------------------
'হ্যাঁ, যাও বাপের বাড়ি যাও। আমি তোমাকে কিছু কিনে দিই না ভালো মন্দ কিছু পড়তে দিইনা যখন যাব বাপের বাড়ি গিয়ে সব সাধ আহ্লাদ মেটাও এই আমিও চললুম।'-- বলে ভাঙাচোরা সাইকেলটা নিয়ে নান্টু বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। গত তিনদিন ধরে তার সঙ্গে পলার অশান্তি চরমে উঠেছে। নান্টু গরিব ঘরের ছেলে। এখন মেইন রোডের ধারে নতুন বাজারে সবজি বিক্রি করে মোটামুটি চলে যায়। টাকা কড়ি একটু সমঝে খরচ করে। জানে অনেকে তাকে হাড় কেপ্পন বলে, কিন্তু ছোটবেলার দারিদ্র্য সে ভোলেনি। তাই লক্ষ্মী কে ধরে রাখার চেষ্টা করে। আর তাতেই গিন্নির রাগ। এই বছর খানেক হলো বিয়ে হয়েছে। দেখে দেখে গরিব ঘরের মেয়ে এনেছিল, যাতে টাকা-পয়সার মর্ম বোঝে, কষ্ট সহ্য করতে পারে। ও হরি! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এত্ত বায়নাক্কা জুড়ে দিল আজ ভালো সাবান আনো, কাল শ্যামপুর পাতা আনো! চিরকাল যেখানে গাদ সাবান গায়ে আর গুঁড়ো সাবান চুলে দিয়ে পুকুরে ডুবে গেলে স্নান করেছে, সেখানে কুড়ি টাকা দামের সাবান আর তিন টাকার প্যাক শ্যাম্পু কিনতে গেলে পাঁজরে ধাক্কা তো লাগবেই! কিন্তু কে বোঝে কার কথা! আজ বলে সন্ধ্যাবেলায় দুটো তেলেভাজা আনতে পারো না? তো কাল বলে, দুটো বাগদা এনো, নারকেল দুধ দিয়ে মালাইকারি করব। এসব শুনলেও নান্টুর গা-হাত-পা কাঁপে!
নান্টু একদিন ফুলচিংড়ি এনে বলেছে, চালের বাটা দিয়ে বড়া করো। তেলেভাজাও হলো আবার চিংড়ি ও খাওয়া হলো। আর মন চাইলে বড়ার ঝাল করতে পারো!
এই অশান্তিটা হতো না। কয়েকদিন আগে মফস্বলে পলার এক মামাতো বোনের বিয়েতে গিয়ে যত ঝামেলার সৃষ্টি! সেখান থেকে ফিরে গোঁও ধরে বসে আছে ঠোঁট আঁকার জন্য কি যেন নাম লিপ লাইনার লাইনার সেইটা কিনে দিতে হবে! খাওয়া-পরার বাইরে এসব খরচ করতে একদম রাজি নয় নান্টু। তবে বিয়েবাড়ির মেয়েগুলোর লাল ঠোট গুলো নান্টুরও বেশ লাগছিল। তাই একটা সস্তার লিপস্টিক এনে দিয়েছিল। কিন্তু টকটকে লাল লিপস্টিকেও নবাব নন্দিনীর মন ওঠেনি। সেরাতে হাঁড়িও চড়েনি। বিছানায় দুজন দু দিকে মুখ করে শুয়ে ছিল। মাঝরাতে ঘুমঘোরে পলার বুকে মুখ ঘোষে রোজকার মতো ঘন হতেই বিপত্তি! রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বালিশ নিয়ে সটান মেঝেতে পলা। ও ভাবেই কাটল সারাটা রাত।
আজও সকাল থেকে পলা একেবারে রণচণ্ডী হয়ে আছে। পান্তাটাও নান্টু নিজে বেড়ে খেয়েছে। ছেলেপিলে নেই যে তাদের ঠারেঠোরে কথা হবে। ফলে বাক্যালাপ প্রায় বন্ধ। আর এই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে এখন কোথায় যাবে ভেবে উঠতে পারল না। নেশা নেই যে ঠেকে গিয়ে বসবে। যায় কোথায়? হঠাৎ কি মনে হলো চলল স্টেশনের দিকে। লাইনের পাশের রেলের লোহার বেড়ার গায়ে সাইকেলটা লক করে হেলান দিয়ে রেখে দিলো। একটা সরু চেন আর তালা দিয়ে রেলিং এর সাথে আটকে দিল সাইকেলটাকে। যা চোরের উপদ্রব! এইতো সেদিন বাজারের সামনে থেকে একদম ফিটফাট একটা লোককে সাইকেল সমেত চোর বলে ধরে জনতার সে কি মার! ভাগ্য দুটো পুলিশ এসে নিয়ে থানায় জমা করল নয়ত ওখানেই শেষ হয়ে যেত।
