বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। ইচ্ছে অসুখ ।। শায়ন্তন সরকার

ইচ্ছে অসুখ 

 শায়ন্তন সরকার 


আমি কল্পপুরের তরুণ ছেলে তরুণ, আমাদের বাঁড়িতে মা,বাবা,আমি আর আমার বোন থাকি, চারজনের ছোট সংসার বলা যায় আর কী।

সুবল,লম্বা,চাওড়া বেশ সুন্দর আমাকে দেখতে, আয়নায় নিজেকে দেখি আর ভাবি আর কী।কিন্তু আমি যে পুরুষ মানুষ শুধু সৌন্দর্য দিয়ে তো কাজ হবে না, কাজ তো একটা খোঁজা লাগবে টাকা অনেক টাকা রোজগার করতে হবে এসব ও ভাবি, এখন তো মেয়েরাও বাঁড়ির বাইরে গিয়েও অনেক টাকা রোজগার করে, একি আর সেই পুরনো যুগ আছে নাকি?
তাহলে আমাদের ছেলেদের এতো বোঝা কেন আমাদেরই রোজগার করে বিয়ে করলে বউকে খাওয়াতে হবে?
বাঁড়িতে টাকা ইনকাম করে চালানোর সব দায়িত্ব কী আমরাই নিয়েছি??

আসলে এতো আমি ভাবতাম না হয়তো কিন্তু পাশের বাড়ির সেই দাদা টাকে দেখলে অনেক চিন্তায় মাথায় আসে সে তো খুব ভালো ছিল,ভালো মানে অতিরিক্ত ভালো সে, সবার সাহায্যে এগিয়ে আসতো সে তো, কারো কোনো ক্ষতি তো সে করেনি, অনেক চাকরির পরীক্ষাও দিয়েছে কিন্তু কিছু ভাগ্যবানের মতো সফল হতে পারেনি, হ্যাঁ আমি ভাগ্যবানই বলছি কারণ পড়াশোনাতেও তো বেশ ভালো সে, আমি দেখেছি দিনরাত পড়তো কিন্তু কী লাভ এখন তো বছর তিরিশ বয়স তাঁর। সে কেমন যেন পাগল পাগল হয়ে গেছে, তাঁর প্রেমিকাও তো তাকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে।কেউ কেউ বলে, যাবার সময় রীতিমতো অপমান করেই বলেছিল নাকি, তোর মতো অকর্মণ্যকে কে বিয়ে করবে রে। তাকে তো কেউ সম্মান করে না সবার কাছে যেন সে খারাপ হয়ে গেছে,আবার ভাবি আমার কোন কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া যায়, কিন্তু বয়স আমার সবে ষোল মাধ্যমিকের গন্ডীটা সবে পাশ করলাম।
এখন একবার মনে হয় গায়ক, একবার মনে হয় সিনেমার নায়ক হবো, একবার মনে হয় ডাক্তার একবার বা ইঞ্জিনিয়ার  ঠিক জানিনা আসলে কী হওয়া যায়।

আবার ভাবি কী দরকার নিজের শরীর মনকে অতো ব্যতিব্যস্ত করার এতো তাড়াতাড়ি, এখন একটু প্রেম করি না আমার সব বন্ধুরা প্রেম করছে,ওসব দুবছর পর উচ্চমাধ্যমিকের পর ভাবা যাবেক্ষণ,ক্লাস এলেভেনে উঠেছি সবে,মনটা আমার বেশ উড়ু উড়ু করছে, আবার এদিকে বাবা,মা, পাড়া-পড়শি,সবার কথায় সায়েন্স টাও নিয়েই ফেললাম, শুধু সায়েন্স নিলেই নাকি ভবিষ্যত। ক্লাস এলেভেনের তখন সবে প্রথম দিন ক্লাসে এক অপরূপ সুন্দর নারীকে দেখলাম, আমার মনটাও তাকে পাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেল, কিন্তু তাকে পাবার তো অনেকেই ইচ্ছা, সে কেন আমার প্রেমের ডাকে সাড়া দেবে এটাও ভাবি।

কিন্তু আমার ভাগ্য টা মনে হয় এবার ভালো আছে,এবার সাথে আছে আমার, কেন বললাম কথাটা ভাবছিস তো রমেশ? তুই তো আমার খুব কাছের একদম ছোটবেলার বন্ধু, তুই তো আসলি না সেদিন আমার সেই স্বপ্নের প্রেয়সী সুরঞ্জনা এতো কাছে আসলো আমার সেদিন, এতো কাছে মানে,'কী করেছিল বলতো তরুণ'।
আরে পাগল,হনুমান,গাধা কী সব ভাবিস। আরে কেমিস্ট্রি স্যার আমাকে আর ওকে একই প্র্যাকটিকাল করতো দিয়েছিল তাই একটু প্রথম কথা বলার সুযোগ হয়েছে একটুকুই। আচ্ছা কী বললি তুই ওকে,বললাম ও মানে কেমিস্ট্রি তোমার ভালো লাগে শুনলাম,ও বলল না, আমি বললাম আমারও ভালো লাগে না, কিন্তু আসলে কেমিস্ট্রি আমার বেশ ভালো লাগছে পড়তে, কী সুন্দর রং বে রংয়ের জিনিস তৈরি হয় ল্যাবে, আসলে বুঝিনা সোডিয়াম নাইট্রোপ্রুসাইড আরও কী সব রঙিন রঙিন যৌগ বানাই, কিছুই বুঝিনা তবু দেখতে বেশ ভালো লাগছে, কিন্তু আমার তখন রঙিন যৌগ থেকেও কাউকে নিয়ে সারাদিনরাত রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগছে এখন। একদিন আমি তার দিকে কেবলার মতো তাকিয়ে রয়েছি, সে বিষয়টা বুঝলো মুচকি হাসলো আর চলে গেল, আমি শুনেছিলাম'লাডকি হাসি তো ফাসি'। পরেরদিন সুরঞ্জনা স্কুলে আসার আগে আমি মনের আনন্দে রমেশ আর কটা বন্ধুকে বিষয়গুলো বলছি, একটু বাড়িয়ে ছাড়া কম বললাম না, সুরঞ্জনা আমাকে চোখ মেরেছে, হয়তো আর কিছুক্ষণ দাঁড়ালে আমার জীবনের প্রথম চুমুটা হয়তো হয়েই যেতো। একটুপর সুরঞ্জনা স্কুলে আসলো আমি একটু সাহস করেই ওর কাছে গেলাম বললাম, তোমাকে না খুব সুন্দর মায়াবী দেখতে যতই দেখি যেন হারিয়ে যায়, তুমি যেন মায়ার সমুদ্র,তোমার কথা,হাসি,রূপ আমাকে চিরন্তন স্বপ্নের মায়াজালে ডুবিয়ে দিয়েছে, যা থেকে বের হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, সুরঞ্জনা জবাবে বলল বাহ খুব সুন্দর ফ্লার্ট করো তো তুমি,আমরা মেয়েরা সবই বুঝি, এই যে তুমি বললে 'মায়া মায়া'বলো তো মায়া মানে কী?

আমি বললাম মায়া হল এমন এক অনুভূতি যা কাটাতে গেলে উল্টে বাড়ে, মায়া হল তাকে পেলে বা না পেলেও,তার স্মৃতি অন্তরের গভীরে তিলে তিলে বাড়িয়ে তোলার সুখ।
আচ্ছা বলোতো,মায়া কী শুধুই একজন নারীর পুরুষের প্রতি, একজন পুরুষের নারীর প্রতিই আসে??না তাতো নয় একটা জড়বস্তু,পশু,পাখি সবকিছুর উপর ই তো মায়া আসে। বাহ খুব সুন্দর তরুণ,বলছি এখানে তো অনেক মেয়ে আছে তোমার মায়াটা আমার প্রতিই আসলো কেন?? আসলে ওসব মায়াটায়া সব মিথ্যে সুন্দর মেয়ে দেখলেই একটু বেশিই দরদ জেগে উঠে তোমাদের। পাশে দাঁড়িয়ে কল্পনা সব শুনছিল, পরে সবাই চলে গেলে বলছিল একা একা আহ ভগবান আমাকে একটু সুন্দর বানালে না কেন ছেলেরা তো সব সৌন্দর্য খোঁজে, আমি তা শুনে ফেলেছি।

