তেলাপোকার আন্দোলন
ইমরান খান রাজ
মারাত্মক চিল্লাচিল্লি আর হৈচৈ-এর শব্দে হঠাৎ আমার ঘুম ভাঙলো। বিছানা ছেড়ে উঠে এক গ্লাস পানি খাবো বলে লাইট অন করলাম। আর তখনই নিচ থেকে একজন বললো, "আরে ভাই! লাইট অফ করেন"। নিচে তাকাতেই আমার চোখ উঠলো কপালে ! শতশত তেলাপোকা যেনো রণাঙ্গনে যাবার জন্য প্রস্তুত ! প্রথম ওদের দেখে কিছুটা বিস্মিত হই। তারপর বললাম, " কি হয়েছে ভাই ? তোমরা এত রাতে এভাবে আন্দোলন করছো কেন? মাঝখানের ভিড় ঠেলে একজন এগিয়ে আসলো। বুঝলাম, হয়তো উনি দলনেতা। আমার পায়ের কিছুটা সামনে এসে দাঁড়াল। আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, "আমাদের দাবি মানতে হবে, তেলাপোকা মারার ঔষধ ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করতে হবে"৷ তা না হলে, আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। বিষয়টা পুরোপুরি বোঝবার জন্য আমি দলনেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন ভাই ? কি হয়েছে তোমাদের ? তখন দলনেতার চোখ থেকে জল পড়তে শুরু করলো। আমি উনার পিঠে আঙুলের ছোঁয়া দিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, কি হয়েছে? আমাকে বন্ধু হিসেবে খুলে বলো। না বললে আমি বুঝবো কিভাবে!
তেলাপোকার দলনেতা আমার দিকে ফিরে তাকায়৷ তারপর সব ঘটনা বলতে আরম্ভ করে৷ সে বলে, গতকাল রাতে তোমরা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলে তখন আমার ছোট্ট দুইটা ছেলেমেয়ে খাবারের সন্ধানে তোমাদের ঘরে ঢুকে৷ টেবিলে রাখা এক প্লেট মিষ্টি দেখে, খাওয়ার ইচ্ছে জাগে ওদের৷ ক্ষুধার জ্বালায় ওরা দু'জন মিলে মাত্র দুইটা মিষ্টি খায়। খাওয়া শেষে যখন ওরা বাসায় ফিরে, তখন প্রচন্ড পেটব্যথায় কাতর হয়ে ওঠে৷ জানতে চাইলে ওরা জানায় মিষ্টি খাওয়ার কথা। হঠাৎ আমার চোখের সামনেই ওরা দু'জন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে৷ না ফেরার দেশে চলে যায় আমার দুইটা বাচ্চা। কারণ তোমরা মিষ্টিতে বিষ মিশিয়ে রেখেছিলে। তেলাপোকা মারার ঔষধ মিষ্টির সাথে খেয়ে আমার ছোট্ট শিশু দুইটা মরে গেছে। তাই আজ আমরা সবাই আন্দোলন করছি। আজ থেকে আর কেউ তেলাপোকা মারার ঔষধ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। যদি করে, তাহলে আমরা মানুষকেও রাতে ঘুমাতে দিব না !
তেলাপোকা দলনেতার এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা শুনে আমার কাছেও খারাপ লাগে৷ দলনেতার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে, ওদেরকে প্রতিশ্রুতি দিলাম। আর কখনো আমাদের বাড়িতে কেউ তেলাপোকা মারার ঔষধ প্রয়োগ করবে না। আজ থেকে তোমরা স্বাধীনভাবে আমাদের পুরো বাড়িতে বিচরণ করবে৷ তোমাদের যখনই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করবে, আমাকে জানাবে। আমি তোমাদের মিষ্টি খাওয়াবো। আমার কথা শুনে উপস্থিত সকল তেলাপোকা খুশিতে হাততালি দিতে থাকে৷ দলনেতাও অনেক খুশি হয়। পরে আমাকে বিদায় জানিয়ে ওরা চলে যায় ওদের ঘরে৷ আমি ততোক্ষণে এক গ্লাস পানি খেয়ে শান্তির নিদ্রায় চলে যাই।
=====================
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------নামঃ ইমরান খান রাজ
শিক্ষার্থী, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ, ঢাকা।
ঠিকানাঃ নারিশা, দোহার-ঢাকা ১৩৩২, বাংলাদেশ।