ভৌতিক গল্প।। মেছুনির বিল।। রতন চক্রবর্তী ।। কথাকাহিনি ২৬; ১লা এপ্রিল ২০২১;
এক
রাত আটটা বেজে দশ। এরই মধ্যে চারপাশটা নিঝুম হয়ে গেছে। কাল পূর্ণিমা গেছে। আকাশে চাঁদ। জোস্নায় চারপাশ থৈ থৈ করছে। বিলের জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব কাঁপছে। বিলের তীরে গাছে গাছে ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে। নৌকাটা ঘাটেই বাঁধা আছে। ঢেউয়ের তালে তালে দুলছে।
এই বিলের একটা বদনাম আছে। জল-পিশাচের রাজত্ব এই মেছুনির বিল। যদিও মাছে ভরা এই বিল। কিন্তু দিনের বেলাতেও ভূতের ভয়ে এই বিলে কেউ মাছ ধরতে আসেনা। কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই রাতের বেলা মাছ ধরতে আসতে হলো ভজন লালকে। কারণ একটু আগে ভজন লালের মেয়ের জামাই এসে হাজির। ঘরে মাছ কিংবা ডিম কিছুই নেই। তাই বাধ্য হয়েই আসতে হলো।
ঘাটে বাঁধা নৌকাটা ভজন লালের। মাঝে মধ্যে সে দিনের বেলা এসে মাছ ধরে। আজই প্রথম সে রাতে মাছ ধরতে এলো। ওর ভয় -ডর বলতে কিছু নেই। তাই এসেছে সে। নৌকায় ওঠে বসলো সে। ঠিক তখনই একটা জোরালো টর্চের আলো এসে পড়লো ওর মুখে। হাত দিয়ে চোখ ঢাকলো সে।
টর্চের আলোটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো। পাহারাদার রাম লাল। ভজন লালকে দেখেই চিৎকার করে ওঠলো সে-,'আরে, ভজন কাকা, তুমি এখানে, এই রাতে! তোমার কী ভয় ডর বলতে কিছু নেই? '
'কোন উপায় নেইরে রাম। হঠাৎ জামাই এসে হাজির, কী করবো বল? ' ভজন জবাব দিলো।
রাম লাল এত করে বুঝিয়েও ভজন লালকে রাজি করাতে না পেরে অসহায় ভাবে ফিরে গেলো।
দুই,
নৌকাটা বেয়ে বিলের মাঝখানে নিয়ে এল ভজন লাল। লগিটা গেঁথে দিল মাঝখানটায়। তারপর নৌকাটা লগির সাথে আটকে দিয়ে, বিলের জলে জাল ফেলল। অনেক কষ্টে জালটা টেনে তুলতেই, ওটা মাছে ভরা দেখতে পেলো সে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই নৌকাটা মাছে ভরে গেল। আনন্দে মনটা ভরে ওঠল ভজন লালের। হঠাৎ পেছনে, জলে একটা আলোড়ন টের পেল সে। কিছু একটা ধেয়ে আসছে নৌকার দিকে! ঠিক তখনই চাঁদটা মেঘে ঢেকে গেল। আবার যখন মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা বেরিয়ে এল, তখনই ভজন লাল উপলব্ধি করল, সে নৌকায় একা নয়! নৌকাটার যে দিকে মাছ গুলো, সে দিকে, কালো চাদর গায়ে দিয়ে কিছু একটা বা কেউ বসে আছে! মাথা কাত করে ওটা তাকালো ভজন লালের দিকে। জ্বলন্ত কয়লার টুকরোর মত দুটো চোখ দেখতে পেল ভজন লাল। বুকটা কেঁপে ওঠলো ওর। ওটা জল পিশাচ নয়তো!
পরিশিষ্টঃ পরদিন সকালে, বিলের ঘাটে নৌকাটা দেখা গেল। তাতে অসংখ্য মাছের কাঁটা, মাছের মুড়ো। মনে হচ্ছে কাচা মাছগুলো চেছে পুছে খেয়ে গেছে কেউ! আর ভজন লালের খোঁজ কোন দিনও আর পাওয়া যায়নি। কী হয়েছে ওর কেউ জানেনা!!
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
★★★★
রতন চক্রবর্তী,
বিবেকানন্দ রোড(সাহারা বিল্ডং এর পাশের গলি)
চাঁপাডালির মোড়,
বারাসাত,কোলকাতা-৭০০১২৪।
মোবাইল+হোয়াটসঅ্যাপঃ ৯০৭৩২১৬২৩৭।