গল্প।। সিসিফাস চরিত।। রঞ্জন চক্রবর্ত্তী
সিসিফাস চরিত
রঞ্জন চক্রবর্ত্তী
থেসালীর রাজা এওলাসের পুত্র সিসিফাস ছিল করিন্থের প্রথম রাজা। তার পৃষ্ঠপোষকতায় নৌবাহবিজ্ঞান এবং নৌবাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি ঘটেছিল। কিন্তু একটি বিশেষ কারণে সে দেবরাজ জিউসের কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেই সময় গ্রীসদেশে প্রথা ছিল পথিক, ভ্রামণিক বা বহিরাগতদের সঙ্গে সদাশয় আচরণ করতে হবে এবং যথাসাধ্য আতিথেয়তা দেখাতে হবে। এই নীতির প্রবক্তা ছিলেন দেবরাজ স্বয়ং। কিন্তু সিসিফাস তার বিপরীত আচরণ করত। সে বিভিন্ন ছলের আশ্রয় নিয়ে বহিরাগতদের হত্যা করত, যাতে সকলে জানতে পারে সে লৌহকঠিন হস্তে দেশ শাসন করে। স্বাভাবিকভাবেই জিউস এটা ভাল চোখে দেখেন নি, কারণ সিসিফাসের আচরণ ছিল তাঁর নীতির পরিপন্থী।
সিসিফাসকে নিয়ে লোকমুখে অনেক কথাই ভেসে বেড়াত। তার গল্প চারণদের মুখে মুখে ফিরত। অনেকেই তাকে ধূর্ত ও প্রবঞ্চক মনে করত, আবার কেউ কেউ বলত তার মত প্রজাপালক রাজা আর হয় না। তবে এটা ঠিক যে সে তার ভাই সালমোনিউসকে অন্তর থেকে ঘৃণা করত এবং সবসময় তার ক্ষতি করার উপায় খুঁজত। একবার তো সে সালমোনিউসের হত্যা করার পরিকল্পনাও ফেঁদেছিল। সেই উদ্দেশ্য তার মেয়ে টাইরোকে ছলে-বলে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে এনেছিল বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা সফল হয়নি। টাইরো বুঝতে পেরেছিল সবটাই তার পিতাকে সিংহাসনচ্যুত করার চক্রান্ত।
একদিন বিকেলে খোলা জানালার পাশে খুব চিন্তিতমুখে বসে ছিল সিসিফাস। তার রাজ্যের মানুষেরা দীঘদিন ধরেই পানীয় জলের সংকটে ভুগছে, অথচ সে কিছুই করতে পারছে না। আর পারবেই বা কী করে! তার রাজ্যে তো সুপেয় জলের কোনও উৎস নেই। নগর পত্তনের সময় থেকেই সৃষ্টি হওয়া এই সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে, প্রজাদের মধ্যেও ধীরে ধীরে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। জিউসের বিরাগভাজন হওয়ার জন্য দেবতাদের থেকেও সাহায্য পাওয়ার আশা নেই। অতএব সিসিফাসের মনেও দুর্ভাবনার অন্ত নেই। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করবে অহোরাত্র সেটাই ভেবে চলেছে সে।
এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল সিসিফাস। এমন সময় সে দেখল দেবতাদের রাজা জিউস পরমা সুন্দরী নদীর পরী এজিনাকে সঙ্গে নিয়ে আকাশপথে উড়ে যাচ্ছেন। এজিনা মোটেই স্বেচ্ছায় যেতে চাইছে না, যথাসাধ্য বাধা দিতে চেষ্টা করছে। কিন্তু অমিত পরাক্রমশালী জিউসকে প্রতিহত করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সিসিফাসের বুঝতে বাকী রইল না যে জিউস নদীর পরীটিকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর পরীটির বাবা নদীর দেবতা অ্যাসোপাস সেখান দিয়েই যাচ্ছিলেন। তাঁর হাবভাব দেখে সিসিফাস অনুমান করল তিনি মেয়ের খোঁজে বেরিয়েছে। রাজপ্রাসাদের জানালার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সিসিফাসকে দেখতে পেয়ে নদীর দেবতা তার কাছে এলেন। উদভ্রান্তভাবে তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কী আমার মেয়েকে এখান দিয়ে যেতে দেখেছ?
