Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প ।। নিপাতনে সিদ্ধ ।। বাণীব্রত গোস্বামী


 


 সচারচর আমি মিথ্যা বলি না। কিন্তু কেউ বেশী ধূর্তামি বা কোন অন্যায় করলে অনেক সময় মিথ্যে বলে জব্দ করার চেষ্টা করি। সেদিন যেমন ট্রেনে অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছিলাম একজন মধ্যবয়স্ক লোক একটি অল্প বয়সী মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করছিল, পরে ট্রেন ফাঁকা হবার পর গলা নামিয়ে (অ)ভদ্রলোকটিকে ঠিক শিয়ালদা ঢোকার আগে বললাম, "বাবা! প্লাটফর্মে আজকে আবার এত জি.আর.পি. কেন?" রোজই কিন্তু দুচারটে থাকে। "সেদিন যা ঘটল!" বলে একটু চুপ করলাম। জানতাম ফাঁসবে, লোকটা বলে উঠল, "কী হয়েছিল দাদা?" এই ধরণের লোক খুব নিরাপদ কৌতুহলী হয়। আমি তাচ্ছিল্যের সুরে--- "তেমন কিছু নয়, ঐ একটা মেয়ে বোধহয় মোবাইলে ছবি তুলে কারও নামে কিছু কমপ্লেন করেছে, কম্পার্টমেন্টটাও বলে দিয়েছিল, যেই না নামল, খপ্ করে ধরে নিল।" বাসে পকেটমার আওয়াজ উঠলে দু-একটা ছেলে যেভাবে নেমে যায়, লোকটা হাল্কা রানিং-এ সেভাবে নেমে গেল। আমি বেশ মজা পেলাম।

আবার যেমন পাড়ায় পিতৃসম কিছু লোক, মোটা সরকারি পেনসন পায়, জানে একটা প্রকাশকের ঘরে সামান্য‌ চাকরি করি, নাকে-মুখে গুঁজে ছুটছি, হেলতে-দুলতে পিঠে হাত দিয়ে সুবোধকাকু, "কোথায়? অফিস? আচ্ছা তোমাদের প্রভিডেন্ড-ফান্ড আছে ? কীরকম কাটে?"

সক্কাল-সক্কাল মাথাটা ঘেঁটে দিল। গম্ভীর ভাবে বলে দিলাম, "ওসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি, এখন মাইনেপত্র ভালো ‌হয়ে গেছে, বেশ কিছু টাকাও জমিয়ে নিয়েছি‌, ঘরও একটা নেওয়া হয়ে গেছে, ক'দিন বাদে নিজেই ব্যবসা করব।" এক নিঃশ্বাসে ঝেড়ে দিলাম। থেমে গেলে গলা কেঁপে যেতে পারে। জানি উত্তরটা পছন্দ হবে না, হল-ও না, মুখে বলল—"বা! বেশ বেশ।" কিন্তু এবার চাপড়টা অনেক জোরে।

আসলে 'বাহা' বলার থেকে 'আহা' বলতে ‌সবারই ভালো লাগে। তবে মিথ্যে বলে, লোকের সাথে কপটতা করে যারা স়ংসারে সুখ নিয়ে আসে। আমি সে দলে নেই। জ্ঞানত কাউকে কোনদিন ঠকাইনি। আর একরকম অপ্রয়োজনীয় মিথ্যাবাদী আছে। বিনা কারণে বলবে। যাচ্ছে দক্ষিনেশ্বর জিগ্গেস করলে বলবে তারকেশ্বর। ব্যাগে বাটা মাছ, কিন্তু বলবে পমফ্রেট। মানে মাইথোম্যানিয়ার পেশেন্ট। তবে একটা মিথ্যে, আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সে‌ গল্পটা না বললে পুরোটা বোঝা যাবে না।

