অলৌকিক রাতের কথা
অলোক দাস
প্রসেনজিৎ প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। চাকরি সূত্রে সে কলকাতায় থাকে। তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। চাকরি সূত্রে তাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, তাই সে কলকাতায় নিজস্ব কোনো বাড়ি রাখেনি। সে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকে। বিবাহ করেনি, নিজের বলতে মা বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকে। সে মাসে একবার গ্রামের বাড়িতে যায়।
প্রসেনজিৎ এর পুরো নাম প্রসেনজিৎ রায়। শরীরের গঠন দেখে সুশ্রী, সুপুরুষ বলেই মনে হয়। লম্বা, ফর্সা, ছিপছিপে গঠন হলেও তাকে রোগা ঠিক বলা চলে না; যাকে একপ্রকার সুদর্শন পুরুষ বলে। বয়স আন্দাজ ছাব্বিশ-সাতাশ হবে। সে অফিসের এক বড়ো পদে চাকরি করে, অর্থাৎ বড়ো অফিসার। অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাকে সামলাতে হয়।
কোম্পানির কাজে একবার প্রসেনজিৎকে পাটনা যেতে হবে। ম্যানেজার প্রসেনজিৎকে ডেকে পাটনা যাওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিলেন। প্রসেনজিৎ অফিস থেকে বাড়ি ফিরে পাটনা যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে; তখন তার পাটনাই থাকা এক বন্ধুর কথা মনে পরল। তার বন্ধুর নাম অরিত্র সিং। প্রসেনজিৎ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ.সি করতো তখন অরিত্র আর সে একই হোস্টেলে থাকতো। তারা দুবছর একসাথে থেকেছে, তখন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। অরিত্র অবশ্য তখন প্রসেনজিৎকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিল; কিন্তু প্রসেনজিতের ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি।
প্রসেনজিৎ শুয়ে থেকে এতক্ষণ এসব কথাই ভাবছিল। এবার সে উঠে টেবিল থেকে মোবাইলটা নিল, আর অরিত্রের ফোন নম্বরটা খুঁজতে লাগল। কিন্তু মোবাইলে তা পেল না। অনেকদিন অরিত্রের সাথে কথা বলা হয়নি; তারপর এখন তার নতুন মোবাইল সবার ফোন নম্বর নেই। তাই সে আলমারি থেকে তার পুরানো ডায়েরিটা বের করলো। ডায়েরির দুই-তিনটা পাতা উল্টেই সে অরিত্রের ফোন নম্বরটা পেল।
প্রসেনজিৎ অরিত্রের নম্বরে ফোন করলো। উল্টো দিক থেকে প্রশ্ন এলো, "হ্যালো, কে বলছেন?"
--"কে অরিত্র?"
--"হ্যাঁ বলছি, কিন্তু আপনি কে বলছেন?"
--"চিনতে পারছিস না, আমি প্রসেনজিৎ রে।"
বেশ কয়েক বছর পর তাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। তাই প্রসেনজিৎকে চিনতে অরিত্রের প্রথমে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। পরে মনে হলো এই গলার স্বর তার খুব চেনা।
অরিত্র আবেগপ্রবণ ভাবে বলল, "কেমন আছিস ভাই? তোর সাথে কতদিন কথা বলা হয়নি, প্রায় কয়েক বছর হলো।"
প্রসেনজিৎও আবেগের স্বরে বলল, "আমি খুব ভালো আছি রে। তুই কেমন আছিস বল? কি করিস এখন?"
--"আমি এই এখানে একটা কারখানায় কাজ করি। তুই কি করিস এখন?" অরিত্র ইতস্তত হয়ে বলল।
--"আমি কলকাতায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করছি। কাল আমি কোম্পানির কাজে তোদের ওখানে যাব। পরশু একটা মিটিং আছে।
-- "তুই পাটনা আসবি! তাহলে তো খুব ভালো হয়। তোর সাথে দেখা হয়ে যাবে। অনেক দিন তোর সাথে দেখা হয়নি।" অরিত্র আবেগপ্রবণ হয়ে বলল।
--"আমিও সেটাই ভাবছিলাম। তাই তোকে ফোন করলাম।" প্রসেনজিৎও আবেগের স্বরে বলল।
-- "খুব ভালো করেছিস। তা কাল তুই কখন পাটনাই পৌঁছাবি?"
-- "বিকাল চারটা নাগাদ স্টেশনে পৌঁছে যাব। স্টেশন থেকে তোর বাড়ি কত দূর?"
-- "বেশি দূর নয় কাছেই, তোকে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি স্টেশনে তোকে নিতে যাব।"
-- "আজ তাহলে রাখলাম, কাল চারটেই স্টেশনে দেখা হবে।"
-- "হ্যাঁ, ঠিক আছে রাখ।"
ফোন রেখে প্রসেনজিৎ ব্যাগপত্র গোছাতে লাগল। কাল ভোর চারটের সময় হাওড়া থেকে তার ট্রেন। তাই খুব তাড়াতাড়ি আজ তাকে ঘুমিয়ে পরতে হবে।
অরিত্র বন্ধুকে নিতে চারটের অনেক আগেই স্টেশনে পৌঁছে গেছে। ঠিক চারটের সময় ট্রেন এসে পাটনা স্টেশনে থামল। প্রসেনজিৎ ব্যাগপত্র নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে দেখলো অরিত্র দাঁড়িয়ে। সে ছুটে গিয়ে অরিত্র কে জড়িয়ে ধরল। অরিত্রও প্রসন্ন মুখে প্রসেনজিৎকে আলিঙ্গন করল। অরিত্র মোটর বাইক নিয়ে এসেছিল। বেশি কথা না বলে প্রসেনজিৎ অরিত্রর বাইকের পিছনে বসল।
প্রসেনজিৎ জিজ্ঞাসা করল, "এখান থেকে তোর বাড়ি যেতে কতক্ষণ লাগবে?"
--" বেশিক্ষণ নয়, এই মিনিট কুড়িকের রাস্তা।"
কুড়ি মিনিটের আগেই তারা বাড়িতে পৌঁছে গেল। সারা সন্ধ্যেটা তারা দুজনে গল্প করে কাটিয়ে দিল। রাত সাড়ে নটা যখন বাজলো অরিত্রর মা দুজনকে খেতে ডাকলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে প্রায় দশটা বেজে গেল। খাওয়া-দাওয়ার পর তারা প্রায় আরও ঘন্টাখানেক গল্প করল।
এগারোটা যখন বাজে তখন অরিত্র বলল, "অনেক রাত হয়ে গেলো, এবারে তুই ঘুমিয়ে পর, তোর কাল মিটিং আছে তো।"
-- "হ্যাঁ, কাল দশটা থেকে মিটিং আছে। এখন ঘুমিয়ে পড়লেই ভালো হয়।"
-- "আমার ঘরটায় দুজনের ঘুমাতে অসুবিধা হবে। আর একটা ঘর ফাঁকা আছে তুই ওটাই শুয়ে পর।"
-- "ঠিক আছে।"
অরিত্রদের বাড়িতে মোট তিনটা কক্ষ। একটিতে তার বাবা-মা থাকে, একটিতে অরিত্র নিজে থাকে, আর একটা ফাঁকাই পড়ে আছে। অরিত্র প্রসেনজিৎকে সেই ফাঁকা ঘরটা দেখিয়ে দিল। প্রসেনজিৎ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো। ঘরে আলো জ্বলছিল, সে দেখল ঘরটি বেশ সাজানো গোছানো। সকালে উঠতে হবে, তাই প্রসেনজিৎ আলো নিভিয়ে ঘুমাবার চেষ্টা করলো। খুব ক্লান্ত থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়ল।
মাঝরাতে হঠাৎ প্রসেনজিতের ঘুম ভেঙে গেল। তার মনে হতে লাগল সে ছাড়া এই কক্ষে যেন অন্য একজন আছে। তার গায়ের গন্ধ যেন সারা ঘর নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সেই গন্ধ প্রসেনজিৎও অনুভব করতে পারছে। যেন কোনো এক ফুলের গন্ধ; কিন্তু কোন ফুলের গন্ধ সেটা সে বুঝতে পারছে না। অথচ বাড়ির আশেপাশে কোন ফুলের গাছ সে দেখেনি। সে অনুভব করতে লাগল তার পাশে কেউ যেন শুয়ে ছিল। তাকে যেন আপাদমস্তক কেউ প্রদক্ষিণ করছিল। তার নিঃশ্বাস প্রসেনজিতের শরীরে লাগছিল। প্রসেনজিৎ রীতিমতো ভয় খেয়ে উঠে বসলো। খাট থেকে নেমে প্রসেনজিৎ আলোটা জ্বালালো। সে ঘরের চারিপাশ ভালো করে প্রদক্ষিণ করতে লাগল; কিন্তু ঘরের মধ্যে সে কাউকে দেখতে পেলো না। ঘরের চারিদিকে আসবাবপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। আর দেওয়ালে একটি মেয়ের ছবি; মেয়েটি বেশ সুন্দরী ও রুপবতী। সে ছবিটা ভালো করে দেখতে দেখতে খাটে উঠলো। তখনও তার সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। ভয়ে তার শরীর কাঁপছে। তার হৃদস্পন্দন সে নিজের কানে শুনতে পাচ্ছে। সে আলোটা না নিভিয়েই চুপচাপ চোখ বুজে শুয়ে রইল; কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ তার ঘুম এলো না। পরে কখন যে সে ঘুমিয়ে পরেছিল তা বুঝতে পারেনি।
ঠিক ছটার সময় অরিত্র প্রসেনজিৎকে ডাকল। প্রসেনজিৎ দরজা খুলে দেখল অরিত্র চা নিয়ে দাঁড়িয়ে। সারারাত ঘুম না হওয়াই প্রসেনজিৎ ভোরের দিকে গভীর ভাবে ঘুমাচ্ছিল। তাই ঘুম থেকে উঠতে সে একটু বিরক্ত বোধ হল। সে একবার ভাবলো রাতের সমস্ত ঘটনা অরিত্রকে বলবে; কিন্তু কি যেন ভেবে আর বলল না।
চা খেতে খেতে প্রসেনজিৎ দেওয়ালের ছবিটার দিকে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, "ওই ছবিটা কার রে?"
-- "ওটা আমার বোন নীলার ছবি।"
-- "তোর বোন নীলা! হ্যাঁ মনে পড়েছে, তুই একবার বলেছিলি, তোর বোন আছে। তা ও এখন কোথায়, ওকে দেখলাম না তো?"
-- "ও এখন আর নেই রে; মাস ছয়েক আগে মারা গেছে।" অরিত্র বিষন্ন ভাবে বলল।
-- "সে কি, কিন্তু কিভাবে মারা গেল?" প্রসেনজিৎ উৎকন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
-- "নীলা মারা যাওয়ার আগে প্রায় এক মাস কেমন মনমরা হয়ে থাকতো। কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিত না। শুধু বলতো কিছু হয়নি।"
-- "তারপর?"
-- "তারপর আর কি, একদিন রাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করল; এই ঘরেতেই। এই ঘরটা ওরই ছিল। আমরা সকালে উঠে দেখি।"
-- "কি জন্য মারা গেল জানতে পারিসনি?" প্রসেনজিৎ নীলার ছবিটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
-- "সে রকম কিছু জানতে পারিনি। তবে নীলা যখন মারাই গেল তখন ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। বেঁচে থাকলে হয়তো কি হয়েছিল দেখতাম।"
গল্প করতে করতে ঘড়িতে প্রায় আটটা বেজে গেছে। কিছুক্ষন দুজনে নিস্তব্ধ থাকার পর, অরিত্র বলল, "তুই স্নান খাওয়া সেরে নে, তোর তো দশটা থেকে মিটিং আছে।"
-- "হ্যাঁ, এই যাচ্ছি। আর তোকে একটা কথা বলা হয়নি। আজ রাতের ট্রেনেই আমি কলকাতা ফিরে যাব। পরশু অফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।"
-- "আজই চলে যাবি? আর একদিন থেকে যা।" অরিত্র অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
-- "না রে থাকা হবে না। পরশু অফিসে যেতেই হবে। যদি আবার আসি তো দু-তিনদিন থাকবো।"
-- "ঠিক আছে, তোর কাজ থাকলে যেতে তো হবেই। এখন তো তুই মিটিংটা সেরে আয়।"
-- " হ্যাঁ"।" প্রসেনজিৎ স্নান করতে গেল।
বিকালে মিটিং থেকে প্রসেনজিৎ ফিরে এলে দুই বন্ধু মিলে বেড়াতে গেল। চারিদিকে ঘুরে তারা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরল। রাত নটায় প্রসেনজিতের ট্রেন। তাই সে ফিরেই সবকিছু গুছিয়ে নিল। খাওয়া-দাওয়া সেরে অরিত্র প্রসেনজিৎকে ট্রেনে তুলে দিয়ে এলো।
আগের রাতে প্রসেনজিতের ভালো ঘুম হয়নি। তাই ট্রেনের মধ্যে সে শুতেই ঘুমিয়ে গেল। পরেরদিন নটার সময় কলকাতায় পৌঁছালো। অফিস থেকে ফিরে সে সারাক্ষণ নীলার কথাই চিন্তা করতে লাগল। কোনভাবেই সে নীলার চিন্তা মাথা থেকে সরাতে পারল না। সেদিন মাঝরাতে আবার প্রসেনজিতের সঙ্গে আগের রাতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
____________
অলোক দাস
গ্রাম- খাটগ্রাম
ডাকঘর- সন্তোষপুর
থানা- গোঘাট
হুগলি, ৭১২৬০২
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোঃ- ৮৩৪৮৯২৯৬৩০
Apply for SBI's Simply Click Credit Card and Earn upto 10x SBI Rewards on all online purchases and also on all offline purchases! You can get 5%-20% instant discount on Flipkart, Amazon etc. online sites in different times. You can purchase things with no cost EMI using this card. It takes only 5 mins to apply. CLICK HERE TO KNOW MORE 0 |
SAMSUNG-এর নিজস্ব সাইট থেকে SAMSUNG-এর মোবাইল কিনুন। পাবেন 50% পর্যন্ত ছাড়। সঙ্গে ব্যাঙ্কের ছাড়। নো কস্ট ইএমআই। বিশদ জানতে আগ্রহীরা এখানে ক্লিক করুন SAMSUNG-এর মোবাইল ছাড়াও হেডফোন, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি সব কিছুতে পাবেন অতিরিক্ত ছাড়। |
Get Medicine delivered to your doorstep!Also save 30% Off on First Medicine Order. 18% Off (up to Rs 2,000) + 12% cashback (up to Rs 200) Code - CK30 CLICK HERE & Shop Now! |
Amazing Discounts on Addidas Website! Get Upto 50% Off.
|