প্রদীপ দে
চাণক্য শ্লোকঃ
আগচ্ছতি যদা - লক্ষ্মীর্নারিকেলফলাম্বুবৎ।
নির্গচ্ছতি যদা লক্ষ্মীর্গজভুক্তকপিথুবৎ।।
...............
লক্ষ্মী আসেন যখন, তখন নারিকেলের মধ্যে জল জন্মায়। আবার যখন চলে যান তখন কীটের দ্বারা ভক্ষণ হয়ে মিলিয়ে যায়।
লক্ষ্মী চঞ্চলা। তাই জীবনে উথ্থান আর পতন দুইই আসে। আনন্দ বেশী করা যেমন উচিৎ নয় ঠিক তেমনই দুঃখে অতিরিক্ত কাতর হওয়ায় উচিৎ নয়।
এবিষয়ে আমার দেখা ঘটনা -- জীবন্ত ছবিঃ
অতিশয় এক কৃপণ ব্যক্তি রমনী রঞ্জনের ভাগ্য বদলে যায় তার সহায়সম্বলহীনা এক মৃত পথযাত্রীর দান দৌলতে। মহিলা নিজে কৃপণ ছিলেন। ভাবলেন ভালোই হয়েছে উপযুক্ত ব্যক্তির হাতেই অর্থ , সম্পত্তি রইলো - নষ্ট হবার ভয় নেই। নিজে হাতে তিনি কোনোদিন কাউকে একআনাও দেননি। রমনী রঞ্জন ও তাই।
প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে কেমন যেন পাগলের মতো আচরন করতে শুরু করলো। আশে পাশে প্রচুর লোক সমাগম হতে থাকলো -সবাই কিছু কামাতে চাইলো।
নিজের ছেলেও লেখাপড়া ছেড়ে বাপের পয়সা গ্যাঁড়াতে লাগলো। বাবা বোকা, স্ত্রী পুত্রের হাত থেকে নিস্তার পেতে পারলো না। মায়ের উস্কানি, ছেলের বেহিসাবি মতলব, রমনী রঞ্জন বুঝেও অপারগ হলো।
শেষে নিজেও ফুর্তির আড্ডায় গেল। সবাই ওৎ পেতে বসেছিল। যে কোনোদিন কোনো খরচে যায়নি, সেও মত্তহাতি হয়ে উঠলো। স্ত্রীর সঙ্গে মতের মিল ছিল না, বুড়ো বয়সে বেশ্যালয়ের গিয়ে ঢুকলো বন্ধুদের সাথে। মদ, মেয়ে নিয়ে বাপ আর ছেলে দেদার হয়ে গেল নিজের মত করেই। স্ত্রী ফ্যাসন দুনিয়ায় গা ভাসালো। রমনী ভাবলো এতে আর কত খরচ হবে -- অনেকই তো আছে -- বরঞ্চ শেষবয়সে একটু আনন্দই করি। তাই সই -- আনন্দের বাঁধ ভেংগে পড়লো - এবার তো জলোচ্ছ্বাস হবেই!
মায়ের ফ্যসান দুনিয়ার এক কন্যেকে প্রেম করে বিয়ে করলো পুত্র। প্রচুর খরচে লোকসমাগমে বিয়ে হলো। বাড়ির ভিতরে আর বাইরে আমোদের বন্যা বয়ে গেল।
কন্যা রূপসা রূপে আর কাজের দৌলতে অনেক ক্ষমতাশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিল। স্ত্রী পুত্র ভাবলো ভালোই হয়েছে। অর্থ ক্ষমতা সবই করায়ত্ত হলো।
কন্যা কায়দা জানতো শ্বাশুড়ি- বরকে ছেড়ে শ্বশুরের গায়ে পড়া হয়ে পড়লো। মহিলার নেশা তখন রমনীর রঞ্জনের চোখে মুখে। রূপসা সুযোগ নিল। অন্তরঙ্গতা এমন পর্যায়ে পৌঁছুলো যে রূপসার অন্তর্বাস পর্যন্ত নিজে হাতে ধুয়ে দিতে লাগলো রমনী।
রমনী স্ত্রী পুত্রকে জব্দ করতে লুকিয়ে দলিল করে স্বেচ্ছায় সব রূপসার নামে করে দিল। ভাবলো এতে সকলেই বাঁচবে এবং কায়দায় তারই হাতে বাঁধা থাকবে রূপসা, কারণ বৌমা আসলে তারই।
মাস ছয়েক কেটে গেল আনন্দ ফুর্তিতেই। এরপর একদিন ভোরে সকলে ঘুম থেকে উঠে দেখলো বাড়ির সদর দরজা খোলা। --চোর এলো নাকি?
খোঁজখবর করে দেখা গেল রূপসা নেই আর নেই বাড়ির মূল্যবান অলংকার সহ সমস্ত নগদ টাকা পয়সা।
থানায় যাওয়ার আগেই থানা থেকে পুলিশ এসে অভিযোগ জানিয়ে, ছেলে অপূর্বকে এরেষ্ট করে নিয়ে গেল। অভিযোগ -- বৌ এর উপর অকথ্য অত্যাচারের। বেশ বড় অভিযোগ -সাজিয়ে গুছিয়ে
সংগে ডিভোর্সের এবং ক্ষতিপূরণের মামলার হুমকি। একদল লোক এসেও ভয় দেখিয়ে গেল। সব শুনে বন্ধু বান্ধব পাড়াপ্রতিবেশীরা বিপক্ষে চলে গেল।
রমনী রঞ্জনকে দেখা গেল ছাদে। আনন্দে মাতোয়ারা যেন সে! অনেক খুশি অনেক পাওয়া হয়ে গেছে, লোভ আজ তাকে তাড়া করে এখানে এনেছে। দিশেহারা এক কৃপণকে হো হো করে হাসতে দেখেছিল সবাই। হয়তো এই দুঃখ তাকে অনেক কাতর করে দিয়েছিল - যা সে কাউকেই বুঝতে দিতে চায় নি -- চেয়েছিল শুধু নিজের জন্য, একান্তই নিজের জন্য সকল সঞ্চিত করে রাখতে -- এটাও তার একপ্রকারের কৃপনতার অভিপ্রায়!
স্ত্রীর খবর কেউ জানে না। কিন্তু রমনীর ছাদ থেকে নিচে পড়ে থাকা মৃতদেহটা দেখে সবাই ভয়ে কুঁকড়ে গেছিলো।
________________
© প্রদীপ দে ®™…
বিরাটী আবাসন
নিমতা
কোলকাতা -৭০০০৪৯
মোবাইল - ৮০১৭২৬৭৬২৬