অলৌকিক পেনড্রাইভ
বদরুদ্দোজা শেখু
এইযে ইমরুল, একদিন সকালে হন্তদন্ত হ'য়ে কিছু একটা খুঁজছে। প্যান্টের পকেট , ব্যাগ,পড়ার টেবিল, জামার পকেট সব তন্নতন্ন ক'রেও খুঁজে পাচ্ছে না। তার বউ প্রমীলা জিজ্ঞাসা করলো, সকাল সকাল কী এতো হন্যে হ'য়ে খুঁজছো বলো তো ?--- আরে তোমার পেনড্রাইভটা। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ওই যে কলকাতায় তোমার পেনশনের নতুন ফর্মটা প্রিন্ট করার জন্য নিয়ে গেলাম না, কিন্তু সে তো লাগলো না।
যাই হোক ওখানে ব্যাগ থেকে প্যান্টের পিছনের পকেটে নিয়েছিলাম। ওখানেই ছিল।আর তো কোথাও বের করিনি। কিন্তু গেলো কোথায় ? মনে তো পড়ছে না।
---- জানিনা বাপু, আমি তো তোমার হাতেই দিয়েছিলাম, তুমি তো আমাকে আর ফেরৎ দাওনি। কোথায় রেখেছো, ভালো ক'রে মনে করো। ওটা হারালে আমার সর্বনাশ হ'য়ে যাবে। ওতে আমার হোমের পুরো প্রোফাইল আছে। আরো কিছু ডিএম সাহেব তৈরী করতে দিয়েছিলেন, সেগুলোও সব ওতে আছে ; হারিয়ে গেলে কেলেঙ্কারী হবে। ডিএম সাহেব না বলা পর্যন্ত ওগুলো কোথাও দেওয়া যাবে না , উনি বলেছেন । ভালো ক'রে খুঁজো।- - এতো মহা জ্বালা হলো, কোনো কিছুই কি ঠিক মতো রাখতে পারো না ? আর গুরুত্ত্বপূর্ণ জিনিসগুলো ও এতো সামলে' রাখে যে পরে আর মনে করতে পারে না। যাচ্ছেতাই লোক একটা !
----- আরে, প্যান্টের পকেটেই তো রেখেছিলাম, কলকাতা থেকে ফিরে এসে পকেট থেকে কিছু বের করেছি ব'লে তো মনে হচ্ছে না ! চারদিন হ'য়ে গেলো , আমি তো আর ওই প্যান্ট ব্যবহারই করিনি। মেয়েকে কল্যানীতে ফোন ক'রে জিজ্ঞাসা করায় মেয়ে বললো, কী হলো বাবা, কী চেঁচামেচি করছো ?
--- আরে , তোর মায়ের পেনড্রাইভটা, কলকাতা নিয়ে গেলাম, প্যান্টের পকেটে রেখেছিলাম, এখন দরকারে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ! তুই দেখেছিস ? তুই কি নিয়েছিলি ?
----- নাঃ, আমি কি ক'রে বলবো ? আমাকে তুমি কিছু দাও নি। আমাকে বলতে পারবে না । ভালো ক'রে মনে করো, কোথায় বের করেছিলে আর কোথায় রেখেছো- - - - সে ফোন কেটে দিলো।
এতো ভারী সমস্যা হলো। সে মনে মনে ভাবে, তারা কোথায় কোথায় গেছিল। শিয়ালদহ থেকে সমাজ কল্যাণ অধিকারের অফিস, তারপর বইমেলা , তারপর রাতে এসে খেয়েদেয়ে হোটেলে এসে ঘুমালো।
ভোরে যখন হাজার দুয়ারী এক্সপ্রেস ধরার জন্য বের হলো তখনও তো ওটা পকেটেই ছিল দেখলাম। আর টাকাপয়সাগুলোও তো ওই পিছনের পকেটেই ছিল । তাহলে ? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে হলো, ট্রেন ছাড়ার আগে যে চা খেতে প্ল্যাটফর্মে নামলাম ভোর ছ'টার সময় , তখন চাওয়ালাকে পয়সা দেওয়ার সময় খট ক'রে কিছু পড়ার আওয়াজ হ'য়েছিল , সে ভেবেছিল হয়তো খুচরো পয়সা পড়লো , ভালো ক'রে এধার ওধার খুঁজেও দেখলো , কোনো পয়সা বা কিছু প'ড়ে থাকতে দ্যাখে নি। ভেবেছিলো, পড়ে যদি তো দু'টাকা বা পাঁচ টাকার কয়েন পড়বে, ওগুলো টাকার নোটের সাথে ঢুকে' যায় , অনেক সময় প'ড়ে যায় , কুড়িয়ে নেয় । ভিড় ছিল। কিছু যখন দেখা গেলো না,
তখন পড়েনি বা পড়লেও বড়ো জোর পাঁচ টাকার কয়েন হবে, হয়তো প'ড়ে চা স্টলের তলায় ঢুকে গেছে বা ট্রেনের লাইনে কোথাও চ'লে গেছে, যাক গে। এখন ভালো ক'রে মনে করলো , আওয়াজটা তো কোনো কয়েন বা পয়সা পড়ার মতো আওয়াজ হয়নি , ঠুক ক'রে কিছু পড়ার শব্দ হয়েছিলো। এইবার তার মনে দানা বাঁধলো, যে নিশ্চয় তখুনি পেনড্রাইভটাই প'ড়ে গেছে আর ছিটকে' স্টলের তলায় ঢুকে গেছে , তাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভালো ক'রে ভেবে দেখলো, নিশ্চয় এইটাই হয়েছে। তার বউ মেয়ে তখন ট্রেনের কামরায় ব'সে ছিলো। তাই তারা বলতে পারবে না। - - - - তাহলে হয় ওই স্টলের নীচে প'ড়ে থাকবে, না হয় ওরা যখন ঝাঁট দিয়েছে তখন ওই স্টলওয়ালাই পেয়ে থাকবে বা প্ল্যাটফর্ম ঝাড়ুদার পেয়ে থাকবে বা দেখে থাকবে। ভালো ক'রে ভেবে দেখলো, নিশ্চয় এইটাই হয়েছে। তখন তার মনেও হয়নি যে পেনড্রাইভটা প'ড়ে যেতে পারে।তাতে কোনো দড়ি লাগানো ছিলো না। তবে লাল রঙের উপরে সাদা রঙের পেন্টে প্রমীলার নাম লেখা ছিলো। দেড় ইঞ্চি মতো ছোট্ট জিনিস। সান ডিস্কের। ওটা কী আর পাওয়া যাবে ? চার দিন হ'য়ে গেলো। পরক্ষণেই ভাবলো, যদি স্টলওয়ালা কেউ পেয়ে থাকে তো নিশ্চয় তুলে রাখবে। বা রাখতে পারে বা ঝাড়ুদার মাসী যদি পায়, তাকে দিয়ে থাকতেও পারে। এখনই যদি যাওয়া যায় তো একবার খুঁজে দেখতে পারে বা ওদেরকে জিজ্ঞাসা ক'রে দেখা যেতে পারে। হয়তো পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। ভাবলো, কিন্তু এখন তো কলকাতা ষ্টেশন যাওয়ার সব ট্রেন চ'লে গেছে। তার স্ত্রীকে বললো। শুনে সে তো মহা খাপ্পা। চারদিন আগে যদি চায়ের স্টলে প'ড়েও থাকে তা কি এখন আর পাওয়া সম্ভব ? বোকার মতো কথা বোলো না। ওরা হয়তো ঝাঁট দিয়ে ফেলে দিয়েছে কি অন্য কোনো যাত্রী পেয়ে গেছে। তুলে নিয়েছে। আজকাল অনেকেই তো পেনড্রাইভ ব্যবহার করে। আর সারাদিনে ওই প্ল্যাটফর্ম দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে।
গেলো, আমার পেনড্রাইভটা গেলো ! এই জন্যই আমি তোমাকে ভরসা করতে পারি না , কিছু না কিছু একটা ঘটিয়েই ফেলবে ! এখন চার দিন পর সেই জিনিস খুঁজতে কলকাতা ষ্টেশনে যাবে ! মজা ! যাও তুমি পারলে যাও, আমাকে বোলো না !
