Click the image to explore all Offers

গল্প ।। অব্যয় ।। অদিতি ঘটক



আর একটু জোরে প্যাডেল করলেই মেয়েটাকে ধরে ফেলবে,ওই তো ডান দিকে বাঁক নিল। রনি প্যাডেলে আরও জোরে চাপ দিল। পায়ের মাসল ব্যাথা করছে। উত্তেজনা ও পরিশ্রমের চোটে মাথায়  বিনবিনে ঘাম। নাহ, খুব ভুল হয়ে গেল। মেয়েটাকে মনে হচ্ছে একা কাবু করা যাবে না। বন্ধুদের কয়েকজনকে সাথে নিয়ে এলে ভালো হত। ঝোঁকের মাথায় এই রকম হটকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। এখনো মেয়েটার থেকে ও হাত পঁচিশেক দূরে আছে।  জায়গাটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা, ঝোপঝাড়ের মাঝে মাঝে একটা ঝুপড়ি তাও পরিত্যাক্ত বলে মনে হচ্ছে। মেয়েটা স্কুটিটা নিয়ে সোজা একটা পুরনো পাকা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। যাহ, ভেতর থেকে দরজা আটকে দিয়েছে। রনি অনেক টানাটানি করেও দরজা একফোঁটা ফাঁক করতে পারল না। এত পুরনো বাড়ির দরজা এত মজবুত ! অবাক হয়ে গেল। এক মানুষ উঁচু পাঁচিলের  ধরে দেখতে লাগল কোথাও কোনো ফাঁক ফোকর আছে কিনা বা ও পাঁচিল টপকাতে পারবে কিনা। নাহ সে রকম গাছ বা পোস্ট কিছু নেই তবে একটা জায়গায় অল্প একটু ফাটল আছে। সেখান দিয়ে একটা ঘরের বেশ কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা এক বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ওষুধ খাওয়াতে খাওয়াতে বকাবকি করছে। মহিলা ছোটবাচ্চাদের মত আচরণ করছেন। পাশে আরও একজন রঙ্গ দেখে যাচ্ছেন আর টিকা টিপ্পনি করছেন। ভদ্রমহিলাদের মনে হচ্ছে শাশুড়ি বৌমার সম্পর্ক। সমুর অত সবের দরকার নেই। ও বাড়িতে  ঢুকতে পারলে ভালোই। নাহলে মেয়েটা বেরনো অবধি অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত শেষেরটাই করতে হল।

 মেয়েটা বেরতেই রনি ঝাঁপিয়ে পড়ল। -----আপনি তো বিরাট বড় চোর আপনাকে পুলিশে দেওয়া উচিত।  ভালোয় ভালোয় স্কুটির চাবিটা দিন।

কি সাংঘাতিক মেয়ে! বলা নেই কওয়া নেই, চেনা নেই জানা নেই হুট করে স্কুটিটা নিয়ে চলে এলেন। ভাবলেন আচ্ছা দাঁও মারা গেছে। ঠিক সময় মত বেচে দেবেন। কেউ টের পাবেনা। ভাবেননি না, এই এত দূর ধ্যারধেরে গোবিন্দপুর অবধি কেউ আপনার ধাওয়া করতে পারে!

 মেয়েটা রুখিয়ে উঠল--" জানেন আমার সাইকেল মান্তুদার দোকানে পড়ে। এখন গিয়ে সারাতে হবে। তারপর আমি ডেলিভারি করতে পারবো। টাইমে ডেলিভারি না দিতে পারলে লোকসান তো হবেই তার উপর গুডউইল নষ্ট। আপনার কি আপনি তো ফলো করে খালাস।"

রনি কথার মানে বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারে না। তবে রাগটা পুরো মাত্রায় এখনো রয়েছে। মেয়েটা চুরি করে এই বার গল্প ফাঁদছে। বলে--- "অত কথায় তো কাজ নেই, চাবিটা দিন।"

