Click the image to explore all Offers

ধারাবাহিক উপন্যাস।। সোনালী দিনের উপাখ্যান(পর্ব ২১ )।। দেবব্রত ঘোষ মলয়

পূর্বকথন

বাবার বই প্রকাশের খবরে আনন্দে চোখ ভিজে যায় ঝিনটির। রাজকুমার আর তার বন্ধুর চেষ্টায় সম্ভব হয় এ কাজ। এর পর কেটে যায় দু বছর ...

পর্ব ২১

 একতলার অফিস ঘরের পূর্ব দিকের জানালাটা খুব বড়। সেখান দিয়ে শরতের সোনা রোদ সাবেকি মেহগনি কাঠের বড় টেবিলটায় এসে পড়েছে। অফিসের দেওয়ালে বড় বাঁধানো ছবিতে অখিলবাবু। পুটির মা একটা চেয়ারে উঠে একটা রজনীগন্ধার মালা নিয়ে অখিলবাবুর ছবিতে লাগাচ্ছে। মানদা ভিজে চোখে সে দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে - মানুষটা চলে গেল সেও দেখতে দেখতে দু বছর হয়ে গেল। এই অফিস এই সাতসকালেই গমগম করত। 
মালা লাগিয়ে পুঁটির মা নেমে এসেছে। সে দরজার কাছ থেকে খবর কাগজ দুটো নিয়ে এসে মানদার হাতে দেয়। বলে - আমি চা করে আনি বৌদিমনি। যে যাবার সে গেছে, তুমি শুধুমুধু মন খারাপ করো না এই সাতসকালে।
এ সময়েই দোতলা থেকে  নেমে আসে মনন। মানদার পাশের চেয়ারে বসে সে শুধায় - রোজ সকালে তুমি বাবার অফিসে এসে বসে থাকো কেন মা? 
কেমন এক ঘোরের মধ্যেই মানদা বলে - জানিস বাবু, এখানে চা খাবার সময়ে রোজ তোর বাবা এসে বসে ওই চেয়ারটায়। আর আমার চা খাওয়া দেখে আর মিটিমিটি হাসে।
মনের গা ছম ছম করে। তবু সে বলে - এ তোমার মনের ভুল মা, হ্যালুসিনেশন। কেউ চলে গেলে
সে আর ফিরে আসে না।
ঘটনাটার সূত্রপাত দু বছর আগে। বাবার শ্রাদ্ধ শান্তি মিটে যাবার দিন পনেরো পর। মনন তখন মামারবাড়ি। সে দিনটা ছিল শনিবার। ভোর রাত থেকে ঝড় আর বৃষ্টি  তুমুল। সঙ্গে মেঘের ডাক। হঠাৎই কড় কড় করে একটা তীব্র বাজের শব্দ আর আলোর ঝলকানিতে ঘুম ভেঙে যায় মানদার।  সে রোজকার মতোই ঘুমিয়ে ছিল বড় দালানে। উঠে বসে দু হাতে চোখ রগড়ায় সে। আর তখনই দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে মানদা কি রকম ঘোরের মধ্যে নেমে যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে। পুটির মাও অনুসরণ করে তাকে। দেখে মানদা একতলায় গিয়ে অফিস ঘরের দরজা দিয়ে ভিতরে যায়। তারপর অখিলবাবুর ছবির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে - কি গো চা খাবে তো। তখন সকাল ছয়টা। তারপর মানদার দিকে চেয়ে চায়ের হুকুম। সেই থেকে এটাই নিয়ম হয়ে গেল। কত বুঝিয়েছে সবাই, মানদা এই একটা ব্যাপারে অনমনীয়। সে রোজ সকালে এই অফিসে পেপার পড়তে পড়তে চা খায় অখিলবাবুর সঙ্গে।
ক্রমশ:

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.