কাক
অনিন্দ্য পাল
খবরের কাগজের একঘেয়ে খবরগুলো পড়ে পড়ে বিরক্ত হয়ে এ পাতা, ও পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে পাত্র-পাত্রী চাই এর পাতায় ঠিক এই ছবিটাতে চোখ আটকে গেল দিব্যর। আর আটকাবে নাইবা কেন, ছবিটা যে "সুক" এর। হিসেব মতো সুকন্যার তো এতদিন বিয়ে করে মা হয়ে বাচ্চার স্কুলের সামনে ধর্ণা দেওয়ার কথা। "পাত্র চাই"য়ে তার বিজ্ঞাপন। কোন ঠিকানা দেওয়া নেই, শুধু মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে।
34 বছরের ঝকঝকে ব্যাচেলর দিব্য অর্থাৎ দিব্যদ্যুতি লাহিড়ী। মা নিয়ম করে ঘ্যান ঘ্যান করেন বিয়ের জন্য। অনেক সম্বন্ধ আসা যাওয়া চলছে। মা দু-একবার মেয়ে দেখতে যাবার জন্য চাপাচাপি করলেও দিব্য এখনো যায়নি। আবার এমনও হয়েছে মেয়ের বাড়ি থেকে দেখতে এসেছে কিন্তু দিব্য কোনো না কোনো অজুহাতে বাড়ি থাকেনি।
আসলে এই নির্দায় জীবনের প্রেমে পড়ে গেছে দিব্য। এই বিন্দাস লাইফ ছেড়ে এখনই ছাপোষা জীবনে যেতে চায়না। আর কয়েকটা বছর একটু মস্তি করে, এনজয় করে নিতে চায়।
মেয়েদের সঙ্গে দিব্য কখনো সহজ হতে পারেনি। একমাত্র "সুক"ই তার কলেজ-ইউনিভার্সিটির বান্ধবী। বরং উল্টোটা বলা ভালো সুকের অনেক বন্ধুর মধ্যে সেও একজন বন্ধু ছিল, 'ছিল' কারণ বন্ধুত্বটা সুকন্যার দিক থেকেই শুরু হয়েছিল, আবার শেষও হয়েছিল। ঠিক যখন থেকে সুকের জীবনে "কাক" এলো, দিব্যও তখন বিনিসুতোর জাল ছিঁড়ে ধপ করে বাস্তবের মাটিতে এসে পড়ল।
তবে দিব্য কখনও সুকের প্রেমিক হতে পারেনি। যদিও সুকন্যা কলেজ-ইউনিভার্সিটির পাঁচটা বছর তাকে রীতিমতো বগলদাবা করে ঘুরেছে। এমনকি "কাক"-এর সঙ্গে তার প্রেমের খুঁটিও ছিল সে।
বাড়িতে অশান্তি চরমে উঠলে দিব্যর হাতের উপর মাথা রেখে অনেক কেঁদেছে সুকন্যা। কাক মানে সায়নদার বাবা কোটিপতি, জমির দালাল। আর এখানেই সুখের বাবা-মার আপত্তি ছিল। দিব্যর সুককে সান্ত্বনা দেওয়ার কিছু ছিল না। সে ভিতরে ভিতরে পুড়তো, কিন্তু পোড়াতে পারতোনা।
আবার এমনও হয়েছে দিব্য ঘন্টার পর ঘন্টা কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, কখন সুক, কাকের সঙ্গে বন্ধ ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলবে, "চল দিব্য বাড়ি যাবো।" কাক ও তার সুককে ভরসা করে ছেড়ে দিত দিব্যর হাতে। নিজেকে তখন খোজা প্রহরী মনে হতো দিব্যর। সুকের গায়ের গন্ধে মিশে থাকত কাকের বিদেশী পারফিউমের আভাস। চোখ লাল হয়ে আসত দিব্যর।
--কি রে? চা টা খাবি তো! ও তো জল হয়ে গেল!
মা কখন এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করেনি দিব্য।
ঢকঢক করে চা টা খেয়ে কাপটা মায়ের হাতে দিলো। মা চলে গেলে দিব্য মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। সুকের মুখটা বিষন্ন লাগছে কি? নম্বরের সঙ্গে কলার ইমেজ এ সুকের ছবিটাও কাগজ থেকে সেভ করেছে।
দিব্যর হঠাৎ রাগ হল। রাগ হলো সুকের উপর। আবার একটু খুশিই হলো মনে, দিব্যর মনে হলো, সুকের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলে "বেশ হয়েছে! কাক উড়ে গেছে তো!"
