ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে একটা কফিশপে ওরা দু'জন। আকাশ আর তৃণা। আগেও বহুবারই এখানে এসেছে ওরা। সময় কাটিয়েছে। এছাড়াও কলেজ কেটে এখানে-ওখা
নে ঘুরে বেড়িয়েছে। সেসব সুখের দিনের কথা কি ভুলে গেছে তৃণা? নইলে আজ তো তৃণা আসতেই চাইছিল না। ফোনে অনেক অনুনয়-বিনয়, অনেক সাধ্যসাধনা করে ওকে আনতে হয়েছে। স্পষ্টত, তৃণা এড়িয়ে যেতে চাইছে আকাশকে। তৃণার এই আকস্মিক পরিবর্তনের পেছনে কী রহস্য লুকিয়ে আছে কে জানে!
তবু ভাঙা-মন নিয়ে আজ সকালে আকাশ হ্যাংলার মতো ফোন করেছিল তৃণাকে, 'আজ চারটের দিকে ঘন্টাখানেকের জন্যে একবার কফিশপে দেখা করতে পারবে, প্লিজ?'
-'তোমাকে তো আগেও বলেছি, আবারও বলছি, আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আমি ব্রেকাপ চাই…সিম্পল!' গম্ভীর গলা তৃণার।
অপমানে জর্জরিত হয়েও আকাশ বলল, 'শেষবারের মতো একটিবার এসো…ঠিক আছে, একঘন্টা থাকতে হবে না, আধঘন্টা থেকই না হয় চলে যেও…থার্টি মিনিটস…এই শেষবার…'
এখন কফিশপে টেবিলে মুখোমুখি দু'জন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আকাশ সরাসরি জানতে চাইল, 'এটাই তাহলে তোমার ফাইন্যাল ডিসিশন?'
-'কোনটা?'
-'তুমি সব বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকলে আমি কী করতে পারি বল?' আকাশ বলল, 'তুমি ভালো করেই জানো, আমি আমাদের বিয়ের কথা বলছি…'
-'বিয়ে? তোমাকে? হাউ ডেয়ার! তুমি এসব ভাবলে কী করে?
খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো আকাশ বলল, 'তাহলে এইযে তিন-তিনটা বছর ধরে আমাদের মেলামেশা…'
-'সো হোয়াট!' কথা শেষ করতে না দিয়ে তৃণা বলল, 'আমরা বন্ধুর মতো মিশতে পারিনা? মিশেছি, একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছি – দ্যাটস্ এনাফ! মিশেছি বলেই বিয়ে করতে হবে? তাছাড়া বিয়ের পর তো আর ডানা গজাবে না যে, সর্বক্ষণ হাওয়ায় উড়ে বেড়াবে…বিয়ের পর স্বামীকে অনেক দায়িত্বশীল হতে হয়, বুঝলে? কর্তব্যপরায়ণ হতে হয়, কেয়ারিং হতে হয়…তোমার মধ্যে কোন গুণটা আছে, অনেস্টলি একবার বলো দেখি…
মিনমিনে গলায় আকাশ জানতে চাইল, 'তুমি কি সত্যি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?'
দৃঢ় গলায় তৃণা বলল, 'না। চাই না। তোমার মধ্যে কী আছে? আমি আমার স্বামী হিসেবে এমন একজন পুরুষকে চাই, যে হবে দায়িত্বশীল ও করিৎকর্মা, যার উপর পুরোপুরো ভরসা করা যায়…আর হতে হবে যথেষ্ট বুদ্ধিমান, আ গ্রেট ইন্টেলিজেন্ট! তোমার মতো ম্যাদামারা রোমান্টিক না হলেও চলবে!'
আকাশ এবার যেন মরিয়া হয়ে যেন তার মোক্ষম অস্ত্রটি ছাড়ল, 'কেন, তোমার মনে নেই? সেবার বেলুড়ে গিয়ে সেই যে নৌকোয় চেপেছিলাম…আর সেই নৌকো যখন ডুবে যাচ্ছিল, আমি জলে ঝাঁপ দিয়ে নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে জল থেকে তুলে তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলাম…মনে নেই?'
-'সব মনে আছে. ভুলবো কেন?' আয়্যাম ভেরি গ্রেটফুল সো দ্যাট…' তৃণা চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, 'হ্যাঁ, তাতে তুমি যে করিৎকর্মা, দায়িত্বশীল - এটা হয়তো প্রমাণিত! কিন্তু তুমি যে মোটেই বুদ্ধিমান নও – এটা তো মানতেই হবে!...চলো, এবার কিন্তু আমায় যেতে হবে।'
আকাশও সটান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর ক্রূর চোখে তৃণার দিকে থাকিয়ে বলল, 'তুমি কি জানো, মাঝির সংগে প্ল্যান করে নৌকোটা কে ডুবিয়েছিল?'
__________________
মুক্তি দাশ
১৩৫, অঘোর সরণী
রাজপুর
কলকাতা-৭০০১৪৯
মোবাইল/হোয়াটসঅ্যাপ : ৯৮৩০৪১৩১২২