এসব কথা শোনার পর আমি সুরঞ্জনাকে আর কোনোদিন কিছু বললাম না, কেমন করে যেন স্কুল কলেজও শেষ হয়ে গেল, কিন্তু সে কথা যেন আজও কানে বাজে, আমার ভালোলাগা কী সত্যিই মিথ্যে ছিল,নিজেকে প্রশ্ন করি!

আমি সাত সাত বার ডাক্তারি পড়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছি  কিন্তু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি,সত্যিই কি আমি অকর্মণ্য?নাকি আমার ইচ্ছে গুলোর চিরস্থায়ী অসুখ হয়েছে? আমি তো শুনেছিলাম মেডিকেল সাইন্স খুব উন্নত প্রায় সব অসুখেরই চিকিৎসা হয়,তাহলে আমার অসুখের চিকিৎসা হয় না কেন? ইচ্ছে হয় জমিয়ে খাসির মাংস খাবো, কিন্তু আমি যে অতিরিক্ত মোটা তাও উপায় নাই, ইচ্ছে হয় সারা পৃথিবী ঘুরবো কিন্তু অত টাকা তো নেই। আমি কী নেই দেশের মানুষ?? কিন্তু আমি বুঝলাম যখন অষ্টমবার পরীক্ষা দিয়ে যখন সফল হলাম, এই না থাকার মধ্যেই ছিল অনেক থাকা, ছিল শুধু আপন কিছু মানুষ পাশে, এই বারবার ব্যর্থ হওয়ার মধ্যে দিয়ে কে আমার সত্যিই ভালো চায় আর কে আমার ভালো চায়না তফাৎটা ঠিক করে ফেলেছি,এ কী কম অর্জন! মানুষ চেনা তো খুব সহজ নয়। কিন্তু আরজিকর মেডিকেল কলেজে যেদিন আমি ভর্তি হতে যায়,সেদিন জানতে পারি সেই সুরঞ্জনা নাকি এই কলেজের পোস্ট গ্রাজুয়েট ফার্স্ট ইয়ার বায়োকেমিস্ট্রি স্টুডেন্ট, খানিক আনন্দের সাথে কিছুটা লজ্জা হলো যে আমি এতটা পিছিয়ে পড়েছি, সেই সুরঞ্জনা কি আমাকে চিনতে পারবে,ভাবছি এত বছর হয়ে গেছে তো? যাই হোক কিন্তু দেখি আস্তে আস্তে সেই মোটা আমিও একদিন রোগা হয়ে গেলাম, সেই গরিব আমিও একদিন অর্থবান হয়ে গেলাম।
এখন আমি দেখি সেই ইচ্ছে অসুখ তো আর নেই,কোথায় গেল তারা? এখনো অনেক সমস্যা আছে আসলে সমস্যা হীন জীবন হয় না এসব এখন বুঝি, হারজিত নিয়েই জীবন পুরোটাই।আসলে আমরা হয়তো বেশিরভাগ মানুষই একশো এর মধ্যে নব্বই বার ই হারি মাত্র দশ বার জিতি এটাই জীবন,এটাই আমরা।

====================== 

Address-Gopalnagar bibhutipally near Bangaon,North 24 Parganas,

West Bengal,pin-743262,p.o-Gopalnagar,Landmark-Gopalnagar Haripada Institution

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.