দিব্যর খুব ইচ্ছা করল তখনই কাকের সুখের বাসা ভাঙ্গার গল্পটা জানতে।
রান্নাঘর থেকে মা তাড়া দিল। "দিব্য চানে যা। এরপর দেরী করবি আর তারপর বেরোবার সময় তাড়াহুড়ো করবি।"
দিব্য কি আর করে উঠে পড়ল ।
২
আজ সুকন্যার চৌত্রিশতম জন্মদিন। তার মোবাইলে কোন শুভেচ্ছাবার্তা আসেনি এখনো। এখন আর আসেও না। তবু নিজের জন্মদিনের তারিখটা তার মনে আছে। সুকন্যা এখন ডিভানের উপর বসে তাকিয়ে আছে তার ঘরের পশ্চিমের দেওয়ালে আটকানো ছবিটার দিকে। কনভোকেশনে আচার্যের হাত থেকে এম.এ সার্টিফিকেট নেওয়ার মুহূর্ত। সুকন্যা যখন স্টেজে, তখন কাক স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছে ।
আজকের কাগজেও তার ছবি আছে, পাত্র চাই কলামে। এখন কাক কোথায়? তাদের ব্রেকআপের পর থাইল্যান্ডে সেটল করেছে শুনেছিল।
খবরটা তাকে দিয়েছিল রিংকি, কাকের বোন। খোঁজও নিয়েছিল সে সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে যাচ্ছে কি না! অবশ্য সেই প্রশ্নের ভিতর জানার ইচ্ছার চেয়ে টিটকারির জ্বলুনি বেশী ছিল।
আজকের কাগজটা সুকন্যার সামনেই টেবিলে পড়েছিল। পাত্র চাই কলামে তার এই ছবিটা... এখনকার সুকন্যার ছবি নয়। এই ছবিটা তুলেছিল দিব্য। কলেজ থেকে শেষ দিন ফেরার সময় দিব্যকে দিয়ে এই ছবিটা তুলিয়ে ছিল সুকন্যা কাককে দেখাবে বলে। নতুন কেনা স্মার্টফোনে তোলা ছবিটা কাককে দেখিয়েছিল। তারপর সেদিন সুকন্যা কাককে নিজের সমস্ত কিছু উজাড় করে দিতে চেয়েছিল, সমস্ত দরজা খুলে কাককে ভিতরে আনতে চেয়েছিল কিন্তু...
কয়েক বছর আগেও সুকন্যার জন্মদিনে সবাই মিলে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে যেত। এখন আর সেটা হয়না। সুকন্যা আর এখন কোথাও যায় না। কেউ তাকে আটকায়নি, বা বন্দী করে রাখেনি, তবুও সে নিজে এখন রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। চেনা মানুষদের মুখোমুখি হতে ভয় করে তার। তাদের প্রশ্নতো থামে না। কেন তার চোখ মুখ বসে গেছে? কেন চোখের কোণে কালি? কেন সে এখনো বিয়ে করছে না? এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ তো? না সুকন্যার আর এত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস নেই। সারাটা দিন কেমন যেন ভয় ভয় কাটে তার। সবার চোখে যেন মনে হয় অদ্ভুত একটা চাউনি। সেই চাউনির ভিতর থেকে অসংখ্য প্রশ্ন তার দিকে ছুটে আসছে।
জানালা দিয়ে একটু ভেজা হাওয়া হঠাৎ করে তার চোখে মুখে এসে লাগল। শ্রাবণ মাস। মণি মাসি বলেছিল, শ্রাবণ মাসে জন্ম হলে জীবনে টানাপোড়েন বৃষ্টির মতোই ভেজায়।
কটা বাজে এখন ঘড়িতে? ঘড়িটা তার পিছনের দেয়ালে আটকানো, তার ইচ্ছা করলো না ঘাড় ঘুরিয়ে ঘড়িটা দেখতে। মা ডিভানের পাশে টেবিলের উপর ওষুধ আর বাটিতে ঢাকা দেওয়া কিছু একটা রেখে গেছে। সুকন্যা শরীরটা এলিয়ে দিল বিছানায়। ঘুরন্ত সিলিং ফ্যানটার দিকে চোখ রেখে সুক, সুকন্যা খান, নিজেকে ভুলতে চাইলো।
৩.
এ রাস্তায় অনেকদিন আসেনি দিব্য। রাস্তা ভেঙ্গে এখানে সেখানে গর্ত, খানাখন্দ। ডোবার মতো জল জমে আছে। রাস্তাটা অচেনা তাই এদিক ওদিক করে চালাতে গিয়ে গর্তে পড়ল দিব্যর বাইক। সাদা প্যান্ট কাদায় মাখামাখি। ভিতরের রাস্তাটা দিয়ে না আসলেই বোধহয় ভাল হত। হয়তো একেবারেই না আসলেই আরো ভালো হতো, কিন্তু সুকন্যা অনেক বার অনুরোধ করল। তার গলায় অনুরোধের চেয়ে কান্নাটাই বেশি ছিল, দিব্যর তাই মনে হয়েছে।
গতকাল ফোন করেছিল দিব্য, কাকিমা ধরেছিলেন প্রথমে। দিব্য বলেনি যে পাত্র চাই থেকে নম্বরটা পেয়েছে।
কাকিমা তাকে চিনতেন। ইউনিভার্সিটির পর সুকন্যা আর দিব্যর সঙ্গে সেভাবে সম্পর্ক রাখেনি। দিব্যর অনুভূতিগুলোও ততদিনে ফ্যাকাসে হয়ে গেছিল। কিন্তু দিব্যকে একটা প্রশ্ন বরাবর কুরে কুরে খেত। সুক কি বোঝেনি কখনো, যে দিব্য তাকে অন্য চোখে দেখে। নাকি সেটা বুঝেই তাকে ব্যবহার করেছে।
সুকের কোন কাজই তো দিব্যকে ছাড়া হতোনা। কলেজস্ট্রিট থেকে বই কেনা বা সালোয়ার পিস কিনে মাপ দিতে যাওয়া, এসব কাজেই তো দিব্যকে তার ছায়াসঙ্গী হতে হয়েছে।
সামনের গাড়িগুলো হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েছে।
-- "কি ব্যাপার দাদা?"
উল্টো দিক থেকে আসা এক সাইকেল চালককে জিজ্ঞাসা করল দিব্য। আরে এক পাগলি রাস্তার মাঝ-মধ্যিখানে এসে শুয়ে পড়েছে, কিছুতেই উঠতে চাইছে না।
আজ শনিবার। হাফ-ডে। ফেরার পথে সুকন্যাদের বাড়ি যাবে, মাকে বলে এসেছে। মা একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বলেনি। তবে আগামীকাল ডায়মন্ড হারবার থেকে পাত্রীপক্ষ আসছে এবং মেয়েকে নিয়েই তারা আসছে এটা মনে করিয়ে দিয়েছিল বেরোবার সময়। দিব্য বুঝেছিল, এটা মার নতুন দাওয়াই।
পিছনের হর্নে চমকে উঠে স্টার্ট দিল দিব্য। আকাশটা খুব একটা সুবিধার নয় শ্রাবণ মাস বৃষ্টি হতেই পারে।
সুকের বাড়ির গলির রাস্তায় ঢুকে বুঝতে পারলো, এদিকটা এখন অনেক বদলে গেছে। এত ঘিঞ্জি চারকোনা ব্লক টু ব্লক বাড়ি আগে ছিলনা। সুকন্যাদের বাড়ির পাশে একটা ছোট মাঠ ছিল। সে সব এখন চারতলা-পাঁচতলা বাড়িতে ভরে গেছে। এরকম বাড়িঘর আর ফ্ল্যাট, এগুলোকে দৃশ্য দূষণ মনে হয় দিব্যর।
সুকের বাড়ির সামনে এসে বাইকটা দাঁড় করিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বার করলো। সুককে ফোন করে ডাকতে হবে। বাড়িটা আগে একতলা ছিল। এখন উঁচু প্রাচীর উঁচু গেট। সুখের নম্বরটাতে টাচ করলে দিব্য। ডায়ালিং হচ্ছে। স্ক্রিনে ছবি।
৪.
হঠাৎ ফোনটা তীব্রস্বরে বেজে উঠলো। মা। দিব্য হাত ঘড়িতে দেখল, সাড়ে তিনটে। ও আজ তো আবার রোববার! ডায়মন্ডহারবার থেকে পাত্রীপক্ষের আসার কথা চারটের সময়। কিন্তু দিব্য ফোনটা ধরতে পারছে না। কি বলবে সে মাকে যে এখন সে দীঘার সমুদ্র সমুদ্র দেখছে?
