Click the image to explore all Offers

গল্প ।। লাইভ দশমী ।। অনিন্দ্য পাল


                                             লাইভ দশমী 

                                                        অনিন্দ্য পাল


আজ দশমী। আমাদের পাড়ার পুজোর থিম ছিল লাইভ ঠাকুর। মোড়ের মিষ্টির দোকানের ময়রা হয়েছিল গণেশ, বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছিল কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন মিনি সরস্বতী। আর এককালের মস্তান তোতলা পাটুর ছোট মেয়ে খেঁচকি, যাকে দেখলেই ছেলে ছোকরাদের বুকে হেঁচকি, স্বয়ং মা লক্ষী। 
গোল বাঁধলো 'মা দুগ্গা' হবে তাই নিয়ে। তৃতীয়ার দিন লিস্টে কেটেছেঁটে তেত্রিশটা নাম। রেষারেষিতে পাড়ার মেয়ে বৌদের কথা বলা, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ। রাইমার সঙ্গে তাঁর মা-দিব্যার কচকচালি ঝগড়া। পুজো কমিটির তো মাথায় হাত! আবার ওদিকে মহিষাসুর সাজার লোক নেই! লিস্টে মাত্র দুজন তোতলা পাটু আর  পঞ্চাশ কেজির ঘটি ভেনো। পাটুর মেয়ে খেঁচকি অলরেডি লক্ষীতে সিলেক্টেড, তাই পাটু বাদ, রিকশাচালক ঘটি ভেনো সারাক্ষণ গুটকা চিবোয় আর নিজেকে 'মুহাম্মদ রফিক' ভেবে গান ছোটায়। তবু ওকেই টেস্ট করা হয়েছিল। দেড় মিনিট চুপ করে থাকার পরই বাঁধভাঙ্গা বন্যার মত গুটকার থুতু মিশে বেরিয়ে এল 'পথ্থর কে সনম', ব্যাস, সেই ঘচ্যাং-ফু। 
সেদিন রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখলাম রুমকি বৌদি যেন দুগ্গা হয়ে আমার সিতেনে দাঁড়িয়ে। ব্যাস, মাথায় চক্কর খেলে গেল। রুমকি বৌদি আর আমি একটু ইয়ে, মানে মাখো মাখো হয়েছি ইদানিং, বরটা বছরে আটমাস চেন্নাই পড়ে থাকে, আর আমি সেই আটমাস ... যাঃ, সব বলে দেব নাকি? গেস গেস... 
তো পরদিন একটা পরীক্ষার ব্যবস্থা করলাম। আমি তো পুজো কমিটির সেক্রেটারি, ওরা বলে সেঁকোটারি-- যাইহোক পরীক্ষার প্রশ্নটাও আমি করলাম। উত্তর গুলো আগেই রুমকি বৌদির হাতে পৌঁছে গেছিল। ব্যাস! আমার পরের আটমাসের নাইট ডিউটি পাকা। একেবারে ফার্স্ট ! জনগণের দু-একটা টোন-টিটকারি শুনতে হলেও কুছ পরোয়া নেই। 
এবার মহিষাসুর নিয়ে বাধল কেলো! রুমকি বৌদি গোঁ ধরলো, আমাকে মহিষাসুর হতে হবে না হলে সে দুগ্গা সাজবেনা কিছুতেই। শিব হতে বলত কিন্তু সেতো ছবি হবার অভিনয়, তাই অসুর। উপায়ন্তর না দেখে বৌদিবাজীর গ্যাস খেয়ে ঠিক পড়েছি তারি চরণে। 
যাইহোক এই আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই দারুন লাইভ পারফরম্যান্স দিয়েছি। জাস্ট সন্ধ্যার পরপরই খিটকেল পোকাটা দিল সব মাটি করে! কি দরকার ছিল আমার বগলে ঢুকে কুটকুট করার! ব্যাটার নাকে ঘামের গন্ধটাও লাগলো না! বেটা যেইনা বগলে ঢুকে ফরর্ ফরর্ করেছে ওমনি কাতুকুতুতে আমি নাজেহাল! এমন লাফিয়ে উঠলাম যে রুমকি বৌদির, থুড়ি দুর্গার ফাইবারের ত্রিশূল সোজা গিয়ে পড়ল সরস্বতী মাথায়। আঁক করে উঠে সরস্বতী মারল এক লাফ একেবারে কার্তিকের বুকে। নধর সরস্বতীর বুলডোজারের মত ধাক্কায় দুজনেই মঞ্চ থেকে মাটিতে ধপাস! ওদিকে দুর্গা হকচকিয়ে গিয়ে নড়ে উঠতেই শাড়ী আর মন খানেক গাঁদার মালায় জড়িয়ে একপাক ঘুরে লক্ষ্মীর উপর, সে চেঁচাবার আগেই রুমকি বৌদির থার্মোকলের একটা হাত তার একেবারে মুখের মধ্যে! একমাত্র গণেশ মুখে পাঁচ টাকা পিস এর লাড্ডু নিয়ে আলুর মতো চোখ বের করে দাঁড়িয়ে। সামনে তখন অঢেল জনগণ! আমি মহিষাসুর শুধু জাংগিয়া পড়ে দাঁড়িয়ে। কখন আমার গান্ধী মার্কা ধুতি ছেড়ে গেছে, ছিঁড়ে আটকে আছে দুর্গা থুড়ি রুমকি বৌদির পায়! ততক্ষণে জনগণ টোন- টিটকারি হাসির রোল এর সঙ্গে দু একটা চায়ের ভাঁড়্ও রসিকতা করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বুঝলাম বাঁচতে গেলে এখনই পেছনে দেখাতে হবে।  
চিরকালই স্পোর্টসে লাস্ট, আজ কি করে ফার্স্ট হলাম কে জানে? এখন ধাপার মাঠের মতো জঞ্জালের পাহাড়ের পেছনে নেংটি ইঁদুরের মতো জাংগিয়া পরে বসে আছি। দূর থেকে দেখছি জনগণ প্যান্ডেলের জামা কাপড় ছিঁড়ে লাইট ভেঙে বিজয়া দশমী পালন করছে। 
হঠাৎ করে একটা দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম  একি! আরে এই বিসর্জনে তো পুজো কমিটির লোকেরা ও রয়েছে আমি মনে মনে রুমকি বৌদি থুড়ি 'মা দুগ্গাকে' ডাকতে ডাকতে আরো জঞ্জালের মধ্যে সেঁদিয়ে গেলাম! 
 
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট 
=============================== 
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল 
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.