ছবি তোলার নেশা আমার কৈশোর থেকে। ছোটকা যখন নতুন একটা ক্যামেরা কিনল তখন পুরোনোটা আমায় দিল। ছোটকা আমার সখের কথা জানতো, তাই। এতেই আমি খুশি।
ছবি তুলি। ছবি আঁকি। ভালো লাগা ছবি 'প্লাস্টার অব্ প্যারিস' করে আমার সংগ্রহশালায় টানিয়ে রাখি। সংগ্রহশালা বলতে বাড়ির পশ্চিম কোনে ছোট্ট একটা পরিত্যক্ত ঘর। কী না আছে সেখানে! আমাদের বাড়ির অনেকের ছোটবেলাকার খেলনাপাতি, দাদুর ব্যবহৃত জামা, লাঠি, জুতো, চশমা ইত্যাদি। এছাড়াও বাড়ির অব্যবহৃত জিনিসপত্রে ঠাসা। সংগ্রহশালা না বলে গুদাম ঘর বললেই বেশ মানায়।
কুদ্দুস রবি ঠাকুরের একখানা ছবি ছেয়েছিল। অনেক দিন হয়ে গেল। করি করি ভেবেও করা হয়ে ওঠেনি। আজ মনে হ'লো ছবিটা করে দি।
একমনে ছবিটার কাজ করছি, কোনোদিকে খেয়াল ছিল না। পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো - - ও খোকা, এত লম্বা দাড়ি ছেলেটার!
তাকিয়ে দেখি দুলি মাসি অবাক হয়ে ছবিটা দেখছে। তার মুখ দিয়েই কথাগুলো বেরিয়েছে। দুলি মাসি আমাকে খোকা বলে ডাকে।
ছোটবেলা থেকেই দেখছি দুলি মাসি আমাদের বাড়িতে আছে। নানান কাজ করে। আমার জন্মের আগে থেকেই এবাড়িতে আছে দুলি মাসি। তার সরলতার জন্য সবাই তাকে ভালোবাসে। আমিও।
বাড়ি তার দূরের এক গাঁয়ে। বছরে দু'একবার যায় সেখানে।
--ও খোকা, কইলে না তো অত লম্বা দাড়ি ক্যান্ ছেলেটার ? ও দাড়ি কাটে না ক্যান্, পয়সা নেই বুঝি? সরলতা মাখা অনন্ত বিস্ময় তার চোখে মুখে। রবি ঠাকুরকে সে চেনে না। তার সরলতায় বিস্মিত আমিও।
আমি বললাম - - ওই ছবিটা রবি ঠাকুরের।
--ও মা, ঠাকুরের ছবি! কত ঠাকুর আছে দুনিয়েতে আমার মতো মুখ্যু সুখ্যু মেয়ে মানুষ তার কী জানে! বারবার তার হাত দু'টো মাথায় ঠেকাতে লাগল দুলির মা। একটা অপরাধ বোধ তার চোখে মুখে। তারপর গড় হয়ে প্রণাম করল, মাথা আস্তে আস্তে মেঝেতে ঠুকে ঠুকে।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম - - তোমার একটা ছবি তুলে দি মাসি, এই ক্যামেরা দিয়ে। তোমার কোনো ছবি আছে মাসি?
--ছবি! মাথা চুলকে কিছুক্ষণ বাদে দু'বার মাথা দোলায় দুলি মাসি। যার মানে দাঁড়ায় তার কোনো ছবি নেই।
--তা'লে তোমার একটা ছবি তুলে দি। ক্যামেরাটা খুললাম। মাসি তখনও কী যেন চিন্তা করে চলেছে। হঠাৎ বলে উঠলো - - না না, আমার ছবি আছে খোকা। জিভ্ কেটে কথাটা বললো মাসি।
এবার অবাক হওয়ার পালা আমার।
--কোথায় কবে ছবি তুললে মাসি? কখনও বলনি তো!
--ওই যে গেলোবার বাড়ি গেলাম! পুকুর ঘাট পিছ্লে ছিল। পা হড়কালো, পড়ে গেলাম শানের পরে। চিড় না কী কয় তাই ধরেছিল পায়ে। দেবু আমায় সদরে নি গেলো। সেখানেই ছবি তুললো। তা'প্পর না চিকিচ্ছে হ' লো!
থ হয়ে গেলাম আমি। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম দুলির মা'র দিকে। তার সরলতা মাখা মুখের দিকে!
=====================
একটি গল্পে দেখলাম বর্জপাত হবে বজ্রপাত, আরেকটিতে ট্রাকে পেট্রোল ভরার কথা -- হবে ডিজেল।
উত্তরমুছুন