ওমেন্স ডে
অঞ্জনা দেব রায়
জয়ী মন দিয়ে মোবাইলে মান্না দের গান শুনছিল। কানে হেডফোনটা জয় এসে খুলে দিয়ে বলল
দিদি ভাই একটা সিরিয়াস কথা আছে । জয়ী বেশ রেগে গেল ।
এগারোশো স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটে দুই ভাই-বোনের আলাদা আলাদা ঘর ছিল । তবুও ওরা একে অন্যের ঘরে ঢুকে গল্প ও যে কোন কথা শেয়ার করত । আর সবচেয়ে বড় ঘরটা মা ও বাবার ছিল ।মজার ব্যাপার হলো মা ও বাবা বাড়িতে মাঝে মধ্যেই ঝগড়া আর কথা কাটাকাটি করত। ঝগড়া করার জন্য কিছু না কিছু ইস্যু তৈরি করে নিত । মা ভালো কাজ করলেও বাবা তার মধ্যে খুঁত বের করে ঝগড়া শুরু করে দেয়। এই মুহূর্তে চিৎকার করে বাবা ও মা যে সমস্যাটা নিয়ে ঝগড়া করছে সেটা হল মা-বাবাকে না জানিয়ে মৈত্রী সংঘ ক্লাবে চারশো টাকার বদলে ছশো টাকা পুজোর জন্য চাঁদা দিয়ে দিয়েছে । ঝগরা শুরু হয় এরকম যেকোন একটা ইস্যু নিয়ে তারপর সেটা চলে যায় শিক্ষা ,বংশ নিয়ে একশটা সংলাপে । এই বিরক্তিকর ঝগড়া না শোনার জন্য জয়ী হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে থাকে।
আরে শোন না দিদিভাই, এক নিশ্বাসে জয় বলল বাবা একটা ঝলমলে কাগজে প্যাক করে কি একটা গিফট এনে লুকিয়ে রাখল কাউকে দেখাল না। বাইরে কাউকে দেবে না তো? মনে হলো সিক্রেট গিফট।
জয়ী' জয়ের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে উঠলো । বাবা-মায়ের ঝগড়া তো চলছেই । বাবা কিছুতেই মানতে চাইছে না মূল্যবৃদ্ধির বাজারে মা কি করে পুজোর চাঁদা বেশি করে দিয়েছে । মা তখন কিছুক্ষণ চুপ করে একই কথা বলে চলে , সংসার টা তো আমাকে দেখতে হয় এবং বাড়ির সব কাজ আমাকে করতে হয় কেউ তো কুটো নারে না ।
জয়ী জয়কে বলল ওই হারকিপটে লোকটা লুকিয়ে গিফট কিনে কাউকে দেবে , ভাগ এখান থেকে ।
জয় বলল আমার কাছে প্রমান আছে ,উত্তেজিত হয়ে মোবাইলটা এনে দিদি ভাইয়ের সামনে ধরল ।জয়ী মোবাইলটা নিয়ে দেখল মোবাইলের স্ক্রিনে লেখা আছে "নববর্ষের দিন আমি তোমার জন্য সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম ,তোমার পরনে লাল শাড়ি কপালে টিপ, তুমি আমার দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে আর আমি তোমার জন্য গোলাপ ফুল নিয়ে আসতাম"।
আর বেশি না পড়ে জয়ী ফোনটা জয় কে দিয়ে দিলো আর বলল এটা নিয়ে তুই আমাকে বলতে এসেছিস? জয় বলল, আগে আমার সব কথা শোন ,আমি বাবার প্যাডে এই লেখাটা দেখেছি,ফোনে আমি ছবি তুলে নিয়ে এসেছি তোকে দেখাবো বলে।
বাবার মতো কিপটে কাঠখোট্টা ও নীরস লোক এরকম লিখেছে, ভগবান এসে বললেও বিশ্বাস করব না। বাবা তো রাত দিন প্যাডে শুধু হিসেব করে কোথায় কত খরচ হল। জয়ী বলল জয় কে তুই কি বাবার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করছিস ।
জয় বলল না না আমি একটা পেপার নিতে গিয়ে দেখি প্যাডের ওপর মোবাইলটা রেখে বাবা ছাদে গিয়েছে । হঠাৎ প্যাডের লেখাটা চোখে পড়লো তাই ফটো তুলে তোকে এনে দেখালাম । জয়ী বলল হয়তো কোন ইনস্টাগ্রাম থেকে কপি করে রেখেছে।
খবর দেখাও সিরিয়াল দেখা নিয়ে প্রদীপ ও রিংকুর মধ্যে ঝগড়া চলছে ।
বাড়িতে শান্তি বলে আর কিছু থাকবে না । জয় নিজের মোবাইলটা জয়ীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল দেখ বাবার লগইন দিয়ে ঢুকেছি অনলাইন শপিং এর সাইটে। জয় বলল, মাকে এই ব্যাপারটা জানানো উচিত হবে ?
জয়ী বলল তুই কি বাড়িতে ভূমিকম্প বাধাতে চাইছিস ?
পরদিন প্রদীপ অফিস থেকে সন্ধে ছটায় বাড়ি এসে গেল। সেই দেখে রিঙ্কু বললো কি ব্যাপর রাত নটায় আসার লোক সন্ধ্যেবেলায় চলে এসেছো ? সব ঠিক আছে তো? শরীর ঠিক আছে তো ?প্রদীপ কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর সব বলছি । কিছুক্ষণ পরে প্রদীপ গিফট প্যাকেট নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে রিঙ্কু ও জয়ী ও জয়কে ডাকলো ।
সবাই এসে বলল কি হয়েছে ? প্রদীপ তখন বলল আজ ৮ ই মার্চ মনে নেই তোমাদের, এই ওমেন্স ডে উপলক্ষে রিঙ্কু ও জয়ীর জন্য এই গিফট আর সবাই চলো বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আজ আমরা ওমেন্স ডে উপলক্ষে বাইরে হোটেলে ডিনার করব । জয়ী তখন জয় কে বলল , বুঝলি এবার অনলাইন শপিং ওমেন্স ডের জন্য হয়েছে । জয় তখন মাথা নিচু করে হাসতে লাগল, বলল ভুল হয়ে গেছে দিদিভাই। তারপর সবাই মিলে চলল হোটেলে ডিনার করতে ।
------------
নাম - অঞ্জনা দেব রায়
ফোন নম্বর - ৯৪৩২১৬০১০৯/৯৩৩০৬১৭১২৮
ঠিকানা - ৫৫৩, পি মজুমদার রোড, কলকাতা - ৭৮
তারিখ - ২৭/১০/২০২০