রেল লাইনের পাশে একচালা বস্তি। সেই বস্তিতে এবার ছোট করে কালী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ছোট ছোট চুনি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে বস্তিকে। সেই বস্তির একচালা ঘরে বাস করে মোহন ও তার পরিবার। বউ কমলা মেয়ে চারু ও ছেলে অজিতকে নিয়ে কোনো রকমের সংসার চলে তার। মেয়ে চারুর দুচোখে স্বপ্ন সে একদিন ইস্কুলের দিদিমণি হবে। বস্তির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াবে। মোহন রিকশা চালিয়ে অতি কষ্টে সংসার চালায়।
আজ সকালে তারা মাটির দেওয়ায় চারজন পান্তাভাত খেতে বসেছে।
এমন সময় অজিত বায়না ধরে, মা লুচি খাব। ওমনি মায়ের চোখে জল, ঘরে দুচারটে চাল ডালের জোগাড় নেই আর ছেলে বলে নুচি খাবে! সে আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলে - সে হবে কন বাবা অন্য একদিন। বাবার মুখ কালো হয়ে আসে। সে কোন রকমে হাত মুখ ধুয়ে রেলগেট পার হয়ে ময়দা ও তেল কিনতে গেল মুদির দোকানে।
মুদিওয়ালা তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করল - কি রা মোহন কি নিবি গা?
মোহন তার ছেঁড় জামার পকেট থেকে কিছু খুচরো পয়সা বের করে বলে - ঐতো কিলো খানেক ময়দা আর তেল দাও দেখিনি। ছেলেটা নুচির জন্য খুব বায়না ধরেছে।
মুদিওয়ালা মুচকি হেসে বলে -ও বাকি দিতে পারবনি কিন্তু,. টাকা এনেছিস তো?
মোহন মাথা নিচু করে মুখ কালো করে বলে - তা কত দিতি হবে?
মুদিওয়ালা হেসে বলে - এই ধর শো- দুয়েক তো লাগবে।
-একেবারে দুশো? কম হবেনি?
-তা গুষ্টি শুদ্ধু নুচি খাবে, সে কি এমনি এমনি হবে বাপ?
মোহনের চক্ষু শিকেয় ওঠে। সে কিছু না নিয়ে মাথা নিচু করে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে এসে মাটির দেওয়ায় বাঁশের খুঁটির পাশে বসে বিড়িতে টান দিতে থাকে। এমন সময় চারু জগে জল নিয়ে এসে বাবার পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলে - বাবা আমি যখন ইস্কুলের দিদিমণি হবো, তখন আর আমাদের অভাব হবেনে। তুমি দেখ, ভাই কে তখন অনেক লুচি খাওয়াবে...
মোহনের চোখ জলে ভরে আসে। তার মাথায় হাত দিয়ে বলে - তাই হোক মা, তুমি জেবনে অনেক বড় হও।
কমলা হাক ছাড়ে - কইগো খেতে এসো, বেলা যে উল্টে গেল। মোহন চ্যান করে তাদের মাটির দাওয়ায় খেতে বসে। ছেলে অজিতের বায়না তখনো থামে না। সে যে বড় ছেলে মানুষ। কেঁদে কেঁদে ভাঙা তক্তপোশের ধারে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
মোহন রেগে চোখ লাল করে বলে - আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। পোলার বায়না দেখলি গা পিত্তি জ্বলে যায়। হারামির বাচ্ছা থাক শুয়ে থাক, খেতি হবে নে। তারপর ওরা তিনজন একসাথে খেয়ে নেয়। এরপর মোহন তার রিক্সাটা নিয়ে বের হয়ে পড়লে, অজিত কে তুলে খাইয়ে মা ও মেয়ে ঘরে শুয়ে পড়ে।
চারুর দুচোখ ভরা স্বপ্ন, সে এখন বাজারের বড় ইস্কুলের দিদিমণি, শাড়ি পড়ে ইস্কুলের বাচ্চাদের পড়াচ্ছে। তার চাকরির টাকায় সুন্দর একটা বাড়ি তৈরি করেছে সে। বাবা, মা ও ভাইকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছে। বস্তির ওই ছোট্ট কালী পূজোটা এখন অনেক বড় করে হয়েছে। চারিদিকে আলোর রোশনাই ও আতশবাজির রং। প্রদীপের শিখায় ঝলমল করছে গোটা বস্তি। মা কালী তার দেওয়া শাড়ি পরে যেন হাসছে।
মা ডাকছে- সন্ধ্যে হয়েছে, চারু ওঠ।
ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে থাকে চারু। তার সুন্দর স্বপ্নটা যেন আবার তমসার আঁধারে ঢেকে গেল। তাদের বস্তির কোল ছুঁয়ে দিনান্তের অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ল।
------------
ঋণ স্বীকার, ছবি- ইন্টারনেট
Ankita Paul
Village - Kalikapur
P. O + P. S _ Bhangar
District _ South 24 Parganas
Pin - 743502