ঋণস্বীকার- ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
পরম
চন্দন মিত্র
জঞ্জালি প্রথমে ভেবেছিল নামবে না। কিন্তু মেয়েমদ্দদের জলকেলি দেখে সে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। ঝুপড়ির হাত বিশেক দূর থেকে বয়ে যাওয়া সুতিখালের ঘোলাটে জলে সেও নেমে পড়ে। কেউ জাল, কেউ পলুই দিয়ে চেষ্টা করে চলেছে। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরে ঈষদুষ্ণ পেঁকোজল খারাপ লাগছে না কারও। পাঁকজলে ডুব দিয়ে দিয়ে সবাই যেন সং হয়ে উঠেছে। এবার শোভাযাত্রায় বেরোলেই হল !
জঞ্জালির জাল বা পলুই কিছুই নেই। সে ডুব দিয়ে দিয়ে পাঁকের উপরে ও ভিতরে আঙুল চালিয়ে সন্ধান করে কোথায় লুকিয়ে বাছাধন। খান কুড়ি ব্যর্থ-ডুব মেরে সে হাঁফিয়ে ওঠে। জল থেকে উঠে পাড়ে বসে সে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়। আর বেশিক্ষণ সে এই সন্ধান চালাতে পারবে না। তার পাতাখোর স্বামীর ফেরার সময় হয়ে এল। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের তাগড়া জোয়ান যে নেশা করে করে এমন এলিয়ে পড়তে পারে তা জঞ্জালির জানা ছিল না। এখন তার স্বামী যেন ঠিক মানুষ নয়, কোনো অমেরুদণ্ডী প্রাণি। জঞ্জালি শেষবারের মতো ডুব মারে। পাঁকের উপর দুই তালু বিছিয়ে এবার সে পেয়েও যায়। দুই তালু দিয়ে সজোরে ও সযত্নে চেপে ধরে সেই প্রাণোচ্ছল বাঞ্ছিতকে। জঞ্জালির মনের জলে বিয়ের প্রথম দিককার স্মৃতি ঘাই মেরে ওঠে। আজ জলের তলায় সে পরমকে পেয়ে এমন মোহিত হয়ে গেল যে ভেসে উঠতেই ভুলে গেল।
---------------------------
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মণ্ড হারবার
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা