একেবারেই ইচ্ছা ছিল না সমরের, তবুও কমলের পীড়াপীড়িতে না এসে আর পারলোনা । এই প্রথম এসেছে সে কমলের দেশ বাড়িতে । যাকে মূলত ওরা লাটবাড়ি ই বলে । দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেল , যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে সমর । মেঠো পথ কাঁচা বাড়ি খোড়োচালা, মেছোভেড়ি আলপথ নদীবাঁধ কতো কিছুই দেখছে । ছোট বড় আঁকা বাঁকা নদী । আর তাকে ঘিরে ঘন জঙ্গল । এখানে ওখানে খেয়া ঘাট আর যত্রতত্র শ্মশান । ভুতুড়ে আঁধার নামে সন্ধ্যার পর ।ভৌতিক গল্পের ও অভাব নেই ।কতো রকমের যে ভুত বলে শেষ করা যাবে না ।
সমর যদিও তেনাদের বিশ্বাস করে না, তবে মজা পায় ।কমলের সঙ্গে কথায় কথায় একটা বাজি ধরে ফেললো সমর ।সে একাই নদীর চরের শ্মশানে রাত কাটাবে ।ভুতকে সে ভয় পায়না সে প্রমাণ দিতে হবে শ্মশানে থেকেই ।রাত ঠিক দশটা নাগাদ খাওয়া দাওয়া সেরে কমল এসে শ্মশানে দিয়ে গেল তাকে ।সঙ্গে দিল টর্চ জলের বোতল আর একটা খেজুর পাতার খলপি । শহুরে শ্মশানের সাথে এর বিস্তর তফাত ।না আছে ইলেকট্রিক আর না আছে কোলাহল ।এক কোনে মা কালীর থান খোড়োচালা, দেয়ালে একটা দেলগিরি মিটমিট করে জ্বলছে ।কয়েকটা শাবল কোদাল আর কলসি দাবার ধারে পড়ে রয়েছে ।রাতের অন্ধকারকে আরো ঘনকরে তুলেছে প্রকান্ড বট গাছের ছায়া । ত্রিসীমানায় কোন লোকালয় নেই । ক্রমে গভীর হচ্ছে রাত । শেয়াল কটাশের দাপাদাপি বাড়ছে ।
শ্মশানের চেহারা বদলে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর ভাবে । এমন সময়ে খানিক দূরে হরি ধ্বনি শোনা গেল।
কিছুক্ষনের মধ্যে শব বাহকেরা এসে নামিয়ে রাখল খাটিয়া । জনা ছয়েক লোকের মধ্যেই, জনা পাঁচেক শব নামিয়ে কাঠ আনতে চলে গেল ।একজন বসে রইল মড়া ছুঁয়ে ।সেই লোকটাই বলল, যাত্রীরা পরে আসবে । সমরকে কাছে ডেকে বসতে বলে , কেননা সে তো মড়া ছেড়ে উঠতেই পারবে না ।এ গল্প সে গল্পের পর লোকটা তাকে অনুনয় করে বললে -দাদা একটা কথা বলি যদি রাখেন তো খুব ভালো হয় ।
- আরে বলুন না কোন অসুবিধে নেই ।
-বলছিলাম কি এই এখানে মড়া ছুঁয়ে একটু বসেন । তাহলে আমি উঠে টুক করে একটু ঘুরে আসি এই আর কি ।
-তা বেশ তো যান আমিই না হয় একটু ছুঁয়ে রইলুম ।
বলতে বলতে সে লোক সেঁধিয়ে গেল রাতের গভীরে । টুক করে ঘুরে আসি বলে অনেক্ষণ গেল, কখন যেন একটু ঝিমুনি এসেছিল সমরের চটকা ভাঁঙতে মনে হলো । যে মড়ার খাটিয়ায় সে হেলান দিয়ে বসে আছে, সেটা নড়ছে ।একবার মনে হলো ভুল হচ্ছে তার ।মৃত মানুষ কি নড়তে চড়তে পারে? আবারো একটা ঝাঁকুনি ।এবার সে আচমকা ঝাঁকুনিতে ছিটকে পড়লো মাটিতে । আর তার পর যা দেখলো, তাতে তার শরীরের সমস্ত রক্ত ভয়ে হিম হয়ে গেল ।মড়া নিজেই উঠে বসেছে খাটিয়ায় । কী বিভৎস বিভীষিকা ।কী ভয়ঙ্কর তার রূপ। আতঙ্কে তৎক্ষণাৎ বাদা বন জলাজমি দিয়ে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটতে লাগলো সমর । যখন তার জ্ঞান এলো ,কমলের মুখে শুনল ভুত আর কেউ নয়, সয়ং কমলই ছিল খাটিয়ায় । সে হাসতে হাসতে বলল- কিরে ভুতে ভয় নেই, বিশ্বাস ও নেই শ্রীমান সমর । কেমন দিলাম বল?
-----------------------------
ঠিকানা --নীলমাধব প্রামাণিক, মাধবনগর
ডাক -পূর্ব চাঁদপুর, মন্দির বাজার
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,
পিন -743336,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত