প্রথম ঘুম ভেঙে শুয়ে শুয়েই মনে হল, আজ তো পঁচিশে বৈশাখের সকাল ! সীতা দি'র আজকাল ঘুম ভাঙতে বড় বেলা হয়ে যায় ! সকাল আটটা, সাড়ে আটটা ও হয়ে যাচ্ছে। নিজের কাছে নিজেই যেন, কেমন লজ্জা পান ! অন্য কেউ তো আর নেই বাড়ীতে, যে ডেকে তুলবে ! ঘুমের ওষুধ খেতে হয় রাতে, নাহলে ঘুম আসবে না। বুঝে উঠতে পারেন না , কি করলে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙবে ! রোজ মেয়ের সঙ্গে যখন দূরভাষে কথা হয়, তখন তিনি আফসোস করেন ,এই কথা বলে ! আর মেয়ে তখন বলে, "মা ,তোমাকে অত ভাল টেবিল ক্লক টা যে কিনে দিয়ে এলাম, তাতে একটু এল্যার্ম দিয়ে শোও ! " আরও অনেক উপদেশ দ্যায়, এই করো, সেই করো বলে ! মেয়ে তাকে হাতে ধরে শিখিয়ে দিয়ে গ্যাছে, কিন্ত কেমন করে যে এল্যার্ম টা দিতে হয়, সেটা একদম ভুলে গেছেন। নতুন করে কিছুই আর শিখতে ইচ্ছা করেনা । মনের ভেতর সর্বদা একটা গভীর অবসাদ চেপে বসে থাকে !
একপক্ষে ভালই, ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে কিই বা করার আছে? সেই তো একঘেয়ে সব রুটিন কাজ !
গত মাসে মেয়ে বিদেশ থেকে এসে সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করালো শরীরের, রিপোর্ট সব ঠিকঠাক পাওয়ায়, মা -মেয়ে দুজনের ই নিশ্চিন্ত লাগল। মেয়ে ফিরে যাবার পরে আবার হঠাৎই কদিন, খুব চোয়াল ব্যথা, হাত ব্যাথা, এইসব হার্ট অ্যাটাক জনিত লক্ষন প্রকাশ পেল ! মেয়ে তখন সদ্য ফিরে গ্যাছে, আবার তার পক্ষে আসা ও সম্ভব নয়, দূর থেকে সে বেচারী র দুশ্চিন্তার অন্তঃ নেই। লোকাল যে ডাক্তার দেখে যায় বাড়ী এসে, সেই, তাকে খবর দিয়ে আনাল। উনি তেমন কিছু সিরিয়াস বুঝলেন না, কিছু গ্যাস অ্যাসিডিটি র ওষুধ দিয়ে গেলেন। ব্যথা ট্যাথা ও কমে গিয়েছিল ,শরীরের গাড়ি টা ও আবার আগের ছন্দেই চলছে। মেয়ে ও এখন নিশ্চিন্ত একটু। আজ তাই ঘুম থেকে উঠে, একটা সুন্দর দিন কাটাবার কারণ খুঁজে পাওয়া গেল বলে মনে হচ্ছে ! কবিগুরুর জন্মদিন আজ। 'তারা মিউজিকে ' কত ভাল ভাল প্রোগ্রাম আছে, আজকের দিন টা একটু বৈচিত্র্য ময় হবে। শ্লথ হাঁটাচলায় যেন একটা উদ্দীপনা প্রকাশ পেল, সীতা 'দির। অন্য দিনে অন্তত আধঘন্টা ধরে তিনি দাঁত মাজেন, যদিও তার বাঁধানো দুপাটি দাঁত, কিন্ত তার অনেক যত্ন করেন। আজ তিনি পনেরো মিনিটের মধ্যেই সব সারলেন। শাড়ী পরার পাট তুলে দিয়ে গেছে, বোনঝি আর ভাইঝি এসে। তারা রীতিমত শাসিয়ে গেছে, "তোমাকে যেন বাড়ীর মধ্যে কোনও দিন আর শাড়ী তে না দেখি।"
ওদের এই আদরের শাসন ভালই লাগে। মনে মনে শুধু ভাবেন, সারাজীবন এই শাড়ি ই ছিল তার একমাত্র শখের জিনিস, তাও দামী শাড়ী কেনার সাধ্য ছিল না, তবে কম দামের মধ্যে ও সুন্দর, রুচিসম্মত শাড়ী কিনেছেন চিরদিন, নিজের মাইনে র টাকায় ! আর অনেক সময় নিয়ে, গুছিয়ে সেই সব শাড়ী পাট পাট করে পড়ে রোজ মর্নিং স্কুল করেছেন।
মেয়ে আজকাল তাকে দামী শাড়ী কিনে দেয় অবশ্য , কিন্ত কোথাও আর বেরোনই হয়না। শাড়ী সব আলমারি ভর্তি হয়ে পড়ে আছে। ইদানীং তাই ওদের সবার দেওয়া ম্যাক্সি ই পড়েন। একদিকে ভাল হয়েছে, শাড়ি অনেক ঝামেলার ব্যাপার, কাচো রে, ইস্ত্রি করো রে ! কাজের মেয়ের কাজ কমে গেছে, তাই সে ও খুশী। বলে, "মাসীমা, তোমাকে ম্যাক্সি পড়েই বেশী ভাল লাগে !" আসলে হচ্ছে, ওকে আর রোজ রোজ শাড়ি কেচে, মেলে, পরেরদিন তুলে ভাঁজ করে, ধোপা কে দিয়ে আসতে হয়না বলে ও বেজায় খুশী। এই সব কথা ভেবে ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসেন নিজের মনেই।
মেয়ের জোরাজুরি তে দশ বছর আগেই চুল টা বয়েজ কাট করেছিলেন। তাই চুল নিয়ে তেমন ঝামেলা না থাকলেও ,সীতা'দির সেই চুল টুকু পরিপাটি করে আঁচরাতে ও বেশ সময় লাগে। কিন্ত আজ টিভি চালিয়ে তাড়াতাড়ি বসার জন্য, সংক্ষেপে সব সারলেন। ওনার শ'খানেক চ্যানেল এর মধ্যে এই চ্যানেল টাই সবচেয়ে পছন্দের। অন্য সব চ্যানেলের বস্তা পচা সিরিয়াল আর নিউজ দেখলে ওনার মাথা ধরে যায়।
সারাদিনের অনেকটাই তিনি, 'তারা মিউজিক ' দেখেই কাটান। এরা রবীন্দ্রনাথ কে ধরে রেখেছে অনেক যত্ন করে !সাধ্যমত পরিবেশনা এদের , যথেষ্ট রুচিসম্মত ! রবীন্দ্রনাথের সার্ধ শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। কাজের মেয়ে নমিতা ও এসে গেল। নমিতা র যত দোষই থাক, সময়ের ব্যাপার টা তার চমৎকার ! ওর আসা যাওয়ার সময় দিয়ে ঘড়ি র কাঁটা মেলানো যায়! ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ন'টায় সে আসে, জলখাবার বানিয়ে দেবে প্রথমে, খুবই সংক্ষিপ্ত আয়োজন তার, সীতা'দির খাওয়ার কোনও ঝামেলা কোনও কালেই ছিল না, এখন তো আরও নেই। দুধ, কর্নফ্লেক্স, কলা আর ডিম সেদ্ধ, এই হচ্ছে রুটীন জলখাবার। নিমেষেই সেসব নমিতা বানিয়ে ফেলে। তারপর রান্না বসায়। তারপর সংসারের বাকী সব কাজ ও করে। জলখাবার খাওয়ার সময় টায় রোজই নমিতা নিজের চা টা ও নিয়ে এসে তার বিছানার পাশে মেঝে তে বসে। তখন সে একটু চা খেতে খেতে গল্প করে। এই সময়টায় একমাত্র ওকে মেশিন বলে মনে হয়না। ওর গাম্ভীর্য পূর্ণ মুখে, গোল গোল রাগী চোখের ফাঁকে তখন চিলতে মত হাসি দেখা যায়। সীতা দি ওকে খানিকটা সমীহই করেন। ওকে দিন' টার মাহাত্ম্য বোঝানোর জন্য বলেন, "বুঝলে নমিতা, আজ তো পঁচিশে বৈশাখ"! নমিতার বাঁজখাই গলা শুনতে পান, "মাসীমা, ওসব আমরা বুঝিনা, আমাদের কাছে, চব্বিশ, পঁচিশ সব এক। এখন বল তাড়াতাড়ি, আজ কী রান্না হবে ?আমি আবার ওবেলা আসব না আজকে।আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।"
সীতা 'দি বাস্তবে ফেরেন।, "আচ্ছা ,সবজি কী কী আছে বলো তো !" নমিতা ফিরিস্তি দেয়, " আলু আছে, পটল আছে, কিন্ত কুমড়ো নেই, বেগুন নেই, আদা নেই, তাহলে তোমার পাঁচমিশালী তরকারী টা হবে কী করে ?সবজিওয়ালা আসা পর্যন্ত বাপু আমি অপেক্ষা করতে পারবনা। আজকেও ঐ আলু পটলের ঝোল ই খাও! আর
দু পিস রুই মাছ ফ্রিজ থেকে বের করে একটু ঝোল করে দিচ্ছি। । আর শোনো সব আনাজ পাতি সবজিয়ালা র কাছ থেকে নিয়ে রেখো যাতে কাল আবার অসুবিধে না হয় রাঁধতে। "ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে নমিতা ! তারপর মানুষ থেকে আবার মেশিনে রূপান্তরিত হয়। একে একে সব কাজ মেশিনের গতি তে করতে থাকে। সীতা'দির আজকাল , সবজি, রান্না- বান্না এই সব ব্যাপার গুলোয় চরম অনীহা বোধ হয় ! তাই নমিতার ওপরে ই অগত্যা নির্ভরশীল থাকেন।
টাকা আর সময়, এই দুটো জিনিসের মূল্য, নমিতা সার বোঝা বুঝেছে! তাই এই একা মাসীমার সব কাজ সে ঝড়ের গতি তে দু ঘন্টায় সেরে ফেলে অন্য বাড়ী ছোটে। তার স্বামীর রোজগার ভাল, সে ছুতোর মিস্ত্রি, কিন্ত চার ছেলেকে নমিতা টিউশন দিয়ে পড়ায়, তাদের পেছনে খরচা করার জন্য একটু উপড়ি রোজগার না হলে আজকাল চলেনা।
সেই জন্য ই তার গতর খাটিয়ে দুটো বাড়ীতে কাজ করা ! নিজের সংসারের রান্না বান্না করে তারপর মাসীমার কাছে ঠিক ন'টায় ঢোকে আর ঠিক কাঁটা য় কাঁটায় এগারটা য় বেরিয়ে যায়। ওর হিসেবের মাথা খুব পরিষ্কার ! ভীষণ বাস্তববাদী নমিতাকে, মাসীমার একাকীত্ব কখনোই স্পর্শ করেনা।
আট বছর আগে এই নমিতা কে কাজে রাখার সিদ্ধান্ত টা ঠিক ছিল নাকি ভুল, সীতা'দি বুঝে উঠতে পারেন না।
তখন তার পুরনো কাজের মেয়ে মিনতি কে নিয়ে তাঁর নাজেহাল অবস্হা। তখনও তিনি এক্সটেনশনে চাকরী করছেন ! বিবাহ বিচ্ছিন্না মিনতি তখন দুটো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে হন্যে হয়ে লোকের বাড়ী কাজ খুঁজছে। তার কাছে যখন এল, তখন ওর উস্কোখুস্কো চুল, শুকনো মুখ আর জীবনের গল্প শুনে এমন মায়া হল যে ওকে রাখলেন সমস্ত কাজের জন্য, শর্ত একটাই, অন্য কোন বাড়ী তে যেন আর কাজ না করে। তার আগের ঠিকা মাসী তখন ছুটী তে গেছে একমাসের জন্য, একেবারে কোনও কাজের লোক ছাড়া তাঁর ও খুব অসুবিধা হচ্ছিল!
এই বাড়ী তে কাজে ঢোকার মাস খানেকের মধ্যেই মিনতির স্বাস্থ্যে একটু জেল্লা দেখা দিল। বেচারা ওনার বাড়ীতে দুবেলা পেট ভরে খেতে পেত। মাঝে মাঝে বাচ্চা দুটো কেও সঙ্গে আনত!
মিনতি ছিল এত ঢিলাঢালা, এত বেহিসেবী, এত ভুলো যে ও কাজে লাগার পর থেকে, সীতা'দির সংসারে কাজের থেকে অকাজ বেশী হতে লাগল ! কিন্ত সেই অল্পবয়সী, সুন্দরী, অগোছালো স্বভাবের মিনতির ভাবালু, রোমান্টিক মনের পরিচয় পেয়ে, মেয়েটির প্রতি ধীরে ধীরে একটা মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়লেন। মিনতি তাকে মা, বলে ডাকত, প্রথম থেকেই ! ওর নিজের মা, সংসারের অভাব সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিল, ওর যখন দুবছর বয়স !
বাবা মদ খেত খুব, দুবছরের মেয়েকে দেখা শোনা করার জন্য আবার বিয়ে করল! সৎমা র আরও দুই ছেলে মেয়ের সঙ্গে নিতান্ত অবহেলায় কোনমতে যখন পনেরো বছরের হল, তার বাবা তাকে বিয়ে দিল। তার স্বামী আবার বিয়ের আগে থেকেই এক মেয়েকে ভালবাসত কিন্ত সে 'সদগোপ '
তাই শ্বশুর বিয়ে দেয়নি। স্বামী এত মারধোর করত যে দু টো বাচ্চা নিয়ে একবার বাবা র বাড়ী পালিয়ে এসেছিল। সৎমা ও কিছুতেই তাকে আর থাকতে দিতে রাজী হলনা তখন ! সে এর বাড়ী, তার বাড়ী ঘুরতে ঘুরতে একটা বস্তিতে এক মাসীর আশ্রয় পেল আর সেই মাসীই তাকে এই মা'র বাড়ীতে কাজে লাগিয়ে দিল। মিনতির কেমন যেন, ভুলে যাওয়া নিজের মা 'র কথাই মনে হত এই মানুষ টাকে দেখার পর থেকে। সীতা'দিকে প্রথম থেকেই মা বলে ডাকত ! 'মা ' বলতে সে অজ্ঞান ছিল ! যদিও প্রতি টা কাজ ভুলভাল করাতে মা'র কাছে যে কত বকা সে খেয়েছিল ! সকাল ন'টায় কাজে ঢুকলে তার এই সামান্য কাজ শেষ করতে চারটে বাজত, এতই সে ধীরগতি ! আবার উত্তম-সুচিত্রা র একনিষ্ঠ ভক্ত বলে, রান্না, বাসন মাজা পড়ে থাকত, সে সিনেমা য় মশগুল হয়ে পড়ত ! সীতা'দির তখন কাজ হত, তাকে ডেকে তুলে তার কর্তব্য কর্ম মনে করিয়ে দেওয়া। " ওরে মিনতি, রান্না টা শেষ কর, আমাকে খেতে দে, এখনও ঘর ঝাঁট মোছা, কাপড় কাচা ,বাসন মাজা বাকী তোর, কখন শেষ করবি ?" স্বামী ছেড়ে দেওয়ায় কোনও দুঃখ ওর ছিল না, শুধু ছেলে মেয়ে দুটো কে একটু পেট ভরে খেতে দিতে পারত বলে ওর যেন মনে খুব প্রশান্তি ! সীতা'দির কাছে বসে কলকল করে কত কথা যে বলত কখনও হাসির কথায় হেসে গড়িয়ে পড়ত ! সীতা'দির মাতৃ হৃদয় উদ্বেল হয়ে উঠত !'আহা, এমন সুন্দর মেয়েটা, মাতৃহীনা, কোনও দিন কারু কাছে একটুও ভালবাসা পায়নি, অথচ তাও কী প্রাণবন্ত ! তবে সংসার তো এইসব গুণ দিয়ে চালানো যায়না ! এ হেন মিনতি কে আট বছর আগে ছাড়াতে বাধ্য হলেন। শত বকাবকির পরেও যখন কোনও কাজ ঠিক করে সুষ্ঠু ভাবে করতে শিখল না তখন ছাড়ানোর কথা ভাবলেন। ওর বাচ্চা গুলো কে ও খুব ভালবাসতেন। ওরাও দিদা'কে ! ততদিনে ওরা একটু সাব্যস্ত হয়েছে। ছেলে টা কে অনেক চেষ্টার পরে একটা ভাল সরকারী বোর্ডিং স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। মেয়ে তখন ক্লাস থ্রি, মিনতি কে বললেন, " তুই অন্য বাড়ীতে কাজ দ্যাখ, আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে !" অনেকটা পুরাতন ভৃত্যের মত, ছাড়ালে না ছাড়ে অবস্হা হল ! " মা, আমি কী করেছি, যে তুমি আমাকে ছাড়াতে চাইছ?" কার্যক্ষেত্রে যে ও কতখানি অচল, সেকথা আর বোঝানো যায়না। তাও বলেন, "তুই বল, কতদিন আমি নিজে রান্না করে নিয়েছি, কারণ, তুই হয় ঘুমিয়ে পড়েছিস, নয় সিনেমা দেখতে বসে যাচ্ছিস, আর নয়তো পাশের বাড়ির কাজের মাসীর সঙ্গে গল্পই করে যাচ্ছিস সব কাজ ফেলে !" মিনতি বলল, ও আর লোকের বাড়ী কাজ করবেনা, একটা ঠেলা কিনবে, মেয়ে কে সঙ্গে নিয়ে খাবারের স্টল দেবে। লুচি আলুর দম বিক্রি করবে। রান্নার হাত ওর সত্যিই ভাল ছিল !
মা'র প্রতি চির বিশ্বাসী, মা'র দুঃখে চির দুঃখী মিনতি শেষ মাইনে নিল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার সঙ্গে !
আজ মনে পড়ছে, মেয়েটা কে বড় বেশী করে! আট বছর আগে মিনতি এ বাড়ী তে ছিল দশ বছর ধরে। প্রতি বছর পঁচিশে বৈশাখের দিন সে কী উৎসাহ ওর। সকাল সকাল এসে পড়ত, উনি দরজা খুলে বলতেন, "তুই এত সকালে কেন এসেছিস?" " বারে, আজ পঁচিশে বৈশাখ না ? তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করব, আর টিভির সব পোগ্রাম দেখব !" মিনতির অক্ষর জ্ঞান ছিলনা । সীতা'দির চেষ্টায় একটু পড়তে শিখেছিল, আর গান শুনতে, এমনকি গাইতে ও খুব ভালবাসত! কাজের শেষে বসে বসে গুনগুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইত ! ' আগুনের পরশমণি, ছোয়াঁও প্রাণে, এ জীবন পূণ্য করো, পূণ্য করো! '
-----------------------------------------
কাকলী দেব ।
কলকাতা।