডিটেলস কেস হিস্ট্রি লিপিবদ্ধ আছে ফাইলেগোটা তিনেক ফাইলে রক্ষিত আড়াইশ পেসেন্টের ছবিসহ ডিটেল্স বায়োডাটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল।  

ফাইলে সংরক্ষিত বায়োডাটার সঙ্গে আটকানো ছবিটা দেখে চমকে উঠলেন সৌম্যশংকরপ্রবল তৃষ্ণায় গলাটা যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলহিজাব আর নাকাবের ফ্রেমে আটকানো সেই না ভুলতে পারা মায়াময় দুটি চোখচোখদুটি আলাদা করে তৈরী করে যেন ওখানে বসানো হয়েছেদিঘির মতো গভীর, নিষ্পাপ চোখদুটো দেখে সৌম্যশংকরের কেবল নিজের মেয়ে কৃত্তিকার কথা মনে হয়ফারজানা হক, বয়স ছাব্বিশ বছরফিমেল কন্ট্রাসেপটিভ, নন স্টেরয়েড ড্রাগ প্রেগারোকস এর ক্লিনিকাল ট্রায়ায়েলের ভলান্টিয়ার পেসেন্টপ্রায় বছর দশেক আগের ঘটনা কিন্তু মনে হয় যেন এই সেদিনের কথা

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী আলফা-জেনেটিক্স প্রেগারোকস কন্ট্রাসেপটিভ ড্রাগটি তৈরী করে ইণ্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের রেকমেণ্ডশন সহ  হাসপাতালে পাঠিয়েছিল ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য

ল্যাবরেটরিতে কোন ঔষধ বা ড্রাগ তৈরী হলে তার কার্যকারিতা কমপক্ষে পাঁচটি পর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়আনবিক স্তরে ড্রাগটির রাসায়নিক জৈবরাসায়নিক বিশ্লেষনের পর তার ক্ষতিকারক দিক পরীক্ষার জন্য প্রথমে ব্যবহৃত হয় প্রানীদেহের জীবন্ত টিসুতার পরবর্তী ধাপে ইঁদুর বা গিনিপিগের উপরে ড্রাগের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়জীবন্ত কোষের উপর ঔষধের ক্ষতিকারক দিকগুলোর বিশ্লেষণের পর প্রাইমেট অর্থাৎ বানর প্রজাতির উপরে ড্রাগটিকে পরীক্ষা করা হয়এথিক্যাল কমিটির বিস্তর বাধানিষেধ মেনে তবে প্রাইমেটদের উপরে পরীক্ষা করা সম্ভবঅনেক ঔষধ কোম্পানী প্রাইমেটদের উপর ড্রাগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ধারণের খরচসাপেক্ষ পথে না গিয়ে সরাসরি মানবদেহে প্রয়োগ করে ড্রাগের মাত্রা স্থিরীকরণ থেকে শুরু করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিশ্চিতকরণের কাজগুলো সারতে চায়কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের মেডিক্যাল অ্য়াসোসিয়েশনের এথিক্যাল কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে পরীক্ষমূলক ড্রাগটিকে হাসপাতালের রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয়আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে সংশ্লিষ্ট রোগীকে সবকিছু জানিয়ে তার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজনকিন্তু কোন ক্ষেত্রেই তা করা হয় নাহাসপাতালের নিজস্ব এথিক্যাল কমিটির অনুমতি নিয়ে কয়েকজন রোগীকে চিহ্নিত করে ড্রাগটিকে প্রয়োগ করা হয়বিনামূল্যে ঔষধ এবং প্রয়োজনীয় চেক আপের সুবিধা পায় সেই পেসেন্টকিন্তু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিসেবা এবং বেশিরভাগ ঔষধই বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়ফলে রোগী ঠিকঠাক বুঝতেও পারে না যে কোন পরীক্ষামূলক ড্রাগের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য তাকে গিনিপিগ বানানো হয়েছেরোগীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হয়

তারপর সেই পেসেন্টের সুস্থতা আর অসুস্থতার লক্ষণগুলো ডাটা করে সাজানো হয় এক্সেল টেবিলেভালো আছে মানে এক, খারাপ মানে শূন্যজীবনটাই যেন এক বাইনারি ডাটা

প্রেগারোকস, ড্রাগটির ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য মোট আশিজন পেসেন্টকে নির্বাচিত করা হয়েছিল ক্লিনিকাল ট্রায়ালের রিপোর্ট কিন্তু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর আশানুরূপ হলনাসৌম্যশংকরের নেতৃত্বাধীন সেই ট্রায়ালে বেশ কিছু অডরেশিও বের হয়েছিলযে আশি জন পেসেন্টের উপর তাদের অজ্ঞাতে প্রেগারোকস প্রয়োগ করা হয়েছিল তারমধ্যে সাতজনের জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়ে অনুমান করা হয়েছিল ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল টিউমারফারজানা সেই সাতজনের মধ্যে একজনহাওয়ার মুখে মোমবাতির শিখার মতো কেঁপে উঠল সৌম্যশংকরের সমস্ত চেতনা 

সৌম্যশংকর রিপোর্টে সেই অডরেশিও দেখিয়েছিলেনআশিজন পেসেন্টের মধ্যে সাতজনের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছেহলই বা বিনাইন টিউমার, একদিন যে সেই টিউমার ম্যালিগনান্ট হবে না কে তার গ্যারান্টি দিতে পারেকিন্তু সৌম্যশংকর আশ্চর্য হয়েছিলেন এথিক্যাল কমিটির সভাপতি নিজেই সেই রিপোর্ট নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেনঅন্য যে দুটি হাসপাতালে ড্রাগটির ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছিল তাদের রিপোর্টে কোন অডরেশিও নেইফলে কেবলমাত্র ওনার রিপোর্টের জন্যই ড্রাগটি ফেলিওর হবার উপক্রম হয় সৌম্যশংকরকে রিপোর্ট পরিবর্তন করতে হয়েছিলখুতখুতানি থাকলেও শেষপর্যন্ত রিপোর্ট সামান্য অদলবদল করে দিলেনকিছুদিন বাদেই সেই কন্ট্রাসেপটিভ ড্রাগটি বাজারজাত হয়ে গেলসপরিবারে সৌম্যশংকরও ঘুরে এসেছিলেন সুইজারল্যাণ্ড

ভুলেই গিয়েছিলেন দশবছর আগেকার সেইসব ঘটনাকরিডরে দেখা মেয়েটির ঐদুটো চোখ যেন নতুন করে সব কিছু মনে পড়িয়ে দিলসৌম্যশংকরের যে আশঙ্কাটা ছিল সেটাই কী শেষ পর্যন্ত সত্যি হল? ফারজানার জরায়ুতে দশ বছর আগে সৃষ্টি হওয়া সেই বিনাইন টিউমারই কী ম্যালিগন্যান্ট হল! একটা তীব্র অপরাধবোধ সৌম্যশংকরকে অস্থির করে তোলে।  

সারারাত ঘুমাতে পারলেন না সৌম্যশংকর একটু তন্দ্রা আসতেই ভেসে উঠছিল নীরব সেই দুটি চোখ নীরব চোখের ভাষায় বলতে চাইছে ডাক্তারবাবু আপনাকে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু.. দশ বছর আগের সেই ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্যই আজ ফারজানা ক্যানসারের আক্রান্ত নিজের প্রতি, নিজের পেশার প্রতি একটা তীব্র বিতৃষ্ণায় দগ্ধ হচ্ছিলেন

ভোর হয়ে আসছে রাতের অন্ধকার কেটে অল্প অল্প আলো ফুটছে, পাখিরা একে একে জেগে উঠছে, ওদের কলকলানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাছগুলো অল্প স্বল্প মাথা দোলাচ্ছেঠাণ্ডা একটা হাওয়ায় শরীরটা শিরশির করে উঠছেপুব আকাশ একট একটু করে লাল হচ্ছেপ্রকৃতি একটা নতুন দিন শুরু করার প্রস্তুতি শুরু করেছেসেই সময়েই মোবাইল ফোনটার সুরেলা রিংটোন বেজে উঠলভোরের নিস্তব্ধতাকে ফালা ফালা করে দেওয়া একটা অশ্লীল ধাতব আওয়াজ

মোবাইল ফোনের স্কৃণে ভেসে উঠল কৃত্তিকা কলিং

কিরে কেমন আছিস!

ভালো নেই বাবা, কান্নায় বুজে আসা ঘড়ঘড়ে গলায় কৃত্তিকা কোনক্রমে বলল আমার জরায়ুতে ম্যলিগনান্ট টিউমার ধরা পড়েছে

তীব্র একটা বেদনাবোধে সৌম্যশংকর যেন পুরোপুরি অনুভূতিহীন হয়ে পড়লেন মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন সে ভাবনাহীন হয়ে পড়ে, সমস্ত চেতনা দিয়ে ভাবার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত কিছু ভেবে উঠতে পারে নাপড়ে থাকে এক চিরকালীন নিস্তব্ধতা

                                     


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.