জন্মদিনে পাখিদের রাজ্যে
ঐশ্বর্য্য কর্মকার
'পাখিদের ওই পাঠশালাতে কোকিলগুরু শেখায় গান
ময়না ভালোই গান শিখেছে, শুনলে পরে জুড়ায় প্রাণ। '
জন্মদিনে চললাম নদিয়া জেলার করিমপুরে। ঘর বন্দি থেকে মনে হচ্ছিলো, আর মনে হয় বের হতে পারবো না। লকডাউন এর মধ্যেই জন্মদিন পড়লো। তাই প্রকৃতির স্বাদ একদম কাছ থেকে পেতে চলে গেলাম করিমপুর।
কি আছে এখানে ? এখানে যদি , ধানখেত ছাড়াও নানা ধরণের আনাজ , ডাল ও সর্ষের খেত আছে। আর আছে আমার এক বন্ধুর বাড়ি। দুদিন ওর বাড়িতেই ছিলাম। সে যাই হোক , দূর দূর পর্যন্ত সর্ষের খেত দেখতে কি যে ভালো লাগে , বলার ভাষা নেই।
তবে প্রধান যে কারণে এখানে আছে তা হলো অসংখ্য পাখি। ভোরবেলা ঘুম ভাঙতো দোয়েল পাখির
শিষ শুনে। প্রাতঃ ভ্রমণে বেরোলে সোনা যায় নানা ধরণের পাখির কলতান। শালিক , দোয়েলের কলতানের পাশাপাশি শোনা যায় কাকের কর্কশ ডাক। যেহেতু লকডাউন , তাই বাস অটো সব বন্ধ। বায়ুদূষণ অনেকটাই কমে গেছে। এখানে পাখি আগেও ছিল , কিন্তু দূষণ কমার কারণে পাখির সংখ্যা খানিকটা বেড়ে গেছে।
বারান্দা থেকে সামনে একটা পুকুর দেখা যায়। বিকেল হলেই আমরা ওখানে বসে গল্প করতাম। সেখানে পানকৌড়ি ও হাঁস সাঁতার কেটে বেড়ায়। পানডুবি বলে একটা নতুন ধরণের পাখি দেখতে পেলাম।এরা ডুব দেয় আর ওঠে , তাই এইরকম নাম। এছাড়াও বড়ো মাছরাঙা দেখেছি , জেক বলে স্টার্ক বিল্ড কিংফিশার। প্রায় সারাদিন ধরে বসন্ত বৌরির ডাক শোনা যায়। ছোট ,গলাটা নীল , মাথা আর ঠোঁটের গোড়াটা ও লাল। আর একরকম পাখি ও দেখেছিলাম। মাটির মতো রং , হলুদ ঠোঁট আর লেজটা আলগা , যেন এই খসে পরে যাবে। নাম ছাতার পাখি।
হলুদ পা ওয়ালা সবুজ পায়রাও দেখেছি। তবে এই পাখি গুলিকে সবুজ পায়রা বলা হয়। রাস্তার ধরে বুলবুলি ও দেখেছি। কালো চকচকে ফিঙে ও দেখেছি। সত্যি কথা বলতে সব পাখিই ওপরের থেকে আলাদা। এতো পাখির বৌচিত্র আমি আগে দেখিনি।
দুপুর বেলা কানে ঠক - ঠক আওয়াজ শুনতেই বেরিয়ে দেখলাম খেজুর গাছে কাঠঠোকরা বসে। কি সুন্দর দেখতে। এখানে এসে নতুন রকমের একটা পাখি দেখলাম। যদিও আমার কাছে সব পাখিই নতুন। তবে এদের নাম শুনেছি , চোখে এই প্রথম দেখলাম। তবে " বাবুনি " পাখির নাম প্রথম শুনলাম। ছোট ধরণের পাখি। পেটটা হালকা সবুজ , গলাটা হলুদ কালো। এখানে রাস্তার ধরে বাবুই পাখির বাসা দেখলাম। কি সুন্দর সৃষ্টি। রাতের বেলা গাছের কোটরে পেঁচাও দেখেছি। একদিন বিকেল বেলার দিকে মুসুরি খেতে গিয়েছিলম। দেখলাম মোহনচূড়াকে। এই পাখির নাম ও আমি প্রথম শুনলাম। পাখিটির কালো লম্বা ঠোঁট , মাথায় লম্বা কালো ঝুটি , তার উপরে কালো বর্ডার। আহা , কি মনোহর দৃশ্য দেখলাম এই কয়েকদিনে। আমি ওই দুই দিন সত্যি ভুলে ছিলাম মহামারীর কথা।
পাখি দের কথা শুনলাম , গান শুনলাম। কত নতুন পাখির নাম শুনলাম। জানলাম কত নতুন কিছু। আমার সকালের ঘুম ভাঙতো পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে। আহা। এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ওদের ডাক শুনে মন বড়োই শান্ত হয়েছিল। সবাই পারলে একবার করিমপুর থেকে ঘুরে আসুন। জন্মদিনে এর থেকে ভালো উপহার আর কি বা হতে পারতো।
---------------------------------