ঋণস্বীকার- ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
সহযাত্রী
রফিকুল নাজিম
১
তিলোত্তমা এই শহরটাকে যে যার মত বিশ্রীভাবে ভোগ করছে। গনিমতের মালের মতো লুট করছে। যে মায়াবতী শহরটা দেড় কোটি মানুষকে কোলে নিয়ে জেগে থাকে দিনরাত, সেই শহরকেই মানুষ ক্রমেই গলা টিপে খুন করছে! আমরা আসলেই আত্মঘাতী জাতি। বাসে বসে তপুর মগজে কথাগুলো যেন কুটকুট করে চিমটি কাটছে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে বাসের ড্রাইভার চেষ্টা করছেন সায়েদাবাদ বাসডিপো থেকে বের করতে। কিন্তু দু'পাশের হকারদের রামরাজত্ব, পার্কিং করা গাড়িগুলোর কোথাও মাথা আবার কোথাও পাছা বের হয়ে আছে, শার্টের কলার খাড়া করা পাতিমাস্তানের বীভৎস গালকাটা মুখ, শরীর ঘেঁষা মানুষের চিৎকার চেচাঁমেচি, হাজারো গাড়ির প্যাঁ-পু হর্ণের আওয়াজ- এ যেন এক অসহ্য নগরীর নরকের খন্ডচিত্র! প্রিয় শহরটার জন্য আজকাল তপুর খুব মায়া হয়।
গতরাতে সূর্যসেন হলে একই ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ হয়। ককটেলের দ্রিম দ্রিম আওয়াজ, গুলির শাঁই শাঁই শব্দ আর মানুষের তীব্র আর্তচিৎকার- সব মিলিয়ে দুর্বিষহ এক দীর্ঘ রাত সবাই অতিক্রম করেছে। তপুর মতো সাধারণ শ'খানেক ছাত্র মসজিদ ঘরে আশ্রয় নিয়ে আল্লাহকে ডাকছিলো মনেপ্রাণে। সারারাত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলেছে। ভোরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। রাতে একপলকাও ঘুমাতে পারিনি তপু। তবুও ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষাটা শেষ করেই সে সিলেটে বোনের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। বোন জামাই জাহিদ- খুবই 'মাই ডিয়ার' টাইপের লোক। সরকারী আমলারা নাকি বেশ রাশভারী হয়। কিন্তু জাহিদ খুবই প্রাণবন্ত ও চটপটে মানুষ। তপুর বাস শিশুর মতো সবে চলতে শুরু করেছে। সে জানালায় মুখ বাড়িয়ে বসে আছে। গতরাতে না ঘুমানোর প্রতিক্রিয়া চোখে জানান দিচ্ছে বেশ। তার চোখ দুটো জ্বলছে খুব। বিধি মোতাবেক তপু তন্দ্রায় ডুব গেলো।
'ওস্তাদ,ব্রেক। পুনম সিনেমা হলের সামনে একটু রাইখেন। মহিলা উঠবো একজন।'- বাসের দরজায় সজোরে আঘাত করে চেঁচিয়ে উঠলো বাসের হেলপার। হঠাৎ বাসটি জায়গায় ব্রেক কষার ঝাঁকুনিতে তপুর চোখের তন্দ্রা কেটে গেলো। চোখ খুলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় সে। হঠাৎ বাসের দরজার সামনে তার চোখজোড়া আটকে যায়। চোখ কঁচলে আবার ঠিকঠাক করে সে দেখার চেষ্টা করছে। নাহ, সত্যিই তো। এ যেন সাক্ষাৎ স্বর্গ থেকে নেমে আসা হুর পরী।
- পরী, সাবধান। তোর কাম শেষ হইলে দ্রুত আমাকে জানাইছ। আমি কইলাম অপেক্ষা করমু।
- চিন্তা করো না। আমি ঠিকঠাক পারবো।
সম্ভবত লোকটা মেয়েটার বাবা। বাপবেটির কি নিখাদ ভালোবাসা! গল্পের এ পর্বের দৃশ্যে অবতীর্ণ ক্যারেক্টার দুটোর সম্পর্ক এমনই কল্পনা করে তপু।পুরো বাসে এখনো দু'টো সিট খালি আছে। সি-থ্রি আর ই-টু। প্রতিবার লং জার্নির সময় তপু কল্পনা করে একদিন তার পাশের সিটে এসে হুট করেই বসবে ক্লিওপেট্রার মতো কেউ। সূচনা পর্বে থাকবে চোরা চোখের লাজুক চাহনি, দ্বিতীয় পর্বে দুরু দুরু বুকে অস্পষ্ট আলাপন এবং তৃতীয় পর্বে থাকবে হাতে হাত ও চোখে চোখ রেখে গল্প করা বাকিটা পথ পাড়ি দেয়া। তপুর এই চাওয়া প্রতিবারই কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এই তো গতবারের জার্ণিতে তার পাশে এসে বসলেন এক মধ্যবয়সী লোক। লোকটা পান মুখে সারারাস্তা বকবক করতে করতে তপুর কান ঝালাপালা করে দিয়েছিলো। তার উপর লোকটা শতভাগ হালাল ও বিশুদ্ধ সিলোটি। ভাষার সে কি অত্যাচার! সিলোটি ভাষা শুনে তপু সিলোটি ভাষাকে মনে মনে বলছিলো, 'আধেক তুমি মিষ্টি ওগো, আধেক তুমি যন্ত্রণা।' সেইবার বোনের বাসায় পৌঁছাতেই একমাত্র ভাগিনা রিশাদ তপুর সাদা টিশার্টে কিছু একটা দেখাচ্ছিলো। তপুর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, এটা সেই লোকটারই কাম। পানের পিকের ছোপছোপ দাগে তার প্রিয় সাদা টিশার্টকে বিপ্লবী পতাকা বানিয়ে দিয়েছে!
মেয়েটা সুপারভাইজারের হাতে টিকেটটা দিয়ে তার সিটটা দেখানোর জন্য অনুরোধ করলো। বাসের সবাই হাঁ করে মেয়েটাকে যেন গিলছে। সহযাত্রীদের উপর তপুর খুব রাগ হচ্ছে। একটা মেয়ে রূপসী হলেই এভাবে নির্বোধের মতো তাকিয়ে থাকতে হয়! আসলে লোকজনেরই দোষ কি! সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ওনার শতভাগ মনোযোগ দিয়েই মেয়েটাকে গড়েছেন। তার উপর ছাইরঙা গ্যাবাডিন প্যান্ট, নীল ফতোয়া, পায়ে চটি জুতা আর কপালে ছোট্ট কালো টিপ- এক কথায় মেয়েটা অনিন্দ্য সুন্দরী। সামনের সিটে মাথা ঝুঁকে তপু মনেপ্রাণে করজোড়ে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছে; মেয়েটা যেন সি-থ্রি সিটে না বসে। সুপারভাইজার যখন সি-থ্রি সিট অতিক্রম করলো তখনই সাথে সাথে সে 'ইয়েস' বলে বিশ্বকাপ জয়ী ক্যাপ্টেনের মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো। ১৯৯৯ সালে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপে গতিদানব সুজন দুর্ধর্ষ এক বলে পাকিস্তানের বোম বোম আফ্রিদিকে আউট করার পর তিনি যে রকম উল্লাস করেছিলেন ঠিক তেমনটাই করতে ইচ্ছে করছে তপুর! তবে সে কিছুটা উচ্ছ্বাস প্রকাশে পরিমিততা তথা সংযমের পথ অনুসরণ করলো। সুপারভাইজার ই-টু সিটটি দেখিয়ে মেয়েটাকে বললো-
