সামনে যখন ভয়ঙ্করী
সুমন কলেজে পড়ে; সাহসী যুবক। সে সামনে থেকে সবকিছু পরিচালনা করতে ভালোবাসে। তার বন্ধুরা বলে, সুমনের নাকি বুকের পাটা আছে; চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস আছে যে কোন বিষয়েই। সেজন্য সুমনের কলেজের সহপাঠীরা তাকে খুব পছন্দ করে। আর যে কোনো বিষয়ে অসুবিধা হলে তারা সুমনের কাছেই সাহায্য চাই। সুমনও যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে। তার এই বুকের পাটা কেবলমাত্র একজনকে দেখলেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সে হল প্রিয়াঙ্কা; সুমনের সহপাঠী। তার সহপাঠীরা সবাই জানে প্রিয়াঙ্কার প্রতি সুমনের দুর্বলতার কথা।
আজ সুমনদের কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সে সকাল থেকেই বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন কাজে আনন্দে মেতে আছে। অনুষ্ঠান শুরু হতে আর কিছুক্ষণ বাকি; হঠাৎ সুমন লক্ষ্য করল কেউ যেন পিছন থেকে তাকে ডাকছে। সুমন ঘুরে তার দিকে তাকাতেই তার সমস্ত আনন্দ যেন এক নিমেষেই ধ্বংস হয়ে গেল। তাকে ডাকছিল তার এক বান্ধবী অদিতি; কিন্তু তার আনন্দ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণ প্রিয়াঙ্কা। সে অদিতির সাথেই ছিল।
প্রিয়াঙ্কার প্রতি সুমনের অসম্ভব এক টান আছে। সেটা সুমন বুঝতে পারে প্রিয়াঙ্কা যখন তার সামনে থাকে না। এই নিয়ে বন্ধুদের সাথে সে আলোচনাও করে। বন্ধুরা তাকে বলে এটা প্রিয়াঙ্কার প্রতি তোর প্রেম; কিন্তু সুমন কিছুতেই তা মানতে চাই না। সে প্রিয়াঙ্কা সাথে অন্যান্য বান্ধবীদের মতোনই কথা বলতে চাই; কিন্তু প্রিয়াঙ্কা সামনে থাকলে তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয় না।
যেমন আজ অদিতি ডাকাতে সুমন তার কাছে গেল; কিন্তু প্রিয়াঙ্কা মুখের দিকে কোন ভাবেই তাকাতে পারলো না। প্রিয়াঙ্কার সাথে আজ কথা বলার, বন্ধুত্ব করার ইচ্ছা থাকলেও সে কি বলবে ভেবে পেল না। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে জগতের হাজারো লজ্জা তার মুখে এসে হাজির হয়েছে।
অদিতি সুমনকে বলল, "কি রে বেশ তো আনন্দ করছিস। আমাদেরকে দেখেও দেখতেই পাচ্ছিস না।"
-- "না রে দেখিনি! কাজ করছিলাম তো খেয়াল করিনি।"
-- "আমাদেরকেও একটু সময় দে!"
-- "হ্যাঁ এখানেই আছি তো।"
-- "অনুষ্ঠান কখন আরম্ভ হবে রে?"
-- "এই তো কিছুক্ষণের মধ্যেই আরম্ভ হবে।"
-- "তুই প্রিয়াঙ্কাকে দেখে এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন বলতো? মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছিস।"
-- "কই লজ্জা পাচ্ছি?" মাথা তুলে বলল।
-- "এই তো মাথা নিচু করে কথা বলছিলি। তুই তো অন্য সময় আমার সাথে এতো সংযত ভাবে কথা বলিস না।"
-- "তাহলে কি করে কথা বলি?" আড়চোখে একবার প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে।
-- "সে কথা এখন থাক। এখন তো বস, গল্প করি। খুব তো বলিস প্রিয়াঙ্কার সাথে কথা বলিয়ে দে; ওর সাথে বন্ধুত্ব করা হয়নি ভালো করে। এখন তো প্রিয়াঙ্কা আছে, গল্প কর।" মুচকি হেসে প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে বলল।
-- "এখন আমার অনেক কাজ আছে। গল্প করার সময় নাই রে!"
-- "সে তো তোর সবসময়ই কাজ থাকে; আমাদের জন্য একটু সময় বার কর।"
-- "এখন সময় হবে না রে, কিছুক্ষণ পরে আসছি।"
প্রিয়াঙ্কার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে সুমন চলে যাচ্ছিল, হঠাৎ তাদের আর একজন বান্ধবী শিল্পা, তাদের কাছে এসে সুমনকে বলল, "কিরে কোথায় যাচ্ছিস?"
-- "এই একটু কাজ আছে; কাজটা সেরেই আসছি।"
-- "বিরাট তো কাজ দেখাচ্ছিস। তুই এখানে থাক, তোর সাথে আমার একটা দরকার আছে। ওখানে অনেক ছেলে আছে, ওরা সব কাজ করে নেবে।"
-- "আমি না গেলে হবে না রে। ওরা সব কাজ পারবে না।"
-- "আমার দরকারের থেকেও তোর কাজটা বড়ো হলো, না প্রিয়াঙ্কা আছে বলে চলে যাচ্ছিস। ওকে দেখে তোর কিসের এতো ভয় বলতো?"
-- "কি যা তা বলছিস! তোর কি দরকার বল?"
-- "না সে রকম কিছু দরকার নাই, ভীষণ খিদে পেয়ে গেছে; ক্যান্টিনে খাওয়াতে নিয়ে চল।" সুমনের কোনো উত্তর না পেয়ে, "কিরে কিছু বলছিস না যে, নিয়ে যাবি তো? না আজকেও আমার টাকাতেই খাবি?"
-- "হ্যাঁ হ্যাঁ ও নিয়ে যাবে; প্রিয়াঙ্কা যখন আছে ওকে নিয়ে যেতেই হবে।" অদিতি বলল।
-- "ঠিক আছে তোরা একটু অপেক্ষা কর, আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি।" সুমন প্রিয়াঙ্কার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চলে গেল।
_____________________________
অলোক দাস
গ্রাম- খাটগ্রাম
ডাকঘর- সন্তোষপুর
থানা- গোঘাট
হুগলি, ৭১২৬০২
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোঃ- ৮৩৪৮৯২৯৬৩০