সেদিন বৃহস্পতিবার। ঐদিন আমার একটু দেরী হয়। ফুল আর গুজিয়া আনতে যেতে হয়। সাধারণত ন'টায় বেরোই। এখন ন'টা দশ। আস্তে দৌড়োনোর থেকে জোরে হাঁটা অনেক বেশী কষ্টকর। ব্যাগটাও বেশ ভারী। সারা জীবনে কোন কাগজ না ফেললে যা হয়। তারপর এক লিটার‌ জল।‌ টিফিন-বক্সে খাঁটি মুখ-ঝামটা আর ভালবাসা দিয়ে মাখা দুটো আটার রুটি আর ঘাম মোছা রক্তাভ মুখের সাক্ষী আলু-চচ্চড়ি। হঠাৎ পিছন থেকে সুধাময় কাকু "আরে দেবু উঠে আয়।" বলে রিক্সার পাশের সিটটার দিকে দেখাল। রিক্সাওলা ফস্ করে বলল, "পনেরো টাকা লাগবে।" মানে আমার জন্য পাঁচ‌ টাকা। সুধাময় লোকটা ঘোড়েল প্রকৃতির। এই পাঁচ টাকার বিনিময়ে আমায় কী মজা ওনাকে দিতে হবে সেটাই এখন চিন্তার। মিনমিনিয়ে শুরু করলেন "তোমার বাবা লোকটি কিন্তু জমাটি ছিলেন। অফিসের পরেও নাটক, থিয়েটার। ওদিকে আবার হিমালয় চষে বেড়িয়েছেন। তুমি কি শুধুই অফিস আর বাড়ি? কোন ক্রিয়েটিভিটি নেই।" রাত আটটার সময়‌, আসছি বলে প্রকাশকের সামনে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর ঘাড় কাৎ করে সম্মতি মেলে। তারপর‌ আটটা কুড়ির দত্তপুকুর লোকালে পানিপথের যুদ্ধ। এরপর সৃষ্টিশীলতা! প্রসঙ্গ ঘোরালাম, "কী রোদ বলুন কাকু!"

--"হ্যাঁ সেইজন্যইতো রিক্সা। শুনছি নাকি ক'দিন সূর্য একটু কম জোরালো হবে।" মনে মনে ভাবলাম, আমার পুরো নিভে গেলেই ভাল হয়। ভারী ভারী বই কাঁধে নিয়ে ‌স্কুলে‌ স্কুলে ঘুরতে হয়। এ ছাড়ার পাত্র নয়। আবার সেই ঘুরে ফিরে, "জীবনটাকে নষ্ট কোরো না। কিছু একটা করো। এই দেখোনা আমার-ই কথা। আমার তো কল পাইপের দোকান। কিন্ত দোকান বন্ধ করে যত দেরী-ই হোক হরিসভায় একবার কীর্তনের আসরে যাবই।" মাথাটা আবার ভোঁ ভোঁ করে উঠল। ওখানে কী... সাংস্কৃতিক চর্চা হয়, আমার জানা আছে। পুরো পাড়ার নেটওর্য়াক-টা একবার রোজ ঝালিয়ে নেওয়া হয়। আবার সেই  রোগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ঝপ্ করে বলে ফেললাম, "লেখালেখি করি তো। দুএকটা ম্যাগাজিনে বেরিয়েছে। বই-ও একটা বেরিয়েছে।"

---"বাঃ‌! বেশ বেশ"। বলে পিঠ চাপড়ে দিলেন। বেশ জোরেই। জোর অনুভব করেই বুঝলাম, কত আনন্দ পেয়েছেন।