তখনই উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সিসিফাস। সে খুব ভাল করেই জানত যদি সত্যি কথাটা বলে দেয় তাহলে জিউস তার উপর বিলক্ষণ চটবেন। এমনিতেই দেবরাজ তাকে পছন্দ করেন না। আবার অ্যাসোপাসের অবস্থা দেখে তার মায়াও হচ্ছিল। সত্যিটা বলবে কী বলবে না এই দ্বিধায় ভুগতে ভুগতে তার মাথায় হঠাৎ একটা চিন্তা খেলে গেল। একদা প্রবীণদের মুখে শুনেছিল এই দেবতাটির ক্ষমতা নেহাৎ কম নয়, তার দ্বারাও তো রাজ্যের পানীয় জলের সমস্যার সমাধান হতে পারে। একজন রাজা হিসেবে প্রজাদের কল্যাণের উপায় করা তার কর্তব্য বটে।
সিসিফাসকে চুপ করে থাকতে দেখে অধৈর্য্য হয়ে অ্যাসোপাস আবার প্রশ্ন করলেন, চুপ করে আছ কেন? আমার মেয়েকে দেখেছ কোথাও?
এবার সিসিফাস চাপা গলায় বললেন, হ্যাঁ, আপনার মেয়েকে দেখেছি। সে কোথায় গেছে সেটাও জানি।
একথা শোনামাত্রই উত্তেজিতভাবে নদীদেবতা বললেন, তাহলে অযথা কালবিলম্ব না করে এখনই বল কোথায় সে?
নদীদেবতার মুখের দিকে তাকিয়ে সিসিফাস গম্ভীরভাবে বললেন, বলতে পারি, কিন্তু একটা শর্ত আছে। যদি কথা দেন আমার শর্ত মেনে নেবেন তাহলে সব কথা খুলে বলব।
নদীদেবতা বুঝলেন মেয়ের খোঁজ পেতে গেলে রাজী না হয়ে উপায় নেই। তাই অধীরভাবে বললেন, বল কী শর্ত তোমার। আমি কথা দিচ্ছি শর্ত পালন করব।
সিসিফাস বলল, আমার প্রজারা বহুদিন থেকে পানীয় জলের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। তাই আমার রাজ্যে পাকাপাকিভাবে সুপেয় জলের বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। এজন্য একটি ঝর্ণাকে করিন্থের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করতে হবে।
অ্যাসোপাস বাধ্য হয়ে বললেন, ঠিক আছে, তাই হবে। ঝর্ণাটিকে তোমার দেখান পথে বইয়ে দিয়ে করিন্থ রাজ্যে সুমিষ্ট পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেব। এখন আর দেরী না করে বল আমার মেয়ে কোথায়?
এবার সিসিফাস যা দেখেছে সবটাই আনুপূর্বিক বলল। জিউস কোনদিকে পরীটিকে নিয়ে গেছেন সেটাও দেখিয়ে দিল। তৎক্ষণাৎ মেয়ের সন্ধানে সেই দিকে ধাবিত হলেন অ্যাসোপাস।
সিসিফাস যখন নদীদেবতাকে তার মেয়েকে অপহরণের কথা বলছিল তখন সেখান দিয়ে একটি বক উড়ে যাচ্ছিল। একটুও দেরী না করে সে খবরটা পৌঁছে দিল জিউসের কানে। এতে স্বাভাবিকভাবেই সিসিফাসের উপর ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন জিউস। তিনি ঠিক করলেন সিসিফাসকে তার ধৃষ্টতার জন্য উচিৎ শিক্ষা দেবেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি ডেকে পাঠালেন তাঁর ভাই মৃত্যুর দেবতা হেডিসকে।
দেবরাজের জরুরী তলব পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে দেখা করতে এল হেডিস। তাকে দেখামাত্রই জিউস বললেন, করিন্থের রাজা সিসিফাসের স্পর্ধা সীমা ছাড়িয়েছে। তাকে এখনই উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া দরকার। সেই ব্যবস্থা করার জন্যই তোমাকে ডেকেছি।
বড় ভাইকে হেডিস খুব ভাল ভাবেই চিনত, তার স্বভাবের উগ্রতার সঙ্গেও পরিচিত ছিল। সে বিনীতভাবে বলল, আমায় কী করতে হবে বলুন? আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।
জিউস বললেন, লোকটাকে যে কোনও উপায়ে শায়েস্তা করতেই হবে। আমি আদেশ দিচ্ছি তাকে শিকলে বেঁধে পাতালের গভীরতম প্রদেশ টার্টারাসে নিয়ে যাও। যদি আমার আদেশ পালিত না হয় তবে তোমার কপালে দুঃখ আছে জানবে।
