নির্মলেন্দু কুণ্ডু
"সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ"
কবির এই লাইন দুটো মনে পড়তেই আচমকা রক্তিম হয়ে উঠল আরাত্রিকার গাল দুটো ৷ রঙ্গন যে এরকম কিছু একটা বলে বসবে, তা কল্পনাও করেনি ও ৷ দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব একটু একটু করে খুঁজে পেয়েছে নির্ভরশীলতার কাঁধ ৷ সত্যি বলতে কি, রঙ্গনের সাথে যেকোন বিষয়ে কথা বলতে পারে আরাত্রিকা ৷ এই তো সেদিন যখন পলাশ ওকে ছেড়ে গিয়েছিল ধূ ধূ মরুচরে, আরাত্রিকার দু' কূলপ্লাবী অশ্রুর স্রোত ভিজিয়েছিল রঙ্গনের কাঁধ ৷ তারপর বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছিল রঙ্গনই ৷ মা-বাপিকেও বুঝিয়েছিল সব কিছু ৷ যে বাপি একটুতেই রেগে যেত আরাত্রিকার ওপর, সেও সেদিন মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছিল আরাত্রিকাকে ৷ সে সবই ঠিক আছে, কিন্তু এই পোড়া সমাজ ! এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও যারা প্রতিনিয়ত করে মেয়েদের অগ্নিপরীক্ষা, যাদের কাছে মেয়ে মানেই নরকের দ্বার, তাদের মুখ ঢাকবে কী করে ! ক' মাস পরেই তো বেবি বাম্প স্পষ্ট হবে আরাত্রিকার ৷ সত্যি বলতে কি, সেও চায় না এই অনাগত অতিথিকে আবাহনের আগেই বিসর্জন দিতে ৷ কিন্তু পিতৃপরিচয়হীন অবস্থায় !!
এমন দিনেই তাকে প্রস্তাবটা দিল রঙ্গন ৷ ও মাস্টার্স করতে উড়ে যাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৷ তার আগেই আরাত্রিকাকে নিজের করে নিতে চায় ও ৷ খুব কমনীয় কিন্তু দৃঢ়স্বরে বলেছিল সেদিন—
"দেখ, একদম ভাববি না আমি তোকে উদ্ধার করছি বা some sort of that. তোর এতে কোন দোষ নেই, কাজেই এত হীনমন্যতায় ভোগারও কিছু নেই ৷ তোকে আমি সত্যিই ভালোবাসি, এখন তোর যদি কোন আপত্তি না থাকে, আমি বিদেশ যাওয়ার আগেই তোকে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করতে চাই ৷"
আরাত্রিকা হঠাৎ করে দেখল,ওর সামনের অন্ধকার দুনিয়ায় কে যেন ছড়িয়ে দিয়েছে এক মুঠো খুশির রংমশাল ৷ আবার বাঁচবে আরাত্রিকা, ওর মতো করে, দুনিয়ার কারোর তোয়াক্কা না করে ৷
পরের দিন দেখা হতেই সম্মতি জানিয়েছিল আরাত্রিকা ৷ একগাল হাসি নিয়ে রঙ্গন বলে উঠল—
"উঁহু, ওভাবে না ৷ আচ্ছা, সেই সিনেমায় যেমন দেখায়, সেইভাবে প্রপোজ কর ৷ এবার শুধু পাত্র-পাত্রীর অবস্থানটা পাল্টে যাবে ৷ কী রে, করবি.."
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
------------------------------
নির্মলেন্দু কুণ্ডু
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