স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট
মেশকাতুন নাহার
বাবা মায়ের অতি আদরের মেয়ে লোপা। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে লোপা সবার ছোট। বাবা ছোট খাটো ব্যবসা করেন। বাচ্চাদের লেখাপড়া সহ মোটামুটি চলে যাচ্ছিল তাদের জীবন। লোপা মফস্বল শহরে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। মেয়েটি দেখতে যেমন সুশ্রী তেমনি গুণে ও অন্যন্য। প্রচণ্ড মেধাবী পাশাপাশি রবীন্দ্র সঙ্গীত ও ভালো গাইতে পারে। পরীক্ষার ফলাফলে বরাবর প্রথম স্থান লাভ করে। রচনা প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বহু পুরষ্কার তাঁর ঝুলিতে। অসাধারণ প্রতিভার জন্য লোপা শিক্ষকদের অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী। আচার ব্যবহার লেখাপড়া সব মিলিয়ে সকল শিক্ষকদের মন জয় করে নিয়েছে। শিক্ষকদের বিশ্বাস এই মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে।
হঠাৎ করেই পৃথিবী আক্রান্ত হলো এক অদৃশ্য ক্ষুদ্র জীবাণুর সংক্রমণে। পৃথিবীর হাসি যেন উদাও হয়ে গেল। কোভিড-১৯ এর সাথে শুরু হলো মানুষের টিকে থাকার লড়াই। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একের পর এক ছুটি ঘোষণা হলো। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কোভিড-১৯ এর কারণে লোপা সহ অসংখ্য ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়।
কিভাবে কোভিড মোকাবিলা করা যায় পৃথিবীর সকল বিশেষজ্ঞদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে করোনাকালীন লোপার বাবার ব্যবসা মন্দা যায়। পরিবারে অভাব দেখা দেয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকায় লোপার বাবা মা লোপার বিবাহের ব্যবস্থা করেন। একজন বিদেশ ফেরত মধ্যবয়সী পাত্রের সাথে লোপার বিয়ে হয়ে যায়।
অনেকটা সময় পার হয়ে যখন টিকা আবিষ্কার হলো আস্তে আস্তে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই কোভিড লোপা সহ অসংখ্য কিশোরী মেয়ের স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে যায়। প্রতিভা গুলো বিকশিত হওয়ার পূর্বেই দুমড়ে মুচড়ে যায়। লোপার স্বামী বিয়ের পরে আর লেখাপড়া করতে দিতে চান না। বলে দিয়েছেন সংসার আর ধর্ম কর্ম নিয়ে থাকতে।
এভাবেই আমাদের সমাজে বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে বহু মেয়েদের প্রতিভা ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয় না। দারিদ্রতা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার সহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না ফুলের মতো মেয়েগুলো। তাই আমাদের সবাই কে এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সংশোধন ও যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আমরা জানি একজন শিক্ষিত মা একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারে।।
=======================
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------
প্রভাষক সমাজকর্ম
কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ,
কচুয়া, চাঁদপুর।