দেবরাজকে অভিবাদন জানিয়ে সেখান থেকে নিস্ক্রান্ত হল হেডিস। সে ঠিক করল সিসিফাসকে শিকলে বেঁধে টানতে টানতে পাতালে নিয়ে যাবে। সেই উদ্দেশ্য একটি লম্বা শিকল নিয়ে তার কাছে এল হেডিস। কিন্তু চতুর সিসিফাস কৌশলে হেডিসের উদ্দেশ্য জেনে নিয়ে তাকেই শিকলে বেঁধে ফেলল। এদিকে হেডিস শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকার ফলে পৃথিবীতে আর কারুরই মৃত্যু হচ্ছিল না। যুদ্ধে, বয়সোচিত কারণে বা রোগ-শোকে কেউ মারা যাচ্ছিল না। তাছাড়া দেবতাদের উদ্দেশ্য কোনও পশু উৎসর্গও করা যাচ্ছিল না। এর ফলে চর্তুদিকে অভাবনীয় বিশৃঙ্খলা ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। অবশেষে যুদ্ধের দেবতা এরিস পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে সিসিফাসকে কঠিন শাস্তির ভয় দেখালে তবে সে হেডিসকে ছেড়ে দিল।
তখনকার মত সমস্যাটা মিটলেও দেবতারা সিসিফাসের উপর চরম অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এদিকে সিসিফাসও বুঝতে পেরেছিল সে যা করেছে তার ফল ভাল হবে না। জিউসের বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস সচরাচর কেউ দেখায় না, ভাল করে সবদিক ভেবে না দেখেই ঝোঁকের মাথায় সে কাজটা করে ফেলেছিল। এজন্য প্রতিহিংসাপরায়ণ জিউস তাকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। আর হলও ঠিক তাই, ক্রোধে অন্ধ হয়ে জিউস আদেশ দিলেন সিসিফাস যেন অনতিবিলম্বে পাতালে হেডিসের কাছে চলে যায়। নাহলে তার আত্মীয়-পরিজন সকলেরই পরিণতি হবে ভয়ংকর।
একথা কানে আসার পর সিসিফাস বুঝতে পারল অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাকে মরতে হবেই। কিন্তু সে-ও সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ছল-চাতুরীর জন্য সে পৃথিবীতে বিখ্যাত ছিল। অনেক ভেবেচিন্তে সিসিফাস একটা পরিকল্পনা করল। শেষের মুহুর্ত ঘনিয়ে আসার আগে সে স্ত্রী মেরোপি-কে ডেকে তার কানে ফিসফিস করে বলল, আমার মৃত্যুর পর জিভের নীচে পয়সা রেখ না। তাছাড়া আমার মৃতদেহকে নিয়ম অনুযায়ী সৎকার না করে শহরের মাঝখানে চাতালে শুইয়ে রেখ। এটাই আমার শেষ ইচ্ছে।
সেই সময়ের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির মারা গেলে তার জিভের নীচে পয়সা রাখা হত। মানুষ বিশ্বাস করত এই পয়সাটা হল শেষ পারানির কড়ি। কিন্তু সিসিফাসের বারণ অনুযায়ী তার ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যতিক্রম করা হল। তবে তার স্ত্রী ছাড়া এই ব্যাপারটা আর কেউ জানল না। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী দেহ সৎকারও করা হল না।
মৃত্যুর পর সিসিফাসের নিথর দেহটা পড়ে রইল, তার আত্মা চলে গেল স্টিক্স নদীর দিকে। এই নদীর অপর পারেই পাতালের প্রবেশপথ। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করতে গেলে আগে নদী পার হতে হবে। স্টিক্স নদীর ধারে তার সঙ্গে দেখা করতে এল খেয়ার মাঝি শ্যারন, মৃত্যুর দেবতা হেডিসের শাগরেদ। সে এসেছে খেয়ায় চড়িয়ে মৃত ব্যক্তিকে পাতালে নিয়ে যেতে।
সিসিফাসের কাছে এসে শ্যারন হেঁকে বলল, তুমি প্রস্তুত তো, এবার নদীর ওপারে যেতে হবে।
সিসিফাস নিতান্ত সরলভাবে বলল, যাব বলেই তো এসেছি মাঝিভাই। তবে সমস্যাটা হল খেয়া পার হতে গেলে তোমাকে যে শেষ পারানির পয়সা দিতে হবে। কিন্তু আমার জিভের নীচে তো পয়সা রাখা নেই। তুমি কী পারানি ছাড়াই আমাকে পার করে দেবে?
