বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। নির্ঘুমে নিশুতি রাতের ভাবনা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল

 

নির্ঘুমে নিশুতি রাতের ভাবনা  

সুদামকৃষ্ণ মন্ডল


----- কিরে কিছু ব্যবস্থা হল ? কি ভাবলি  এভাবে কি--।  নীলিমার বাবা বলল । 
    সে কোনও উত্তর দিল না । কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আনমনা ছিল । গতবছর  ভাইটা মরে গেল করোনা আক্রান্ত হয়ে । সর্বশান্ত করে গেছে । হাজার হাজার টাকা বেড ভাড়া ওষুধ সামলে নেওয়া সত্যিই এই পরিবারের পক্ষে অক্ষমতা ।  ভাই- বোন ছিল মা- বাবার সীমিত সুখ-দুঃখের আওতায় । ওদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কষ্টসহিষ্ণু বাবা খরচ জোগান দিতে খুব নাস্তানাবুদ  হতো  ।  তারপর একমাত্র ছেলে  মেয়ের  হাতে ওদের হাত ধরিয়ে কোন অজানা দেশে চলে গেল । কেউ কি জানে ? কিন্তু সে যে চলে যাবে বলে গেল না। মায়ের বুকে দুঃখের সাগর বাবার ও তাই ।  বিলুর স্মৃতি আগলে পৌঢ় দু'জন । অন্ধের যষ্ঠি এখন নীলু অর্থাৎ  নীলিমা । স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর মায়ের অলংকারের অবশিষ্ট নাকমাছি- দুল -নীলুর নুপুর জোড়া -কানের রিং বিক্রি করে বি.এড. ডিগ্রী লাভ করেছিল।  শুধুমাত্র শিক্ষিকা হ'বার লক্ষ্যে । সে মেধাবী নিরলস । বুদ্ধিমতী হলে কি হবে অর্থই অনর্থের মূল কারণ। মা চিন্তায় মানসিক ভারসাম‍্যহীন  । নীলুর বয়স কম হলো না ঊনত্রিশ প্লাস । বাবার সুগার প্রেসার হাই । গাছ কেটে গাছের গোড়ায় জল দেবার মত লক্ষ্মীর ভান্ডারে মাত্র এক হাজার টাকা । ফুটো কলসিতে জল ভরণের মতো । নেই -নেই শুধু সংসারে অলিতে গলিতে দোকানে রাস্তাঘাটে । নেই তো দলের কেষ্টবিষ্টুরা পাচ্ছে কোথায় ? ওরা  গোপনকুঠীতে  রাত্রে কি টাকা ছাপায়  ? কোন জাদু বলে ফুলে ফেঁপে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়  ? আর পারে না নীলিমা জীবনের কঠোর কঠিন সংগ্রামকে এড়াতে । নীলিমার নীলাভ রঙ এখন  খালি চোখে ইশারা করে কাছে রাখার জন্য । বয়সে ছোট- বড়, রঙে কালো-ধলো,  ব্যক্তিত্বে যোগ্য -অযোগ্য ওকে দেখে শিস্ দেয়, কু-ইঙ্গিত করে , ।  কাছে না  আসার অহেতুক অপচেষ্টায় ঠোঁটে চুঁ চুঁ  অশ্রাব্য  শব্দ করে । ভরন্ত দীপ্তিময় শরীরে মা-বাবার  অসুস্থতার কথা ভেবে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ‍্যবোধকে দূরে ঠেলে দিতে বাধ্য হয়েছে ।     
        কাজ - সংস্থান -জীবিকা !  কাজ আর কোথায় ?  কাজ-  কাজ তো বিদায় নিয়েছে  অকর্মণ্য মূর্খ ব্যক্তিত্বহীন দেশবিরোধী নেতাদের হাত ধরে।  কম্পিউটার প্রতিটি অফিসে । এত শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী যতদিন যাচ্ছে বাড়ছেই  ;  কল কারখানা বন্ধ হচ্ছে ।  কেবলই বাড়ছে বলে কি আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে সরকারের পোষিত সংস্থাগুলিকে ওদের হাতে তুলে দিয়ে দেশের কর্মসংস্থানের শুকনো নদীতে চাইছে ওরা  সাঁতরে যেতে !  দেখাতে চাইছে যে সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত  শিক্ষিত বেকারের কোনও চাকরি  নেই । যেটুকু নেতা মন্ত্রী আমলা ধনী সমাজ কেষ্টবিষ্টুদের ।  সর্বত্র শুধু  বেকারত্ব ! জীবন বাঁচাতে পরিবারের দায়বদ্ধতা হাতে রাখতে অসামাজিক কাজে অপরাধ জেনেও সাদরে গ্রহণ করছে । এদের সমাধানের পথ কি না ভেবে  সর্বনাশের পথে হাঁটছে যে  কোনো  সরকার । নীলিমা সজাগ সচেতন উচ্চশিক্ষিত যুবতী । সবটাই বোঝে ।
        স্থানীয় নেতা বাদল মাইতিকে  বলে বলে হয়নি ।  "নো ভ্যাকেন্সি" বোর্ডটা এখন সবার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে দেখতে পায় । সর্বত্র বাদলের মতো  হোমড়া চোমড়া নেতা বলে পরিচিত । কতবারই  বলেছে ইংলিশে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট মেয়েটা  ,  দিন না কাকু একটা যেকোনো চাকরি ? এত স্টপেজে  টয়লেট বানাচ্ছেন,  সরকারি বাসের লোক নিচ্ছেন , পাবলিক বাসে  লোক নিয়োগে  সুপারিশ করছেন , দোকানে দোকানে ইউনিয়নভুক্ত দলের সমর্থকদের নিচ্ছেন , আই.সি.ডি.এস., আশা কর্মী, সিভিক ভলেন্টিয়ার ,পুলিশ, হাসপাতাল, বি.ডি.ও.  অফিসে কত চ্যূক্তিভিত্তিক লোক নিচ্ছেন , একটু সুযোগ করে দেন না ? আমি কি কোনও যোগ্যের না ? আমার স্বভাব চরিত্র গুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসা পত্র ? এক কথায় উত্তর দিয়েছে , না । দলের সমর্থক, আত্মীয়দের থেকে উৎকোচ নিয়ে গোপনে সুপারিশ করছে । তাহলে ও আর যাবে কোথায় ? দাদা কাকার সুপারিশে সঙ্গে থোক  মোটা টাকাও তো লাগে   ;  না হলে বাদলের মতো কেউকেটাদের এত বাড়বাড়ন্ত কিসের  ?
     রুগ্ন  অশক্ত অসমর্থ্য  বলে ওর বাবাকে এখন কেউ আর কাজ করতে ডাকে না । সংসারের  বোঝাটা তাই ভারী একার মনে হয় ।  প্রত্যহ দু'বেলা টিউশন থেকে ফিরলেই  বাবা প্রশ্ন করে  গলদঘর্ম ক্লান্তিময় নীলিমাকে দেখেই । তবুও উত্তর দিল ,  একটা কাজের কথা বাদলবাবুকে বার বার বলেছি । কাজ আছে তবে ---
---- কি কাজ ? বাবার সবাক প্রতীক্ষা !
----  কাজ ! রাতে ডিউটি ।  পাঁচশ' -সাতশ' - হাজার যেদিন যেমন হবে ।
------  প্রত্যেকদিন ? ওভার ডিউটি নেই ? দিনের বেলায় হয় কিনা দ্যাখ না  ?
----- আছে ।  রাতের কাজ না করলে দিনের কাজে সুযোগ হবে না ।
----- যে কর্মই হোক  না  মা -- লেগে পড়  না  ; সুযোগ আসলে তখন না হয় বদলি হয়ে যাবি  ? ওদের কি   কিছু বলেছিস হ্যাঁ কিংবা না  ? 
সে বাবাকে বলতে সাহস পায় না --- কাজটা যে মানহারা মানবীর কাজ ! দেহ ব্যবসা !!   বিনা পুঁজিতে শুধু সময়  গড়ালে টাকা  ; পুজি মূলতঃ তো  শরীর । যে কেউ  বলিষ্ঠ হৃষ্টপুষ্ট সুন্দরী হলে চলে । এত শিক্ষা কি অভদ্র- অশ্লীল- অভব্য- ইতর সাজবার জন্য পেয়েছিল ?  বাদলবাবুর প্রস্তাবে না বলেনি হ্যাঁও বলেনি  । মনের দোলাচলে তীক্ষ্ণ চুল চেরা আত্মবিশ্লেষণ । আত্মরক্ষার অনন্ত তাগিদ।  বাঁচতে তো হবে তবে ওইভাবে কামিয়ে জীবন বাঁচানোর লড়াই ? কাঁহাতক অভাব অনটনে সত্যের অনুসন্ধান করা । কাজের কথা মনটায় বিষিয়ে তুলেছে  । সরকার না শত্রু ?  আদালত না দুর্নীতিবাজদের অর্থে কেনা উকিল ব্যারিস্টার  ? বাদলের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে অনেক আবাসিক হোটেল । ফলে তারই হোটেলে দেহ পসারিনী দরকার।
-----  আমার সুগারের ওষুধ নেই , ডাক্তার বলেছে, এবার হার্ট অপারেশন করতে হবে  ! তোর মা তো রাতে উঠে যেখানে সেখানে চলে  যাচ্ছে অসুস্থ অবস্থায় আমাকে বাধ্য হয়ে উঠে আনতে হয় । তারও ওষুধ নেই ।  তোকেও কেমন করে বলি ?  না হয়- মা-- এক কাজ কর না  মা -- দুটো বিষের বোতল কিনে  দে না  আমরা খেয়ে মরি দু'জনে । আর সহ্য করতে পারছি না ।  ভয় নেই তোকে দুষব না মা । হাউ হাউ করে কাঁদল । সেও নিরুত্তর । নির্লিপ্ত চোখে জল এসে উপচে পড়ছে  ।
------  তাহলে তুমি বলছ,  কাজটা নিই  ?
----- উপায় কি বল মা ? টাকা না হলে কি আমাদের চলবে ? টাকার জন্য  যে কাজ হোক করতে তো হবে ।
-----  আর এতগুলো টিউশন  ?
  তারপর  আলু ভাতে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ে । সারারাত অনেক প্রশ্নের মুখে  বাপ বেটিতে ঘুমায়নি । নীলিমা সারারাত খোলা মনে ভেবেছে । কিন্তু সে কোনও শেষ উত্তর খুঁজে পায়নি । সে নিরুপায়  !
===================
সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
গ্রাম - পুরন্দর পুর (অক্ষয় নগর )
পোষ্ট - অক্ষয় নগর
কাকদ্বীপ,দঃ চব্বিশ পরগণা
পিন কোড - 743347
মোঃ 9734591074
        7479274263 (হোয়াটস আপ)
নেশা /পেশা : সাহিত্যচর্চা   
 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.