"তাহলে কাকু আসি।" বলে বাসে উঠে পড়লাম।

সমস্যাটা হল দিন তিনেক পর। রবিবার বাজারে ধরল বরেন কাকু। "আরে দেবু না! তোকেই খুঁজছিলাম। তুই শুনলাম, বই লিখেছিস। সুধাময় বলছিল।" বরেনকাকু আবার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। আমি ‌সস্তায় বাড়িতে মাছে চমক দিতে ব্যস্ত। তারমধ্যে এই বিপত্তি। বরেনবাবু সরকারি চাকরি করতেন। তবে সাংবাদিক হলে প্রভূত উন্নতি ‌করতে‌ পারতেন। প্রচারক হিসাবে অসম্ভব যোগ্যতা আছে। উপদেশ দিলেন, "শোন এখন হল বিজ্ঞাপনের যুগ। নিজেকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখিসনি। আত্মপ্রকাশ কর, চেপে রেখে লাভ কি? পড়াশুনায় তুই কত ভালো ছিলি বল!" সুধা কাকু সঠিক জায়গাতেই খেলে দিয়েছেন। আমার চরম উপকারটাই করেছেন। বাজারটা গুলিয়ে গেল। বাড়িতে আজ বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে। যাইহোক শনি মন্দিরে এক টাকা দিয়ে প্রণাম করে বাড়ী চলে এলাম।

 

    সপ্তাখানেক হলো, ব্যাপারটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। শনিবার বেশীরভাগ স্কুল বন্ধ থাকে, আর অনেক স্কুল হাফ ছুটি। তাই আমরাও একটু তাড়াতাড়ি ছুটি পাই। পুঁটিরাম থেকে ক'টা কচুরি নিলাম। অতসী ভালোবাসে। কেন জানিনা, শনিবার একটু প্রেম আসে। 'গোপন কথাটি রবে না গোপনে' গুন গুন করতে করতে বাড়ি ঢুকছি। মেয়ে দরজা খুলল। মুখটা একটু মেঘলা গোছের। তখন তো বুঝিনি, ভেতরে'র ঘরে নিম্নচাপ হয়েছে। নরম করে বললাম, "কচুরি আছে খা, মাকে দে।" বুঝতে পারছি, তুবড়িটা একটা দেশলাই কাঠির ‌জন্য অপেক্ষা করছে। আমি কাঠি কিছুতেই জ্বালব না। মেয়ে মামনিকে ভুরু দিয়ে জিগ্গেস করলাম। ও ঠোঁট‌ উল্টে বোঝাল, ব্যাপার গুরুতর। আমি চুপচাপ। কোন সুযোগ না পেয়ে অতসী মেয়েকে বলল, "আমি কচুরি খাব না, বাবাকে বল খেয়ে নিতে, খাওয়া হলে চা করে দিস। তুই খেলে, খা। না হলে বল, যারা আপনার লোক আছে তাদের দিয়ে আসতে।" শুরু যখন হয়েই গেল আর শুভ কাজ ফেলে রেখে লাভ কি?" গলায় মাখন ঢেলে বললাম "কী হয়েছেটা কী?"      ‌‌           

---"ঘরের কথা বাইরের লোকের কাছ থেকে শুনতে হয়।"

____"মানে!"

____"মানে আবার কী। সুপর্নাদি বলল, দেবু নাকি লেখালেখি করে, ওর লেখা বই আছে। কী বই রে? কবিতা না গল্প? আরও কত প্রশ্ন। আমি বোকার মত জানিনা বললাম।"

---"সে কী রে! তোকে বলেনি? আমরা তো ক্লাবের মিটিং-এ ঠিক করেছি রক্তদান শিবিরের দিন ছোট করে একটা সংবর্ধনা দেব।"

---"তুমি গুণাক্ষরেও আমাকে কিছু জানালে না কেন?"

সুপর্নাদি‌ মানুষ ভালো। ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। তার মানে বরেনকাকু কথাটা পেড়েছে। সুপর্নাদি সবাইকেই উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দেয়। তাতেই মনে হয় এই সিদ্ধান্ত।

এখন আসল সমস্যা তো বাড়িতে। পুরো ঘটনাটা খুলে বলার চেষ্টা করলাম। ঐ দিন-টা এভাবেই কাটল। পরদিন রবিবার । ঠান্ডা মাথায় একটা মতামত প্রকাশ করলাম, "যে সবাইকে বলে দি-ই, আসল সত্যিটা।"

অতসী আরো রেগে গেল।

---"সবাই তোমাকে মিথ্যেবাদী ভাববে। হাসাহাসি করবে। পাড়ায় মুখ দেখাতে পারব?"

আমি ভাবলাম, এ কী গেরোয় পড়লাম রে বাবা, আরে এর জন্য কি বাড়ী বিক্রি করতে হবে নাকি?

এবার অতসী চেপে ধরল, "যেমন বলেছ, যেভাবে পারো তোমার লেখা একটা বই চাই।"

--- "চাই মানে…?"

আমি বুঝতে পারছি ওর কোন অন্যায় নেই। কিন্তু আমি তো একটা রান্নার চটি বই-ও লিখতে পারব না, বা ট্রেনে বিক্রি হয় সবজি দিয়ে ঘরোয়া চিকিৎসা। একটা হিন্দি সিনেমায় দেখেছিলাম, লেখকের নামের ওপর নিজের নামের স্টিকার মারা। মানুষ কী এইভাবে ধীরে ধীরে অপরাধ জগতে ‌তলিয়ে যায়। কত কী যে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

'যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু' কবিতাটা মনে পড়ল। আরে বাবা, তারাই তো সব ভাল আছে।

অনন্ত‌ রবিবারের শান্তির কথা ভেবে বললাম, "ঠিক আছে সে হবেখন, দেখছি কী করা যায়। মাংস আনব?"

সব চুপচাপ। মাসখানেক কেটে গেছে। মনে হয়, ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়েছে। একদিন সন্ধ্যাবেলা একটু তাড়াতাড়ি ছুটি পেয়েছি। শ্রাবণের কালো আকাশ দিয়ে ঝাঁঝরির মত জল পড়ছে। শিয়ালদা যাওয়া সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে বাসে উঠলাম। হঠাৎ দেখি, বিবেকানন্দ রোড থেকে শ্রাবন্তী উঠল। এমনি-ই এদিকটায় খুব জল জমে। তারপর এইরকম ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি। বাসে লোক কম। আমার পাশে'র সিটটা খালি। উঠেই আমাকে দেখতে পেল। নির্দ্বিধায় এসে পাশে বসল। কাপড়ের বেশীরভাগ-টাই ভিজে গেছে। গায়ের সাথে সেপটে। আমি বেশ আড়ষ্ট হয়েই বসলাম। পাড়ার মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল। একটা বাচ্ছা ছেলেও আছে। ডিভোর্স হয়ে গেছে। কিন্তু বাপের বাড়ি থাকে না। সুপর্ণাদির নীচে ভাড়া থাকে। শুনেছি একটা স্কুলে পড়ায়। পাড়ায় কোনদিনই কথা হয় না। কিন্তু পাড়ার বাইরে সে দার্জিলিঙের ম্যালে হোক বা পুরীর সৈকতে অথবা এরকম শ্রাবণসন্ধ্যায় ভিজে বাসে হোক। কথা হবে। অল্প হলেও গল্প হবে। আমরা যারা আশি-নব্বই-এর দশকে বড় হয়েছি, বিশেষ করে বাংলা মিডিয়াম সরকারি স্কুলে পোড়ে, তারা সমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে সঠিক ভাবে মিশতেই জানি না। কারণ শেখার সুযোগ-টাই পায়নি। মেয়ে যে বন্ধু হতে পারে, এবং ভালো বন্ধু, সে কথা যখন বুঝলাম, তখন পাতানোর বয়স পেরিয়ে গেছে। যাইহোক টুকটাক কথা শুরু হল। ও বরাবরই একটু সাহসী প্রকৃতির। পোশাকে আশাকেও একটু আলগা শ্রী। ছোটবেলায় ফিসফাস আলোচনা হত বন্ধুদের মধ্যে। তবে বিশেষ কোন দূর্বলতা ছিল না। নিয়মমত আগ বাড়িয়ে দুজনের টিকিটটা কেটে নিলাম। খুব পরিচিতর মত গা ঘেঁষে বসল। খারাপ কিছুই নয়। খারাপ হল আমাদের সেকালের শিক্ষাদীক্ষা। কথায় কথায় শ্রাবন্তী বলে উঠল, "ও ভালো কথা, সুপর্ণাদির মুখে শুনলাম, দেবুদা আপনি মানে তুমি লেখালেখি কর, বইটই‌ আছে, আমাদের স্কুলে ভাষা-দিবসে একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠান করি। প্রতিবারই কোন ছোটখাটো লেখককে আনি। আমিই দায়িত্বে থাকি। আমার খুব ইচ্ছে সামনের বছর তোমাকে কিন্তু যেতে হবে। দেরি আছে,‌ আগে থেকে বলে রাখলাম। আমি বাড়ি গিয়ে কার্ড দিয়ে আসব।" বলে হঠাৎ হাতটা হাতের ওপর রাখল। বাসের জানলা দিয়ে বৃষ্টি ভেজা হাওয়া। তা-ও গায়ে জ্বরছাড়া ঘাম। আমার কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিল শ্রাবন্তী। বাস থেকে নেমে দুজনে একটা রিক্সায় উঠলাম। সামনে পর্দা ফেলা।