শ্যারন অবাক হয়ে বলল, তা কী করে সম্ভব। তোমাকে শেষ পারানির কড়ি দিতেই হবে। নাহলে খেয়ায় চেপে নদী পার হবে কী করে?
এতক্ষণ সিসিফাস এমনভাবে কথা বলছিল যেন সে সরলতার প্রতিমূর্তি। মধুমাখা গলায় বলল, তাহলে তো পাতালের খেয়া পার হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় দেখছি। তুমি বরং কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর, আমি পাতালের দেবী পার্সিফোনিকে আমার সমস্যার কথা জানাই। তিনি নিশ্চয় আমার অবস্থাটা বুঝবেন।
সিসিফাস তখন পাতালের দেবী পার্সিফোনিকে কাতরভাবে অনুযোগ জানাল তাকে এভাবে জোর করে পাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত হচ্ছে না। এই বক্তব্যের সমর্থনে সে যুক্তি দেখাল পৃথিবীতে তার মৃতদেহের রীতিমাফিক যথাবিহিত সৎকার করা হয়নি। আর যেহেতু মৃতদেহ সৎকার হয়নি তাই স্টিক্স নদীর ওপারে পাতালে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া তার স্ত্রী জিভের তলায় পয়সা রাখেনি, অতএব মাঝিকে পারানি দেওয়াও তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তাকে যদি পৃথিবীতে ফিরে যেতে অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে আবার নাহয় ফিরে আসবে।
সিসিফাসের যুক্তিজাল ও আবেদন-নিবেদনে দয়ালু পার্সিফোনির মন ভিজল। তিনি চতুর সিসিফাসের কথায় রাজী হয়ে গেলেন। অগত্যা শেষ পারানির পয়সা সঙ্গে না আনার জন্য হেডিস তাকে যৎপরনাস্তি বকাবকি করে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হলেন। বিদায়কালে কড়া ভাষায় বলে দিলেন যাতে সে শেষ পারানির পয়সা সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসে। কিন্তু একবার জীবিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে গেলে আর তো কেউ মরতে চায় না। অতএব চতুর-চূড়ামণি সিসিফাসও আর পাতালে ফিরে এল না। আসলে এটাই তো ছিল তার পরিকল্পনা। দেবতাদের বোকা বানিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার পরমুহুর্তেই সে যাকে যা কথা দিয়ে এসেছে সব বেমালুম ভুলে গেল। এদিকে তার স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন, প্রজাবর্গ সকলেই তাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। তাদের নিয়ে দিব্যি সুখে দিন কাটাতে লাগল সিসিফাস।
অনন্তকাল ধরে এভাবেই পাথরটা পাহাড়ের উপর ঠেলে তোলার কাজ করে চলেছে সিসিফাস। তার কাজ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য এবং প্রয়াস নিস্ফলও বটে, কারণ কোনদিনই সে পাথরটাকে পাহাড়ের মাথায় তুলতে পারবে না। কিন্তু যতই অর্থহীন পরিশ্রম করুক ও অনন্ত হতাশার শিকার হোক এর থেকে তার কোনও পরিত্রাণ নেই।
-------------------------------