প্রেম যেন চির সুবজের হাতছানিতে জীবনের শুরু থেকে শেষ প্রান্তে বিচরন করে। সবুজের রঙে মাখা পড়ন্ত ঢুলে পড়া রবির কিরনে চির যৌবনা প্রেম মানব মনে আকাঙ্খার পশরা ভরে ফিরে আসে বারে বারে। অন্তরার জীবনে ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তেতাল্লিশের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো অন্তরা সংসারের এক কোনে বসে লিখতো জীবনের হাজারো কথায় ভরা কবিতা।তার লেখার ছত্রে ছত্রে ফুটে ওঠতো জীবনে এক না পাওয়ার অস্ফুট ব্যাথাহত ভালোবাসার কথা।তার সাথে একদিন এক অডিটোরিয়ামে বর্ণাঢ্য কবিতা মঞ্চে তাদের দেখা রোহনের ।হাসি খুশীতে প্রাণোচ্ছ্বল অন্তরা বরাবরি একটু মিশুকে। সহজেই আলাপ হয়ে গেলো দুজনের।রোহনের বয়স বাহান্ন। এক প্রকার যৌবন অস্তমিত।মাঝে মাঝে বার্ধক্যের হাতছানি তাকে বিচলিত করে তোলে।কিন্তু রোহন খুব ভালো লেখক।মনের অঙ্গনে হাজারো শব্দের তরঙ্গে ভাসমান রোহন অহনাকে হাবে ভাবে বোঝাতে চায় তাকে সে ভালোবাসে।ফোনের ম্যাসেজে মাঝে মাঝে যেন অভিমান চুইয়ে পড়ে এক রাশ অভিযোগ নিয়ে।লেখার মাধ্যমে ভেসে আসে ভালোবেসে সাথে থাকতে চাই।কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভালোবাসা যেন আন্তরিকতার রুপ বর্জিত বলে মনে হয় অহনার।দীর্ঘ সংসার জীবনের যাতাকলে বৃদ্ধ মন আজ ভালোবাসা শুনলে আবেগ হীন ভাবাবেগে নুইয়ে পড়া লতানো গাছের মত হয়।আসে বিতৃষ্ণা।তবুও প্রেম তো এলো!যৌবনের শেষে আঠেরোর উদ্দামকে ঠেলে ফেলে ঝরা ফুলে আবারো আধো জাগা চোখে প্রেম এলো! প্রেম দুরন্ত গতি সম্পন্ন মানব মনের বেঁচে থাকার জীবন পিপাসা।যৌবন থেকে বার্ধক্য জীবনের প্রতিটি পদে পদে তার পদধ্বনি।কিন্তু বয়সের ভারে পড়ন্ত চোখ ,যে না পাওয়াকে পেতে চায়, তাও হয়ত কোন দীর্ঘ না পাওয়ার বেদনার লিপি চিত্র থেকে। প্রত্যেক জীবনে প্রেম সমান ভাবে গ্ৰহনীয় হয়না।ভাবাবেগের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টি কোন এক এক জনকে এক এক ভাবে প্রভাবিত করে।রোহন হয়ত তার এই ভালোবাসাকে সঙ্গী করে ,আগামীর ফেলে আসা দগ্ধ জীবনে একটু বারিধারায় সিক্ত হয়ে নিজেকে একটু বোঝাতো ,যে না কিছু হয়ত শেষের বিকেলে ঝরে পড়া ফুল তাকে আবীর রঙে রাঙিয়ে দিয়ে গেছে।কিন্তু অহনা তার ডাকে সাড়া দিতে পারিনি। ভালোবাসার শুরুর জীবন তরীতে থাকে আশার উদ্দীপিত প্রদীপের আলো।সেই আলোকজ্জ্বল দিন ক্রমশ ম্রিয়মাণ হয় দীর্ঘ ঘাত প্রতিঘাতে।তাই প্রেমের হাতছানি চির বসন্ত সমভাবে সম হৃদয়ে প্রভাব ফেলতে পারেনা।অহনাও ভালোবাসতে পারিনি রোহনকে।রোহনের ইচ্ছে, ভালোবাসা ,আবেগ ,অনুভূতির উষ্ণতা, এটা কিন্তু অবান্তর নয়।কেননা জীবনের শেষ পর্যন্ত কাউকে না কাউকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকতে চায় মন। ফুটন্ত গোলাপের ঝরে পড়া শেষ পাপড়িতেও লেখা থাকে ভালোবাসা।তবে তার ধরন থাকে ভিন্ন।শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয় স্থলে নিশ্চিন্ত হতে চান মানুষ।অহনা হয়ত যন্ত্রনার যাতাকলে এমন ভাবে নিস্পেষিত হয়েছে যে এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভালোবাসা তার কাছে গ্ৰহনীয় মনে হয়নি।প্রতিটি জীবন তো একি সরল রেখায় চলেনা।বক্রতল সমতল প্রতি তলেই থাকে যন্ত্রনা বৃদ্ধ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।তাই শেষের বেলায় ঝরা বকুলে হয়ত ভেসে গেলো রোহনের প্রেম!হাজার তারায় হয়ত খসে পড়লো এক ধ্রুব তারা!তবুও নিস্পাপ মনের কোন এক কোনে লেখা হয়ে গেলো শেষের ঝরা ফুল।।।
-----------------------
বেগমপুর কলোনী ,দঃ২৪ পরগনা।