চন্দন চক্রবর্তী
আজ চৈত্র সংক্রান্তি । ভোলার মন ভালো নেই । শরীরটাও জুত নেই । অন্যবার নীল ষষ্ঠীতে সে মহাদেব সাজে । এবার আর বের হয় নি ।
হাতে একটা পয়সা নেই ।
ছেলে মাটি কাটার কাজে বাইরে । নাতিটা খালি গায়ে ঘুর ঘুর করছে । কালকে পয়লা বৈশাখ ।
নিবারণ প্রতি বছর ভোলার সঙ্গে নীল উৎসবে গৌরী সাজে । গ্রামে ওদের খুব নাম ডাক । কিন্তু এবার ভোলা রাজি না হওয়ায় অন্য কাউকে নিয়ে বেরিয়েছে ।
সেই নিবারণই সকালে এসে
প্রস্তাবটা দিল ।
গঞ্জের হাটখোলায় চৈত্র সংক্রান্তির মেলা হয় । চড়ক ঘোরে । গাজন সন্ন্যাসীদের ভিড় । মাঠ জুড়ে ব্যাপারীরা পসার সাজায় ; পুতুল,বাসনকোসন,সস্তা কাঠের আসবাব বিক্রি হয় । নাগরদোলা দোলে । পাপর,পেঁয়াজি,জিলিপি হাতে হাতে ফেরে । ঝাঁরফুঁক,মাদুলীর দোকান ইত্যাদি আরো কত কিছুর আয়োজন ।
হাট খোলার চারিধারে পাকা দোকান । সারা বছরের ব্যবসা । মুদিখানা,চালের দোকান,জামা কাপড়ের দোকান , হোমিওপ্যাথি ডাক্তারখানা । একটা সেলুন ।
চৈত্র সেলে জামা কাপড়ের বিক্রিটাই বেশি । মেয়েদের সায়া ব্লাউজ,ছোটদের জামাপ্যান্ট,কম দামের শাড়ি বিক্রি হয় । ডিস্কাউন্ট কথাটার মানে ঠিক না বুঝলেও গ্রামের দেহাতী মানুষগুলো এটা বোঝে চৈত্রের সেলে কিছু কিনলে তারা অনেক কম দামে জিনিসটা পায়। তাদের লাভ হয় । বস্তুর গুনগত মান নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা কম ।
মুশকিল হল তারা এই সময় বড় দোকান এড়িয়ে চলে । সেটা দোকানীরা বুঝেই দোকানের সামনে মাদুর পেতে পসরা সাজায় । তাতে বিক্রিটা বাড়ে ।
হাটখোলার সবচেয়ে বড় কাপড়ের দোকান মঞ্জু বস্ত্রালয়ের মালিক বিভাসবাবু ভোলাকে ডেকে পাঠিয়েছেন । ভোলাকে মহাদেব সেজে দোকানের সামনে মাদুরে বসতে হবে । পাশে একটা নতুন দোকান হয়েছে । ওদের টেক্কা দিতে হবে । শোনা গেছে ওরা কি এক সঙ সাজিয়ে দোকান দেবে ।
ভোলা কথাটা শুনে ভেতর ভেতরে রেগে গেলে । বাবার সাজের যে মহিমা তাকে এই ভাবে ব্যবসার কাজে লাগানো ! তাকে কত বাড়িতে মহিলারা দেবতা জ্ঞানে প্রনাম করে । আর আজ !
না করা গেল না । নাতিটার খালি গায়ের কথা মনে পড়ল ।