পূর্বকথন
রাজকুমার কৌস্তভকে নিয়ে আসে তাদের বাড়িতে, কয়েকদিনের ছুটিতে। বাবার পাণ্ডুলিপি নিয়ে দুই বন্ধু রওয়ানা দেয় কলেজ স্ট্রিটের উদ্দেশে। এরপর ...
পর্ব - ২০
মহাত্মা গান্ধী রোডে পুরোনো আমলের দ্বিতল বাড়ি। একতলার সব ঘরেই বিভিন্ন ছোট ছোট প্রকাশনের অফিস। দুতলায় সবটা জুড়ে কলকাতার নামি পাবলিশিং হাউস "বইমহল" এর কার্যালয়। কৌস্তভ বাবার কাছে এঁদের কথা শুনেছেন। বহু অনামি লেখক এঁদের হাত ধরেই উঠে এসেছেন পাদপ্রদীপের আলোয়।
কাঠের সিঁড়ি বেয়ে রাজু আর কৌস্তভ উঠে আসে দোতলায়।
সিঁড়ি শেষ হতেই একটা বিরাট কাঁচের দরজা। সে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে ওরা।
সামনেই একটি টেবিলে বসে আছে একটি তরুণী। সে হেসে হাতজোড় করে বলে - নমস্কার। বইমহলে আপনাদের স্বাগত। বলুন কি করতে পারি আপনাদের জন্য?
রাজু অল্প অল্প ঘামছে। কৌস্তভ প্রতি নমস্কার করে বলে - আমরা সুধাংশু বসু।মল্লিকের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
বাবার কাছে বইমহলের মালিকের নাম আগেই জেনে এসেছে কৌস্তভ।
মেয়েটি বিনয়ের সঙ্গে বলে - আপনাদের কি স্যারের সঙ্গে এপয়েন্টমেন্ট আছে?
কৌস্তভ খুলে বলে সব। কিন্তু মেয়েটি সবিনয়ে জানায় এভাবে বই প্রকাশ হয় না। ওরা বরং লেখা জমা দিয়ে যাক।
লেখা জমা দিয়ে বেরিয়ে আসে ওরা। একটি উপন্যাস আর দুটি গল্প।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল।
ঠিক একসপ্তাহের মাথায় কলকাতা থেকে একটা চিঠি আসে রাজকুমারের নামে, খামের উপর বইমহল-এর লোগো ছাপা।
ঝিনটি চিঠি হাতে ঘরে ঢোকে। রাজকুমার আর কৌস্তভ বিছানায় আধশোয়া হয়ে গল্প করছে চা পান করতে করতে।
রাজকুমার হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নেয়। খামের মুখটা ছিঁড়ে বার করে চিঠি। তারপর জোরে জোরে পড়তে থাকে।
"মাননীয় রাজকুমারবাবু,
প্রথমেই আপনাদের ধন্যবাদ জানাই কষ্ট করে পাণ্ডুলিপি আমাদের অফিসে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আপনার প্রয়াত বাবার কলম অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা তিনটি লেখাই বই আকারে প্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনুগ্রহ করে আপনারা অফিসে এসে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করবেন আর অগ্রিম নিয়ে যাবেন।
ধন্যবাদান্তে,
বইমহলের পক্ষে
সুধাংশু বসুমল্লিক
কর্ণধার।
কৌস্তভ চিৎকার করে ওঠে - হুররে। আমি জানতাম মেসোমশাইয়ের লেখার যোগ্য সমাদর হবেই।
ঝিনটি কেঁদে ওঠে হাউ হাউ করে। তার বাবা, তার অকালে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় বাবা নিজের চোখে দেখে যেতে পারলেন না এই সাফল্য। ক্রন্দনরত বোনের মাথায় সান্ত্বনার হাত বুলাতে বুলাতে বিষণ্ণ রাজু শুধু ভাবে বাবার এই অনন্য কীর্তি সে কোনদিন টেরও পেল না, বাবাকে চেনার চেষ্টা কি তাহলে করেই নি সে।
এরপর ধানসিঁড়ি নদী দিয়ে বয়ে যায় অনেক জল। কেটে যায় দু বছর। এ নাটকের নতুন অধ্যায়ের পর্দা উন্মোচন হয় কলকাতায়, মননের পৈতৃক বাড়িতে।
ক্রমশ ...