জীবন্ত দুগ্গা
শুভ্রা ভট্টাচার্য
"বাবা গো তোমার পায়ে পড়ি আমায় ছেড়ে দাও, এ বিয়ে আমি কিছুতেই করব না, আমি পড়তে চাই, আর মেরো না বাবা,মেরো না," পাশের ঘর থেকে রুমির কাতর আর্তনাদ ভেসে আসছে। প্রতিরাতের এই অমানসিক নির্যাতন দুগ্গাকে বড্ড ক্লান্ত করে তুলেছে। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এসেও শান্তিতে ঘুমোবার জো নেই! "না আর সহ্য নয়, এবার কিছু একটা করতেই হবে" দুগ্গা মনে মনে স্বগোক্তি করলো। কানাঘুষো শুনেছিল তেরো বছরের সুমিকে নাকি তার মদ্যপ বাবা বিয়ের নামে মোটা অঙ্কের টাকায় ভিন রাজ্যে বিক্রি করে দিচ্ছে।
দুদিন পর ষষ্ঠীর সকাল। দুগ্গাদের বস্তিতে হঠাৎ পুলিশভ্যান এসে থামল। সুমি আর তার মা বাবাকে থানায় নিয়ে গেল। পরে মা মেয়ে ফিরলেও বাবার হাজতবাস হলো। সব দেখেশুনে অদ্ভুত তৃপ্তিতে আবেশিত আল্হাদিত দুগ্গা ভাবল, যাক বাবা অসুরবিনাশীনী মা তাহলে এতদিনে মেয়েটার দিকে মুখ তুলে চাইল, ভাগ্যিস সেদিন পুলিস দিদিমণির সভা করতে এসে বলা ১০৯৮ নম্বরটা সে মুখস্থ করে রেখেছিল!
আজ মহাষষ্ঠির শুভসন্ধ্যায় সুমির হৃদয় জুড়ে খুশির হিল্লোল। মুক্তির আনন্দে সে আত্মহারা। মাঝেমাঝে ভাবছে, এ কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব! মৃন্ময়ী মায়ের চিন্ময়ীরূপে মর্ত্যে আগমন তার আঁধার কালো জীবনটাকে হঠাত্ই আলোর রোশনায়ে আলোকিত উদ্ভাসিত করে তুলল! দূরের মাইকে সুমধুর ভেসে আসা "যা দেবী সর্বভুতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা," সুরে মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে সুমি আর দুগ্গার খুশি মাখা প্রাণমন ।।
----------------