-আফা, এইটা আপ্নের সিট। এইখানে আরাম কইরা বহেন। কিছু লাগলে আমারে কইয়েন। ও ভাই, আপ্নে আরেকটু চাইপ্পা বহেন।
- অশেষ ধন্যবাদ, ভাই।
সুপারভাইজার মেয়েটার ব্যাগটা সিটের পাশে সযতনে রেখে পুলকিত মনে বাসের সামনে চলে গেলো। স্পোর্টসকারের মতোই বাস চলছে বুলেট গতিতে। তপু তার ব্যাগ থেকে 'দ্যা ওল্ডম্যান ইন দ্যা সি' বইটা বের করে পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এমন হুর পরী পাশে বসা থাকলে কি আর পড়ায় মন বসে! তার হার্টবিট ক্রমাগত রোলার কোস্টারের মতো উঠছে নামছে। হার্টের আওয়াজটা স্পষ্টত সে শুনতে পাচ্ছে। অথচ মেয়েটা কি স্বাভাবিকভাবে ইয়ারফোন কানে গুঁজে একমনে গান শুনছে। মাঝেমধ্যে গুনগুনিয়ে নিজেও গান গাইছে। বাসের স্টিয়ারিংয়ে মনে হয় আজ কোনো যাদুর ছোঁয়া লেগেছে। রেসিং কারের মতোই এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলছে বুলেট বাস সিলেটের পথে। এতো গতিতে কেউ গাড়ি চালায়!শালার ড্রাইভারদের আজকাল জানের কোনো মায়া নাই। গাড়িটা আস্তে চালাইলে কি তোর বড় ক্ষতি হইয়া যাইবো, হালার্পু!- মনে মনে ড্রাইভারকে খাঁটি বাংলায় অনেকগুলো গালি দিচ্ছে তপু।
- এক্সকিউজ মি, ভাইয়া। আপনার সিটটা কি আমাকে ছেড়ে দিবেন, প্লিজ? আমার মাথাটা খুব ধরেছে। বমি বমি লাগছে। জানালার পাশে বসলে হয়তো ভালো লাগতো।
- ইটস্ ওকে। আপনি জানালার পাশেই বসুন।
- আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া।
পাশের সিটে বসার সময় মেয়েটা ভারসাম্যহীন হয়ে গেলে তার কনুইয়ের আঘাত লাগে তপুর কপালে। কপালটা চেপে কুঁকিয়ে উঠে সে। মেয়েটার চোখেমুখে একরাজ্যের অপরাধবোধ মিছিল করছে তখন। তা স্পষ্টতই দেখতে পায় তপু। শরীরের ব্যথার চেয়ে বরং তার মনে আনন্দটা দোলা দিচ্ছে বেশি। যেন বর্ণিল প্রজাপতিরা খেলা করছে। কত সিনেমা নাটকে এমন টুকটাক ধাক্কাধাক্কি দৃশ্যের পর নায়ক নায়িকার মধ্যে প্রেম হতে দেখেছে সে। মেয়েটা কিছুটা বিচলিত হয়ে হাতের টিস্যুটা পানিতে ভিজিয়ে তপুর আঘাতপ্রাপ্ত কপালে ধরে আছে। আহ! কি সুখ। চোখজোড়া বুজে আসে তপুর।
- আ'ম এক্সট্রিমলি সরি।
- কি বলছেন! আপনি তো আর আমাকে ইচ্ছে করে আঘাত করেননি। তাহলে সরি বলার কি আছে?
- না। আসলে আঘাতটা বেশ লেগেছে আপনার।আচ্ছা আপনি যাচ্ছেন কোথায়?
- উপশহর। বোনের বাসায়। দিন কয়েক থাকবো সেখানে আর টু টু করে সিলেটকে ঘুরে দেখবো।আপনিও ঘুরতে যাচ্ছেন বুঝি?