একটা পানের দোকান থেকে পান না নিয়ে শুধু পানের ডাঁটি নিয়ে চিবুতে চিবুতে বসে রইল প্ল্যাটফর্মের সিমেন্টের চেয়ারে। এখানে বসে যেন মাথাটা একটু থিতু হল। মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল নান্টুর। মাত্র বছর পঁচিশ তো বয়স। তার বয়সী ছেলেরা এখন মাঠের কোণে তাস পিটিয়ে না হয় ক্লাবে ক্যারাম পিটিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে। বাবার হোটেলে খাওয়া তো বুঝবে কি ওরা পেটের জ্বালা? নান্টুকে সেই এগারো বারো বছর থেকেই সবজির আড়তে আসতে হতো। ওর বাবা ঝড়তি পড়তি মাল যা কিছু আড়তে বিক্রির পর অবশিষ্ট পড়ে থাকত তাই দু-চার টাকায় কিনে বাজারের এক কোণে বসে বেচতো। পোকা বেগুনের পোকা জায়গাগুলো নান্টু একটা হ্যাকসো করাতের ছুরি দিয়ে কেটেকুটে বের করে দিত। কানা বেগুন কমদামে বিকোত। সবসময় যে তাদের মত হাভাতেরাই কিনতো তা কিন্তু তা নয়। প্রাইমারি স্কুলের সোনা মাস্টার বরাবর তার বাবার কাছ থেকে কানা পোকা সবজি কিনতেন। তিনি বলতেন " আরে দাম দিয়ে ওদের কাছ থেকে কিনে কাটার সময় পোকা বের হয় কত বাদ যায়। তোর তো এখানেই কানা পোকা বাদ দেওয়া। খাটুনিও কমলো, আর খরচও কমল।" এই কথাটা ছোটবেলায় নান্টুর খুব ভালো লেগেছিলো। মনে দাগ কেটে বসে গিয়েছিল একেবারে। এখনো তাই নান্টু ভালো সবজি বেচলেও ঘরের জন্য কানা পোকা গুলোই তুলে রাখে।
যাইহোক বেশ ভালো হয়ে গেছে মেজাজটা। ট্রেন ধরার জন্য কত ব্যস্ত লোকজন, ছেলেছোকরা। কত রং-বেরঙের কত নকশার পোশাক পরা মেয়ে। একটা মেয়েকে দেখেতো নান্টুর নিজেরই লজ্জা করলো! মেয়েটার বয়স যতই কম হোক ষোল- সতেরো তো হবেই। বেশ গত্তি আছে। ঢলো ঢলো চেহারা। রূপ যেন উপছে পড়ছে। হাঁটুর উপর টাইট প্যান্ট আর উপরে বগল কাটা ফিনফিনে গেঞ্জি গলা চেরা, যেন ছেলেদের পরার স্যান্ডো গেঞ্জি। সেটা একটু ছোট হয়েছে। মাঝেমাঝেই পেটের ধবধবে সাদা ফালি আর গভীর নাভি দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা কয়েকটা ছেলের সঙ্গে কি একটা কথায় বেশ হাসাহাসি করছিল। একটা ছেলে তো কথায় কথায় শুধু মেয়েটার গায়ে পড়ে যাচ্ছে! যেখানে সেখানে ছুঁয়ে দিচ্ছে! কিন্তু মেয়েটার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পাশে দাঁড়ানোর ছেলেদুটোর চোখ তো মেয়েটার বুকের উপরে আটকে আছে একেবারে। গেঞ্জির চেরা গলার ফাঁক দিয়ে নান্টু স্পষ্ট দেখল আরো ফর্সা খাঁজটা। হঠাৎ মেয়েটা এ দিকে তাকাতেই নান্টুর সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল আর নান্টুর কেমন যেন লজ্জা করে উঠল। চোখ ফিরিয়ে নিল নান্টু এভাবে সে আগে কখনো মেয়েদের দিকে তাকায়নি।
নান্টুর এবার পলার কথা মনে হল। মনে হল পলাকে সে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পরতে দেখেনি। চুড়িদার নাকি সে বিয়ের আগে পরতো!
নান্টুর হঠাৎ মনে হল সে কি কখনো পলার শরীরের এতটা অংশ দিনের আলোয় দেখেছে? নাহ্ মনে পড়ল না তার! কখনো এরকম না হোক মোটামুটি সাজগোজ করেও তার সামনে আসতে দেখেছে? নাহ্! তাও তো নয়। শুধু রাত বিরেতে অন্ধকার ঘরে আদরের সময়ে পলাকে কাছে পেয়েছে। তার ভালোলাগার লাজুক শব্দ শুনেছে। কিন্তু দিনের বেলায় বা অন্য সময় সে তো পলার কাছে ছিলই না কখনো। দোকান ব্যবসা এইসব নিয়েই তার সময় কাটে। মেয়েটা তার বউ হয়ে আসার পর থেকে শরীর ছাড়া একটু সোহাগ ভালোবাসা কি সত্যিই সে দিয়েছে কখনো? টাকা-পয়সা জমাবার চিন্তায় সে কি মানুষ নেই আর? পলার সাধ আহ্লাদ সম্পর্কে খোঁজও নেয়নি কখনো। শুধু খাওয়া-পরা টাই কি সব? মেয়েটার দিকে আরেকবার তাকালো নান্টু। উজ্জ্বল হাসিতে সে গল্পে মশগুল। একটা চিনচিনে ব্যথা নান্টুর বুকে। পলার মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। তার মনে হলো সেই মুখের আদলে যেন একরাশ কষ্ট ছায়া ফেলেছে। চোখের নীচে কি এক না পাওয়ার কালচে ছোপ। সরু ঠোঁট দুটো ফ্যাকাশে শরীরে তির তির করে কাঁপছে। মুখের মধ্যে একটা জমাট কষ্ট অনুভব করল নান্টু। হঠাৎ সটান উঠে দাঁড়াল। হাত দিয়ে দেখল বটুয়াটা আছে কিনা? তারপর তাড়াতাড়ি পা চালাল। প্লাটফর্মের পাশে একটা মনিহারির দোকান আছে, আসার সময় দেখেছে নান্টু।
বাড়ির কাছাকাছি হতেই নান্টুর বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ ভয়, আবার আনন্দের শিরশিরানি। দুপুর রোদে এমনিতেই জামাটা ঘামে ভেজা। কপাল থেকে টপটপ করে দুই ফোঁটা ঘাম ঝরে গেল। বুক পকেটে হাত দিয়ে নান্টু একবার লিপলাইনারটা দেখে নিল। বেশ দাম দিয়ে কিনেছে। একটা লিপলাইনারের দামে দুদিনের চা-পান-বিড়ি খরচ হয়ে যেত। থাকগে, বউটার শখ আহ্লাদও মেটাতে হবে তো!
উঠোনের আম গাছটার তলায় ছাগলটা ঝিমোচ্ছে। গত সপ্তাহে ও পাড়ার ব্যাঁকা দুখের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল পাল খাওয়াতে। ডাক নিয়েছিল কিনা। মানুষের মতো ওদেরও মাঝে মাঝে শরীরের নেশা চাপে, তখন উন্মাদের মতো সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। দুদিন জম্পেশ পাল খাওয়ার পর আবার শান্ত, যা কি তাই। ক মাস পরে বাচ্চা দেবে। কালো কালো মখমলের মত গা আর তিড়িংবিড়িং লাফানো কয়েকটা জ্যান্ত পুতুল যেন।
আমগাছ, উঠোন পেরিয়ে ঘরের বারান্দায় উঠল নান্টু। দরজাটা বন্ধ। সামনের জানালাটাও বন্ধ। এই গরমে অ্যাসবেস্টসের ছাউনির ঘরে এমনিতেই আগুন ঝরে, তা আবার দরজা-জানলা বন্ধ! হঠাৎ বুকটা ধ্বক করে উঠলো নান্টুর! কিছু করে বসে নি তো পলা? 'পলা' বলে চেঁচিয়েই এক ধাক্কায় দরজাটা খুলে ফেলল। আলো-আঁধারি ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রথমে কিছুই ঠাহর করতে পারছিলো না নান্টু। কয়েক মুহুর্ত পর একটু ধাতস্থ হয়ে যে দৃশ্য দেখল তাতে সে হতচকিত হয়ে গেল। বিছানায় পলা আর এক পুরুষ। সম্পুর্ন নগ্ন হয়ে একে অপরকে চরম আশ্লেষে জড়িয়ে সম্ভোগে মত্ত। রতি শ্রমে ঘর্মাক্ত উষ্ণ শরীর দুটোর কোন খেয়ালই নেই যে সে পলার স্বামী, ঘরে উপস্থিত! তারা উন্মাদের মতো পরস্পরের মধ্যে মিশে যেতে চাইছে, যেন তাদের জন্য পৃথিবীতে স্থান ক্রমেই কমে আসছে।
কয়েক মুহূর্ত পর, নান্টু রাগে-দুঃখে চেঁচালো, "পলা? এই শুয়োরের বাচ্চা! কি করছিস তুই?" অবাক হয়ে দেখল তার বউ পলা তীব্র শীৎকারে মগ্ন হয়ে সেই পুরুষকে প্রচন্ড আলিঙ্গনে নিষ্পেষণ করছে। যেন পুরুষটার সমস্ত রস সে মরুভূমির মতো শুষে নিতে চায়। তাকে যেন নিজের গভীর থেকে গভীরে ডুবিয়ে নিতে চায়।
নান্টুর চিৎকার ওদের কানে পৌঁছায় নি। তার ওই হতবুদ্ধি অবস্থার মধ্যেই কোথা থেকে একটা বাটখারা তার হাতে এসে গেছে। প্রচন্ড রাগে নান্টু শরীর দুটোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল। আর ঠিক তখনই একটা জোর ধাক্কায় নান্টু থতমত হয়ে চোখ খুললো।
তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পলা। তার বউ। ঘামে নান্টুর সারা শরীর ভেসে যাচ্ছে। তাকে ধাতস্থ হবার সময় না দিয়েই পলা তার হাতটা ধরে টানতে লাগল, "এই দুপুর বেলা ফাঁকা পেলাটফর্মে বেঞ্চিতে বসে উনি ঘুম দিচ্ছেন! আর এদিকে আমি একা মেয়ে মানুষ চষে বেড়াচ্ছি চারদিক! বলিহারি বাবা তুমি! ভাগ্যিস নবাদাদুর সঙ্গে দেখা হলো। বলল-তোমাকে প্ল্যাটফর্মের দিকে যেতে দেখেছে। পলা একেবারে ঝাঁঝিয়ে বললো কথাগুলো। রোদে তার ফর্সা মুখটা একেবারে লাল হয়ে আছে। কপালে ঘামের ফোঁটাগুলো মুক্তোর মত চকচক করছে।
নান্টুকে টেনে তুলে একটু থমকে আবার বলল, "এই দিব্যি করলুম! আর কখনো কিছু চাইবো না। এরকম শাস্তি দিউনি, নাও এবার চলো।"
নান্টু দেখল পলার আলুথালু নেতানো শাড়ির ফাঁক দিয়ে ধবধবে কোমর আর গভীর নাভিটা দেখা যাচ্ছে। এত সুন্দরী পলা! কই নান্টু তো আগে দেখেনি? সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পলার চলন্ত রূপের দিকে তাকিয়ে রইল।
==============================
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল
গ্রাম -- জাফরপুর
পোঃ-- চম্পাহাটিি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ।