Click the image to explore all Offers

গল্প।। রস চুরি ।। আবির চক্রবর্তী ।। কথাকাহিনি ২৬; ১লা এপ্রিল ২০২১;

       

            


                            
এক
 
            আমরা তিন বন্ধু ,আমি,অয়ন আর আকাশ মিত্তিরদের রোয়াকে বসে আড্ডা দিচ্ছি। রবিবারের সকাল।তাই,স্কুল বন্ধ। একে তো শীতকাল। তার উপর আবার সূর্যের দেখা নেই। শীতে কাঁপতে কাঁপতে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ আকাশ কথার মাঝখানে বলে উঠল," এই জানিস,ভোলা জেঠুর বাগানের খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধা হয়েছে।" আকাশ উৎফুল্ল হয়ে বলল, " তাই নাকি রে,তবে তো সেটা পেটস্থ করতেই হবে। কী বলিস শুভ?" আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিল অয়ন। আমি বললাম, অবশ্যই, এটাই তো আমাদের কাজ। তবে একটা সমস্যা আছে। ভোলা জেঠু যা মানুষ,ধরতে পারলে ঠ্যাঙ খোঁড়া করে দেবে।" আকাশ বলল, "তারও উপায় আছে। সেটা আজ রাতেই টের পাবি।এখন বাড়ি যা,রাতে জেঠুদের বাগানের সামনে চলে আসিস।
 
দুই
 
         শীতের রাতে কাঁপতে কাঁপতে আমি আর আকাশ হাজির হলাম ভোলা জেঠুর বাগানের সামনে। অয়ন আগেই চলে এসেছে। আমি অয়নকে বললাম, "তুই যে কী করতে চাইছিস কিছুই তো বুঝতে পারছি না। এই শীতের রাতে এখানে আসার কোনো মানে হয়না।" আকাশ বলল, "কেন,তোরা কী খেজুরের রস খেতে চাস না?" অয়ন বলল, "চাই,অবশ্যই চাই।" আকাশ বলল," তাহলে চল আমার সাথে।" আকাশ একটু এগিয়ে গিয়ে বাগানের পাঁচিলটার সামনে দাঁড়াল। আমি আকাশকে জিজ্ঞেস করলাম, " তুই কি পাঁচিল টপকানোর মতলব করছিস নাকি?" আকাশ কিছু বলল না।শুধু আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। দেয়ালটা বেশি উঁচু নয়। প্রায় ছয় কি সাত ফুট। আকাশ এক লাফে পাঁচিলটার উপরে উঠে গেল। আমাদেরও আসতে ইশারা করে আকাশ বাগানে নেমে গেল। আমরাও সাহস করে পাঁচিলটা টপকে বাগানে নেমে পড়লাম। সারা বাগান গাছে ভরা। আম,লিচু,কাঁঠাল কোনো ফলের অভাব নেই বাগানে। বাগানের চারদিকে চারটে খেজুর গাছ। প্রত্যেকটাতেই একটা করে হাঁড়ি বাঁধা। আকাশ বলল," ফলো মি।"  আমরা কথা মতো আকাশকে ফলো করতে লাগলাম। একটু দূর এগোতেই আকাশ হঠাৎ আমাদের থামিয়ে দিয়ে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে টেনে নিয়ে গেল। অয়ন অবাক হয়ে বলল, " কেস টা কী হলো ?"  আকাশ ফিসফিস করে বলল,"চুপ,একদম চুপ করে থাক। ওই দেখ।"- আকাশ আঙুল দিয়ে কিছু একটা দেখাল। আমরা সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম কয়েকটা ছায়ামূর্তি একটা খেজুর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটা ছায়ামূর্তি খেজুর গাছের উপরে উঠছে। আমি বললাম,"এ-কী রে, এ আবার কী কেস ? মনে হচ্ছে অন্য কোন দল চলে এসেছে রসের লোভে।" আকাশ বলল, "আমার ও মনে হচ্ছে তাই।" 
 

তিন
 
           আমরা তিনজন মিলে দেখতে লাগলাম ওদের কান্ড। ওদের মধ্যে থেকে যে গাছে উঠেছিল, সে গাছ থেকে রসের হাঁড়িটা নামিয়ে আনল। ঠিক সেই সময়," ধর, ধর, চোর গুলোকে ভালো করে ধর।"- বলে বাগানের ভেতর কয়েকজন লোক এসে ঢুকল। আরে, এ যে ভোলা জেঠু ! তার বিশাল ভুরিটা দেখে তাকে সহজেই চেনা যাচ্ছে। জেঠু তার দারোয়ানদের আদেশ করে বলল," কীরে, হাঁ করে দেখছিস কী ? যা, ওদেরকে ভালো করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেল। আদেশ মতো কাজ করল দারোয়ানরা। আকাশ বলল, "চল এখান থেকে কেটে পড়ি,নইলে আমরাও কেস খাব। সেটাই আমাদের ঠিক মনে হল। আমরা তাড়াতাড়ি লুকিয়ে লুকিয়ে বাগান থেকে বেরিয়ে এলাম। অয়ন বলল," আমাদের কপাল ভালো, তাই বেঁচে গেছি।" আকাশ বলল, " দরকার নেই রস খাওয়ার। আমার বুকটা এখনো কাঁপছে। কী জানি ওদের কপালে কী আছে !

পরিশিষ্ট  : সেই ঘটনার প্রায় এক বছর কেটে গেছে। আমরা আর কখনো ওই বাগানের ধারে কাছেও যাইনি। কারন,যারা সেই বাগানে রস চুরি করতে গিয়ে ওই দিন ধরা পড়েছিল, ভোলা জেঠু নাকি তাদের কঠিন শাস্তি দিয়েছিল।।
 
ছবিঋণ- ইন্টারনেট । 

                                           ❌❌❌                            

                                      আবির চক্রবর্তী 
                      বিবেকানন্দ রোড, চাঁপাডালি মোড় ,
                                বারাসত - 700124 ।।

মোবাইল + হোয়াটস্এপ  :  9330535206 ।।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.