স্মৃতির আয়নায়
অশোক দাশ
'মেঘ বলেছে যাব যাব, রাত বলেছে যাই
সাগর বলে কূল মিলেছে, আমি তো আর নাই'---
অরণ্য আজ একা বসে আছে, মর্মরিত ঝাউবনের ধারে দিঘার সমুদ্র সৈকতে। প্রতিবছর নিয়ম করে অরণ্য আর আরশি এই আষাঢ় মাসের প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে দীঘার সমুদ্র সৈকতে আসছে পাঁচ বছর। আজ সাথে নেই আরশি। আছে তার বর্ণময় উপস্থিতি উজ্জ্বল স্মৃতি অরণ্যের মনের মনিকোঠায়। তারা ভরা আকাশের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে অরণ্য। খুঁজে ফেরে তার প্রিয়া আরশিকে। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় সমুদ্রের ফেনিল উচ্ছ্বাসে আরশির সুন্দর মুখটা বারবার তার মানস পটে ভেসে ওঠে।
গত বছর তারা একসাথে কত রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল। সমুদ্র সৈকতে ঝিনুক কুড়ানো, লাল কাংড়া ধরার অদম্য ইচ্ছে আরশিকে তাড়িয়ে নিয়ে যেত বারবার। সমুদ্র স্নানে সে ছিল অকুতোভয়। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় উঠতে সে ছিল দক্ষ সাঁতারু। এটাই কাল হলো। ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগলো। ডুবে তলিয়ে গেল আরশি। ডোবার আগে এখনো চোখে ভাসে তার সেই হাত নাড়ার ইঙ্গিত ,বাঁচাও আমি বাঁচতে চাই।শত চেষ্টা করেও লুনিয়ারার দল আরশিকে বাঁচাতে সক্ষম হলো না। তার নিথর দেহ উদ্ধার হল। শুনেছিলাম সমুদ্র কিছু নেয় না, সবকিছু ফেরত দেয়। কিন্তু আমি আমার আরশিকেও ফেরত পেলাম কিন্তু প্রাণহীন নিষ্প্রাণ দেহ। অরণ্যের চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। বিগলিত অশ্রুধারা বাঁধ মানে না।
অরণ্য মনে মনে শপথ করে ,তোমার স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখতে, আমি প্রতিবছর এই আষাঢ়ি পূর্ণিমা তিথিতে তোমার প্রতীক্ষার প্রহর গুনবোএই তারা ভরা আকাশের নিচে, দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশির সমুদ্র সৈকতে। মানুষকে সচেতন করার সমস্ত রকম প্রচেষ্টা গ্রহণ করবো। যাতে কোন ফুল অকালে ঝরে না যায় দেবতার পায়ে অর্পিত হওয়ার আগে।
'প্রেম বলে যে যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে
মরণ বলে, আমি তোমার জীবন তরী বাই'।
------------------------------------------------------
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।