অণুগল্প।। সাপ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক
ছবিঋণ- ইন্টারনেট
সাপ
বিশ্বনাথ প্রামাণিক
সাপটা যে আবার বের হবে একথা কি সে ঘুণাক্ষরে জানতে পেরেছিল? তার জীবনের কাল হলো ওই একটা ছোট্ট সাপ। দাঁত নেই, বিষ নেই, তবু তার ভয়ে কুকড়ে যায় সীমন্তি। আর যাবে না বা কেন? এটা কম জ্বালাতন করে নাকি! দিনরাত কানের কাছে ফোঁস ফোঁস, কাহাতক ভালো লাগে? শুনিয়ে দিয়েছিল সে লখাইয়ের বাপরে, এবার ওটারে গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে মাটি চাপা দাও। ছেলে বড় হচ্ছে।
তা কে কার কথা শোনে? লখাইয়ের বাপ হেসে বলে- ভালো তো, এবার থেকে লকাই এটারে নিয়ে খেলা দেখাবে। আর আমি বসে বসে বীন বাজাবো। কথাটা মন্দ বলে নি সে, মেয়ে মানুষ দিন রাত টো টো করে এখানে-সেখানে পুরুষ মানুষের সঙ্গে ঘুরতে তার শরমে লাগে। সে থাকবে ঘরে, ঐ বেদে বস্তির বউ ঝির মত তো সে নয়, তার শরীরে রীতি মতো সুবল সরকার এর রক্ত বইছে। সেই সীমন্তি কিনা----- লজ্জায় তার নাক-কান কাটা যায়।
সেদিন বাপটা পই পই করে বলেছিল- ভেবে দেখ মা, বেদের জীবন। আজ এখানে তো কাল ওখানে। ও আমাদের কম্ম নয়। তখন কি ছাই বুঝেছিল- এ পোড়া মনটা! ঐ লখায়ের বাপের হাতে জাদু আছে। আর সে জাদু দেখে মনটা গলে গেল। কেমন করে পারে একটা পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের তরতাজা যুবক দিন নেই রাত নেই শত্তুরের সঙ্গে ঘর করতে ! জাদু জানে। হ্যাঁ সেই জাদুই একদিন তাকে সব ছেড়ে বের করে নিয়ে এসেছে।
আর তারপর থেকে ওই সাপটা তার সতীনের মত দিনরাত তাদের মাঝে, ছি ছি ঘেননা হয়, ঘেন্না। মানুষটার কি ভয় ডর বলে কিছু নেই কো!
লখিটারে সেই স্কুলে পড়াবে। দাদুর মত লাঠি খেলবে, পাড়ার পাঁচজনে সুবল সরকারের নাতি বলে গরজ দেখায় কত! কিন্তু এসব আর কতদিন? নিজে না লাঠি খেলতে না জানলে এসবের কোনো দাম নেই কো।
দিনরাত সে লকাইয়ের বাপরে বোঝায়- এভাবে ঘুরে ঘুরে বেদের মতো জীবন কাটাতে পারবে না সে।
লকাইয়ের বাপ হাসে- তা মুরা তো ব্যাদ, ব্যা্দের মুতো আবার কি?
- তা বটে, তবু কথাটা যে কিছুতেই মানতে চায় না এই পোড়া মনটা।
সাপটা আবার বের হয়েছে। ইচ্ছা করে ওর গলা টিপে শেষ করে দিতে। শত্তুর, ওই একটা শত্তুর হয়েছে তার!
কিন্তু যতবার সে রেগে ছুটে যেতে চায় সে দেখে কেমন করে ওটা গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে তার কোল ঘেঁসে- যেন ভদ্দরনোক। ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। তার কেমন মায়া হয়, সে তার গায়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে পরম যত্নে।
আর বাইরের বারান্দায় বসে কালো কুচকুচে হুঁকোটাতে টান দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে চেয়ে থাকে লখায়ের বাপ।
--------------------------------------------------------
১৩/০৫/২১
সোনারপুর