- না। আমি সাস্টে আছি। পলিটিক্যাল সাইন্সে সেকেন্ড সেমিস্টারে পড়ছি।
এভাবেই কথার পিঠে কথা হাঁটে দু'জনের। তপুর আরক্তিম গালের লজ্জা রঙেও ক্রমেই ভাঁটা নেমে আসে। দু'জনই এখন খুব সাবলীলভাবে গল্প করছে।শৈশব থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস জীবন, সমকালীন রাজনীতি, নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা- এসবের ইতিবৃত্ত। প্রিয় রং, প্রিয় কবি, প্রিয় খাবার-এসব নিয়েও কথা হচ্ছে খুব। তপুর বেশ কিছু ভালো লাগার বিষয় মেয়েটার পছন্দের সাথে মিলে গেছে।এটা মনে করতেই তার মনে দারুণ এক অনুভূতি খেলা করছে গোপনে। হঠাৎ শরীরের বা দিকে ঝাঁকুনির মতো একটা কিছু অনুভব করলো তপু ।বিষয়টা সে কোথাও পড়েছিলো যে,পুরুষের বা হাত কাঁপা, এটা নাকি প্রণয়ে পড়ার লক্ষণ! খুশিতে সে মনে মনে সুর ধরেছে আইয়ুব বাচ্চুর সেই বিখ্যাত গান -আমি ত প্রেমে পড়িনি/প্রেম আমার উপরে পড়েছে...।
সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ,
'হোটেল হাইওয়ে-ইন এ আমাদের বাসে যাত্রা বিরতি। যাত্রা বিরতি মাত্র বিশ মিনিট। শুভ হোক আপনাদের যাত্রা বিরতি।'- সুপারভাইজার বাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন। এবার যাত্রীরা একটু নড়েচড়ে বসলো। হোটেলের সামনে এসে বাস থামতেই যাত্রীরা একে একে নেমে গেলো। তপু তার হাতের বইটা ব্যাগে তুলে রাখতে রাখতে বললো-
-নামবেন না? চলুন কফি খেয়ে আসি।
- কফি হলে মন্দ হতো না। থ্যাঙ্কস এ লট। আসলে আমি যাত্রাপথে বাইরের কিছু খাই না। প্রায়ই মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বসাধারণের জালমাল লুটের খবর পড়ি পত্রিকায়। আর বাইরের খাবার আনহাইজেনিক ফর হেলথ্। সরি এগেইন।
- নো সরি। আপনি ঠিকই বলেছেন। বাইরের খাবার না খাওয়াই ভালো। আপনার স্বাস্থ্য সচেতনায় আমি মুগ্ধ।
-হুম। ধন্যবাদ। আসার সময় আম্মু কিছু পিঠা ও নুডুলস সাথে করে দিয়েছেন। আপনার আপত্তি না থাকলে আমরা শেয়ার করতে পারি। আরেকটা বিষয় আমার আম্মুর হাতের পিঠা একবার খেয়েছেন তো বারবার খেতে চাইবেন!
- কি বলছেন। আপত্তি থাকবে কেন! আর আপনার আম্মুর হাতের পিঠা খাবো- এটাই তো আমার জন্য সৌভাগ্যের। তাড়াতাড়ি দেন চেখে দেখি।
খুব মজা করে দু'জন পিঠা আর নুডুলস শেয়ার করলো। একেই বলে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। তপু নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছে। মেয়েটাও চুপিচুপি হাসছে। সেও হয়তো ব্যাপারটা উপভোগ করছে। হায় রে! অনিন্দ্য সুখের অপর নামই জীবন।যাত্রা বিরতি শেষ করে বাস আবার হাওয়াই বেগে চলতে শুরু করেছে। মেয়েটা বাসের জানালায় মুখ বের করে বাতাস গিলছে। বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলের দুষ্টুমি দেখতে তপুর ভালো লাগছে খুব।মেয়েটা তার দিকে একটু ঝুঁকে বললো-
- তিন ঘন্টা ধরে আমরা একটানা গল্প করছি। অথচ কেউ কারো নাম জানি না ! কি অদ্ভুত না। আমি সানজিদা চৌধুরী। মা বাবা আদর করে ডাকেন-পরী।
- আমি রাফাত আল মামুন। দাদুর দেয়া তপু নামটাই মার্কেটে বেশি জনপ্রিয়। যদিও বন্ধুরা ডাকে তপ্পা নামে।
- হা হা। আপনি খুব মজা করে কথা বলেন। শুনতে বেশ লাগে। কথার পরেও কথার রেশটা মনে থেকে যায়।
- কি যে বলেন! আপনার কথা তো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছি। অসাধারণ আপনার প্রমিত বাংলা উচ্চারণ। আচ্ছা, যদি কিছু মনে না করেন- তাহলে আমাদের এই মুহূর্তের একটা সেল্ফি তুলতে পারি? মুহূর্তটাকে ফ্রেমে বাঁধার লোভ আমি সংবরণ করতে পারছি না।
- মোবাইলের ফ্রেমে বাঁধতে চাচ্ছেন! মনের ফ্রেমে জায়গা হবে না বুঝি! ওকে, জাস্ট কিডিং। তবে শর্ত আছে।
- কি শর্ত?
