শিক্ষাজীবন
পাভেল আমান
ছাত্রাবস্থা থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যেই বাবা মায়েরা অঘোষিত কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয়। তারা কখনো ভেবে দেখে না পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার চাপ অপ্রত্যাশিত ইচ্ছে স্বপ্নগুলো পূরণ করতে গিয়ে সেই সমস্ত সুখময় মতি মনন গুলো কখনো কখনো বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তারা সঠিক অভিমুখে হাঁটতে গিয়ে চারিদিকের চাপিয়ে দেওয়া বোঝার ভারে নুয়ে পড়ে। এভাবেই শিশু কিশোর তরুণেরা পড়াশোনার জগত থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। চক্ষুনিমেশে চক্ষুনিমেষে আমাদের চারপাশে কত সুপ্ত প্রতিভার ফুল ফলগুলো গাছ হয়ে মেলে ধরার পূর্বেই ঝরে পড়ছে । তোমাকে জীবনে সফল হতে হবেই। ভালোভাবে পড়াশোনা করে চাকরি পাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হবেই। জীবনের প্রত্যেকটা পরীক্ষাতেই তোমাকে সফল হতে হবেই। তোমার কাঙ্খিত গন্তব্য পৌঁছাতে তোমাকে অবশ্যই সাফল্যের সরণি বেয়ে এগিয়ে চলতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ বাবা-মায়ের প্রত্যাশার পরিপূর্ণতায় ছাত্র-ছাত্রীরা হতাশায় বিষণ্ণতায় ভারাক্রান্ত হয়ে জীবনের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাদের অবচেতনে একটি প্রশ্ন নিরন্তর ঘুরপাক খেতে থাকে জীবন মানেই কি শুধু বড় বড় ডিগ্রি অর্জনের মধ্যে দিয়ে চাকরি পাওয়া? জীবন মানেই কি শুধুই সফলতার পিছনে প্রতিনিয়ত তীব্রভাবে ছুটে চলা? জীবন মানে তো সুস্থতা একরাশ শান্তি নিজেকে বেঁচে থাকার একটু রসদ খুঁজে পাওয়া। সর্বোপরি বিবেক চেতনার জাগরণে সামাজিক দায়বদ্ধতা কে পালন করে মানুষ হয়ে ওঠা। এই কথাগুলোই অবিরাম মনের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে কলেজ পড়ুয়া রাসেলের।
এদিকে বাড়িতে তার মা বাবার মুখে একটি কথা-" আর কতটা পড়াশোনার শেষে তুই একটি চাকরি পাবি? আমরা যে পথ চেয়ে বসে আছি বাবা তুই চাকরি লাভে সংসারের হাল টা একটু ধরবি? তোর বাবা যে দিনকে দিন কর্মক্ষম হয়ে উঠছে। সরাসরি উত্তর না দিয়ে রাসেল তার মাকে বলে-" তুমি চিন্তা করো না পড়াশোনা সমাপ্ত হলে আমি কোন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করবো। পরক্ষণেই তার মননে আবারও সেই বহু চর্চিত প্রশ্নটি জেগে ওঠে-" তুমি লক্ষ্যের অভিমুখে এগিয়ে চলো সফলতা একদিন নিশ্চিত প্রাপ্ত হবে। বিপুল উজ্জীবিত প্রত্যাশাকে আঁকড়ে ধরেই রাসেল এখনো অসমাপ্ত পাঠ সম্পূর্ণ করতে জীবনের শিক্ষা অর্জনের সরণি বেয়ে এগিয়ে চলেছে। একটি ধারণা সে আঁকড়ে ধরেছে উদ্দেশ্য টার্গেট স্থির থাকলে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ অবশ্যাম্ভাবী। প্রত্যাশার নিশ্চিত প্রহর গুনে গুনে কেটে যাচ্ছে তার শিক্ষাজীবন। তবু কিছুটা বাস্তবতাকে অনায়াসে আত্মস্থ করে অবচেতনের ডালপালা গুলোকে নিরবে মেলে দিয়ে রাসেল অনাবিল সাহস কে আঁকড়ে ধরে স্বপ্ন দেখে জীবনটাকে নিজের মতো করে বাঁচার শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠা নয় বিবেক চেতনার জাগরণে মনুষ্যত্বের পরিস্ফুটন।
===================
রচনা -পাভেল আমান- হরিহর পাড়া +মুর্শিদাবাদ
