পাখি
প্রতীক মিত্র
দোয়েল পাখিটা রোজ সন্ধ্যে হলে আসতো। গ্রীল লাগানো সরু বারান্দায় উচুঁতে যেখানে হাওয়া খেলে না যেখানে মার্বেলের একটু জায়গা মুখ বার করে থাকে সেইখানেই সে বসে থাকতো শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। কেন সে আশেপাশে গাছ থাকতে ওখানে বসতো, কেনই বা সে একা বাড়ির লোকজন মালকিনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে নি। পাখিটার কোনো চাহিদা ছিল না। হ্যাঁ তার বিষ্ঠায় মেঝেটা একটু নোংরা হয়ে থাকতো বটে। যেই কারণে বাড়ির মালকিন প্রথম প্রথম কি যে চটেছিল পাখিটার ওপর। তারপর কোনো এক ঝড়বৃষ্টির সন্ধ্যেতে পাখিটাকে বারান্দায় ওই ওপরে দেখতে না পেয়ে মহিলা রীতিমতো অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিল। বাকিদের দিকে খেয়াল থাকলেও মালকিন সন্ধেবেলা পুজো দেওয়ার সময় দেখতে ভুলতো না পাখিটা এসেছে কিনা। পাখিটা যেন কোনো দেবদূত শুভ কোনো কিছুর জন্যই হাজির হয়েছে। গত ক'দিন মালকিনের শরীরটা আবার খারাপ হয়েছে। পাখিটার পাত্তা নেই। অনেক কান্নাকাটি, প্রার্থনা, গুনতুক করেও কোনো ফায়দা হয়নি। শেষে কোনো এক রাতে মালকিন দেখলো পাখিটা নিচে নেমে এসেছে। মেঝেতে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে মালকিনের চালের কণাগুলো খাচ্ছে। কিন্তু চালের কণাগুলো পাখিটার সুবিধার্থে মালকিন ওপরেই রেখেছিল। সেটা নামিয়ে আনলো কে? পরদিন সকালে মালকিন অনেকদিন পর নিশ্চিন্তের ঘুম ঘুমিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। রাতে পাখিটা যখন খাচ্ছিল, পাশে ফ্রক পড়া বাচ্চা মেয়েটাও ছিল। তাও ষাট-বাষট্টি বছর হবে, যখন শেষ বার ওই মেয়েটিকে মালকিন দেখেছিল। মেয়েটি ওরই শৈশব। পাখিটাকে আর ও দেখেনি। কিন্তু মেয়েটির বিষয়ে ও কারোকে কিছু বলেনি। তারপর থেকে ইচ্ছে হলেই লুকিয়ে লুকিয়ে ও ওই মেয়েটার সাথে দেখা করতো। মালকিনের মুখের মুচকি হাসিটা তারপর থেকে আর কমেনি।
===================
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর , হুগলী