 

 মন পরিবর্তনের দুটো গল্প করে নেওয়া যায়। কিন্তু আমার শুধু মা সরস্বতীর মুখটা মনে পড়ছে। রিক্সা থেকে নামলাম দুজনে। দেখি সুধাময় কাকু। "কি… ফেরা হল? আমি-ও এই‌ দোকান থেকে।" যদি গ্যালিলিও বলে না যেত, আমি আজকে বলে দিতাম পৃথিবী গোল। বাড়ি গিয়ে আজকে সবটা বলতে হবে এবং এভাবে চলতে পারে না। 'গতস্য শোচনা নাস্তি'  ভেবে লাভ নেই, এ'র নিষ্পত্তি চাই।

বাড়িতে এসে অভিজ্ঞানকে ফোন করলাম। আমার ছোটবেলার বন্ধু। বোকারোয় চাকরি করে। ছোটবেলা থেকেই ও আমার বিপত্তারণ। সব শুনে বলল, "লিখতে তোকে হবেই। তুই তো যখন-তখন কথা বানাতে পারিস। সাহিত্যের ফুলঝুরি দরকার নেই। যবে থেকে তোর নিজের কথা মনে আছে, সহজ সরল সাবলীল ভাষায় লিখে যা।"

----"যা! তা আবার হয় নাকি? সব লেখা যায়!"

----- "জেল ফাঁসি হওয়ার মত কিছু করিস নি, বাকি সব লেখা যায়। লেখা শেষ হলে আমাকে পাঠিয়ে দিস।"

 যতটা পারলাম মনে করে করে, যেমন পারলাম লিখে পাঠিয়ে দিলাম। তবে পাড়ায় এখন মাথা নীচু করে গম্ভীর হয়ে চলাফেরা করি। মানে ঘাঁটতে দেওয়ার সুযোগ না দেওয়া।

  সেদিন অনেক রাতে ফিরেছি। চিন্তা নেই পরদিন রবিবার। ক্লান্ত গভীর নিদ্রা ছেড়ে একটু দেরিতেই উঠলাম। কাগজটা নিয়ে বারান্দায় বসলাম। অতসী চা দিয়ে হাতে একটা প্যাকেট দিল, বলল "কাল এসেছে, শেয়ারের কিছু হবে।" প্যাকেট ছিঁড়ে দেখি, একটা বই। প্রচ্ছদে একটা পাগলের মুখ, তার ওপর লেখা 'দিনগুলি মোর' আর নীচে আমার নাম। সন্তান হওয়ার পর এরকম আনন্দ কখনও পায়নি। নতুন শরতের পবিত্র রোদ পেঁজা মেঘের আবরণ ভেদ করে আমার গায়ে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দিচ্ছে। সব শুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। শত্রু না হলেই বন্ধু হয় না। ওটা দুষ্প্রাপ্য সম্পর্ক।

তবে এটা কী গত রাতের স্বপ্ন! নাকি ‌জীবনের চরম মিথ্যের ওপর দন্ডয়মান এক অসম্ভব অপ্রত্যাশিত সত্য। 

                              ------------------------

      

Banibrata Goswami

 Address—9/6 East Mall Road, Dum-Dum,

 Kolkata—700080.


 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.