অণুগল্প ।। লকডাউন পুতুল ।। ডঃ তাপস কুমার সরকার
লকডাউন পুতুল
ডঃ তাপস কুমার সরকার
খবরটা দিল বিকাশ। বিষ্টুপুরে শিল্পমেলা বসছে। গেলে হয় না! হোটেলে কাজ করতে করতে লকডাউনে হঠাৎ বেকার হয়ে যাওয়া মলয় যেন নতুন করে আশার আলো দেখতে পেল। বিকাশ ইমিটেশনের গয়না তৈরির কুটির শিল্পের কারিগর। যা পেত তাতে মা আর তার দুটো পেট চলে যেত। মালিক তাকেও ছাড়িয়ে দিয়েছে। সামান্য জমায় কতদিন আর চলে!
সবিতা আর সুমিকে নিয়ে মলয়ের সংসার। সুমি এখন দুই। রাগের মাথায় সবিতা একদিন শুনিয়ে দেয় "পুতুলের মত ঠুঁটো হয়ে বাড়ি বসে না থেকে পুতুল বানিয়ে বিক্রি করলেও তো দুটো পয়সা আসে।"
ওরা যখন ভাবছে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় তখনই পাড়ার এক বৌদি পরামর্শ দেয় বাহারি পুতুল বানানোর। এখন যদিও আনলক অবস্থা তবু পুতুল কি আর তেমন বিক্রি হবে! মলয়ের মনে সংশয়।
লক্ষীগঞ্জ থেকে বড় পুতুল, জরি আর রঙ্গিন কাপড় কিনে আনল ওরা। আগেই তালিম নিয়েছে ইন্টারনেটে ভিডিও দেখে। হাতে কলমে তৈরিতে সাহায্য করল সবিতা আর বিকাশের মা। নাম দেয়া হল 'লকডাউন পুতুল' ।
শিল্প, সুর আর জীবনের মেলা বিষ্টুপুরে মোরাম রাস্তার ধারে পুরানো বিছানার চাদর পেতে পসরা সাজিয়ে বসল মলয় আর বিকাশ। যদি কেউ কেনে। গড়ে পুতুলপ্রতি খরচ পড়েছে ৮২ টাকা। বিক্রি করে মিলছে ১১৫-১২৫ টাকা। প্রথম দুদিন বিক্রি খুবই কম। তৃতীয় দিন সকালে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় ওদের পুতুলের ছবি! মেলা শুরু হতেই ভিড় জমতে লাগলো। দিনের শেষে দু'জনের চোখে আনন্দের চিকচিক।
মলয়ের ফোন বেজে ওঠে। সবিতার গলা যেন আটকে গেছে। "ও বাড়িতে রান্নার কাজ করতে গিয়ে খবরের কাগজে দেখলাম। চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি গো। কত কি বলেছি তোমাকে। …… …. .. ….. "
এই পুতুলটার জন্য টেরাকোটার গয়না আনতে ভুলে যাবে না তো?
-------------------------------------
ডঃ তাপস কুমার সরকার
বিষহরিতলা হরিদ্রাডাঙ্গা চন্দননগর হুগলি