গতকাল সুকন্যা দের বাড়ি গিয়েছিল দিব্য। দুজন প্রৌঢ় মানুষকে এক অদ্ভুত অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে আবিষ্কার করেছিল। সুকের সুখের জন্য জীবনটাকে তাঁরা কোনো ভাবে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যেন জীবনে আটকে আছেন শুধু সুকের জন্য। আর সুক! যে সুককে সে চিনত আর যাকে গতকাল দেখলো, আর এখন যে তার পাশে বসে আছে, নির্বাক-নিস্তব্ধ, এই তিনটে মানুষ একেবারেই একরকম নয়। দিব্যর বুদ্ধি-সুদ্ধি সব গুলিয়ে তালগোল পাকিয়ে গেছে। তার বিচার বুদ্ধি প্রায় হারিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে আর কিছু ভাবতে পারছে না।
সুক ভাবতে পারেনি যে দিব্য সত্যিই তাদের বাড়িতে আসবে। কাকু কাকিমাও দিব্যর হঠাৎ উপস্থিতিতে কেমন যেন একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেছিলেন। সুক তার ঘরেই ছিল। সেখানে যাবার আগে দিব্য কাকিমার কাছ থেকে সুকের কাকের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ঘটনাটা জানতে পারে। কিন্তু ঠিক কেন যে সম্পর্কটা নষ্ট হলো তার কোনো সদুত্তর কাকিমা দিতে পারলেন না।
সুকের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ঘরে গেলে সুক তাকে আঁকড়ে ধরে ছিল। কাকু কাকিমা ও পিছনে ছিলেন। থরথর করে কাঁপছিল সুক। তাকে কিছু বলবার আগেই অজ্ঞান হয়ে দিব্যর হাতের উপর পড়ে গেছিল। দিব্য কিছুই বুঝতে পারছিল না। সুখের মা-বাবা তাকে আশ্বস্ত করেন।
সুক অজ্ঞান হয়ে যাবার পর খুব বেশিক্ষণ আর সুকের বাড়িতে থাকেন দিব্য। ফিরে এসেছিল বাড়িতেই।
সুক যে অসুস্থ সেটা ওখানে গিয়ে দিব্য স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। পুরো পরিবারটাকে তার মনে হল কেমন যেন একটা অদ্ভুত এবং অপ্রকৃতিস্থ পরিবেশের মধ্যে রয়েছে। দিব্য, সুকের সঙ্গে তেমন কিছু যোগাযোগ রাখতে চাইছিল না। আসলে দিব্য পালাতে চাইছিল সুকন্যার থেকে, তার সুকের কাছ থেকে। মোবাইলটা তাই সাইলেন্ট মোডে রেখে শুয়ে পড়েছিল। রাত ন'টা নাগাদ যখন মা খাবার জন্য ডাকলেন দিব্যকে, দিব্য দেখল তার ফোনে প্রায় ত্রিশটা মিসডকল। সবগুলোই সুকন্যার। দিব্যর বুদ্ধি তাকে সুকন্যার থেকে দূরে যেতে বলছিল কিন্তু দিব্যর মন সেটা চাইছিল না। বুদ্ধি আর মনের টানাপোড়েনে মন-ই জিতল। দিব্য সুকন্যাকে রাত দশটার সময় ফোন করেছিল।
এখন তারা দীঘায় পাশাপাশি বসে আছে। এইখানে আসার কথাটা সুকন্যাই বলেছিল, সময়টাও সেই ঠিক করে দিয়েছিল। তবে দিব্য এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারেনি সুককে, যেমন বুঝতে পারেনি সমস্যাটা আসলে কোথায়।
উত্তাল সমুদ্রকে সামনে রেখে তারা পাশাপাশি বসে আছে। কিন্তু এখনো তেমন কোনো কথা হয়নি। দিব্য জিজ্ঞাসা করতে চাইছিল, "তোর কি হয়েছে?" অনেক ভেবেও সেটা পারেনি।
সুক একবার তার মা-বাবার খোঁজ নিল। দিব্যর বাবা মারা গেছে শুনে "ও সরি" বলে তারপর থেকে দুজনেই চুপচাপ। পায়ের নিচে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে দূর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বসে আছে দুজনে। দুজন অপরিচিত মানুষ হঠাৎ পাশাপাশি এসে বসলে ঠিক যেমনটা হয়, সময় চলে যায় কিন্তু আলাপ জমে ওঠে না।
আবার ফোন করছে মা। দিব্য এবার ধরল। মা প্রথমে একটু ঝাল ঝাল স্বরে বললেন, "ফোন ধরছিস না কেন? কোথায় আছিস?"
দিব্য আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই ওর মা বলল,
--থাক এক্ষুনি অজুহাত দিতে হবে না। আমি তোকে হাড়ে হাড়ে চিনি। আর শোন, ওরা আজ আসতে পারছেনা। ডায়মন্ডহারবার লাইনে ট্রেন বন্ধ চারটে পর্যন্ত। এটা বলবো বলে ফোন করছিলাম। রেখে দিলো মা। যাক দিব্য যেন একটু স্বস্তি পেল।
সুকন্যা হাল্কা নীল রঙের একটা সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক পরেছে। আলুথালু প্রসাধনহীন সুককে ঠিক বুঝতে পারছেনা দিব্য। সুক বাস থেকে নেমে একটা নির্দিষ্ট হোটেলের তেইশ নম্বর রুম খালি আছে কিনা জানতে চাইল একদিনের জন্য । অবাক দিব্য প্রশ্ন করেছিল, "এখানেই কেন?"
কিন্তু কোন উত্তর পায়নি।
দিব্য সুকন্যার দিকে একটু ভালো করে তাকালো। তার সুন্দর মুখটা বিষন্নতার কালো মেঘে ঢাকা। চোখ মুখ বসে গেছে। দিব্যর কাছে এটুকু স্পষ্ট যে, সুক রোগগ্রস্ত। তবু সে এখনও যথেষ্ট সুন্দরী। হঠাৎ সুকের চোখের দিকে চোখ পড়ল দিব্যর। কাঁদছে সুক? হ্যাঁ তাইতো মনে হচ্ছে! পাশ থেকে উঠে সুকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল, "কাঁদছিস কেন সুক?"
তার দিকে মুখ তুলে চাইল সুক। তার চিবুক চোয়াল কান্নায় ভেসে যাচ্ছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কান্না মুছে নিয়ে বলল,
--চল দিব্য তোকে আমার কিছু বলার আছে। চল হোটেলে চল।
হোটেলের তেইশ নম্বর ঘরে ঢুকে এক মুহুর্ত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সুক। একটা দীর্ঘশ্বাস অনেক গভীর থেকে উঠে এলো সুকের। দিব্য তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়েছিলো। সুকন্যা বলল
-- দিব্য, আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নি, তুই খাবারের অর্ডার টা দিয়ে আয়।
যেন মনে হলো অতি রুগ্ন একটা শরীর থেকে কথাগুলো বেরিয়ে তার কাছে এসে থেমে গেল। হঠাৎ সুকের জন্য তার একটা অদ্ভুত রকমের কষ্ট অনুভব হল। মনের কোন দুর্বল অংশে সুকের একটা আবছা অস্তিত্ব যে এভাবে রয়ে গেছে, তা এতদিন বুঝতে পারেনি দিব্য। হয়তো পরিস্থিতি তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে এমনটাও হতে পারে। ভাবতে ভাবতে দিব্য বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।
মিনিট দশেক পর দিব্য যখন ফিরে এল, তেইশ নম্বর রুমের দরজা ভিতর থেকে ভেজানো ছিল। আলতো ধাক্কা দিতেই খুলে গেল দরজাটা। সুকন্যা বিছানার উপর বসে, তার গায়ে বেডকভার জড়ানো। দিব্য কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই সুকন্যা বলল
-- দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আয়। যা দেরি করিস না।
দিব্য সুকন্যার মুখটা দেখতে পেল না ভালোভাবে। তার মাথাটা বুকের উপর ঝুলে আছে চুলগুলো ভিজে টুপ টুপ করে জল পড়ছে চুল থেকে।
দরজাটা বন্ধ করে দিব্য সুকের কাছে এলো বটে কিন্তু একটা দ্বিধা আর অস্বস্তি তাকে অস্থির করে তুলেছে। বুকের মধ্যে ধুকপুকুনিটা বেশ বেড়ে গেছে সেটা বুঝতে পারছে স্পষ্ট। শুধু যেটা বুঝতে পারছে না, সুক সত্যিই স্বাভাবিক নাকি অদ্ভুত রকমের অপ্রকৃতিস্থ।
সুকন্যাও বুঝতে পারছিল, দিব্যর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পড়েছে। চরম অস্বস্তি আর উৎকণ্ঠা নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, দিব্যর চোখ-মুখের নির্বাক ভাষা সেটা বলে দিচ্ছে। তবু সুকন্যা জানে সে কি করতে এসেছে এই ঘরে। দিব্যকে বলতেই হবে তার সব কথা। কেউ কি বুঝবে না তার সমস্যাটা? তার এই দহনের সামান্যতম আঁচও কি দিব্যর গায়ে লাগবে না?
দিব্য বন্ধ দরজার কাছে দাড়িয়ে ছিল। চেষ্টা করছিল নিজেকে শান্ত করার। ভালো করে সুকন্যাকে দেখতে গিয়ে তার চোখে পড়ল খাটের পাশে স্তুপ আকৃতি পড়ে আছে সুকন্যার সমস্ত অন্তর্বাস এবং জামাকাপড়। দেওয়ালে হ্যাংগারে ঝুলছে শাড়ীটা। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো দিব্যর। তবে কি একেবারেই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে সুক? এতক্ষণ তো কিছু বোঝা যায়নি! দিব্য মনে করার চেষ্টা করলো, সুকের হাতে অন্য কোন জামা কাপড়ের ব্যাগ দেখেছে কিনা! তেমন কিছু মনে করতে পারল না। সুকের হাতে শুধু একটা লেদার পার্স ছিল, সেটা বিছানায় সুকের পাশেই রয়েছে। তাহলেই সুক বেডকভার এর ভিতরে কি সম্পূর্ণ... কি পরেছে ও?
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা দিব্য। একটা থতমত অবস্থা তার। বেশ ঘাম হচ্ছে। পকেট থেকে রুমালটা বার করে মুখটা মুছে নিল।
ঘরের এই অদ্ভুত নিস্তব্ধতা সুকন্যাই এই ভাঙলো। ভেজা জড়ানো গলায় বললো
---আমাকে বিশ্বাস করবি তুই? কেউতো করেনি! এমনকি যে সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনিও না। কিন্তু তুই বল আমি যা অনুভব করছি সেই বারো বছর বয়স থেকে যখন থেকে আমি বুঝেছি আমি মেয়ে তখন থেকে যে অস্বস্তিটা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে তাকে আমি কি করে চেপে রাখি? কি করে বলি যে এটা পাগলামি?
হাঁপিয়ে গেলো সুকন্যা! দিব্য চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সুক একটু সময় নিয়ে বলল,
-- অনেক মানুষের তো জন্ম থেকে শরীরের কোন একটা অঙ্গ থাকে না, আবার অনেকের দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হয়। তারা কি বেঁচে থাকে না? সবাইকি তাদের পাগল বলে? তবে আমাকে বলে কেন?
আর দম নিল না সুক। উঠে এলো বিছানা থেকে। দিব্যর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে একটানে বেড কভার টা খুলে ফেললো গা থেকে। তারপর অত্যন্ত অসহায় স্বরে বলল,
-- দেখ আমাকে। আমার কোথাও কি খুঁত আছে? কোথাও কি কমতি আছে কিছু? তবুও আমি নিজের কাছে অসম্পূর্ণ। কাকের কাছেও।
চোখ দুটো যেন পুড়ে গেল দিব্যর! এক টুকরো পোশাক নেই কোথাও সুকের শরীরে। যেন আদিম পৃথিবী থেকে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সৌন্দর্যের দেবী। মানুষের শরীর এত সুন্দর হতে পারে? এত কাছ থেকে এরকম ভাবে সম্পূর্ণ নগ্ন নারী শরীর এর আগে কখনো দেখেনি দিব্য। এ কেমন সৌন্দর্য! কিসের সঙ্গে তুলনা চলে এর? বিন্দু বিন্দু জল তখন সুকের চিবুক, গলা বেয়ে নিচে নেমে চলেছে। পূর্ণিমার চাঁদের মত তার শরীরে হাজার বছরের অবদমিত আহ্বান। দিব্য স্থবির নিরুচ্চার হয়ে পাথরের মূর্তির মত শুধু দেখছিল তার মাথা কাজ করছিল না।
দিব্যর ঘোর কাটতে না কাটতেই তীব্র গতিতে সুকন্যা দিব্যর ডান হাতটা তার বাম স্তনের ওপর চেপে ধরে বলল
--দিব্য, বল আমার শরীরে এটার কি খুব প্রয়োজন? এটাকে আমি যে একেবারেই সহ্য করতে পারি না। বিশ্বাস কর সেই ছোটবেলা থেকেই আমার মনে হয় এটা যেন আমার শত্রু। এটার জন্য নিজেকে আমার খুব কুৎসিত বলে মনে হয়েছে সব সময়। কেন, কেন এমন হয় বলতো? আরতো কারো হয় না।
মনে হয় ওটা মরে গেছে। পচে গেছে। শুকিয়ে গেছে। ওটা যেন আমার নিজের কিছুই নয়। মাকে বলেছি, মণি মাসি কে বলেছি কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। একের পর এক সাইক্রিয়াটিস্ট চেঞ্জ করা হয়েছে, তারা অনেকেই আমার সঙ্গে অসভ্যতা করেছে, আমার বুকে হাত দিয়ে আমার শালীনতা নষ্ট করেছে, কিন্তু আমার আসল সমস্যাটা কেউ বোঝেনি। আমি আর পারছি নাদিব্য, বাবা-মার কথা ভেবে মরতেও পারছিনা।
একটু হাঁপিয়ে গেলো সুক, কিন্তু থেমে গেল না। আবার বলল,
--দিব্য, তুই কোনভাবে আমার শরীর থেকে এটাকে আলাদা করে দিতে পারিস না? আঁচড়ে, কামড়ে যা ইচ্ছা কর, কিন্তু আমাকে এই অভিশাপ থেকে বাঁচা! একে আমার শরীর থেকে সরিয়ে দে নষ্ট করেদে এটাকে।
দিব্য এতক্ষণ লক্ষ্য করেনি, সুকের হাতে একটা ছোট ছোরা। দিব্য কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুক সেই ছোরাটা নিয়ে নিজের বাম স্তনের উপর আমূল বসিয়ে দেয়। একবার নয় বেশ কয়েকবার। দিব্য ছুটে গিয়ে সুককে নিরস্ত্র করতে চায়, কিন্তু পেরে ওঠে না। আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। একসময় সুক নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, দিব্যর কোলের উপর মাথা রেখে।
হতচকিত বিস্মিত আর ভীত দিব্যর মুখ দিয়ে একটাই কথা বের হয়ে এল, "সুক একি করলি তুই? এটা কেন করলি?"
যন্ত্রণাকাতর সুক শ্লেষ্মা জড়ানো গলায় আচ্ছন্নের মত বলল,
--খুব সুখ দিব্য, খুব সুখ! ওটাকে আমি আঘাত করতে পেরেছি তাতে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে, যন্ত্রণা নয়, আমার খুব ভালো লাগছে ।
রক্ত আর চোখের জলে ভিজে যাচ্ছিল দিব্যর গলা, বুক শরীর। বাইরে তখন হঠাৎ করে প্রচন্ড বৃষ্টি। ভিজে যাচ্ছে সবকিছু প্রকৃতি মানুষ চিন্তা-চেতনার সব।
৫.
মি : দিব্যদ্যুতি লাহিড়ি, আপনার স্ত্রী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কোন রকম মানসিক বা শারিরীক সমস্যা নেই। আপনি নিশ্চিন্তে ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।
সমস্ত রকম চেক-আপ করার পর এটাই আমার মত। বেস্ট অফ লাক। ডাক্তার খাস্তগির হাতটা বাড়িয়ে দিলেন দিব্যদ্যুতি ওরফে দিব্যর দিকে।
তারপর হাত মিলিয়ে আবার বললেন, আপনি আর মিনিট পাঁচেক বসুন, মিসেস লাহিড়ি আসছেন।
চলে গেলেন ডাক্তার খাস্তগির।
গত ছ'মাস ধরে দিব্য ডাক্তার অপরেশ খাস্তগিরের এই চেম্বারে পড়ে আছে। দীঘা থেকে কোন ভাবে ফার্স্ট এড করে যখন সুক কে কলকাতায় আনা হল, বাঁচার আশা প্রায় ছিল না। দিব্যর মাসতুতো দাদা ডাক্তার, তার মারফত সুককে নিয়ে আসে এই ডাক্তার খাস্তগির এর চেম্বারে। সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। একদিকে মৃতপ্রায় সুক, অন্যদিকে থানা-পুলিশ। দিব্যর মা সামলেছেন সব।
কিন্তু সুক কে সামলানো যাচ্ছিল না। একটু সুস্থ হতেই নিজের জন্যই অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠছিল সুক। যা পাচ্ছিল তাই দিয়ে সে নিজেকে আঘাত করছিল। ডাক্তার খাস্তগির যখন বললেন, সুকের ট্রিটমেন্ট করতে হলে বন্ড দিতে হবে, সুকের বাবা মা সে দায় দিব্যর উপরেই সঁপে দিলেন। দিব্য আর দেরি করে নি। নিজের চেয়ে সুকের প্রাণ বাঁচানোটা তার কাছে বেশী প্রয়োজন মনে হয়েছিল। রেজিস্ট্রি ম্যারেজে দিব্যর মা এসেছিলেন। সুক কে একটা চুমু খেয়ে বলেছিলেন, সুখি হও।
এক মাস ধরে সুক কে নিজের অবজার্ভেশনে রেখে ডাক্তার খাস্তগির একদিন দিব্যকে ডেকেছিলেন চেম্বারে। সুকের রোগটা খুব অদ্ভুত। এক ধরনের নিউরো সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার। রোগটার নাম বডি ইন্টিগ্রিটি আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার। অত্যন্ত বিরল রোগ। সমস্ত পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত মাত্র তিনশ জনের ক্ষেত্রে এই রোগ চিহ্নিত করা গেছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগী তার নিজের শরীরের কোন অঙ্গকেই সহ্য করতে পারে না, তারা সেই বিশেষ অঙ্গটাকে অন্য কারো অঙ্গ বলে মনে করতে পারে বা একটা নোংরা কিছু বলেও মনে করে। এই কারনেই আজীবন তারা চায় শরীর থেকে সেই বিশেষ অঙ্গটা বাদ দিয়ে দিতে। সুক ও ঠিক এই ধরনের এবং অত্যন্ত বেশী পরিমাণে রোগের তীব্রতায় পাগলের মত আচরন করেছে। অপারেশন করে সুকের বাম স্তন বাদ দিলে হয়তো এই সমস্যার একটা সমাধান আশা করা যায়।
কাঁধে একটা আলতো হাতের ছোঁয়ায় চমকে উঠলো দিব্য। সুক, তার সুকন্যা। আজকেও সেই নীল সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্কটা পরেছে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে সুকের মুখটা।
উঠে দাঁড়ালো দিব্য। সুকের একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে বললো, চল আমরা এবার বাড়ি ফিরি। আজ থেকে তোর জন্য আমি কাক হলাম সুক।
দু'জনে বেরিয়ে এল নার্সিংহোমের গেট দিয়ে। সুক একবার থমকে দাঁড়ালো। পিছন ফিরে দেখলো নার্সিংহোমটার দিকে। তারপর একবার বুকের বাম দিকে হাতটা বুলিয়ে একটা অদ্ভুত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দিব্যর হাতটা সমস্ত নির্ভরতা আর ভালোবাসা দিয়ে জোর করে চেপে ধরলো।
---------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট
=================================
#আমার পরিচিতি // অনিন্দ্য পাল
======================
জন্ম ১৯৭৮ সালে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চম্পাহাটি তে। বাবা পরলোকগত বিশ্বনাথ পাল। মাতা অনিতা পাল। শিক্ষা - পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক স্নাতক, বি এড। পেশা - তাড়দহ হাইস্কুলের শিক্ষক। লেখা লেখি শুরু কলেজের দিনগুলোয় যদিও প্রকাশ অনেক পরে। স্থানীয় অনেক লিটল ম্যাগাজিন এ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দেশ, কৃত্তিবাস, প্রসাদ, তথ্যকেন্দ্র, নিউজ বাংলা, উৎসব, অপদার্থের আদ্যক্ষর, শ্রমণ , বার্ণিক, অন্বেষা, অর্বাচীন, মুখ, দেশিক, সূর্যকিরণ, রোদ্দুর, ব-দ্বীপ বার্তা, নবপ্রভাত, হিরণ্যগর্ভ, হৃৎস্পন্দন, লণ্ডন টাইমস, অভিব্যক্তি(নিউ জার্সি) দৈনিক বজ্রকণ্ঠ(ত্রিপুরা)ইবলিশ(বাংলাদেশ),অলীক পাতা, দক্ষিণের জানালা, কল্পবিশ্ব, বহুধা, প্রজনা, কথাকাহিনি, একলব্য, সিন্ধুলিপি, রা, সাহিত্য কালচার, TechTouchটক, নিকোটিন, ত্রিতাপহারিণী, আঁতুড়ঘর, অক্ষর সংলাপ, আখরকথা, কেয়াপাতা, কৃষ্ণকলি, নীলাঞ্জনা, আবাহনী, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, বিজ্ঞানভাষ, প্রভৃতি অনেক পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
"সুখবর" পত্রিকায় প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। "তোর মত হলে অন্ধকারকেও ভালোবাসি", "জলরঙের ওড়না " ও "সমুদ্রে রেখেছি সময়" ও " আমি এসেছিলাম " নামে চারটি কাব্যগ্রন্থ আছে।
সাপলুডো নামে একটা পত্রিকার সম্পাদনা করেন।
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল
গ্রাম -- জাফরপুর
পোঃ-- চম্পাহাটিি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ।