ছবি ঋণ- ইন্টারনেট
মাতৃস্নেহ
মিঠুন মুখার্জী
আমি রজনী গো বাবু, আমি রজনী। আমার মতো কুত রজনীই বেশ্যাপল্লীতে আছে। ইদের মনের খবর তুরা কেউ রাখিস লাই রে, ইদের দেহের খবর রাখিস !! আজ তুদের একটা গল্প বুলি শুন। বাবু তুরা সমাজের ভদ্রলোক আছিস বটে। কুত সম্মান তুদের। আজ থেইকা চল্লিশ বচ্ছর আগেকার কুথা, আমি তখন ইখানে লতুন রে, এক্কেবারে লতুন। একটা বারো-তেরো বচ্ছরের বেটিকে তার বাপ টাকার লিগে বিক্রি করেছিল। তার নধর শরীরে লজর পড়েছিল অলেক মাংসাশী কুকুরের। অসাধারণ সুন্দরী। আমাকে মা ডেকেছিল। জানিস, মা হয়েও সন্তান হারালোর দুঃখ ছিল আমার মুনে। ওর মা ডাক আমার হৃদয়ে আবার মাতৃস্নেহ জাগাইছিল। আমি তাকে ভোগ করতে দিই লাই বাবুদিগের। আমাদের মতোন ওর যেন না হয় তার লিগে ওকে কুথায় রেখেছিলেম জানিস?"আমার মুনের ভিতর"। আমার দিদির কাছে থাইকা আজ ও ডাক্তার হইছে। আমাগো পাড়ায় কারো কিছু হইলে ওই দেখা শোনাটা করে বটে। সকলে ওকে ভালবেসে নাম দিছে "ডাক্তারদিদি"। আর ও আমার নাম দিছে "সোনা মা" । এই বাবু মোরা দেহটা বিক্রি করি বটে, কিন্তু মন লয়।
এরপর বাবুটা রজনীকে বুলেছিল,-- "কেনে এ পথে তুরা এলি বল দিখিনি? অন্য পথ কি ছিলেক লাই? তুদের মরদরা কি কুনো কাজ-কাম করত লাই? কেনে এলি ই পথে?" বাবুটার কথার জবাবে রজনী বুলেছিল--" প্যাটের জ্বালায় রে বাবু, প্যাটের জ্বালায়। কেউ কি ইচ্ছে করে ই পথে আসে? মান-সম্মান সকলেরই আছেরে বাবু। মরদ মদ গিলা রোজ অত্যাচার করত। ঘরে টাকা-কড়ি দিতেক লাই। একটা সন্তান ক্ষুধার জ্বালায় কান্না করত। মুই মা হইয়া কি করে পারি বুল? ই ছাড়া সৎ পথে থাকার লিগে তুদের সভ্যসমাজে অলেক গেছি, কারো মুনে একটু সহানুভূতিটো পাই লাই রে।মোর বাচ্চার কান্না মুই সহ্যটো করতে পারিক লাই। তাই তার মুখের দিকে চেয়ে মুই ই পথে লামছি !! কিন্তু দুঃখের কথাটো হলো, আমার বাচ্চাটো বেশিদিন বাঁচেক লাই। আমি প্রচন্ড কষ্টটো পাই বটে। তবে ই মেয়েটাকে পেয়ে আমার দুঃখ অলেকটা ঘুচে গেছে বটে। ইকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আমি। শুধু জন্মটো দিলেই মা হয় না, মায়ের একটা বড় মুন দরকার হয়--কী বলিস রে বাবু ?"
====================
মিঠুন মুখার্জী
C/o -- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম -- নবজীবন পল্লী
পোস্ট + থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগনা
পিন -- ৭৪৩২৫২
ফোন -- ৯৬১৪৫৫৫৯৮৯
হোয়াটসঅ্যাপ -- ৯৫৩১৫৩৮৭১০