ইমরুল আবার বুঝালো, চলো গিয়ে দেখিই না , কাল সকালে ধন্যাকুমারী এক্সপ্রেস আছে, সাড়ে এগারোটা বারোটা নাগাদ কলকাতা ষ্টেশনে পৌঁছাবে।আবার বেলা দুটোর সময়ে ওখান থেকেই ফেরার ট্রেন আছে , ফিরে আসবো। দু'ঘন্টা সময় হাতে পাবো, যদি জিনিসটা পাওয়া যায় । পাওয়া তো যেতেই পারে আবার নাও যেতে পারে। নাহয় ঘুরেই আসবো বৃথা , তবু তো মনে একটা শান্তি হবে যে আমরা যথাসাধ্য খুঁজেছি। চলোই -- না।
----- খবরদার ! তুমি এই অসুস্থ শরীরে যেতে পারবে না একা একা আর আমিও যেতে পারবো না।মেয়েটাও সাথে আসেনি, কল্যানীতেই নেমে গেছে ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ আছে ব'লে।তাকেও তো পাওয়া যাবে না। - - -
---- ।নাঃ, আমাকে যেতেই হবে, খুঁজে দেখতে হবে।নাহলে শান্তি হবে না
------একগুঁয়ের মতো কাজ কোরো না। ও আর পাবে না। বেকার আমাকেও হয়রান কোরো না। কপালে দুঃখ আছে । ছেড়ে দাও ওই বেয়াড়া ভাবনা।স্ত্রী চেঁচিয়ে বললো। যাই হোক , সারাদিন ইমরুল গোঁজ হ'য়ে থাকলো আর বললো , আমি যাবোই।
- - - - পরদিন ভোরভোর তার স্ত্রী দেখছে , সে প্যান্টশার্ট প'রে রেডি হচ্ছে। শুধু পানি আর ব্যাগটা নিয়ে বেরোতে যাচ্ছে !
----কী হলো ? তুমি কথা শুনবে না ? এ তো মহা জ্বালা ! তোমাকে তো একা ছাড়া যাবে না ! কোথায় অসুস্থ হ'য়ে প'ড়ে থাকবে। রেগেমেগে সেও তাড়াতাড়ি শাড়ি ব্লাউজটা প'রে বললো, চলো, মরণ আর কী ! এরকম একগুঁয়ে ছেলেমানুষি করার মানে হয় ?
যাই হোক, তারা ঘরে তালা দিয়ে ঝটপট টোটো ধ'রে বহরমপুর কোর্ট ষ্টেশনে এসে টিকিট কেটে দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালো। যথাসময়ে ট্রেনে উঠে পড়লো, সীটও পেয়ে গেলো। সে ডায়াবেটিস ও হার্ট সার্জারীর রোগী। তাকে ওর স্ত্রী সময় মতো ওষুধ খাওয়ার তাগাদা দিয়েই চললো। দুজনেই গুমসুম। বেলা সাড়ে এগারোটায় তারা কলকাতা ষ্টেশনের দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মে নামলো। চারিদিক দেখেটেখে বললো, আরে ওইতো সেই স্টলটা । ঠিক জায়গায় আমরা নেমেছি। একটু দাঁড়িয়ে থাকলো। স্ত্রী তাগাদা দিলো, কই চলো ।---হ্যাঁ যাচ্ছি। সব যাত্রীর ভিড়টা কমুক। যাত্রীরা চ'লে গেলে তারা ওই চা স্টলে গিয়ে তাদের পেনড্রাইভটার খোঁজ করলো। দোকানদার দু'জন শুনে বললো, ওটা কী জিনিস ? ওরা তো চেনে না। কবে প'ড়েছিলো বলছেন ? ইমরুল বুঝিয়ে বললো, তার সাইজ কী রকম , কম্পিউটারে ব্যবহার হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ওরা বললো, ওরা ওই জিনিস কক্ষণো দ্যাখেইনি। আর যদি প'ড়েও থাকে তো চারদিন হ'য়ে গেছে, ঝাঁট খেয়ে কোথায় চ'লে গেছে কে জানে ! তবুও ইমরুল তাদের স্টলটার তলায় খুঁজে দেখবার বারবার অনুরোধ করলো, তাদেরকে বুঝালো তাদের জিনিসটা কতো প্রয়োজনীয়। ওরা বললো, আরে বাবু, আপনি বেকার কথা বলছেন। এই স্টল তো সব সময় এই রকম থাকে না। আমরা রাতে এই স্টল গুটিয়ে ঝাঁট দিয়ে সাটার নামিয়ে লক ক'রে যাই। আর দেখুন , চারিদিকে চাকা লাগানো আছে। আমরা দু'বেলা পরিষ্কার করি, এর তলে কী ক'রে ও জিনিস থাকবে ? আর প্ল্যাটফরমও তিনচার বার বিভিন্ন ঝাড়ুদার ঝাঁট দ্যায়। হয়তো ঝাঁট দিয়ে ফেলে দিয়েছে। সামনে প্ল্যাটফরমের নীচে রেললাইনের ধারে খোঁজ করুন, যদি দেখতে পান তো পাবেন। ইমরুল ও তার স্ত্রী হতাশ হ'য়ে পড়লো। তাদের জানা ছিলো না যে ওই স্টল প্রতিদিন গুটানো ও খোলা হয়, তলায় ঝাঁট দেওয়া হয়। তাহলে হয়তো আসতোই না ! তারা দু'জনে বার পাঁচ ছয়েক ওই প্ল্যাটফর্মের নীচটা ওপর থেকে ভালো ক'রে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খুঁজে দেখলো ; কিন্তু কোথাও ওই পেনড্রাইভের চিহ্নটুকুও দেখা গেলো না। তারা আরো হতাশ হ'য়ে পড়লো। এঃ বেকার হলো ! স্টলগুলো যে গুটানো যায় এটা তার ধারণা ছিলো না, তাহলে আসতোই না, সে বারবার বলতে লাগলো। ওর স্ত্রী বললো, বেশ সুখ মিটলো তো, এবার চলো, খুব খিদে পেয়েছে, কোথাও খাবার পাওয়া যায় কিনা দ্যাখো। ওই সময় একজন ঝাড়ুওয়ালী ঝাঁটা হাতে হেঁটে আসছিলো। তাকেও জিজ্ঞাসা করলো , সেও বললো ওরা পেনডেরাইভের নাম কোনোদিন শুনেনি, আর চেনেও না। আরো বললো, দিনে দু'তিনবার ঝাঁট পড়ে , তারপর, ওই দেখুন সকালে লাইনে পানি দেওয়া হয়, কতো ধুলোময়লা পড়ে , ও আর কী ক'রে পাবেন ? হয়তো ময়লা প'ড়ে ঢাকা প'ড়ে গেছে। সে আরো দু'জন ঝাড়ুওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলো ডেকে , ওরাও বললো ওই জিনিস ওরা চেনেনা , আর নামও শুনেনি । ইমরুল আর তা স্ত্রী কিছুটা আশ্চর্য হলো, কলকাতায় থাকা মানুষরাও এখনো পেনড্রাইভ কী জিনিস তা জানেনা ! এই হলো দেশের হাল । অগত্যা তারা ফিরে আসারই মনস্থ করলো। তবু ইমরুল তার স্ত্রীকে বললো, একটু দাঁড়াও, শেষবার আরো একবার খুঁজে দেখি প্ল্যাটফর্মের নীচটা। তার স্ত্রী দূরে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইমরুল খুব ধীরে সুস্থে প্ল্যাটফর্মের নীচটার এধার ওধার ভালো ক'রে দেখতে দেখতে যাচ্ছে, এমন সময় সেই স্টলের সামনেই নীচে রেললাইনের ধারে খুব খুব অস্পষ্ট একটা পেনড্রাইভের সাইজের মতোই একটা ক্ষীণ রেখা দেখতে পেলো, রঙটাও মন হচ্ছে লালই হবে।ধুলোর আস্তরণে অস্পষ্ট। সাথে সাথে সে প্রমীলাকে ডাকলো, এই প্রমীলা, এসো এসো, ওই দ্যাখো, ওইটা পেনড্রাইভের মতো মনে হচ্ছে না ? ও আঙুল দিয়ে নির্দেশ ক'রে ওর স্ত্রীকে দেখালো।
----হ্যাঁ, তাইতো, ওটাই হ'তে পারে, নেমে দ্যাখো তো !
চায়ের স্টলওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলো, এখন এই লাইনে কোনো ট্রেন আসবে কিনা।চাওয়ালা বললো, না , এখন এক ঘন্টা এ লাইনে কোনো ট্রেন আসবে না। সঙ্গে সঙ্গে ইমরুল ব্যাগ রেখে কুদ মেরে প্ল্যাটফর্মের নীচে নেমে পড়লো। আর ওই অস্পষ্ট জিনিসটাকে আঙুল দিয়ে উসকিয়ে তুলে আনলো।
কী আশ্চর্য ! ওইটাই তাদের সেই হারানো পেনড্রাইভ।
উল্টো দিকে সাদা পেন্ট দিয়ে প্রমীলার নাম লেখা। ইমরুল ক্ষণকাল তাজ্জব ব'নে গেলো। তার আনন্দের আর সীমা রইলো না। সে বললো, এই দ্যাখো দ্যাখো, পেয়েছি পেয়েছি, ধরো আমাকে ধরো, বলেই সে উপর দিকে হাত বাড়ালো। তার স্ত্রী তাকে টেনে তুলতে সাহায্য করলো। উপরে উঠেই সে প্রমীলার হাতে দিয়ে আনন্দে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
হাহাঃ যেন অলৌকিকভাবে পেনড্রাইভটা দেখা দিলো ,মণি। তারা আনন্দে আলিঙ্গন ক'রে বসলো স্থানকালপাত্রের কোনো খেয়াল না ক'রেই। তখন কয়েকজন যাত্রী ও ঝাড়ুদার মাসী ও চাস্টলওয়ালা অবাক হ'য়ে ওদের কে দেখছে। আনন্দে ইমরুল ঘেমেনেয়ে অস্থির। তার চোখে যেন পানি চ'লে এলো। ওর স্ত্রী বললো, যাক তোমার খুঁজতে আসার জিদ সার্থক হলো।
পেনড্রাইভটাকে রুমাল দিয়ে পরিষ্কার ক'রে ওরা তখন সেই স্টলওয়ালা ও সবাইকে দেখালো , দেখুন, পেয়েছি। এটাই হলো আমাদের হারিয়ে যাওয়া পেনড্রাইভ। দেখুন উল্টো পিঠে সাদা রঙে আমার স্ত্রীর নাম লেখা আছে। ওরা দেখে অবাক হ'য়ে চেয়ে রইলো, এতোটোকু জিনিস খুঁজতে আপনারা বহরমপুর থেকে কলকাতায় এসেছেন ! ওরা বললো, ওরা কখনো এই জিনিস দ্যাখেনি।
ওর স্ত্রী বললো, যাক বাবা, পাওয়া তো গেছে ! চলো, এবার কিছু খাবার পাওয়া যায় কিনা দেখি।- - - তারা রেলের রেস্তোঁরায় মাছভাত খেয়ে ফেরার টিকিট কাটলো আর বেলা দু'টোর ট্রেন ধরলো ওই একই প্ল্যাটফর্ম থেকে। ইমরুলের চোখেমুখে তখনো আশ্চর্য অলৌকিক প্রাপ্তির ঘোর কাটছে না। বাড়ি এসে তারা পরদিন ওটাকে ডেটল দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ল্যাপটপে লাগিয়ে পরীক্ষা ক'রে দেখলো, সব ঠিক আছে। প্রমীলা বললো, ভাগ্যিস আমার নামটা ওতে লিখে দিয়েছিল ! তার আগের রাতেই অবশ্য মেয়ের মা তার মেয়েকে খবরটা দিয়ে দিয়েছে বিস্তারিত।
ওর মেয়ে ব'লে উঠলো ফোনে, যাক তাহলে বাবা তোমার ধারণা সার্থক হলো ! ইমরুল বললো , হ্যাঁ, আমাদের সততার জিনিস যাবে কোথায় ? তবে ,কলকাতা স্টেশনের মতো জনবহুল জায়গায় পেনড্রাইভের মতো একটা ছোট্ট জিনিসকে চার-পাঁচ দিন পর খুঁজে পাওয়াকে আমার অলৌকিক ঘটনা বলেই মনে হয়। আমি আজ থেকে ওর নাম দিলাম অলৌকিক পেনড্রাইভ।
ব'লে বললো, এবার দড়ি লাগিয়ে তোর মায়ের হাত দিয়ে দিলাম।বাবা, বাঁচা গেলো ! প্রমীলা হাসতে হাসতে বললো, ভাগ্যিস তুমি জিদ ধ'রে গেছিলে, আর একদিন পর গেলেই ওটা ধুলোময়লায় ঢাকা প'ড়ে যেতো।
এখনও ওরা দু'জন সেই হারানো পেনড্রাইভ খুঁজে পাওয়াটাকে এক অলৌকিক ঘটনা ব'লেই মনে করে । এ ছাড়া তা পাওয়া সম্ভব হতো না। ইমরুল তো এটাকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অলৌকিক ঘটনা বলেই মনে করে। সে আর কখনো পকেটে পেনড্রাইভ রাখে না।আর কাজেকর্মে কোনো সময়ে সেই পেনড্রাইভটি হাতে এলে সেই অলৌকিক পাওয়ার মুহূর্তের পানে বিহ্বল হ'য়ে তাকিয়ে থাকে।
--------------------------------------------
ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
--------------------------------------------------------------------
বদরুদ্দোজা শেখু
ঠিকানা-- 18 নিরুপমা দেবী রোড , বাইলেন 12 ,
শহর+পোঃ- বহরমপুর , জেলা--মুর্শিদাবাদ,
PIN -742101
পঃ বঙ্গ , ভারত ।
হো• অ্যাপ নং +91 9609882748