ছোটগল্প ।। তুমি আছো আমি আছি তাই ।। প্রিয়া বণিক
বিছানায় শুয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছো মেয়েটা। হঠাৎ অ্যালার্মের শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠলো, দ্রুত অ্যালার্মটা বন্ধ করে নিল।কখন যে চোখটা লেগে গেছিলো কে জানে। পাশ ফিরে দেখল ওর একপাশে বিছানায় গভীর নিদ্রায় মগ্ন এক পাঁচ বছরের শিশু।তার কপালে স্নেহের পরশ বুলিয়ে চুলটা আলগোছে খোঁপা করে নিল।ওর অন্য পাশটা ফাঁকা।সেদিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বিছানা দিয়ে নামলো। বসন্তের মৃদু বাতাসে দোদুল্যমান windchime টার আওয়াজটা ওর কাছে অনেকটা অক্সিজেনের মতো।
দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ঘরের সব কাজ সামলে নিল।এর মাঝে কয়েকটা ফোনে কল রিসিভ করতে হলো,যার বেশিরভাগই ছিল স্টুডিও থেকে,আজকেই ওর দুটো গান রিলিজ হবে। ওর পরিচয় জানে না এমন খুব কম লোকই আছে, বিখ্যাত গায়িকা উর্নি বসাক।অল্প বয়সেই গানের জগতে বেশ নামডাক করেছে ও।কয়েকটা অ্যালবামও বেরিয়েছে।কিন্তু সবাই ওর পোশাকি পরিচয়টাই জানে ওর বাস্তব জীবনের খুঁটিনাটি আজও মিডিয়ার কাছে ধরা পড়েনি,বলা ভালো ও চাইনি কেউ ওর পারিবারিক জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করুক।
উর্নী ঘরে এসে মেয়েকে ঘুম থেকে তুলতে গিয়ে দেখে মেয়ে সারা বিছানা জুড়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাতে ব্যস্ত।পুরো বাপ কা বেটি হয়েছে।মেয়ের মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে," আজ মনে হয় কেউ রং খেলতে যেতে চায় না,আমি বরং একাই যাই!"
"আমি যাব! এইতো আমি উঠে গেছি... যাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নি... তুমি গাড়ি বের করো মাম্মাম ফাস্ট ফাস্ট...!"--- বলেই ছুটলো ওয়াশরুমের দিকে।সেদিকে তাকিয়ে হেসে ওয়ার্ডরোব থেকে জামাকাপড় বের করলো, আজ দোল উপলক্ষ্যে ওরা যাবে নিরালা আশ্রমে। ওখানে কেনো!? আরে সেখানেই তো তার প্রিয় পুরুষ তথা জীবনসঙ্গীকে নিজের করে পেয়েছিল আজীবনের জন্য।
"মাম্মাম,ড্রেসটা পড়িয়ে দাও তাড়াতাড়ি... ওফ্ দেরি হয়ে যাচ্ছে তো.…"--- উর্নির ভাবনার মাঝে ফ্রেশ হয়ে এসে ছোট্ট তন্বী তাড়া দেয় ওকে।
মেয়ের তাড়া দেখে হেসে ফেলে উর্নি।একদম বাবার মত সবকিছুতে তাড়াহুড়ো।মেয়েকে একটা হালকা আকাশি রঙের ফ্রক পড়িয়ে চুল বেঁধে রেডী করিয়ে দিল।বড় বড় চোখ,ফর্সা গালে আবার টোল পরে, গোলাপি ঠোঁটে সবসময় হাসি লেগেই আছে।ছোট্ট পরীর মত লাগছে ছোট্ট তন্বীকে।
এবার নিজে রেডী হয়ে নেয় উর্নি,হালকা গোলাপি রঙের একটা লং কুর্তির সাথে সিলভারের দুটো ঝুমকো পরে নেয় কানে।লম্বা চুলটা বিনুনি করে বুকের একপাশে ফেলে,কপালে একটা কালো টাইপ পরে নিল, এতেই সে অনন্যা।একজন সেলিব্রেটি হয়েও ওর এই ছিমছাম সাজটা প্রায়ই নজর কাড়ে নেটিজেনদের।
ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে তন্বী একটা মাটির থালায় রঙিন আবীর সাজাচ্ছে। সাজানোর থেকে বেশি ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই তার আকাশি ফ্রকে লাল নীল রঙের আভা ছড়িয়ে পড়েছে।
একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তন্বীকে খানিকটা রাগী গলায় বলল," কে এরম ঘর নোংরা করেছে!?আজ আমি তাকে নিয়ে কোথাও দল খেলতে যাব না !?..."
এমনিতে বেশি রাগারাগি করার কারণ থাকে না কারণ তন্বী দুষ্টু হলেও মায়ের প্রচন্ড বাধ্য মেয়ে।মায়ের রাগী গলা শুনে খানিকটা মাথা নামিয়ে অপরাধীদের মতো বলল," সরি! মাম্মাম,ভুল হয়ে গেছে..."
"আচ্ছা,আমি ঘর থেকে এসে যেনো দেখি সব পরিষ্কার হয়ে গেছে।" বলে ঘরের দিকে নিজের পার্সটা আনতে গেলো ও।
কিন্তু ঘরে যাওয়ার আগে তন্বীর অলক্ষ্যে এক মুঠো আবির হাতে নিয়ে নিল। উদ্দেশ্য নিজের প্রিয়তমকে প্রথম রং ছোঁয়ানো।
ঘরে এসে বেলকনির দিক থেকে আসা গুনগুন শব্দটা জানান দিচ্ছে উর্নীর প্রিয়তমের অবস্থান। ঐতো ছেলেটা দাড়িয়ে, সাদা পায়জামা পাঞ্জাবিতে কতো স্নিগ্ধ লাগছে।মাথার ঝাঁকড়া সিল্কি চুল,চোখে একটা গোল ফ্রেমের চশমা, দাড়িহীন মসৃণ চকচকে গালে এসে খেলা করছে বসন্তের একমুঠো রৌদ্র।এত সুন্দর ছেলেটা কিনা ওর!!!
ভাবতে ভাবতে চুপি চুপি এসে আবিরটা সবে গালে দেবে এমন সময় হাতটা ধরে নিল ছেলেটা। ভ্রূ কুঁচকে অভিমানী চোখে ছেলেটার চোখের দিকে চায় উর্নি।
ছেলেটা দুষ্টু হেসে বোঝাতে চায় এবারও মেয়েটা ব্যর্থ। তখনই উর্নির মাথায় নাড়া দিয়ে উঠলো দুষ্টু পোকাটা।মুখটা ছেলেটার দিকে এগিয়ে এনে ওর কানে ফুঁ দিতেই,ছেলেটা চোখ মুখ কুঁচকে ওর হাত ছেড়ে কানে হাত দিল,আর তখনই নিজের প্রিয়তমের দুগাল জুড়ে লাল আবিরের এঁকে দিলো প্রেমের পরশ।
খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে দুচোখ ভরে দেখতে লাগলো ছেলেটাকে। ছেলেটাও প্রথমে হেরে যাওয়ার অভিমানে মেয়েটার দিকে দুঃখী চোখে তাকাতে গিয়েও প্রিয়তমার চোখের মনোমুগ্ধকর চাহনি দেখে থমকে দাঁড়ালো। ভ্রূ নাচিয়ে ছেলেটা যেনো বলল কি আবারও আমার প্রেমে পড়লে নাকি।সে চাহনি দেখে মুহূর্তে লজ্জায় লাল হয়ে গেল উর্নি। ছেলেটা নিজের পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে কিছু বের করতে যাবে তখনই.......
"মাম্মাম, দাদাই গাড়ি নিয়ে এসেছে!! তাড়াতাড়ি আসো!!" তন্বীর চিৎকার শুনে দ্রুত নিজের হাত ঘড়িটা দেখে বিছানা দিয়ে পার্সটা নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।বেরোনোর আগে ছেলেটার চোখের দিকে চেয়ে যেনো বলে গেলো পারলে নাতো ধরতে!!
আর ছেলেটা....!!! সে এখনো চেয়ে তার প্রানপ্রিয় প্রিয়তমার মুখের দিকে। আশ্চর্যের বিষয় কিভাবে তার প্রিয়তমার গালটা বিনা আবিরের ছোঁয়াতেই অত সুন্দর লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
//////////////////////////////////////
মেয়ের হাত ধরে উর্নি নিজের বাবার গাড়ি করে গিয়ে পৌছলো নিরালা আশ্রমে।বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সাথে ওখানেই থাকে কিছু ছোট্ট ছোট্ট অভিভাবকহীন ক্ষুদে। এইখানের দাদু দিদাদের আদরের নাতি নাতনী সব।গাড়ি থেকে নেমে ছুটে গিয়ে খুদেদের দলে মিশে গেলো তন্বী। উর্নি হাসতে হাসতে বাবার সাথে এগিয়ে গেল ওর প্রিয় দাদু দীদাদের কাছে।ওর বাবাও নিজের বন্ধুদের মাঝে বড়ই খুশি।সবার পায়ে আবির দিয়ে মিষ্টি মুখ করালো উর্নি,সেই নিয়ে কি মতবিরোধ!! উর্নির আনা সুগারফ্রি মিষ্টির বদলে বেশিরভাগেরই দাবি তারা একটু রসালো মিষ্টি খাবে.. অবশেষে সবাইকে রসগোল্লা খাইয়ে শান্ত করলো ও।মানুষ গুলো আর বদলালো না সেই যখন ও কলেজ থেকে এখানে আসতো তখন টিউশনির থেকে বাঁচিয়ে রাখা কিছু টাকায় ফল আর বাচ্চাদের জন্য কখনো লজেন্স বা পেন পেন্সিল আনতো।তখন সব দাদু দিদার দাবি ছিল তাদের সুগারের জন্য মিষ্টি দিত না আশ্রম থেকে।তখন ও মাঝে মাঝে রসগোল্লা আনতো অবশ্য একটার বেশি কাউকে দিত না।
আশ্রমের বাগানে বাচ্চাদের কলকল করে ভেসে আসা প্রাণখোলা হাসির আওয়াজ শুনতে শুনতে ওপরে একটা ঘরে এসে ঢুকলো।ঘরটায় নানা বাদ্যযন্ত্র রাখা।আসলে এ ঘরটায় আবালবৃদ্ধবিতা সবার জন্য নাচ গানের আসর বসে। এখানেই ওই ছেলেটাকে গান গাইতে শুনেছিলো। ওই যে ওর মিস্টার জানালার সামনে বসে গিটার হাতে।
"কিরে তন্ময়!! এখানেও চলে এলি যে বড়!?"--- উর্নি।
"বউয়ের আঁচল ধরা শান্ত সৃষ্ট ভদ্রলোক বলে কথা! তো তোর পিছনে না ঘুরে কি বাড়িতে বসে থাকতাম!"--- তন্ময়।
একটু থেমে বললো তন্ময়,"খুব মনে পড়ছে বল আজকের দিনটা!! সেই আট বছর আগে!!"
"হুঁ!"
"সেই সরস্বতী পূজার দিন এখানে দাদুকে দেখতে এসেছিলাম,তখনই একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা পরীকে দেখে তো আমার 'Saamane ye kaun aya, dil men hui halachal
Dekh ke bas ek hi jhalak, ho ge ham paagal!!' একদম জুলিয়েট আমার!!"
"হ্যাঁ,আমিও দেখেছিলাম একটা গোল গোল চশমা পড়া, হলুদ পাঞ্জাবী আর সিল্কি চুলওয়ালা বেঙ্গলি হ্যারি পটারকে!! ও আবার টোল ও পড়ত... হা হা..."
"সেই,কতো হ্যান্ডসাম ছিলাম।কিন্তু প্রথম দেখাতেই নিশ্চয়ই ঝগড়া কাম্য ছিলো না,এটা তো এই নিরীহ প্রাণীর প্রতি অবিচার ছিলো না!!.."
"সেই কতো নিরীহ ছিলিস বল! নিজে হাতে পুজো বাজারের দায়িত্ব নিয়ে পলাশ ফুল আনতে ভুলে গেছিলি!! আবার আমি প্রতিবাদ করায় কি ঝগড়া বাবা!!!আর আমি রাগব না ,কতো করে বলেছিলাম আমি বাজার করবো,না অনিলদাদু বলল ওনার দাদুভাই ঠিক সব গুছিয়ে আনতে পারবে! হুম্,তার নমুনা তো দেখেই ছিলাম!"
"ছোটবেলায় দাদুর সাথে বাজারে যেতাম জানিস!! সব বাজার করা দেখতাম..কি মজা ছিলো তখন বাজারে পুজোর জিনিস কিনতে যাওয়ার.. ... কিন্তু মা বাবির কাছে শেষ বয়সে দাদু হয়ে গেছিলো বোঝা তাই দাদুকে এখানে এনে রেখে গেলো...... তখন ছোট ছিলাম আমার কোনো প্রতিবাদই গ্রাহ্য করেনি ওনারা.. তাই কলেজে ওঠার পর বাড়ি ছেড়ে ছিলাম.. টিউশনি আর স্কলারশিপের টাকায় নিজেকে তৈরি করেছিলাম একটা ভালো চাকরির জন্যে,ভেবেছিলাম একটা ভালো চাকরি পেলে একটা ছোট ফ্ল্যাট কিনে দাদুকে নিয়ে রাখবো! কিন্তু দাদু তো তার আগেই...."
উর্নি এসে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে চোখের জলটা মুছে দিয়ে ওর চোখের দিকে ভরসার চোখে তাকালো।
তন্ময় বলল,"সেদিন তুই না থাকলে আমাকে কেউ সামলাতে পারতো না... আমার অনেকটা জুড়ে তোর ভরসা আর ভালোবাসার আধিপত্য ছড়িয়েছিল।আমার কলেজে পড়া আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র এই মেয়েটার গানের প্রেমেই তো পড়েছিলাম।তারপর প্রোপোজ, কিছু মাস পর একটা ভালো চাকরি পেলাম মাইনটা বেশি ছিলো না কিন্তু তোকে নিয়ে আঁকা স্বপ্ন গুলোকে সত্যি করতে চাইতাম খুব,তোর মা বাবাও রাজি ছিলো,তারপর বিয়ে...."
"ওয়ে!!! আমি অতোটাও মহান নই!! আর যদি বলতেই হয় তাহলে তোর সাপোর্ট আর ভরসাটা না থাকলে গায়িকা উর্নি বসাক এর জন্ম হতো না রে!! আমার টিউশনির টাকা আর তোর মাইনে থেকে কিছু টাকা নিয়ে ওই ছোট্ট ফ্ল্যাটটা কিনেছিলাম,একটু একটু করে ঘরের সব জিনিস কেনা,আমাদের সংসারটা কি সুন্দর সাজিয়েছিলাম বল! তুই তো সেই সকালে উঠে ঘরের কাজ সামলাতিস,আর আমাকে খালি রেওয়াজ করার জন্য বসিয়ে রাখতি!! সব একহাতে করতো আমার সোনা বরটাকে!!!"
"সারাদিন এই স্টুডিও ওই স্টুডিওতে ঘুরতি একটা কাজের জন্য,কতো খাটা খাটনি করে নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য,এরপর ভগবান বুঝি সুযোগ দিলো, তোর প্রথম গানটা অনেকটা পরিচিতি পেলো ,এরপর একটার পর একটা গানের সুযোগ,আর তারপর এলেন আমার মহারানী ভিক্টোরিয়া তন্বী দেবী... তারপরের দিনগুলো আরো সুখের হওয়ার কথা ছিল যদি না....."
"উর্নিদি! কোথায় তুমি!?"--- মেয়েলি গলায় কেউ উর্নিকে ডাকল।
"হ্যাঁ,এই তো আমি!"--- বলে দরজা খুলতেই একটা মেয়ে ওর হাত টেনে নিচের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,"তোমার মেয়ের কান্ড দেখবে চলো!পুরো জলে ভিজে একশা..!"
পিছনে থাকা তন্ময় ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে হাসলো সত্যি ওর মহারানী ভিক্টোরিয়া একদম লেজেন্ড!!!!
////////////////////////////////////
রাত ১২:১৫ ..
বেলকনির সোফাতে বসে উর্নি আকাশের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় windchime টা বেজে উঠলো।
"ঘুমিয়ে পড়েছে তন্বী!?"
"হুম্,তুইও ঘুমিয়ে পড়বি চ! অনেক ধকল গেছে সারাদিন"
উর্নি বলল," বস পাশে একটু গল্প করি আজ..!!"
তন্ময় ওর পাশে বসতেই ও বলল," তোর মনে আছে এই windchime টার কথা....!?"
"সে আর বলতে আমার প্রথম মাইনেতে তোকে গিফট দেবো ভেবেছিলাম। বললাম কিছু না নিস অন্তত একটা রিং নে।তুই তো এটা কিনলি! এবার এখানে ঝুলিয়ে দিয়ে বলেছিলি এটা যখনই আমি ঘরে আসি তখনই বাজে! মানে আমার কলিং বেল আরকি!!"
"হুম্,কতো সুন্দর করে চেয়েছিলাম সংসারটা সাজাতে! বাট ইউ বেইমান! আমার ওপর সব চাপিয়ে ফুড়ুৎ!!... তুই কি বুঝছিস না আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি প্রচন্ড... আমার অভ্যাস নেই এত কিছু একা সামলানোর!! আমার সব অভ্যাস তুই খারাপ করে দিয়েছিস..!!"
"এই তুই কি বলতে চাইছিস,আমি বেকার। সবসময় তোকে সঙ্গ দেওয়া, তন্বীকে ঘুম পাড়ানো,তোকে মেন্টালি হ্যান্ডেল করা অত সহজ নয়!! বললাম তো আমাকে না পোষালে আর একটা বিয়ে কর... তা না!!?এই পাগলী কাঁদছিস কেনো!?"
"একটা গান শোনাবি,রে!?"
"বাবা! মিসেস গায়িকা এই অভাগার গান শুনতে চাইছে! যাই হোক!! আমার জুলিয়েট এর হুকুম শিরোধার্য!!"
"কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে,
তোমারে দেখিতে দেয় না
মোহমেঘে তোমারে।
অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না।
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
চিরদিন কেন পাই না।
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
চিরদিন কেন পাই না।"
কাঁধের ওপর ঘুমিয়ে পড়া উর্নির দিকে তাকিয়ে তন্ময় হাসলো।ওকে কোলে তুলে বিছানায় ঘুমন্ত তন্বীর পাশে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে যায় তন্ময়।
ব্যালকনির দরজার সামনে গিয়ে পিছন ঘুরে একবার নিজের প্রিয় মানুষ গুলোর দিকে চাইল তন্ময়।একটা মলিন হাসি ফুটে উঠলো উর্নির হ্যারি পটারের সর্বদা হাস্যোজ্বল মুখটায়।
Windchime টা হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বেজে উঠলো।আর কেঁপে উঠল টেবিলের ওপর রাখা মোমবাতিটা,যার আলোয় জ্বলজ্বল করছে তার সামনে রাখা তন্ময়ের একটা হ্যারি পটার স্মাইলের ছবি।আজকের দিনেই তো ছেলেটা ওর চোখের দিকে চেয়ে শেষবারের মতো বলেছিল,"আমি কিন্তু এত সহজে তোর ঘাড় থেকে নামছি না।আসবো আবার!! উমহু.. রোজ আসবো!! রোমিও তার জুলিয়েট ছাড়া থাকতে পারে নাকি.."
ঘুমন্ত উর্নির মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো,
"মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
চিরদিন কেন পাই না।""
হয়তো সারাজীবন সর্বসমক্ষে ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে থাকতে পারলো না কিন্তু সবার অলক্ষ্যে দুই আত্মার ভালবাসার রঙিন তুলি প্রেমের ছবিটা ঠিক সম্পূর্ণ করবে,আঁকবে নিজেদের গল্প, নিজেদের স্বপ্ন,নিজেদের ভালোবাসাটা!!
বেঁচে থাক ওদের ভালোবাসার গল্পটা,শুধু ওদের আত্মার মিলনটা,ওদের চুপিসারে একে অপরের অস্তিত্বে মিশে যাবার কাহিনীটা 💕💕
============
প্রিয়া বণিক
কলকাতা