- ছবি তুললে সেটা ফেসবুকে আপলোড করা যাবে না। যদি আপলোড করেন- তাহলে আমার খুবই সমস্যা হবে।
- ওকে ফেসবুকে পোস্ট করবো না। খুশি?
কথার সাথে পাল্লা দিয়ে বাস চলছে। পরী আর তপুর কথার এক পর্যায়ে দু'জনের মোবাইল নাম্বার দেয়া নেয়া করে। তপু হঠাৎই পরীর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। চলতি পথে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কোনো জুটির এমন রোমান্টিসিজম দেখলে পাশের মানুষগুলোর মনেও সুড়সুড়ি লাগে! এই যে এখন কিছুটা আক্ষেপে পুড়ছে পরীদের পাশের সিটের দু'জন। মধ্যবয়সী পুরুষ দু'জন বেশ শৈল্পিকভাবে নিজেদের বিশ্রী দাঁতের পাটি প্রদর্শন করছেন। লোক দুটোর দাঁতে পান সুপারির কালচে দাগ আর বিদঘুটে হাসিটাও পরী ঢুক করে গিলে ফেলেছে।
২
সবেমাত্র আড়মোড়া দিয়ে উঠলো তপু। গত পাঁচদিন পর চোখ খুললো সে। রাতে গভীর নদীতে মাছ ধরার ছোট্ট ডিঙির মতো হঠাৎ ঢেউয়ে টুপ করে জেগে উঠার মতোই চোখ খুলে তাকালো তপু। নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করলো। তার বেডের চারপাশে বোন, বোন জামাই জাহিদ, সদর থানা ওসিসহ ডাক্তার নার্স সবাই তার দিকে নিবীড়ভাবে তাকিয়ে আছেন। সে বিচলিত হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলো
- স্যার,আমার কি হয়েছে? আমি এখানে কেন?
- তুমি অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছিলে। তুমি বড় বাঁচা বেঁচে গেছো, বাবা। দ্রুত তোমাকে হাসপাতালে না নিয়ে আসলে তোমাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যেতো।
- আপু, আমার মোবাইলটা দাও। আমি একজনকে কল করবো।
- আরে বোকা, তোর মোবাইল, ম্যানিব্যাগ, ল্যাপটপের ব্যাগ সবই নিয়ে গেছে। থাক ওসব। তুই ভালো আছিস তাতেই- আমরা আল্লাহর কাছে শোকরিয়া।
-মি. তপু, ঘটনাটা খুলে বলুন আমাকে। কিভাবে আপনি অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছেন?- ওসি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
- কিছু মনে পড়ছে না, স্যার।
- কাউকে সন্দেহ হচ্ছে আপনার?
- না। তেমন কারো কথা তো মনে পড়ছে না।
- ওকে। আপনি রেস্ট করুন। পরে একবার আমি আসবো। আপনি মনে করার চেষ্টা করুন। হেভ এ হ্যাপি ডে,মি. তপু।
তপু কি যেন মনে করে একা একা মুচকি হাসছে। হাসপাতালের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সে দেখে দূরের একটা টিলার উপর চলছে উৎসব। বর্ণিলভাবে সাজানো সবকিছু। ঢাক ঢোল বাজছে। উৎসবের রঙে আরো গাঢ় হয়েছে সবুজ চায়ের পাতাগুলো।
---------------------------
রফিকুল নাজিম
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মাধবপুর, হবিগঞ্জ।
০১৭১৬৩৮৩৪৩৮