মেয়েটা থতমত খেয়ে বলে---"আমি ফিরবো কিসে এখানে টোটো, অটো, বাস পাওয়া যায়না। সাইকেল রিকশার দেখ কচ্চিদ মেলে। মান্তুদার দোকানে আপনি আপনার স্কুটি পেয়ে যাবেন।"

 রনি বলে--" উঁহু ওটি হচ্ছে না

 স্কুটি আমি চালাবো। জানেন এটা আমার বোনের স্কুটি। মায়ের ওষুধ কিনতে এসেছি, আধমিনিটও লাগেনি। এরই মধ্যে যেই দেখেছেন স্কুটিতে চাবি লাগানো ওমনি উড়িয়ে নিয়ে হাওয়া।

 

মেয়েটা নাকের পাটা ফুলিয়ে বলে-  "বার বার আমায় চোর বলবেন না। আমি চোর নই। নেহাত আমার সাইকেলের টায়ার পাংচার হয়ে গিয়েছিল আর দিদুকে ওষুধ দেওয়াটা খুব জরুরি ছিল। এক তো ওনারা মানসিক রোগী তারউপর দিদুর সুগার আছে। খাবার দিতে এসে দেখি ওষুধ শেষ আমিই ওদের দেখাশোনা করি। ডাক্তার সোমকে জিগ্যেস করতে পারেন। এটা ওনার বাড়ি। দোকান থেকে বেরিয়ে দেখি, একটা স্কুটি, চাবি ঝোলানো। তাড়াহুড়োয় কিছু না ভেবে নিয়ে চলে এসেছি।"

  রনি একটু ঝাঁঝের সাথেই বলে-- "জানেন, এটা সমীর কাকু মানে মান্তুদার দোকানের কর্মচারীর সাইকেল। তিনি বলেছেন তাড়াতাড়ি ফিরতে। দুপুরে বাড়িতে খেতে যাবেন। এবার ভালোই ভালোই স্কুটির চাবিটা দিয়ে দিন নাহলে পুলিশ কে ফোন করতে হবে।"

 মেয়েটা একটুও না ঘাবড়িয়ে বলল-- কথা বাড়িয়ে শুধু শুধু দেরি করছেন কেন বলুন তো? আমি তো বললাম মান্তুদার দোকানে আপনার স্কুটি পেয়ে যাবেন। নিজে খেটে রোজগার করে সম্মানের সাথে বাঁচি বুঝেছেন। অন্যর জিনিসে চোখ দেওয়া তো দূর ছুঁয়ে অবধি দেখি না। বিপদে পড়ে নেহাত-- তা যেমন রেস লাগিয়ে এলেন তেমন ভাবেই চলুন।"

মনে মনে মেয়েটাকে এত হয়রানির জন্য জব্দ করার ফন্দি এঁটে রনি বলে, -- তাহলে খেলার নিয়মে কোর্ট বদল করতে হয়। আপনি এবার সাইকেল চালান আমি স্কুটিতে যাই। হ্যাঁ, তবে আপনার মত স্পিড বাড়াবো না। বরং আপনার পেছন পেছন যাবো।"

মেয়েটা গম্ভীর গলায় বলে, "ছেলেদের সাইকেল চালাতে পারিনা।"

এরপর আর কথা থাকেনা। তবে এরপরও রনির অব্যক্ত অনেক কথাই  আছে। নামী সফটওয়্যার কোম্পানির মোটা মাইনের চাকরিটা কোরনার দৌলতে গেছে। রনি বাড়ি ফিরে  আসতে বাধ্য হয়েছে। এখনো চাকরির ব্যাপারে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তাই এই মেয়েটাকে ছাড়লে চলবেনা। যদি এই করিৎকর্মা মেয়ের সাথে একটা অন লাইন স্টার্টআপ খোলা যায়-- মেয়েটা স্কুটিতে স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে রনি প্যাডেলে চাপ দেয়----

#######################

  অদিতি ঘটক, চুঁচুড়া, হুগলি

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.